১৫ হাজার কোটি টাকা লুটেছেন আওয়ামী লীগ বিএনপির ১০-১৫ রাজনীতিক ব্যবসায়ী
শেয়ার বাজারের লুটে নেয়া এই টাকা দেশে আর কোনদিন বিনিয়োগ হবে না
-খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ
০০ ইত্তেফাক রিপোর্ট জানুয়ারি ২৩, ২০১১, রবিবার : ১০ মাঘ, ১৪১৭
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির ১০/১৫জন ব্যবসায়ী রাজনীতিক শেয়ারবাজার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। কিন্তু এই টাকাটা তারা আর কোন দিন বিনিয়োগ করবেন না। এই টাকাটা তারা মেরে দিয়েছেন। গতকাল শনিবার ইত্তেফাককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। কিভাবে শেয়ারবাজারের এ লুটপাটটা হলো তা জানতে চাইলে তিনি বলেন,'আমার প্রশ্ন হলো, শেয়ারবাজারের যখন দাম বাড়লো তখন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনলো। কিন্তু যখন দাম পড়ে গেল তখন টাকাটা কোথায় গেল? আমি বলবো, এই টাকাটা কয়েকজনের পকেটে চলে গেছে। লুটে নেয়া এই ১৫ হাজার কোটি টাকা দেশে আর কোনদিন বিনিয়োগ হবে না। আমি মনে করি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে শুধু একটি দলের লোক জড়িত নন। উভয় দলের লোকজন এখানে জড়িত। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও পুঁজিবাজারে তাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। বিরোধ হলো সংসদে গিয়ে।
দেশের সাধারণ মানুষের টাকা একাট্টা হয়ে মেরে দিতে তাদের কোন অসুবিধা নেই।' খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ আরো বলেন, আমি বলবো কোন কোন ক্ষেত্রে এসইসি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত। অথবা তাদের অসহায়ত্ব ছিল। তা না হলে এটি কিভাবে হলো। তাদের দায়িত্ব হলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। যখন সরকার থেকে শেয়ার ছাড়ার কথা ছিল সেটা করা গেল না। যেখানে শেয়ার কম সেখানে এতো টাকা বাজারে এলো কী করে? সিকিউরিটি একচেঞ্জ কমিশনের (এসইসির) কাজ হলো বাজারে কোন সমস্যা হলে প্রয়োজনে বাজার কখনও টেনে ধরা কিংবা ছেড়ে দেয়া। কিন্তু এসইসি সেটা না করে বরং উল্টোটা করেছে। যখন টেনে ধরার দরকার ছিল তখন তারা দাম বাড়ায় সহায়তা করছে। না হলে বাজারে দাম বাড়লো কেন? শেয়ারবাজার সংশিস্নষ্টতায় সরকার মানে তো এসইসি, সরকার মানেতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নন। এই কারসাজির জন্য এসইসিই দায়ি।
তিনি বলেন, বাজার একবার উঠলে আবার পড়বে। এটাকে কারেকশন বললেও এটা কারেকশন না। কয়েকটি গ্রুপ রাতে বসে ঠিক করে আগামীকাল কোন্ শেয়ারের দাম বাড়বে। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কি করার আছে! তবে এখানে এসইসির করণীয় আছে। কোন কোন শেয়ার যখন প্রিমিয়ামে বিক্রি হয়, সেখানে তারা অতিরিক্ত প্রিমিয়াম কেন দেয়? বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসইসি এ দু'টির আলাদা চার্টার আছে। তারা বিনা চার্টারে কাজ করে না। কার চার্টারে কি আছে সেটা দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে, আইন রয়েছে সেখানে কোথাও লেখা নেই যে স্টক মার্কেট বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে।
