আগেই বলেছি , এখন অনলাইনে এপ্লিকেশন করা কোন ব্যাপারই না । মূল কাজটা ওয়েবে বসেই করে ফেলা যায়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পিডিএফ নিয়েই খুশি থাকে । সশরীরে যেদিন গিয়ে উপস্থিত হবেন তার আগে কিছু নাও লাগতে পারে এক টাকা পয়সার ব্যাপার স্যাপার ছাড়া । অনেক জায়গায় হয়ত সফট কপির সাথে হার্ড কপিও পাঠাতে হতে পারে মেইল করে । যেই সব ইউনিতে অন লাইন এপ্লিকেশনের ব্যবস্থা নেই তাদেরকে রেজিস্টার্ড মেইলে , যে সবে অনলাইন ট্র্যাকিং করা যায় এই রকম ভাবে পাঠিয়ে দিন। কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো নিরাপদ কিন্তু বুহতেই পারছেন এক একবারে কত টাকা করে লাগতে পারে।
এপ্লিকেশন পাঠানোর আগে দেখে নিন সমস্ত কাগজ পত্র ঠিক আছে কিনা।
১। একাডেমিক কাগজ পত্র , মোটিভেশন লেটার ইত্যাদি আপনি নিজেই পাঠাবেন।
২। ইউনি যদি চায় , তাহলে আই ই এল টি এস বা টয়েফেল ইত্যাদির রেজাল্ট হয়ত অফিসিয়ালি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠাতে বলবে । সেক্ষেত্রে আপনি একটা নির্দিষ্ট ফি দিয়ে কোম্পানিকে অনুরোধ করলে ওরাই আপনার রেজাল্ট ইউনিকে পাঠিয়ে দেবে।
৩। রেকমেন্ডেশন লেটার সংশ্লিষ্ট প্রফেসর অফিসিয়াল খামে, অফিসিয়াল সিল সহ পাঠাবেন। আপনি শুধু তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। আর কিছু না । আমেরিকাতে এইসব নিয়ে বেগড়বাই বেশি করে । তো সাবধান। যদি ওদের মনে হয় আপনি নিজে এই রেকমেন্ডেশনকে কোন ভাবে প্রভাবিত করেছেন, তাইলেই সব শেষ ।
৪। ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠাবে আপনার কলেজ/মেডিকেল/ইউনি। কিন্তু আমাদের দেশে সব জায়গায় এইটা করা যায় না । আবার ট্রান্সক্রিপ্ট জিনিসটা আপনি যতবার অনুরোধ করবেন ততবারই আপনার হয়ে আপনার কলেজ।ইউনির দেওয়ার কথা । কি এক অদ্ভুত কারনে , এইটা সবাই বার বার দেয় না । স্কুল কলেজের ট্রান্সক্রিপ্ট তো সোনার হরিণ ।
সুতরাং , চাইলেই লাফ দিয়ে মূল কপিটা পাঠিয়ে দেবেন না । একটাই কপি হলে ফটোকপি পাঠান এবং বুঝিয়ে বলুন কেন মূল কপি পাঠাতে পারছেন না কিংবা আপনার হয়ে কলেজ কেন পাঠাচ্ছে না । ভদ্র ভাবে বুঝিয়ে বললে আর সৎ হলে বেশির ভাগ ইউনিই ঝামেলা করে না ।
৫। সব কাগজ এক সাথে পাঠানোর জন্য দেরী করবেন না । যেমন আই ঈ এল টি এসের রেজাল্ট পরে পাঠালেও চলে। কিন্তু এপ্লিকেশন দেরীতে পৌছালে স্কলারশীপ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে ।
এখন আসেন , কখন পাঠাবেন?
