প্রথমেই বলে নেই , এই পোস্ট কোন গবেষনা নয়, স্রেফ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে লেখা । নিজের কাজে খোঁজ করতে গিয়ে যা দেখেছি তাই লিখে দিলাম। দ্বিতীয়ত , এই লেখায় শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষার জন্য, তার মানে ব্যাচেলর নয়, তদুর্ধ্ব শ্রেনীর বৃত্তি নিয়ে লেখা । তৃতীয়ত , এখানে আমেরিকা বলতে উত্তর আমেরিকার দেশ মূলত আমেরিকা এবং কানাডা , অস্ট্রেলিয়া বলতে নিউজিল্যান্ডসহ এবং ইউরোপ বলতে ইউরোপের ধনী ও পরিচিত যে দেশগুলোয় বাংলাদেশ থেকে মানুষ পড়তে যায়, তাদের কথাই বলা হয়েছে । পড়ার সময় সেইভাবে ধরে নেবেন। আর শেষ কথা হলো, আপনার পড়ালেখাতে যদি বায়োলজি বিষয়টা না থাকে তো এই সব স্কলারশীপ আপনার জন্য নয়, আপনার ভাই বোন বন্ধুর কাজে লাগতে পারে । তবে , প্রস্তুতি পর্বটা সবার জন্যই কমন।
শুরু বা পরিকল্পনা পর্যায় ঃ
১। সময় ঃ আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতি যাই হোক না কেন , আপনি যেই মহাদেশেই যান না কেন , কিছুটা যোগ বিয়োগ করে সব কিছু ঠিক ঠাক করে নিতে প্রায় ১২ মাস লাগবেই বিশেষ করে স্কলারশিপ ও টাকা পয়সা যোগাড় ইত্যাদি। সুতরাং যখনই শুরু করুন না কেন, আগে জেনে নিন আপনি যেখানে যেতে চাইছেন , সেখানে কোন মাসে ক্লাস শুরু হয়? সেই মতে আপনার হাতে কতটুকু সময় আছে বুঝে নিন। একটা সাধারন নিয়ম হলো যেই বছর যেতে চাই তার আগের বছর থেকে কাজ শুরু করা।
২।তথ্য সংগ্রহঃ এরপর সময় নিয়ে যেই দেশে যাবেন সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ওয়েবসাইট খুটিয়ে খুটিয়ে পড়া। এর কোনই বিকল্প নাই, প্রচুর দিন, প্রচুর রাত নষ্ট হবে এই কাজটার পিছনে। কিন্তু, দিন রাত ২৪ ঘন্টা যদি লেগে থাকতে পারেন , তাহলে তার ফলও পাবেন হাতে নাতে । এমন কোন তথ্য পেয়ে যেতে পারেন যেটা হয়ত আপনার সময় , তারচেয়েও বড় কথা টাকা বাচিয়ে দেবে অনেক। সব সময়ই ওয়েব সাইটের বাইরে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে এমন কারো কাছ থেকে কেমনে কি জেনে নিন যদি সেই সুযোগ থাকে।
৩। তথ্য সাজানোঃ নির্দিষ্ট কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর কোন কোর্স পছন্দ হলে সাথে সাথে সেই কোর্সের সমস্ত তথ্য সারাংশ , বিভিন্ন লিঙ্ক আপনার খাতা/ফাইল/কম্পিউটারে টুকে নিন। ওহ আচ্ছা, বলে রাখি, সাজিয়ে গুছিয়ে কাজ করলে সবচেয়ে ভালো। খাতা বই এর যুগ যেহেতু শেষ , কম্পিউটারে ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশের ফোল্ডার, তার ভিতরে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোল্ডার করে তাতে কিভাবে তথ্য সাজাবেন, কি করে সে গুলো দ্রুত খুঁজে পাবেন সেভাবে পরিকল্পনা করে নিন।
কিছু ফাইল সব খানেই থাকবে যেমন,