বাজারের এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কি হতে পারে এমন প্রশ্ন অনেকেই করছেন। তবে বিরাজমান অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন পথ আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। অস্বাভাবিক উত্থান হলে এভাবেই পতন হয়। তবে একটা পথ বলতে আমি বলবো এই অবস্থায় এসইসিকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্গঠন করা না হলে শেয়ারবাজার ঠিক করা যাবে না। এখানে সৎ ও দক্ষ লোক বসিয়ে বাজার পরিচালনা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, শোনা যায় শেয়ারবাজারের এই দরপতন সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে সঠিক তথ্য দেয়নি।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার এ সপ্তাহের মধ্যেই সিকিউরিটি একচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) রদবদল করছে।
--------
ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে খামারের মুরগি ও মাছের খাবার তৈরি
ইত্তেফাক রিপোর্ট জানুয়ারি ২৩, ২০১১, রবিবার : ১০ মাঘ, ১৪১৭
আবুল খায়ের
একশ্রেণীর অর্থলোভী ব্যবসায়ী ট্যানারীর বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে মুরগি ও মাছের খাদ্য তৈরি করে বাজারজাত করছে দেদারসে। মুরগি ও মাছের খামারে এই খাবার নিয়মিত খাওয়ানো হচ্ছে। এই বিষাক্ত ফিড খেলে মুরগি ও মাছ দ্রুত বড় হয়ে থাকে। ক্যান্সার ও কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি ফিড বাজারে পাওয়া যায়। এই খাবার খেয়ে মুরগি বা মাছ বড় হলে এবং পরবতর্ীতে তা মানুষ খেলেও কোন ধরনের সমস্যা নেই। কিন্তু ট্যানারীর বিষাক্ত বর্জর্্য দিয়ে তৈরি খাবার হাঁস-মুরগি খেলে মাংসে বিষাক্ত কেমিক্যাল থাকবে নিশ্চিত। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ক্রোমিয়াম রয়েছে এসব পোল্ট্রি ফিডে। এই ক্রোমিয়াম মরণব্যাধি ক্যান্সার সৃষ্টিতে একশতভাগ সহায়তা করে থাকে। বর্তমানে শিশু থেকে তরুণ বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ক্যান্সার ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার এটাই অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, শুধু হাঁস-মুরগি নয়, একই বর্জ্য দিয়ে মাছের খাবার তৈরি করা হয়ে থাকে। ওই খাবার খাওয়া মাছ খেলেও একই ধরনের ক্যান্সার হওয়ার আশংকা একশত ভাগ বলে বিশেষজ্ঞগণ জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে হাজারীবাগ ট্যানারী এলাকা এবং ভেড়িবাঁধের পাশে শতাধিক কারখানায় বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে হাঁস-মুরগি এবং মাছের খাবার তৈরি করার দৃশ্য দেখা যায়। উৎপাদনকারী শ্রমিক ও ট্যানারীর মালিক এবং শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে বর্জ্য দিয়ে যে প্রক্রিয়ায় হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার তৈরির পুরা তথ্য জানান।
বিষাক্ত কেমিক্যালের পাশর্্বপ্রতিক্রিয়ায় কারখানার শ্রমিকরা নানা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কানে কম শোনে ও চোখে কম দেখে, সর্দি-কাঁশি ও নানা রোগ শরীরে লেগেই আছে। এমন তথ্য শ্রমিকরা জানান।
শুধু শ্রমিকরা নয়, আশপাশের বাসিন্দারাও কেমিক্যালের পাশর্্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত। তারাও একই ধরনের রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাদের বাসাবাড়িতে রক্ষিত স্বর্ণালংকারের রং পরিবর্তন ও ব্যবহূত নানা জিনিসপত্র দ্রুত ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এসবই বিষাক্ত কেমিক্যালের পাশর্্বপ্রতিক্রিয়ার কুফল বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