আমেরিকা , কানাডা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ বেশি গবেষনা করে , তাই আর ডিটেইলস এ গেলাম না । যে কোন ভালো স্কলারশীপ পেতে হলে অন্তত এক বছর আছে কাগজ পত্র পাঠাতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় , লাস্ট ডেট অনেক পরে শেষ হয়। কিন্তু খেয়াল না করলে এইটা হয়ত আপনার চোখেই পড়বে না যে ভর্তির লাস্ট ডেটের ৬ মাস আগেই স্কলারশীপের লাস্ট ডেট শেষ। আবার আমেরিকার এক এক স্টেটে এক এক নিয়মের কারনে কোন সাধারন নিয়ম বলা খুবই মুশকিল। কোথাও নিয়ম কানুন খুব কড়া , কোথাও বেশ শিথিল। সুতরাং, বছর খানেক আগে থেকেই দেখে নিন কোন স্কলারশীপের ডেট সাধারনত কখন শেষ হয় ।
মিড ইয়ার সেমিস্টারে ভর্তি হলে বা পার্ট টাইম ( বিদেশী স্টুডেন্ট অবশ্য প্রায় সবই ফুল টাইম) হলে অনেক স্কলারশীপ দেয় না । অতএব সাধু সাবধান।
অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ডে সেমিস্টার শুরু সাধারনত ফেব্রুয়ারী মার্চের দিকে । ইউরোপে সেপ্টেম্বর । কিন্তু দেখা যায় , ক্লাস সেপ্টেম্বর হলেও ভালো ভালো স্কলারশীপ গুলোর ডেট ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারীর ভিতরই শেষ। তার উপর অনেক জায়গায় লেখা থাকে আগে আসিলে আগে পাইবেন, আগে বিবেচিত হইবেন ধরনের কথা । তাই যত আগে এপ্লাই করা যায় , স্কলারশীপ পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি ।
স্কলারশীপের আবেদন কে করবে ?
এই জায়গাটাতেও অনেক রকমের হ্যাপা জড়িত। কোন কোন স্কলারশীপ এর আবেদন আপনাকে নিজেই করতে হতে পারে । এক একটার এলিজিবিলিটি এক এক রকম । কেউ হয়ত চায় আপনার এডমিশন কনফার্মেশন। কেউ চাইবে যেখানে ভর্তি হবেন তাদের রেকমেন্ডেশন, সেক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্ট যা করার করবে , আপনি শুধু উল্লেখ করবেন যে আপনি বিবেচিত হইতে চান । আবার অনেক ইউনি বলেই দেবে যে সকল বিদেশী ছাত্র অটমেটিক বিবেচিত হয় সুতরাং আলাদা করে এপ্লাই করার দরকার নেই ।
যেহেতু এক এক জায়গায় এক এক নিয়ম , তাই আগে থেকে ভর্তি বা এপ্লাই করার ফর্মালিটি সেরে নিয়ে লেগে পড়ুন কাজে ।
আপনি কখন বিবেচিত হবেন?
আমেরিকা , অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের ভিতর গ্রেট ব্রিটেন এবং এশিয়ার বেশ কয়টি দেশ একটা নিয়ম মেনে চলে । তা হলো , আগে ভর্তি তারপর স্কলারশীপ। তার মানে ভর্তি হতে , ভিসা পেতে এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রথম এক বছর বা প্রথম এক সেমিস্টারের টাকার যোগাড় আপনাকে করে রাখতে হবে । এই সব কিছু খরচ পাতি করে , রেজাল্ট ভালো দেখায় ২য় সেমিস্টার বা ২য় বছরে আপনি প্রচুর স্কলারশীপ পাবেন অস্ট্রেলিয়াতে ।
তবে, লিডারশীপ, কমন ওয়েলথ, এডিবি, এন এফ পি জাতীয় স্কলারশীপ গুলো দেশ থেকে নিয়েই বাইরে যাওয়া যায় ।
ডাক্তারী যে কোন বিদ্যায় এই প্রাথমিক খরচটা অসম্ভব রকমের বেশি। তবে বায়ো লজি, বায়ো ফিজিক্স, বায়ো কেমিস্ট্রি, বায়ো টেকনোলজি, মেডিকেল বায়োলজি , মলিকিউলার বায়োলজি জাতীয় নন ক্লিনিকাল কোন সাব্জেক্টের ভর্তি খরচ এত না। এই সব দেশে যেতে হলে তাই আগে পকেটের অবস্থা আর স্কলারশীপ ছাড়াই প্রথম এক বছর সামলাইতে পারবেন কিনা বুঝে নিন।
স্টুডেন্টদের কাজ করার অনুমতি আছে কিনা , থাকলেও কয় ঘন্টা, কাজের সহজলভ্যতা ইত্যাদি আগেই হিসাব করে নিবেন।
ইউরোপে ওরা স্কলারশীপ ভর্তির সাথে সাথে জানিয়ে দেয়। সেই কাগজ নিয়ে ভিসা পাওয়াও সম্ভব । তাই অনেক নিরাপদ । বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অনেক কম যেহেতু আগে থেকেই জেনে যাচ্ছেন কত পাচ্ছেন, কত খরচ হবে আর নিজে পকেটে করে কত নিয়ে যেতে হবে। মাস্টার্স লেভেলে কাজ করার অনুমতি আছে এবং সেইটা দিয়ে কোন মতে থাকা খাওয়া চলে যায় । কিন্তু খবরদার সেলফ ফাইন্যন্সে যাওয়ার চিন্তা করবেন না এবং এইটা মনে রাখবেন , বেশির ভাগ ইউরোপে কেউ ইংরেজি বলে না , তাই কাজ পাওয়া খুবই কঠিন । অবশ্যই আগে ভাষা শিখতে হয়। কিছু দেশে প্রথম একটা বছর নষ্ট করতে হয় স্রেফ ভাষা শিখে । তারপর আসল পড়ালেখা শুরু। ইংলিশ মাস্টার্স হইলে অন্য কথা ।
স্কলারশীপের পরিমাণ কত ?
