Monday, January 24, 2011

বাংলাদেশের খারাপ - ভালো খবর

১৫ হাজার কোটি টাকা লুটেছেন আওয়ামী লীগ বিএনপির ১০-১৫ রাজনীতিক ব্যবসায়ী

শেয়ার বাজারের লুটে নেয়া এই টাকা দেশে আর কোনদিন বিনিয়োগ হবে না

-খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

০০ ইত্তেফাক রিপোর্ট জানুয়ারি ২৩, ২০১১, রবিবার : ১০ মাঘ, ১৪১৭

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির ১০/১৫জন ব্যবসায়ী রাজনীতিক শেয়ারবাজার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। কিন্তু এই টাকাটা তারা আর কোন দিন বিনিয়োগ করবেন না। এই টাকাটা তারা মেরে দিয়েছেন। গতকাল শনিবার ইত্তেফাককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। কিভাবে শেয়ারবাজারের এ লুটপাটটা হলো তা জানতে চাইলে তিনি বলেন,'আমার প্রশ্ন হলো, শেয়ারবাজারের যখন দাম বাড়লো তখন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনলো। কিন্তু যখন দাম পড়ে গেল তখন টাকাটা কোথায় গেল? আমি বলবো, এই টাকাটা কয়েকজনের পকেটে চলে গেছে। লুটে নেয়া এই ১৫ হাজার কোটি টাকা দেশে আর কোনদিন বিনিয়োগ হবে না। আমি মনে করি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে শুধু একটি দলের লোক জড়িত নন। উভয় দলের লোকজন এখানে জড়িত। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও পুঁজিবাজারে তাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। বিরোধ হলো সংসদে গিয়ে।

দেশের সাধারণ মানুষের টাকা একাট্টা হয়ে মেরে দিতে তাদের কোন অসুবিধা নেই।' খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ আরো বলেন, আমি বলবো কোন কোন ক্ষেত্রে এসইসি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত। অথবা তাদের অসহায়ত্ব ছিল। তা না হলে এটি কিভাবে হলো। তাদের দায়িত্ব হলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। যখন সরকার থেকে শেয়ার ছাড়ার কথা ছিল সেটা করা গেল না। যেখানে শেয়ার কম সেখানে এতো টাকা বাজারে এলো কী করে? সিকিউরিটি একচেঞ্জ কমিশনের (এসইসির) কাজ হলো বাজারে কোন সমস্যা হলে প্রয়োজনে বাজার কখনও টেনে ধরা কিংবা ছেড়ে দেয়া। কিন্তু এসইসি সেটা না করে বরং উল্টোটা করেছে। যখন টেনে ধরার দরকার ছিল তখন তারা দাম বাড়ায় সহায়তা করছে। না হলে বাজারে দাম বাড়লো কেন? শেয়ারবাজার সংশিস্নষ্টতায় সরকার মানে তো এসইসি, সরকার মানেতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নন। এই কারসাজির জন্য এসইসিই দায়ি।

তিনি বলেন, বাজার একবার উঠলে আবার পড়বে। এটাকে কারেকশন বললেও এটা কারেকশন না। কয়েকটি গ্রুপ রাতে বসে ঠিক করে আগামীকাল কোন্ শেয়ারের দাম বাড়বে। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কি করার আছে! তবে এখানে এসইসির করণীয় আছে। কোন কোন শেয়ার যখন প্রিমিয়ামে বিক্রি হয়, সেখানে তারা অতিরিক্ত প্রিমিয়াম কেন দেয়? বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসইসি এ দু'টির আলাদা চার্টার আছে। তারা বিনা চার্টারে কাজ করে না। কার চার্টারে কি আছে সেটা দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে, আইন রয়েছে সেখানে কোথাও লেখা নেই যে স্টক মার্কেট বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে।

বাজারের এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কি হতে পারে এমন প্রশ্ন অনেকেই করছেন। তবে বিরাজমান অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন পথ আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। অস্বাভাবিক উত্থান হলে এভাবেই পতন হয়। তবে একটা পথ বলতে আমি বলবো এই অবস্থায় এসইসিকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্গঠন করা না হলে শেয়ারবাজার ঠিক করা যাবে না। এখানে সৎ ও দক্ষ লোক বসিয়ে বাজার পরিচালনা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, শোনা যায় শেয়ারবাজারের এই দরপতন সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে সঠিক তথ্য দেয়নি।