ট্যানারীর দুই মালিক জানান, কাঁচা চামড়াকে প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্রোমিয়াম, চুনা, সোডিয়াম সালফাইড, সালফিউরিক এসিড, ফরমিক এসিড ও সোডিয়াম ফরমেটসহ নানা ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এছাড়া চামড়া সংরক্ষণ ও যাতে ঐ চামড়া ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত না হয়, সেইজন্য অন্য কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই কেমিক্যাল ট্যানারীর বর্জ্যে থাকা একশতভাগ নিশ্চিত। এই বর্জ্য হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার উৎপাদনকারী এবং সাবান তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ নিয়মিত ট্যানারী থেকে ক্রয় করে নিচ্ছে বলে তারা জানান।
বর্জ্য ছাড়াও বিষাক্ত ভুষি ট্যানারী থেকে সংগ্রহ করা হয়। শুকনা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় ভুষি বের হয়। এটা দিয়ে সহজে মুরগির খাবার তৈরি করা হয়। পোল্ট্রি ফিড তৈরির জন্য স্বল্প মূল্যে ট্যানারি থেকে এই বিষাক্ত বর্জ্য ক্রয় করা হয়ে থাকে।
শ্রমিক শওকত, আলম, হানিফ, কমলা বেগম, আবুল বাসার, মোতালেব, সোহেল, আসমা বেগম ও দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রতিদিন প্রত্যেকটি কারখানার জন্য ৫/৬টি গাড়ি করে বর্জ্য বিভিন্ন ট্যানারি থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তারা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রতিদিন শতাধিক কারখানার জন্য ট্যানারী থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করেন। এই বর্জ্য শুকিয়ে বস্তাজাত করা হয়। ট্রাকভর্তি করে প্রতিদিন পোল্ট্রি ফার্ম কিংবা মাছের খামারের মালিকগণ এই খাবার ক্রয় করে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কারখানার মালিক বলেন, ভাল পোল্ট্রি ফিড (বিজ্ঞানসম্মতভাবে) তৈরি প্রতিকেজি প্রায় ৫০ টাকা এবং ট্যানারী বর্জ্য দিয়ে তৈরি পোল্ট্রি ফিড প্রতি কেজির মূল্য মাত্র ৮ থেকে ১০ টাকা। এই বর্জ্যের ফিড ফার্মের হাঁস-মুরগি কিংবা চাষ করা মাছকে খাওয়ালে দ্রুত বেড় উঠে। অধিক মুনাফার লোভে এই জঘন্য কাজ পোল্ট্রি ফার্ম ও মাছের খামার মালিকগণ বছরের পর বছর করে যাচ্ছেন। ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিষাক্ত বর্জ্য সংগ্রহ করে তারা পোল্ট্রি ফিড তৈরি করছেন বলে জানান।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আকরাম হোসেন বলেন, বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে উৎপাদিত পোল্ট্রি ফিড খামারের হাঁস-মুরগি ও মাছকে খাওয়ালে সেইগুলোর দেহে বিষাক্ত কেমিক্যাল ক্রোমিয়াম সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায়। এই সকল হাঁস-মুরগি ও মাছ মানুষ খেলে লিভার, পাকস্থলীসহ দেহের বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার এবং কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক মনোয়ার ইসলাম বলেন, বিষাক্ত বর্জ্য থেকে পোল্ট্রি ফিড তৈরিকালে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। ইতিপূর্বে পরিবেশ ও মানব দেহের জন্য এই সকল ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা বন্ধ করা হয়েছিল। এবারও কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নিলুফার নাহার ও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ আবুল হাসনাত বলেন, হাঁস-মুরগি ও মাছের খামারের জন্য কত ধরনের বিজ্ঞানসম্মত তৈরি খাবার রয়েছে। তা নিয়মিত খাওয়ালে মানবদেহে কোন ঝুঁকি নেই। জেনে-শুনে অধিক মুনাফার লোভে এবং পোল্ট্রি ফার্ম ধ্বংস করার জন্য বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে উৎপাদিত পোল্ট্রি ফিড ব্যবহার করা হচ্ছে। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের জাতি ধ্বংসের এই ব্যবসা বন্ধ করে অন্য উপায় বেছে নেয়ার জন্য তারা আহ্বান জানিয়েছেন।