এডিবি, লিডারশীপ, কমন ওয়েলথ, ফোর্ড, রোটারি , এন এফ পি আরো হাবিজাবি স্কলারশীপ আছে । এগুলো সব ফুল স্কলারশীপ। টিউশন , থাকা , খাওয়া , মায় প্লেনের টিকেট পর্যন্ত দিয়ে দেবে। কিন্তুক , ঝামেলাটা হইলো, এই ধরনের যত স্কলারশীপ আছে , সব গুলাই কোর্স শেষ হওয়ার সাথে সাথে কানে ধরে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে। এবং তারপরের দুই বছর সেই দেশে ঢুকা যাবে না , নিজের দেশে কাজ করতে হবে, কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তা হইতে হবে, আবার অন্য আর কোন স্কলারশীপের জন্য বিবেচিত হবেন না ধরনের নানা রকম শর্ত জুড়ে দেওয়া থাকে। তাই আগেই খুব ভালো করে ভেবে নিন, আপনি কি দেশে ফেরত আসবেন?
তাহলে এই ধরনের স্কলারশীপের জন্য আবেদন করুন। আগে থেকে চেষ্টা করলে, লেগে থাকলে আর সরকারী জ্যাক থাকলে পেয়ে যাবেন। এসবে রেজাল্ট খুবই ভালো থাকতে হয়। টপ ১০% বা ৮০% মার্ক্স চায় ইত্যাদি ইত্যাদি । খুব ভালো করে প্রতিটা ইংরেজি বাংলা দৈনিকের চিপায় চাপায় চোখ দিয়ে রাখবেন । আর মাঝে মাঝেই এম্ব্যাসির খাটাস্মুখী বা মুখিনীদের হাই হ্যালো করে জিজ্ঞেস করবেন বা ঢাকাস্থ এম্ব্যসির ওয়েব হুতাগুতি করবেন , কখন এড দেয় । বৃটিশ কাউন্সিল , ইউসিস , আব জাব সব খানে চর লাগায় রাখবেন ।
কিন্তু এই সব কুতুব আর কয়জন? বাকি বটম ৯০% এর জন্য খোজাখুজিই ভরসা ।
সাধারন ইউনি স্কলারশীপ গুলা ভ্যরি করে । যাদের ফান্ড বেশি , নাম বেশি তারা পয়সা দেয় বেশি । যাদের ফান্ড কম , তারা টিউশন মাফ করে দেয় , থাকা খাওয়া আপনের ।
তবে , সবচাইতে বেহুদা বান্দর হইলো আমেরিকা , অজি আর বেনিয়া বৃটিশ । কারনটা আগেই বলেছি । নিজে কিছু গচ্চা দেওয়ার পরেই কিছু পাইবেন । তার আগে না । ইউ কের বায়োলজি স্কলারশীপের অবস্থা বড়ই করুন । সর্বোচ্চ ৮০%। বাকিটা দিতে জান কাহিল । এইটা পাবলিক হেলথ জাতীয় সাব্জেক্টের বেলাতেও সত্যি । আমেরিকা আবার যখন দেয় তখন ভালো করেই দেয় । তো আপনি যদি ভর্তি ও ভিসা সংক্রান্ত টাকা পয়সার ঝামেলা কাটাইতে পারেন তাইলে তো আর চিন্তা নাই ।
তবে আগেই বলেছি , আমেরিকা হইলো সব সম্ভবের দেশ । অনেক ইউনি আছে যেখানে ভর্তি কনফার্ম হয়ে যাওয়ার পরে অনেক স্কলারশীপের সম্ভাবনা খুলে যায় । দেশে ছাড়ার আগেই সেখানে স্কলারশীপ কনফার্ম করতেই পারেন ।
কোন সাবজ়েক্ট , কেন ?