ক) একটা ফাইলে সব কয়টা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন তারিখ ( এপ্লিকেশন, স্কলারশীপ, রেস্পন্স, সেমিস্টার ডেট ইত্যাদি) , পুরোটা পড়েছেন কিনা, কাগজ পত্র পাঠানো হয়েছে কি হয়নি ধরনের ম্যাট্রিক্সসহ একটা ইন্ডেক্স পেজ।
খ) আরেকটা ফাইল থাকবে ঐ মহাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সাধারনত কোন কাগজ গুলো কি ভাবে চায় তার লিস্ট । একেক জায়গায় একেক ভাবে চাইতে পারে । কমন বাদ দিয়ে যেইটা ব্যতিক্রম সেইটা লাল কালিতে উল্লেখ করে রাখলেই ভালো ।
৪। কাগজ পত্র তৈরীঃ একাডেমিক সমস্ত কাগজ এর মূল এবং দরকার হলে ইংরেজী কপি (এটাও মূল) তৈরী রাখুন। বিভিন্ন সার্টিফিকেট বলতে আমরা যা বুঝি ( এস এস সি, এইচ এস সি , মেডিকেল/ডেন্টাল/ইউনি , ডাক্তারদের বি এম ডি সি রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি) তার বাইরে কিছু কাগজ নিয়ে মহা ঝামেলা লাগে । যেমন,
ক)ট্রান্সক্রিপ্ট- এইখানে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় একটা কাগজেই আপনি কি কি বিষয় পড়েছেন, সেই সবের মেজর মাইনর, কত অংশ তাত্ত্বিক আর কত অংশ প্র্যাক্টিকাল বা ল্যাব/ ক্লিনিকাল করেছেন তার ঘন্টা ও বিষয়সহ উল্লেখ, আপনার সমস্ত গ্রেড/রেজাল্ট , আপনি সার্বিক বিচারে আপনার ক্লাসের টপ ১০% এ পড়েন কিনা জাতীয় তথ্যসহ এক নজরে একটা ছক আকারে দিয়ে দেবে। দুঃখের কথা হলো, এই ট্রান্সক্রিপ্ট জিনিসটা খায় না মাথায় দেয় সেইটা অনেক সরকারী ও বনেদী মেডিকেল কলেজ কিংবা বায়োলজি শিখানেওয়ালা বিশ্ববিদ্যালয় জানবেই না । জানলেও যা দেবে সেইটা আপনার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা চেয়েছে তার ধারে কাছে নাও থাকতে পারে। এত ডিটেইলস বেশির ভাগ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়/মেডিকেল/ডেন্টাল দেয় না।
ঠেকায় পড়লে নিজেই বানিয়ে নিন। তারপর অফিসিয়াল প্যাডে প্রিন্ট করে অফিস থেকে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন ছিল ছাপ্পর, সাক্ষরসহ। খেয়াল রাখবেন, ওরা খোঁজ করলে এইদিকে কেউ যেন রেফারেন্স হিসেবে সত্যতা প্রমান দিতে পারে । কথা হলো, আপনার কাগজ আপনার বানানো হইলে সমস্যা নাই যতক্ষন পর্যন্ত আপনার সব কিছু অফিসিয়াল প্যাডে থাকে আর সংশ্লিষ্ট লোক জন জানে এই রকম একটা কিছু কোথাও পাঠানো হয়েছে । বলা যায় না, আল্লাহ করে তো আপনারটা দেখেই হয়ত ওরা নিজেদেরটা বদলে নেবে। আপনার ট্রান্সক্রিপ্ট যদি আপনাকেই বানাইতে হয় তাহলে সেইটার কয়েক কপি মেডিকেলের/ইউনির অফিসে দিয়ে রাখবেন।
খ) মোটিভেশন লেটার- আপনি কেন পড়তে চান, পড়িলে কি করিবেন, পাশ দিয়া আল্লাহর দুনিয়াতে কি কি বিপ্লব করিবার ইচ্ছা রাখেন সহ আরো অনেক কিছু উল্লেখ করে এই লেটার লিখতে হতে পারে । সুতরাং, আগে দেখে নিন যাকে পাঠাবেন সে কোন ফর্ম আগেই দিয়ে রেখেছে কিনা। অনেক সময় ফর্ম না থাকলেও আগের বছরের সাকসেস্ফুল কুতুবেরা কি লিখিয়াছিলেন তা দেওয়া থাকে। ঐ সব পড়ে জ্ঞানী হইয়া তারপর লিখেন। নিশ্চিত থাকেন যে এই লেটার আপনার গন্ডায় গন্ডায় পারমুটেশন কম্বিনেশন করে শ’খানেক লিখতেই হবে। এক একটা এক এক জায়গার ইউনির জন্য।