-------
শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদন প্রথম আলো
-খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ
০০ ইত্তেফাক রিপোর্ট জানুয়ারি ২৩, ২০১১, রবিবার : ১০ মাঘ, ১৪১৭
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির ১০/১৫জন ব্যবসায়ী রাজনীতিক শেয়ারবাজার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। কিন্তু এই টাকাটা তারা আর কোন দিন বিনিয়োগ করবেন না। এই টাকাটা তারা মেরে দিয়েছেন। গতকাল শনিবার ইত্তেফাককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। কিভাবে শেয়ারবাজারের এ লুটপাটটা হলো তা জানতে চাইলে তিনি বলেন,'আমার প্রশ্ন হলো, শেয়ারবাজারের যখন দাম বাড়লো তখন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনলো। কিন্তু যখন দাম পড়ে গেল তখন টাকাটা কোথায় গেল? আমি বলবো, এই টাকাটা কয়েকজনের পকেটে চলে গেছে। লুটে নেয়া এই ১৫ হাজার কোটি টাকা দেশে আর কোনদিন বিনিয়োগ হবে না। আমি মনে করি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে শুধু একটি দলের লোক জড়িত নন। উভয় দলের লোকজন এখানে জড়িত। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও পুঁজিবাজারে তাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। বিরোধ হলো সংসদে গিয়ে।
দেশের সাধারণ মানুষের টাকা একাট্টা হয়ে মেরে দিতে তাদের কোন অসুবিধা নেই।' খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ আরো বলেন, আমি বলবো কোন কোন ক্ষেত্রে এসইসি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত। অথবা তাদের অসহায়ত্ব ছিল। তা না হলে এটি কিভাবে হলো। তাদের দায়িত্ব হলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। যখন সরকার থেকে শেয়ার ছাড়ার কথা ছিল সেটা করা গেল না। যেখানে শেয়ার কম সেখানে এতো টাকা বাজারে এলো কী করে? সিকিউরিটি একচেঞ্জ কমিশনের (এসইসির) কাজ হলো বাজারে কোন সমস্যা হলে প্রয়োজনে বাজার কখনও টেনে ধরা কিংবা ছেড়ে দেয়া। কিন্তু এসইসি সেটা না করে বরং উল্টোটা করেছে। যখন টেনে ধরার দরকার ছিল তখন তারা দাম বাড়ায় সহায়তা করছে। না হলে বাজারে দাম বাড়লো কেন? শেয়ারবাজার সংশিস্নষ্টতায় সরকার মানে তো এসইসি, সরকার মানেতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নন। এই কারসাজির জন্য এসইসিই দায়ি।
তিনি বলেন, বাজার একবার উঠলে আবার পড়বে। এটাকে কারেকশন বললেও এটা কারেকশন না। কয়েকটি গ্রুপ রাতে বসে ঠিক করে আগামীকাল কোন্ শেয়ারের দাম বাড়বে। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কি করার আছে! তবে এখানে এসইসির করণীয় আছে। কোন কোন শেয়ার যখন প্রিমিয়ামে বিক্রি হয়, সেখানে তারা অতিরিক্ত প্রিমিয়াম কেন দেয়? বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসইসি এ দু'টির আলাদা চার্টার আছে। তারা বিনা চার্টারে কাজ করে না। কার চার্টারে কি আছে সেটা দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে, আইন রয়েছে সেখানে কোথাও লেখা নেই যে স্টক মার্কেট বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে।