কান ধরে যদি দেশে পাঠিয়ে দেয় তাহলে স্কলারশীপ কমিটি দেখবে কোন সাবজেক্ট আপনার নিজের দেশের জন্য প্রযোজ্য। আর তা না করলে অবশ্যই দেখবে কোন সাব্জেক্ট এর লোক ওদের নিজেদের লাগবে । সারা দুনিয়ায় ডাক্তাররা হইলো এতিম জাত । মেডিকেল কিংবা ডেন্টালের কোন বিদ্যাতেই কোন রকম স্কলারশীপ নাই । একমাত্র বিশ্ববিখ্যাত নামী দামী স্কলারশীপ ছাড়া মেডিকেল , ডেন্টালের সাব্জেক্ট পড়া যায় না । তাও আবার নন ক্লিনিকাল সাব্জেক্ট হইতে হয় । ক্লিনিকাল সাব্জেক্টে বিদেশে পড়তে চাইলে সেইটার লাইন ঘাট একেবারেই ভিন্ন । সরকারী কর্মকর্তা হইলে , ঐ সব বিশ্ববিখ্যাত স্কলারশীপ পাইলে , দেশে ফেরত আসিবার শর্তে রাজি থাকিলে তখন এই সব ভাবা যাইতে পারে । নাইলে ডাক্তার হইয়া বাইরে স্কলারশীপ খুজিবার কোনই মানে নাই । বাপ মা কোটিপতি হইলে ভিন্ন কথা ।
যারা ক্লিনিকাল সাব্জেক্ট ছেড়ে পাবলিক হেলথ, এনাটমি, ফিজিওলজি কিংবা এপ্লাইড বায়োলজিকাল সাইন্সেস পড়তে আগ্রহী তারা সময় থাকতে থাকতে এপ্লিকেশন পাঠিয়ে দিন। সাব্জেক্ট বেছে নেওয়ার সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা আমেরিকা ও কানাডায় । অনেক রকমের কম্বিনেশন নেওয়া যায় । তাছাড়া সাব্জেক্টের বৈচিত্রও ওদের অনেক বেশি । যারা নন ডাক্তার বায়োলজির কোন সাব্জেক্ট পড়েছেন , তাদের জন্য আমেরিকা এখনো স্বর্গ । প্রচুর স্কলারশীপ, প্রচুর গবেষনা , কাজেরও সম্ভাবনা ।
দেশে ফিরতে না চাইলে ডাক্তার আর ডেন্টিস্টদের স্বর্গ এখন অস্ট্রেলিয়া । একটা যে কোন সাব্জেক্ট নিয়ে ঢুকে পড়ার পরে লাইসেন্স পরীক্ষা পাশ করুন। ২ -৩ বছরে মাইগ্রেন্ট হয়ে যান । তারপর খালি টাকা আর টাকা । এমন কি পড়াও লাগবে না । দেশ থেকেই মাইগ্রেন্ট হয়ে চলে যান ওদের ডাক্তার কম এমন কোন রিজিওনে। চুক্তি করুন দুই বছরের । ব্যাস । আর দেখতে হবে না । সাব্জেক্টের মধ্যে মেডিকেল বায়োলজি থেকে শুরু করে বায়োটেকনলজি সবই আছে । কিন্তু ওরা স্কলারশীপ দেয় শুধু নিজের দেশের লোকজনকেই । মাইগ্রেন্ট বা সিটিজেন না হলে মাসে ১০০ , ২০০ ডলার পাবেন । তবে , মেয়েদের জন্য বেশ কিছু ভালো ভালো স্কলারশীপ আছে ।
ইউরোপে বায়োলজিকাল সাইন্সের বিভিন্ন ব্রাঞ্চে এখন প্রায় রেভেলুশন চলছে । আমেরিকার যেমন স্টেম সেল, জেনেটিক্স নিয়ে নানান রকম ধর্মীয় হ্যাপা আছে , ইউরোপে সেটা বেশ কম। তাই নরমাল বায়োলজিকাল সাব্জেক্ট ছাড়াও অনেক চ্যালেঞ্জিং নতুন নতুন মাস্টার কোর্স পাওয়া যায় , স্কলারশীপের পরিমান ও ভালো । ভাষা জনিত সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে পারলে কেল্লাফতে । পি এইচ ডি পাওয়াও কঠিন না ।
ইউরোপের আরো একটা জিনিস ভালো লেগেছে । পি এইচ ডি জিনিসটা নাকি ইউরোপে জবের মত । স্টুডেন্ট না এম্পলয়ি হিসেবে পি এইচ ডি করা যায় । বেতন ও খারাপ না ।মাস্টার্সের পরে পি এইচ ডি করতে চাইলে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার সাথে এইটা তুলনা করা যাইতে পারে ।
এপ্লিকেশন পাঠানোর আগে দেখে নিন সমস্ত কাগজ পত্র ঠিক আছে কিনা।
১। একাডেমিক কাগজ পত্র , মোটিভেশন লেটার ইত্যাদি আপনি নিজেই পাঠাবেন।