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার এ সপ্তাহের মধ্যেই সিকিউরিটি একচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) রদবদল করছে।

--------

ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে খামারের মুরগি ও মাছের খাবার তৈরি

ইত্তেফাক রিপোর্ট জানুয়ারি ২৩, ২০১১, রবিবার : ১০ মাঘ, ১৪১৭

আবুল খায়ের

একশ্রেণীর অর্থলোভী ব্যবসায়ী ট্যানারীর বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে মুরগি ও মাছের খাদ্য তৈরি করে বাজারজাত করছে দেদারসে। মুরগি ও মাছের খামারে এই খাবার নিয়মিত খাওয়ানো হচ্ছে। এই বিষাক্ত ফিড খেলে মুরগি ও মাছ দ্রুত বড় হয়ে থাকে। ক্যান্সার ও কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি ফিড বাজারে পাওয়া যায়। এই খাবার খেয়ে মুরগি বা মাছ বড় হলে এবং পরবতর্ীতে তা মানুষ খেলেও কোন ধরনের সমস্যা নেই। কিন্তু ট্যানারীর বিষাক্ত বর্জর্্য দিয়ে তৈরি খাবার হাঁস-মুরগি খেলে মাংসে বিষাক্ত কেমিক্যাল থাকবে নিশ্চিত। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ক্রোমিয়াম রয়েছে এসব পোল্ট্রি ফিডে। এই ক্রোমিয়াম মরণব্যাধি ক্যান্সার সৃষ্টিতে একশতভাগ সহায়তা করে থাকে। বর্তমানে শিশু থেকে তরুণ বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ক্যান্সার ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার এটাই অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অভিমত ব্যক্ত করেন।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, শুধু হাঁস-মুরগি নয়, একই বর্জ্য দিয়ে মাছের খাবার তৈরি করা হয়ে থাকে। ওই খাবার খাওয়া মাছ খেলেও একই ধরনের ক্যান্সার হওয়ার আশংকা একশত ভাগ বলে বিশেষজ্ঞগণ জানিয়েছেন।

গতকাল শনিবার সরেজমিনে হাজারীবাগ ট্যানারী এলাকা এবং ভেড়িবাঁধের পাশে শতাধিক কারখানায় বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে হাঁস-মুরগি এবং মাছের খাবার তৈরি করার দৃশ্য দেখা যায়। উৎপাদনকারী শ্রমিক ও ট্যানারীর মালিক এবং শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে বর্জ্য দিয়ে যে প্রক্রিয়ায় হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার তৈরির পুরা তথ্য জানান।

বিষাক্ত কেমিক্যালের পাশর্্বপ্রতিক্রিয়ায় কারখানার শ্রমিকরা নানা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কানে কম শোনে ও চোখে কম দেখে, সর্দি-কাঁশি ও নানা রোগ শরীরে লেগেই আছে। এমন তথ্য শ্রমিকরা জানান।

শুধু শ্রমিকরা নয়, আশপাশের বাসিন্দারাও কেমিক্যালের পাশর্্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত। তারাও একই ধরনের রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাদের বাসাবাড়িতে রক্ষিত স্বর্ণালংকারের রং পরিবর্তন ও ব্যবহূত নানা জিনিসপত্র দ্রুত ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এসবই বিষাক্ত কেমিক্যালের পাশর্্বপ্রতিক্রিয়ার কুফল বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

ট্যানারীর দুই মালিক জানান, কাঁচা চামড়াকে প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্রোমিয়াম, চুনা, সোডিয়াম সালফাইড, সালফিউরিক এসিড, ফরমিক এসিড ও সোডিয়াম ফরমেটসহ নানা ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এছাড়া চামড়া সংরক্ষণ ও যাতে ঐ চামড়া ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত না হয়, সেইজন্য অন্য কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই কেমিক্যাল ট্যানারীর বর্জ্যে থাকা একশতভাগ নিশ্চিত। এই বর্জ্য হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার উৎপাদনকারী এবং সাবান তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ নিয়মিত ট্যানারী থেকে ক্রয় করে নিচ্ছে বলে তারা জানান।