বাজারের এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কি হতে পারে এমন প্রশ্ন অনেকেই করছেন। তবে বিরাজমান অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন পথ আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। অস্বাভাবিক উত্থান হলে এভাবেই পতন হয়। তবে একটা পথ বলতে আমি বলবো এই অবস্থায় এসইসিকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্গঠন করা না হলে শেয়ারবাজার ঠিক করা যাবে না। এখানে সৎ ও দক্ষ লোক বসিয়ে বাজার পরিচালনা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, শোনা যায় শেয়ারবাজারের এই দরপতন সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে সঠিক তথ্য দেয়নি।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার এ সপ্তাহের মধ্যেই সিকিউরিটি একচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) রদবদল করছে।
--------
ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে খামারের মুরগি ও মাছের খাবার তৈরি
ইত্তেফাক রিপোর্ট জানুয়ারি ২৩, ২০১১, রবিবার : ১০ মাঘ, ১৪১৭
আবুল খায়ের
একশ্রেণীর অর্থলোভী ব্যবসায়ী ট্যানারীর বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে মুরগি ও মাছের খাদ্য তৈরি করে বাজারজাত করছে দেদারসে। মুরগি ও মাছের খামারে এই খাবার নিয়মিত খাওয়ানো হচ্ছে। এই বিষাক্ত ফিড খেলে মুরগি ও মাছ দ্রুত বড় হয়ে থাকে। ক্যান্সার ও কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি ফিড বাজারে পাওয়া যায়। এই খাবার খেয়ে মুরগি বা মাছ বড় হলে এবং পরবতর্ীতে তা মানুষ খেলেও কোন ধরনের সমস্যা নেই। কিন্তু ট্যানারীর বিষাক্ত বর্জর্্য দিয়ে তৈরি খাবার হাঁস-মুরগি খেলে মাংসে বিষাক্ত কেমিক্যাল থাকবে নিশ্চিত। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ক্রোমিয়াম রয়েছে এসব পোল্ট্রি ফিডে। এই ক্রোমিয়াম মরণব্যাধি ক্যান্সার সৃষ্টিতে একশতভাগ সহায়তা করে থাকে। বর্তমানে শিশু থেকে তরুণ বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ক্যান্সার ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার এটাই অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, শুধু হাঁস-মুরগি নয়, একই বর্জ্য দিয়ে মাছের খাবার তৈরি করা হয়ে থাকে। ওই খাবার খাওয়া মাছ খেলেও একই ধরনের ক্যান্সার হওয়ার আশংকা একশত ভাগ বলে বিশেষজ্ঞগণ জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে হাজারীবাগ ট্যানারী এলাকা এবং ভেড়িবাঁধের পাশে শতাধিক কারখানায় বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে হাঁস-মুরগি এবং মাছের খাবার তৈরি করার দৃশ্য দেখা যায়। উৎপাদনকারী শ্রমিক ও ট্যানারীর মালিক এবং শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে বর্জ্য দিয়ে যে প্রক্রিয়ায় হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার তৈরির পুরা তথ্য জানান।
বিষাক্ত কেমিক্যালের পাশর্্বপ্রতিক্রিয়ায় কারখানার শ্রমিকরা নানা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কানে কম শোনে ও চোখে কম দেখে, সর্দি-কাঁশি ও নানা রোগ শরীরে লেগেই আছে। এমন তথ্য শ্রমিকরা জানান।
শুধু শ্রমিকরা নয়, আশপাশের বাসিন্দারাও কেমিক্যালের পাশর্্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত। তারাও একই ধরনের রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাদের বাসাবাড়িতে রক্ষিত স্বর্ণালংকারের রং পরিবর্তন ও ব্যবহূত নানা জিনিসপত্র দ্রুত ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এসবই বিষাক্ত কেমিক্যালের পাশর্্বপ্রতিক্রিয়ার কুফল বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