২। ইউনি যদি চায় , তাহলে আই ই এল টি এস বা টয়েফেল ইত্যাদির রেজাল্ট হয়ত অফিসিয়ালি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠাতে বলবে । সেক্ষেত্রে আপনি একটা নির্দিষ্ট ফি দিয়ে কোম্পানিকে অনুরোধ করলে ওরাই আপনার রেজাল্ট ইউনিকে পাঠিয়ে দেবে।
৩। রেকমেন্ডেশন লেটার সংশ্লিষ্ট প্রফেসর অফিসিয়াল খামে, অফিসিয়াল সিল সহ পাঠাবেন। আপনি শুধু তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। আর কিছু না । আমেরিকাতে এইসব নিয়ে বেগড়বাই বেশি করে । তো সাবধান। যদি ওদের মনে হয় আপনি নিজে এই রেকমেন্ডেশনকে কোন ভাবে প্রভাবিত করেছেন, তাইলেই সব শেষ ।
৪। ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠাবে আপনার কলেজ/মেডিকেল/ইউনি। কিন্তু আমাদের দেশে সব জায়গায় এইটা করা যায় না । আবার ট্রান্সক্রিপ্ট জিনিসটা আপনি যতবার অনুরোধ করবেন ততবারই আপনার হয়ে আপনার কলেজ।ইউনির দেওয়ার কথা । কি এক অদ্ভুত কারনে , এইটা সবাই বার বার দেয় না । স্কুল কলেজের ট্রান্সক্রিপ্ট তো সোনার হরিণ ।
সুতরাং , চাইলেই লাফ দিয়ে মূল কপিটা পাঠিয়ে দেবেন না । একটাই কপি হলে ফটোকপি পাঠান এবং বুঝিয়ে বলুন কেন মূল কপি পাঠাতে পারছেন না কিংবা আপনার হয়ে কলেজ কেন পাঠাচ্ছে না । ভদ্র ভাবে বুঝিয়ে বললে আর সৎ হলে বেশির ভাগ ইউনিই ঝামেলা করে না ।
৫। সব কাগজ এক সাথে পাঠানোর জন্য দেরী করবেন না । যেমন আই ঈ এল টি এসের রেজাল্ট পরে পাঠালেও চলে। কিন্তু এপ্লিকেশন দেরীতে পৌছালে স্কলারশীপ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে ।
এখন আসেন , কখন পাঠাবেন?
আমেরিকা , কানাডা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ বেশি গবেষনা করে , তাই আর ডিটেইলস এ গেলাম না । যে কোন ভালো স্কলারশীপ পেতে হলে অন্তত এক বছর আছে কাগজ পত্র পাঠাতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় , লাস্ট ডেট অনেক পরে শেষ হয়। কিন্তু খেয়াল না করলে এইটা হয়ত আপনার চোখেই পড়বে না যে ভর্তির লাস্ট ডেটের ৬ মাস আগেই স্কলারশীপের লাস্ট ডেট শেষ। আবার আমেরিকার এক এক স্টেটে এক এক নিয়মের কারনে কোন সাধারন নিয়ম বলা খুবই মুশকিল। কোথাও নিয়ম কানুন খুব কড়া , কোথাও বেশ শিথিল। সুতরাং, বছর খানেক আগে থেকেই দেখে নিন কোন স্কলারশীপের ডেট সাধারনত কখন শেষ হয় ।
মিড ইয়ার সেমিস্টারে ভর্তি হলে বা পার্ট টাইম ( বিদেশী স্টুডেন্ট অবশ্য প্রায় সবই ফুল টাইম) হলে অনেক স্কলারশীপ দেয় না । অতএব সাধু সাবধান।
অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ডে সেমিস্টার শুরু সাধারনত ফেব্রুয়ারী মার্চের দিকে । ইউরোপে সেপ্টেম্বর । কিন্তু দেখা যায় , ক্লাস সেপ্টেম্বর হলেও ভালো ভালো স্কলারশীপ গুলোর ডেট ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারীর ভিতরই শেষ। তার উপর অনেক জায়গায় লেখা থাকে আগে আসিলে আগে পাইবেন, আগে বিবেচিত হইবেন ধরনের কথা । তাই যত আগে এপ্লাই করা যায় , স্কলারশীপ পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি ।
স্কলারশীপের আবেদন কে করবে ?