গ) আগের গবেষনা কিংবা কাজের অভিজ্ঞতার বর্ননা ( যদি প্রযোজ্য হয়) – এইটার সারাংশ থেকে শুরু করে কাকে কবে চোখ মেরেছিলেন জাতীয় ডিটেইলসসহ চাহ্নেওয়ালা লোকও এই দুনিয়ায় আছে। সুতরাং, যেখানে যা চায় যেভাবে চায় খেয়াল করে এইটার বর্ননা লিখুন এবং নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোল্ডারে সেভ করুন।কি নিয়ে গবেষনা করেছিলেন, কারো ফান্ড জিতেছিলেন কিনা, ডিজাইন থেকে কন্ডাক্ট ও রিপোর্ট রাইটিং পুরোটাই আপনার নিজের কুকাম কিনা এই সব উল্লেখ করতে হইতে পারে।
ঘ) রেকমেন্ডেশন লেটার- অনেক জায়গায় সাধারন কাগজে প্রিন্ট করে প্রফেসর , বস ইত্যাদির সাইন নিয়ে নিজে পাঠালেই চলে। তবে আজকাল বেশির ভাগ ইউনি নির্দিষ্ট ফর্ম দিয়ে দেয়। ওয়েব সাইট থেকে প্রিন্ট করে সেইটা যেই প্রফেসর কিংবা বস রেকমেন্ড করবেন তিনি নিজে পূরণ করবেন, সম্পূর্ন গোপনীয়তা রক্ষা করে সিল গালা মেরে তিনিই পাঠাবেন। মানে আপনার নিজের সেইখানে কিছু করার নাই। তবে, ইউনি তো আর এসে দেখে যাচ্ছে না। সুতরাং, ব্যস্ত প্রফেসরের পিছনে না ঘুরে যা করার করে নেন, তারপর তাকে ভালো করে দেখিয়ে সাইন করে অবশ্যই অবশ্যই অফিসিয়ালি , মানে অফিসের খামে , সিল সহ পাঠান।এই কান্ঠামিটা করতে বলতে খারাপ লাগছে কিন্তু ভুক্তভোগী হিসেবে জানি রেকমেন্ডেশনের মত একটা অতি জরুরী কাজ অনেক প্রফেসর হয় বোঝেনা, নয় করতে চায় না। এইসব ব্যাপারে লাক আর ব্যক্তির উপর নির্ভর করে সময়মত ভালো জিনিস পাবেন কিনা।
ঙ) ইংরেজী কিংবা মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য ভাষার লেভেল – আগে দেখে নিন ভাষার ব্যাপারে ওরা কি চাচ্ছে। টোফেল, জি আর ই, আই ই এল টি এস ইত্যাদির গ্রেডিং এর পদ্ধতি ওদের নিজের । ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার ব্যাপারে অফিসিয়াল সার্টিফিকেট (কোন অথরিটি থেকে পরীক্ষা দিয়ে পাওয়া) না থাকলে রিডিং, রাইটিং, স্পোকেন, লিসেনিং এই ভাবে ভাগ করে নিজেই গ্রেড দেওয়া লাগতে পারে । সেক্ষেত্রে দেখে নিন গ্রেডিং এর বর্ননা বা স্ট্যান্ডার্ড কোথাও ব্যাখ্যা করা আছে কিনা। আপনার নিজের লেভেল কোন গ্রেডের সাথে মেলে। গুগুল করলেই পাবেন।যেমন- বাংলা ইংরেজির বাইরে আমি হিন্দী কেবল বলতেই জানি, লিখতে পড়তে পারি না ইত্যাদি। বায়োলজির জন্য আলাদা জি আর ই আছে। বাংলাদেশ থেকে দেওয়া যায় কিনা জানি না। না গেলে জেনারেলটাই সই। উল্লেখ্য, জি আর ই পড়তে কয়েক মাস থেকে বছর খানেক সময় লেগে যেতে পারে । সুতরাং যেই মহান ভোরে বাইরে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিবেন, সেই দিন থেকেই কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়তে শুরু করে দিন।