বর্জ্য ছাড়াও বিষাক্ত ভুষি ট্যানারী থেকে সংগ্রহ করা হয়। শুকনা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় ভুষি বের হয়। এটা দিয়ে সহজে মুরগির খাবার তৈরি করা হয়। পোল্ট্রি ফিড তৈরির জন্য স্বল্প মূল্যে ট্যানারি থেকে এই বিষাক্ত বর্জ্য ক্রয় করা হয়ে থাকে।

শ্রমিক শওকত, আলম, হানিফ, কমলা বেগম, আবুল বাসার, মোতালেব, সোহেল, আসমা বেগম ও দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রতিদিন প্রত্যেকটি কারখানার জন্য ৫/৬টি গাড়ি করে বর্জ্য বিভিন্ন ট্যানারি থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তারা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রতিদিন শতাধিক কারখানার জন্য ট্যানারী থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করেন। এই বর্জ্য শুকিয়ে বস্তাজাত করা হয়। ট্রাকভর্তি করে প্রতিদিন পোল্ট্রি ফার্ম কিংবা মাছের খামারের মালিকগণ এই খাবার ক্রয় করে নিয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কারখানার মালিক বলেন, ভাল পোল্ট্রি ফিড (বিজ্ঞানসম্মতভাবে) তৈরি প্রতিকেজি প্রায় ৫০ টাকা এবং ট্যানারী বর্জ্য দিয়ে তৈরি পোল্ট্রি ফিড প্রতি কেজির মূল্য মাত্র ৮ থেকে ১০ টাকা। এই বর্জ্যের ফিড ফার্মের হাঁস-মুরগি কিংবা চাষ করা মাছকে খাওয়ালে দ্রুত বেড় উঠে। অধিক মুনাফার লোভে এই জঘন্য কাজ পোল্ট্রি ফার্ম ও মাছের খামার মালিকগণ বছরের পর বছর করে যাচ্ছেন। ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিষাক্ত বর্জ্য সংগ্রহ করে তারা পোল্ট্রি ফিড তৈরি করছেন বলে জানান।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আকরাম হোসেন বলেন, বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে উৎপাদিত পোল্ট্রি ফিড খামারের হাঁস-মুরগি ও মাছকে খাওয়ালে সেইগুলোর দেহে বিষাক্ত কেমিক্যাল ক্রোমিয়াম সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায়। এই সকল হাঁস-মুরগি ও মাছ মানুষ খেলে লিভার, পাকস্থলীসহ দেহের বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার এবং কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক মনোয়ার ইসলাম বলেন, বিষাক্ত বর্জ্য থেকে পোল্ট্রি ফিড তৈরিকালে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। ইতিপূর্বে পরিবেশ ও মানব দেহের জন্য এই সকল ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা বন্ধ করা হয়েছিল। এবারও কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নিলুফার নাহার ও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ আবুল হাসনাত বলেন, হাঁস-মুরগি ও মাছের খামারের জন্য কত ধরনের বিজ্ঞানসম্মত তৈরি খাবার রয়েছে। তা নিয়মিত খাওয়ালে মানবদেহে কোন ঝুঁকি নেই। জেনে-শুনে অধিক মুনাফার লোভে এবং পোল্ট্রি ফার্ম ধ্বংস করার জন্য বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে উৎপাদিত পোল্ট্রি ফিড ব্যবহার করা হচ্ছে। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের জাতি ধ্বংসের এই ব্যবসা বন্ধ করে অন্য উপায় বেছে নেয়ার জন্য তারা আহ্বান জানিয়েছেন।