এই জায়গাটাতেও অনেক রকমের হ্যাপা জড়িত। কোন কোন স্কলারশীপ এর আবেদন আপনাকে নিজেই করতে হতে পারে । এক একটার এলিজিবিলিটি এক এক রকম । কেউ হয়ত চায় আপনার এডমিশন কনফার্মেশন। কেউ চাইবে যেখানে ভর্তি হবেন তাদের রেকমেন্ডেশন, সেক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্ট যা করার করবে , আপনি শুধু উল্লেখ করবেন যে আপনি বিবেচিত হইতে চান । আবার অনেক ইউনি বলেই দেবে যে সকল বিদেশী ছাত্র অটমেটিক বিবেচিত হয় সুতরাং আলাদা করে এপ্লাই করার দরকার নেই ।
যেহেতু এক এক জায়গায় এক এক নিয়ম , তাই আগে থেকে ভর্তি বা এপ্লাই করার ফর্মালিটি সেরে নিয়ে লেগে পড়ুন কাজে ।
আপনি কখন বিবেচিত হবেন?
আমেরিকা , অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের ভিতর গ্রেট ব্রিটেন এবং এশিয়ার বেশ কয়টি দেশ একটা নিয়ম মেনে চলে । তা হলো , আগে ভর্তি তারপর স্কলারশীপ। তার মানে ভর্তি হতে , ভিসা পেতে এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রথম এক বছর বা প্রথম এক সেমিস্টারের টাকার যোগাড় আপনাকে করে রাখতে হবে । এই সব কিছু খরচ পাতি করে , রেজাল্ট ভালো দেখায় ২য় সেমিস্টার বা ২য় বছরে আপনি প্রচুর স্কলারশীপ পাবেন অস্ট্রেলিয়াতে ।
তবে, লিডারশীপ, কমন ওয়েলথ, এডিবি, এন এফ পি জাতীয় স্কলারশীপ গুলো দেশ থেকে নিয়েই বাইরে যাওয়া যায় ।
ডাক্তারী যে কোন বিদ্যায় এই প্রাথমিক খরচটা অসম্ভব রকমের বেশি। তবে বায়ো লজি, বায়ো ফিজিক্স, বায়ো কেমিস্ট্রি, বায়ো টেকনোলজি, মেডিকেল বায়োলজি , মলিকিউলার বায়োলজি জাতীয় নন ক্লিনিকাল কোন সাব্জেক্টের ভর্তি খরচ এত না। এই সব দেশে যেতে হলে তাই আগে পকেটের অবস্থা আর স্কলারশীপ ছাড়াই প্রথম এক বছর সামলাইতে পারবেন কিনা বুঝে নিন।
স্টুডেন্টদের কাজ করার অনুমতি আছে কিনা , থাকলেও কয় ঘন্টা, কাজের সহজলভ্যতা ইত্যাদি আগেই হিসাব করে নিবেন।
ইউরোপে ওরা স্কলারশীপ ভর্তির সাথে সাথে জানিয়ে দেয়। সেই কাগজ নিয়ে ভিসা পাওয়াও সম্ভব । তাই অনেক নিরাপদ । বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অনেক কম যেহেতু আগে থেকেই জেনে যাচ্ছেন কত পাচ্ছেন, কত খরচ হবে আর নিজে পকেটে করে কত নিয়ে যেতে হবে। মাস্টার্স লেভেলে কাজ করার অনুমতি আছে এবং সেইটা দিয়ে কোন মতে থাকা খাওয়া চলে যায় । কিন্তু খবরদার সেলফ ফাইন্যন্সে যাওয়ার চিন্তা করবেন না এবং এইটা মনে রাখবেন , বেশির ভাগ ইউরোপে কেউ ইংরেজি বলে না , তাই কাজ পাওয়া খুবই কঠিন । অবশ্যই আগে ভাষা শিখতে হয়। কিছু দেশে প্রথম একটা বছর নষ্ট করতে হয় স্রেফ ভাষা শিখে । তারপর আসল পড়ালেখা শুরু। ইংলিশ মাস্টার্স হইলে অন্য কথা ।
স্কলারশীপের পরিমাণ কত ?