চ) এর বাইরে কিছু কাগজ লাগলেও লাগতে পারে । সাধারনত লাগে না । যেমন- বার্থ সার্টিফিকেট যদি যেখানে জন্মাইছিলেন সেইখানে যাওয়া লাগে তো বিরাট ক্যাচাল। সিটিজেনশীপ (নাগরিকত্ব) এর সার্টিফিকেট লাগে না, লাগার কথা না কারন আপনার পাসপোর্ট প্রমান করে আপনি বাংলাদেশের নাগরিক। ম্যারেজ সার্টিফিকেট হইলো সবচেয়ে ঝামেলার।কাজীর অফিস থেকেই রেজিষ্ট্রির জন্য পাঠিয়ে দেবে। দায়িত্ব নিয়ে উঠানোর দায় আপনার। তারপর অবশ্যই ফরেন মিনিষ্ট্রি থেকে সত্যায়িত করে নিবেন। আল্লাহর রহমতে পরিচিত কেউ না থাকলে এইটা করতে বছর কাবার না হয়ে যায়, এইটা মনে রাইখেন। যারা শহীদ হইয়া বাইরে যাইতে চান ও বউ/স্বামী সাথে লইবেন ভাবেন, তারা বিবাহের পরে হানিমুন বাদ দিয়া আগে এই কাজটা করবেন। অনেকে দেখি পুলিশ ভেরিফিকেশন, এন ও সি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। এই সব লাগে ভাই মাইগ্রেশন করতে। পড়তে যাওয়ার জন্য এই সব লাগে না।
ছ) কাগজ পত্তর সব রেডি হয়ে গেলে সব কয়টার স্ক্যান করে পি ডি এফ বানায় সেভ করে রাখেন। আখেরে অনেক কাজে দিবে।
জ) যেই সব এক্সট্রা কারিকুলার কাজ, কর্ম, শখরে আমাগো আব্বা আম্মা কিংবা চাচা -মামারা পাত্তাই দেয় না , সেই সবের দাম বাইরে অনেক বেশি। বুকিশ পাব্লিক কেউ চায় না, পছন্দও করে না। স্কলারশীপ পাইতে হইলে যা যা করেন, করেছেন সেইটার একটা কাগুজে বা প্রমান করা যায় ডকুমেন্ট রাখতে পারলে ভালো। খেলা ধুলা, গান বাজনা , প্রতিযোগিতা তো আছেই, আপনি যদি ভলান্টিয়ার, অর্গানাইজার হোন তাইলে ছবি তুলেন, পত্রিকায় প্রকাশ হইলে কাইটা রাখেন, অন লাইন ম্যাগাজিন হইলে লিঙ্ক সেভ করেন, স্কুল কলেজের ওয়েব সাইট বা বই পত্তরে ছাপায়ে রাখেন। কখন যে কোনটা কাজে লাগবে, কিছুই বলা যায় না। টেরিফক্স রান, নিখিল বাংলাদেশ কুত্তা রক্ষা কমিটি, গাছপ্রেমী যাই হোন না কেন, আপনার সদস্যপদ সি ভিতে উল্লেখ কইরেন। তবে, আগে বুইঝা নিবেন কে কি চায়, আর কে কি একেবারেই চায় না।
সবার শেষে সবচেয়ে জরুরী জিনিস এপ্লিকেশন। ফর্ম সব কয়টা ইউনির ওয়েব সাইটেই পাবেন। আজকের দুনিয়াতে অন লাইন এপ্লিকেশন করা ডাল ভাত। অনেক ইউনিতেই এই ব্যবস্থা আছে। আবার অনেক ইউনি কমন একটা ওয়েব এপ্লিকেশন নেয়, আলাদা আলাদা করে করার দরকার হয় না। পূরণ করলে আপনাকে নাম্বার দেবে একটা পাসোয়ার্ড , একাউন্ট ইত্যাদি সহ। দরকার হইলে পরে ঢুকে আরো তথ্য যোগ করতে পারবেন। অনেক জায়গায় একাডেমিক কাগজ পত্র পি ডি এফ চায়। সেইগুলা আপ্লোডাইতে পারবেন। পাশাপাশি হার্ড কপি মেইল করে দিতে হবে। অবশ্যই রেজিস্ট্রি মেইল করবেন, অন লাইন ট্রাকিং করা যায় এমন জায়গা থেকে মেইল করবেন। এই সব মেইল হারানো গেলে জীবনটাই বিলা!