-------

শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদন প্রথম আলো

একদল তরুণের স্বপ্নযাত্রা

অরুণ কর্মকার, রশীদপুর (মৌলভীবাজার) থেকে ফিরে | তারিখ: ২২-০১-২০১১


তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দেশে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করছেন একদল তরুণ পেশাজীবী। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রিধারী এই তরুণ দলের গড় বয়স ৩০-এর কিছু বেশি। তাঁরা রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের কর্মকর্তা ও ভূকম্পন জরিপ দলের সদস্য। মৌলভীবাজারের রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ পরিচালনা করছেন তাঁরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জরিপের মাধ্যমে বাপেক্সের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হচ্ছে। কারণ, এ কাজের জন্য যে প্রযুক্তি ও দক্ষতা দরকার, তা আন্তর্জাতিক মানের। এর মাধ্যমে বাপেক্স স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের উচ্চমান ও সামর্থ্য অর্জন করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেসব ক্ষেত্রের বিশেষ কোনো অর্জন দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানের আসনে বসাতে পারে, ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ এর একটি। এ দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ১০০ বছরের ইতিহাসে রাষ্ট্রীয় কোম্পানির পরিচালিত ত্রিমাত্রিক জরিপ এই প্রথম।
এ কাজে উপগ্রহভিত্তিক ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ (পৃথিবীর অবস্থান সাপেক্ষে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো স্থান নির্ধারণের পদ্ধতি) থেকে শুরু করে সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভূগর্ভে ডিনামাইট ফাটিয়ে শব্দসংকেতের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে ৩২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রের আট কিলোমিটার (আট হাজার মিটার) গভীরের প্রতি ইঞ্চি জায়গার তথ্য। এটি এতই নিবিড় অনুসন্ধান জরিপ, যাতে ভূগর্ভের একেকটি জায়গার তথ্য ৪৮ বার করে সংগৃহীত হবে।
এর আগে দেশে মাত্র পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রে (বিবিয়ানা, ছাতক, বাঙ্গুরা, ফেনী ও সাগরবক্ষের মগনামা) ত্রিমাত্রিক জরিপ করা হয়েছে। ওই ক্ষেত্রগুলো উৎপাদন অংশীদারি চুক্তির (পিএসসি) ভিত্তিতে পরিচালনা করছে বিদেশি কোম্পানি (আইওসি)। তবে এসব জরিপে ছয় হাজার মিটারের বেশি গভীরতার তথ্য সংগৃহীত হয়নি।
রশীদপুরে বাপেক্সের তরুণ দলের কাজের পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও মান সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই জরিপকাজ পরিদর্শন করে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাজ বাপেক্সকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দিচ্ছে। বাপেক্সের ওই অনুসন্ধানী দল দেশের বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রগুলোর প্রকৃত মজুদের চিত্র আরও সুনির্দিষ্টভাবে তুলে আনতে পারবে। এরপর দেশের স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানির দরকার হবে না। বরং বিদেশি কোম্পানির হয়েও বাপেক্সই ত্রিমাত্রিক জরিপ করে দিতে পারবে।
রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস ও খনিজ করপোরেশন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর বলেন, ‘ত্রিমাত্রিক জরিপ, অনুসন্ধান কূপ খনন, পুরোনো কূপের সংস্কার (ওয়ার্কওভার) প্রভৃতিসহ বাপেক্সের কাজের যে ধারা আমরা লক্ষ করছি, তাতে শিগগিরই এটি একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হতে পারবে। এর জন্য সরকারি যে সহায়তা দরকার, তা দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে পাওয়া গেছে। দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ যথাসম্ভব দ্রুততর করা হচ্ছে।’
রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্র: মৌলভীবাজার জেলার এই গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান ঢাকা থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। এটি রাষ্ট্রীয় খাতের সেই পাঁচটি পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রের একটি, যেগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে মাত্র ৪৫ লাখ পাউন্ডে কিনে রেখেছিলেন আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি শেল অয়েলের কাছ থেকে। ক্ষেত্রটি এখন পরিচালনা করছে পেট্রোবাংলার অন্যতম প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফএল)।
রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রটি ১৯৬০ সালে আবিষ্কার করে তৎকালীন পাকিস্তান শেল অয়েল কোম্পানি। তখন ওই ক্ষেত্রে গ্যাসের মোট মজুদ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ দশমিক ০০১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুদ নির্ধারণ করা হয় ১ দশমিক ৪০১ টিসিএফ। ক্ষেত্রটিতে এখন পর্যন্ত সাতটি কূপ খনন করা হয়েছে, যার পাঁচটি থেকে বর্তমানে গ্যাস তোলা হচ্ছে প্রতিদিন পাঁচ কোটি (৫০ মিলিয়ন) ঘনফুট করে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষেত্রটি থেকে গ্যাস তোলা হয়েছে প্রায় ৪৭০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। উত্তোলনযোগ্য মজুদ অবশিষ্ট আছে ৯৩০ দশমিক ৫৯ বিসিএফের মতো। এই গ্যাসক্ষেত্রে আরেকটি নতুন কূপ খনন এবং পুরোনো একটি কূপ সংস্কারের প্রক্রিয়া চলছে।
ত্রিমাত্রিক জরিপ কেন: ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের মূল উদ্দেশ্য কোনো ক্ষেত্রে গ্যাসের প্রকৃত মজুদ নির্ণয় এবং ভূগর্ভের গ্যাসসমৃদ্ধ বালু ও স্থানগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা। ত্রিমাত্রিক জরিপের ফলে একদিকে যেমন দেশে গ্যাসের প্রকৃত মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে, তেমনই গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উন্নয়ন কূপ খননের ক্ষেত্রে কোনো কূপ গ্যাসশূন্য (ড্রাই হোল) পাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
কিন্তু প্রযুক্তির অভাব ও আর্থিক দৈনতার কারণে এর আগে রাষ্ট্রীয় কোনো গ্যাসক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করা যায়নি। রশীদপুরে বাপেক্সের পরিচালিত জরিপে ২৯ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১১ কিলোমিটার প্রস্থ ভূ-কাঠামোর বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। এরপর এই তরুণ দল একে একে আরও চারটি ক্ষেত্রে (কৈলাশটিলা, হরিপুর, বাখরাবাদ ও তিতাস) ত্রিমাত্রিক জরিপ চালাবে।
এই জরিপে রশীদপুর ক্ষেত্রের নতুন কী তথ্য জানার সম্ভাবনা রয়েছে, জানতে চাইলে জরিপ দলের প্রধান (ভূকম্পন জরিপের ভাষায় ‘পার্টি চিফ’) মেহেরুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রের ভূ-কাঠামোটির অবস্থান ভূগর্ভের একটি চ্যুতির দুই পাশজুড়ে। কিন্তু শুরুতে যে জরিপ হয়েছে, তাতে এক পাশের তথ্য আছে। এখন সম্পূর্ণ কাঠামোটি জরিপের আওতায় আসায় পুরো ক্ষেত্রটির প্রকৃত মজুদ এবং ঠিক কোন জায়গায় কূপ খনন করলে গ্যাস পাওয়া নিশ্চিত হবে, তা জানা যাবে।
কীভাবে করা হয়: ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ প্রকল্পে বাপেক্সের পক্ষ থেকে নিযুক্ত পরিচালক আনোয়ারুর রহমান বলেন, কারিগরি ও ব্যবস্থাপনাগত দিক দিয়ে এই জরিপ এক বিরাট কর্মযজ্ঞ। রশীদপুরে এই কর্মযজ্ঞ সাফল্যের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।
সরেজমিন রশীদপুর পরিদর্শনের সময় বাপেক্সের জরিপ দলের কর্মকর্তারা জানান, জরিপের প্রধান উপাদানগুলো হচ্ছে উপগ্রহভিত্তিক ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে ডিনামাইট বিস্ফোরণ ও এর শব্দসংকেত থেকে পাওয়া তথ্য সংগ্রহের জন্য জিওফোন স্থাপনের সুনির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা; বিস্ফোরক স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে ১২ মিটার গভীর (রশীদপুর ক্ষেত্রের জন্য নির্ধারিত) গর্ত করা; সেখানে ৫০ মিটার পর পর বিস্ফোরক স্থাপন ও বিস্ফোরণ ঘটানো; ওই বিস্ফোরণের শব্দসংকেতের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য ৫০ মিটার পর পর রেকর্ড করা; কম্পিউটারে সেই তথ্যের মান যাচাই; প্রয়োজনে নতুন করে কোনো স্থানের তথ্য সংগ্রহ ও পুনরায় তা যাচাই করা এবং সবশেষে ওই তথ্য বিশ্লেষণ করার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো।