ট্যানারীর দুই মালিক জানান, কাঁচা চামড়াকে প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্রোমিয়াম, চুনা, সোডিয়াম সালফাইড, সালফিউরিক এসিড, ফরমিক এসিড ও সোডিয়াম ফরমেটসহ নানা ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এছাড়া চামড়া সংরক্ষণ ও যাতে ঐ চামড়া ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত না হয়, সেইজন্য অন্য কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই কেমিক্যাল ট্যানারীর বর্জ্যে থাকা একশতভাগ নিশ্চিত। এই বর্জ্য হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার উৎপাদনকারী এবং সাবান তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ নিয়মিত ট্যানারী থেকে ক্রয় করে নিচ্ছে বলে তারা জানান।
বর্জ্য ছাড়াও বিষাক্ত ভুষি ট্যানারী থেকে সংগ্রহ করা হয়। শুকনা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় ভুষি বের হয়। এটা দিয়ে সহজে মুরগির খাবার তৈরি করা হয়। পোল্ট্রি ফিড তৈরির জন্য স্বল্প মূল্যে ট্যানারি থেকে এই বিষাক্ত বর্জ্য ক্রয় করা হয়ে থাকে।
শ্রমিক শওকত, আলম, হানিফ, কমলা বেগম, আবুল বাসার, মোতালেব, সোহেল, আসমা বেগম ও দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রতিদিন প্রত্যেকটি কারখানার জন্য ৫/৬টি গাড়ি করে বর্জ্য বিভিন্ন ট্যানারি থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তারা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রতিদিন শতাধিক কারখানার জন্য ট্যানারী থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করেন। এই বর্জ্য শুকিয়ে বস্তাজাত করা হয়। ট্রাকভর্তি করে প্রতিদিন পোল্ট্রি ফার্ম কিংবা মাছের খামারের মালিকগণ এই খাবার ক্রয় করে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কারখানার মালিক বলেন, ভাল পোল্ট্রি ফিড (বিজ্ঞানসম্মতভাবে) তৈরি প্রতিকেজি প্রায় ৫০ টাকা এবং ট্যানারী বর্জ্য দিয়ে তৈরি পোল্ট্রি ফিড প্রতি কেজির মূল্য মাত্র ৮ থেকে ১০ টাকা। এই বর্জ্যের ফিড ফার্মের হাঁস-মুরগি কিংবা চাষ করা মাছকে খাওয়ালে দ্রুত বেড় উঠে। অধিক মুনাফার লোভে এই জঘন্য কাজ পোল্ট্রি ফার্ম ও মাছের খামার মালিকগণ বছরের পর বছর করে যাচ্ছেন। ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিষাক্ত বর্জ্য সংগ্রহ করে তারা পোল্ট্রি ফিড তৈরি করছেন বলে জানান।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আকরাম হোসেন বলেন, বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে উৎপাদিত পোল্ট্রি ফিড খামারের হাঁস-মুরগি ও মাছকে খাওয়ালে সেইগুলোর দেহে বিষাক্ত কেমিক্যাল ক্রোমিয়াম সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায়। এই সকল হাঁস-মুরগি ও মাছ মানুষ খেলে লিভার, পাকস্থলীসহ দেহের বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার এবং কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক মনোয়ার ইসলাম বলেন, বিষাক্ত বর্জ্য থেকে পোল্ট্রি ফিড তৈরিকালে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। ইতিপূর্বে পরিবেশ ও মানব দেহের জন্য এই সকল ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা বন্ধ করা হয়েছিল। এবারও কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নিলুফার নাহার ও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ আবুল হাসনাত বলেন, হাঁস-মুরগি ও মাছের খামারের জন্য কত ধরনের বিজ্ঞানসম্মত তৈরি খাবার রয়েছে। তা নিয়মিত খাওয়ালে মানবদেহে কোন ঝুঁকি নেই। জেনে-শুনে অধিক মুনাফার লোভে এবং পোল্ট্রি ফার্ম ধ্বংস করার জন্য বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে উৎপাদিত পোল্ট্রি ফিড ব্যবহার করা হচ্ছে। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের জাতি ধ্বংসের এই ব্যবসা বন্ধ করে অন্য উপায় বেছে নেয়ার জন্য তারা আহ্বান জানিয়েছেন।
-------
No comments:
Post a Comment