এডিবি, লিডারশীপ, কমন ওয়েলথ, ফোর্ড, রোটারি , এন এফ পি আরো হাবিজাবি স্কলারশীপ আছে । এগুলো সব ফুল স্কলারশীপ। টিউশন , থাকা , খাওয়া , মায় প্লেনের টিকেট পর্যন্ত দিয়ে দেবে। কিন্তুক , ঝামেলাটা হইলো, এই ধরনের যত স্কলারশীপ আছে , সব গুলাই কোর্স শেষ হওয়ার সাথে সাথে কানে ধরে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে। এবং তারপরের দুই বছর সেই দেশে ঢুকা যাবে না , নিজের দেশে কাজ করতে হবে, কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তা হইতে হবে, আবার অন্য আর কোন স্কলারশীপের জন্য বিবেচিত হবেন না ধরনের নানা রকম শর্ত জুড়ে দেওয়া থাকে। তাই আগেই খুব ভালো করে ভেবে নিন, আপনি কি দেশে ফেরত আসবেন?
তাহলে এই ধরনের স্কলারশীপের জন্য আবেদন করুন। আগে থেকে চেষ্টা করলে, লেগে থাকলে আর সরকারী জ্যাক থাকলে পেয়ে যাবেন। এসবে রেজাল্ট খুবই ভালো থাকতে হয়। টপ ১০% বা ৮০% মার্ক্স চায় ইত্যাদি ইত্যাদি । খুব ভালো করে প্রতিটা ইংরেজি বাংলা দৈনিকের চিপায় চাপায় চোখ দিয়ে রাখবেন । আর মাঝে মাঝেই এম্ব্যাসির খাটাস্মুখী বা মুখিনীদের হাই হ্যালো করে জিজ্ঞেস করবেন বা ঢাকাস্থ এম্ব্যসির ওয়েব হুতাগুতি করবেন , কখন এড দেয় । বৃটিশ কাউন্সিল , ইউসিস , আব জাব সব খানে চর লাগায় রাখবেন ।
কিন্তু এই সব কুতুব আর কয়জন? বাকি বটম ৯০% এর জন্য খোজাখুজিই ভরসা ।
সাধারন ইউনি স্কলারশীপ গুলা ভ্যরি করে । যাদের ফান্ড বেশি , নাম বেশি তারা পয়সা দেয় বেশি । যাদের ফান্ড কম , তারা টিউশন মাফ করে দেয় , থাকা খাওয়া আপনের ।
তবে , সবচাইতে বেহুদা বান্দর হইলো আমেরিকা , অজি আর বেনিয়া বৃটিশ । কারনটা আগেই বলেছি । নিজে কিছু গচ্চা দেওয়ার পরেই কিছু পাইবেন । তার আগে না । ইউ কের বায়োলজি স্কলারশীপের অবস্থা বড়ই করুন । সর্বোচ্চ ৮০%। বাকিটা দিতে জান কাহিল । এইটা পাবলিক হেলথ জাতীয় সাব্জেক্টের বেলাতেও সত্যি । আমেরিকা আবার যখন দেয় তখন ভালো করেই দেয় । তো আপনি যদি ভর্তি ও ভিসা সংক্রান্ত টাকা পয়সার ঝামেলা কাটাইতে পারেন তাইলে তো আর চিন্তা নাই ।
তবে আগেই বলেছি , আমেরিকা হইলো সব সম্ভবের দেশ । অনেক ইউনি আছে যেখানে ভর্তি কনফার্ম হয়ে যাওয়ার পরে অনেক স্কলারশীপের সম্ভাবনা খুলে যায় । দেশে ছাড়ার আগেই সেখানে স্কলারশীপ কনফার্ম করতেই পারেন ।
কোন সাবজ়েক্ট , কেন ?