১৪ সদস্যের তরুণ বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তার দলটি সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করলেও প্রতিটি উপাদানের জন্য রয়েছে আলাদা কর্মী দল। রশীদপুরে এই কর্মী দলের সদস্যসংখ্যা এক হাজার ২৪২ জন। অবশ্য মূল প্রকল্প প্রস্তাবে এই সংখ্যা নির্ধারিত ছিল প্রায় দুই হাজার ৩০০ জন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে লোকবল কমানো হয়েছে। এতে কর্মীদের সবাইকে অনেক বেশি সময় কাজ করতে হচ্ছে।
মার্কিন সেনাবাহিনীর অনুমতি: ত্রিমাত্রিক জরিপের প্রথম ধাপ পৃথিবীর অবস্থান সাপেক্ষে রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান নির্ণয় করা। এর জন্য এবং পরে তথ্য সংগ্রহের জন্য ক্ষেত্রটির কোথায় কোথায় বিস্ফোরক ও জিওফোন বসাতে হবে, তা নির্ধারণের জন্য উপগ্রহভিত্তিক ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ ব্যবহার অপরিহার্য। কিন্তু জাতিসংঘের অনুমোদন নিয়ে এই পদ্ধতি পৃথিবীব্যাপী তৈরি করে রেখেছে মার্কিন সেনাবাহিনী। এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই তারা পৃথিবীর যেকোনো লক্ষ্যে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। বাংলাদেশেও এ রকম ৪০টি পয়েন্ট রয়েছে, যেখানে ‘রিয়াল টাইম কিনেমেটিকস (আরটিকে)’ নামক যন্ত্র স্থাপন করে পৃথিবীর অবস্থান সাপেক্ষে যেকোনো স্থান নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যায়।
তবে এসব পয়েন্ট ব্যবহার করার জন্য মার্কিন সেনাবাহিনীর অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। তারা অনুমোদন দিলেই শুধু উপগ্রহ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য আরটিকেতে আসবে। পরে ওই তথ্য ব্যবহার করে স্থান নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য মার্কিন সেনাবাহিনী এই অনুমোদন দেয়। তবে শর্তও দিয়ে দেয় যে এই পদ্ধতি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
কাজ শুরু হয় গত বছর: রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক জরিপের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০০৬ সালে। ২০১০ সালে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদন, সংশোধন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণসহায়তা গ্রহণ প্রভৃতি কারণে এই কাজ শুরু হয় গত বছরের মে মাসে। কিন্তু বর্ষাকাল হওয়ায় মাঠপর্যায়ে এই কাজের উপযুক্ত সময় সেটি ছিল না। তার পরও ৫৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তখনই জরিপ সম্পন্ন করা হয়। এরপর বিরতি শেষে গত বছরের ৫ অক্টোবর পুনরায় কাজ শুরু হয়।
শুরুতে উপগ্রহভিত্তিক ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ ব্যবহার করে রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রের প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় করা হয়। এর পাশাপাশি চলতে থাকে বিস্ফোরক আমদানি ও সংরক্ষণের জায়গা (পিট ম্যাগাজিন) তৈরির কাজ। এরপর ক্ষেত্রটির মাঠপর্যায়ে পাশাপাশি চলতে থাকে সার্ভে অর্থাৎ কোথায় কোথায় গর্ত করে বিস্ফোরক বসানো হবে, কোথায়ই বা বসানো হবে জিওফোন।
সার্ভে অনুযায়ী প্রতিটি পয়েন্টে ১২ মিটার গভীর করে প্রতিদিন প্রায় ২০০ গর্ত করে ‘ড্রিলিং টিম’। ওই গর্তে বিস্ফোরক স্থাপন করে ‘লোডিং টিম’। এলাকাভেদে আধা কেজি থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক স্থাপন করা হয়। ‘শ্যুটিং টিম’ বিস্ফোরক স্থাপন ঠিকমতো হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রস্তুতি নিয়ে বেতারের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ‘রেকর্ডিং ওয়াগন’-এর সঙ্গে।