কান ধরে যদি দেশে পাঠিয়ে দেয় তাহলে স্কলারশীপ কমিটি দেখবে কোন সাবজেক্ট আপনার নিজের দেশের জন্য প্রযোজ্য। আর তা না করলে অবশ্যই দেখবে কোন সাব্জেক্ট এর লোক ওদের নিজেদের লাগবে । সারা দুনিয়ায় ডাক্তাররা হইলো এতিম জাত । মেডিকেল কিংবা ডেন্টালের কোন বিদ্যাতেই কোন রকম স্কলারশীপ নাই । একমাত্র বিশ্ববিখ্যাত নামী দামী স্কলারশীপ ছাড়া মেডিকেল , ডেন্টালের সাব্জেক্ট পড়া যায় না । তাও আবার নন ক্লিনিকাল সাব্জেক্ট হইতে হয় । ক্লিনিকাল সাব্জেক্টে বিদেশে পড়তে চাইলে সেইটার লাইন ঘাট একেবারেই ভিন্ন । সরকারী কর্মকর্তা হইলে , ঐ সব বিশ্ববিখ্যাত স্কলারশীপ পাইলে , দেশে ফেরত আসিবার শর্তে রাজি থাকিলে তখন এই সব ভাবা যাইতে পারে । নাইলে ডাক্তার হইয়া বাইরে স্কলারশীপ খুজিবার কোনই মানে নাই । বাপ মা কোটিপতি হইলে ভিন্ন কথা ।
যারা ক্লিনিকাল সাব্জেক্ট ছেড়ে পাবলিক হেলথ, এনাটমি, ফিজিওলজি কিংবা এপ্লাইড বায়োলজিকাল সাইন্সেস পড়তে আগ্রহী তারা সময় থাকতে থাকতে এপ্লিকেশন পাঠিয়ে দিন। সাব্জেক্ট বেছে নেওয়ার সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা আমেরিকা ও কানাডায় । অনেক রকমের কম্বিনেশন নেওয়া যায় । তাছাড়া সাব্জেক্টের বৈচিত্রও ওদের অনেক বেশি । যারা নন ডাক্তার বায়োলজির কোন সাব্জেক্ট পড়েছেন , তাদের জন্য আমেরিকা এখনো স্বর্গ । প্রচুর স্কলারশীপ, প্রচুর গবেষনা , কাজেরও সম্ভাবনা ।
দেশে ফিরতে না চাইলে ডাক্তার আর ডেন্টিস্টদের স্বর্গ এখন অস্ট্রেলিয়া । একটা যে কোন সাব্জেক্ট নিয়ে ঢুকে পড়ার পরে লাইসেন্স পরীক্ষা পাশ করুন। ২ -৩ বছরে মাইগ্রেন্ট হয়ে যান । তারপর খালি টাকা আর টাকা । এমন কি পড়াও লাগবে না । দেশ থেকেই মাইগ্রেন্ট হয়ে চলে যান ওদের ডাক্তার কম এমন কোন রিজিওনে। চুক্তি করুন দুই বছরের । ব্যাস । আর দেখতে হবে না । সাব্জেক্টের মধ্যে মেডিকেল বায়োলজি থেকে শুরু করে বায়োটেকনলজি সবই আছে । কিন্তু ওরা স্কলারশীপ দেয় শুধু নিজের দেশের লোকজনকেই । মাইগ্রেন্ট বা সিটিজেন না হলে মাসে ১০০ , ২০০ ডলার পাবেন । তবে , মেয়েদের জন্য বেশ কিছু ভালো ভালো স্কলারশীপ আছে ।
ইউরোপে বায়োলজিকাল সাইন্সের বিভিন্ন ব্রাঞ্চে এখন প্রায় রেভেলুশন চলছে । আমেরিকার যেমন স্টেম সেল, জেনেটিক্স নিয়ে নানান রকম ধর্মীয় হ্যাপা আছে , ইউরোপে সেটা বেশ কম। তাই নরমাল বায়োলজিকাল সাব্জেক্ট ছাড়াও অনেক চ্যালেঞ্জিং নতুন নতুন মাস্টার কোর্স পাওয়া যায় , স্কলারশীপের পরিমান ও ভালো । ভাষা জনিত সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে পারলে কেল্লাফতে । পি এইচ ডি পাওয়াও কঠিন না ।
ইউরোপের আরো একটা জিনিস ভালো লেগেছে । পি এইচ ডি জিনিসটা নাকি ইউরোপে জবের মত । স্টুডেন্ট না এম্পলয়ি হিসেবে পি এইচ ডি করা যায় । বেতন ও খারাপ না ।মাস্টার্সের পরে পি এইচ ডি করতে চাইলে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার সাথে এইটা তুলনা করা যাইতে পারে ।
1 comment:
ধন্যবাদ ।
Tender business bangladesh dhaka bid
auction purchase sales bangla.
Post a Comment