এই রেকর্ডিং ওয়াগনটি স্থাপন করা হয় জরিপ এলাকার ঠিক মধ্যস্থানে। জরিপের কাজ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে এই ওয়াগনের অবস্থানও বদলায়। সেখানে সর্বাধুনিক সফটওয়্যার-সমৃদ্ধ কম্পিউটারের সামনে বসে থাকেন দুজন তরুণ বিশেষজ্ঞ। তাঁরা রেডিও সংকেতের মাধ্যমে নির্দেশ দিলে শ্যুটিং টিম একেকটি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটায়। একেকটি বিস্ফোরণের শব্দতরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে ভূগর্ভের আট কিলোমিটার গভীরে এবং চারপাশের নির্দিষ্ট এলাকায়। একেকটি বিস্ফোরণের শব্দতরঙ্গ মোট এক হাজার ৪৪০টি চ্যানেলের মাধ্যমে তথ্যসংকেত পৌঁছে দেয় জিওফোন বা রিসিভিং পয়েন্টে।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি রেকর্ডিং ওয়াগনে বসে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেখানে তথ্য সন্নিবেশিত হয়। এই তথ্য পাঠানো হয় বেইজ ক্যাম্প-১-এ। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসজ্জিত ওই ক্যাম্পে রাতভর চলে তথ্যের মান যাচাই। তাতে কোনো তথ্যের মান খারাপ দেখা গেলে সেখানে আবার পরদিন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নতুন করে তথ্য নেওয়া হয়। আর সব ঠিক থাকলে ওই তথ্য ঢাকার বিশ্লেষণ কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়।
সাড়ে ২৮ মানবমাসের পরামর্শক: পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রের মোট এক হাজার ২৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক জরিপ চালানোর জন্য মোট বরাদ্দ রয়েছে ১৬৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া আরও ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ফরাসি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে, যারা পাঁচটি ক্ষেত্রের জন্য মোট সাড়ে ২৮ মানবমাস (একজন মানুষের সাড়ে ২৮ মাস কাজ করার সমান) কাজ করে দেবে। সিজিজি ভেরিতাস নামক ওই প্রতিষ্ঠানের কেউ বাংলাদেশে থাকেন না। কোনো করিগরি বিষয়ে সন্দেহ বা অস্পষ্টতা দেখা দিলেই শুধু তাঁদের পরামর্শ নেওয়া হয়।
আইওসি ছেড়ে বাপেক্সে: এই জরিপ দলের ‘পার্টি চিফ’ মেহেরুল হোসেন ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর বিদেশি কোম্পানিতে (আইওসি) কাজ শুরু করেন এবং আইওসিদের পরিচালিত চারটি ত্রিমাত্রিক জরিপে অংশ নেন। অনেকে যেখানে দেশীয় কোম্পানি ছেড়ে আইওসির চাকরি নেন, সেখানে তিনি আইওসির চাকরি ছেড়ে দেশীয় কোম্পানিতে এলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর চাকরি করার পর আমার বাবা বললেন, বিদেশি কোম্পানির জন্য অনেক কাজ করেছ। এখন দেশের জন্য কিছু করো। তাই বাপেক্সে চাকরি নিয়েছি।’
মেহেরুল বলেন, তিনি মনে করেন, তাঁর বাবার প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। এই দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি আনার জন্য কাজ করতে হবে তাঁদের প্রজন্মকে। মেহেরুলের বাবা মো. আবু বকর হাওলাদার ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বরিশালের কামারখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি।
মেহেরুলের নেতৃত্বাধীন জরিপ দলের সদস্যরা বলেন, তাঁদের স্বপ্ন হচ্ছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দেশকে স্বয়ম্ভর করে তোলা। শুধু স্থলভাগে নয়, তাঁরা সমুদ্রবক্ষেও ত্রিমাত্রিক জরিপ চালানোর স্বপ্ন দেখেন।
এরপর কৈলাশটিলা: রশীদপুরে জরিপের কাজ শেষ পর্যায়ে। সেখানে মোট ১৮ হাজার ৮১৬টির মধ্যে সাড়ে ১৮ হাজারেরও বেশি ডিনামাইট বিস্ফোরণ ঘটানো হয়ে গেছে। ২১ হাজার ৭৮০টির মধ্যে সাড়ে ২১ হাজারের বেশি জিওফোন পয়েন্টে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করাও শেষ। এরপর জরিপ শুরু হবে সিলেটের কৈলাশটিলা ক্ষেত্রে। চলতি শুকনো মৌসুমের মধ্যেই যাতে কৈলাশটিলার জরিপও শেষ করা যায়, সেই লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি চলছে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির পক্ষ থেকে নিযুক্ত এই জরিপের প্রকল্প পরিচালক প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, একটি মৌসুমে দুটি ক্ষেত্রের জরিপ শেষ করতে পারলে তা হবে আরেকটি নতুন ইতিহাস।