ভাই, ভুল করেও মূল কপির ফটোকপি নোটারি কিংবা বোর্ড, মিনিস্ট্রি এই সব জায়গায় সত্যায়িত করতে দৌড়াবেন না। মূলকপি সাথে থাকা মানেই এক সাথে দেখে যিনি দেখলেন তিনি নিজেই সত্যায়িত করে দিতে পারবেন। সেইটা এম্ব্যাসির লোক নিজেই হইতে পারে। সুতরাং, ভালোভাবে জেনে নিন সত্যি সত্যি ভেরিফিকেশন লাগবে কিনা। কেউ মাতবরি করতে চাইলে ভদ্র কিন্তু শক্ত ভাষায় চ্যালেঞ্জ করুন। কাগজ পত্র রেডি? এইবার তাহলে , পাঠানোর পালা।
শুরু বা পরিকল্পনা পর্যায় ঃ
১। সময় ঃ আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতি যাই হোক না কেন , আপনি যেই মহাদেশেই যান না কেন , কিছুটা যোগ বিয়োগ করে সব কিছু ঠিক ঠাক করে নিতে প্রায় ১২ মাস লাগবেই বিশেষ করে স্কলারশিপ ও টাকা পয়সা যোগাড় ইত্যাদি। সুতরাং যখনই শুরু করুন না কেন, আগে জেনে নিন আপনি যেখানে যেতে চাইছেন , সেখানে কোন মাসে ক্লাস শুরু হয়? সেই মতে আপনার হাতে কতটুকু সময় আছে বুঝে নিন। একটা সাধারন নিয়ম হলো যেই বছর যেতে চাই তার আগের বছর থেকে কাজ শুরু করা।
২।তথ্য সংগ্রহঃ এরপর সময় নিয়ে যেই দেশে যাবেন সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ওয়েবসাইট খুটিয়ে খুটিয়ে পড়া। এর কোনই বিকল্প নাই, প্রচুর দিন, প্রচুর রাত নষ্ট হবে এই কাজটার পিছনে। কিন্তু, দিন রাত ২৪ ঘন্টা যদি লেগে থাকতে পারেন , তাহলে তার ফলও পাবেন হাতে নাতে । এমন কোন তথ্য পেয়ে যেতে পারেন যেটা হয়ত আপনার সময় , তারচেয়েও বড় কথা টাকা বাচিয়ে দেবে অনেক। সব সময়ই ওয়েব সাইটের বাইরে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে এমন কারো কাছ থেকে কেমনে কি জেনে নিন যদি সেই সুযোগ থাকে।
৩। তথ্য সাজানোঃ নির্দিষ্ট কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর কোন কোর্স পছন্দ হলে সাথে সাথে সেই কোর্সের সমস্ত তথ্য সারাংশ , বিভিন্ন লিঙ্ক আপনার খাতা/ফাইল/কম্পিউটারে টুকে নিন। ওহ আচ্ছা, বলে রাখি, সাজিয়ে গুছিয়ে কাজ করলে সবচেয়ে ভালো। খাতা বই এর যুগ যেহেতু শেষ , কম্পিউটারে ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশের ফোল্ডার, তার ভিতরে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোল্ডার করে তাতে কিভাবে তথ্য সাজাবেন, কি করে সে গুলো দ্রুত খুঁজে পাবেন সেভাবে পরিকল্পনা করে নিন।
কিছু ফাইল সব খানেই থাকবে যেমন,
ক) একটা ফাইলে সব কয়টা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন তারিখ ( এপ্লিকেশন, স্কলারশীপ, রেস্পন্স, সেমিস্টার ডেট ইত্যাদি) , পুরোটা পড়েছেন কিনা, কাগজ পত্র পাঠানো হয়েছে কি হয়নি ধরনের ম্যাট্রিক্সসহ একটা ইন্ডেক্স পেজ।
খ) আরেকটা ফাইল থাকবে ঐ মহাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সাধারনত কোন কাগজ গুলো কি ভাবে চায় তার লিস্ট । একেক জায়গায় একেক ভাবে চাইতে পারে । কমন বাদ দিয়ে যেইটা ব্যতিক্রম সেইটা লাল কালিতে উল্লেখ করে রাখলেই ভালো ।
৪। কাগজ পত্র তৈরীঃ একাডেমিক সমস্ত কাগজ এর মূল এবং দরকার হলে ইংরেজী কপি (এটাও মূল) তৈরী রাখুন। বিভিন্ন সার্টিফিকেট বলতে আমরা যা বুঝি ( এস এস সি, এইচ এস সি , মেডিকেল/ডেন্টাল/ইউনি , ডাক্তারদের বি এম ডি সি রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি) তার বাইরে কিছু কাগজ নিয়ে মহা ঝামেলা লাগে । যেমন,
ক)ট্রান্সক্রিপ্ট- এইখানে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় একটা কাগজেই আপনি কি কি বিষয় পড়েছেন, সেই সবের মেজর মাইনর, কত অংশ তাত্ত্বিক আর কত অংশ প্র্যাক্টিকাল বা ল্যাব/ ক্লিনিকাল করেছেন তার ঘন্টা ও বিষয়সহ উল্লেখ, আপনার সমস্ত গ্রেড/রেজাল্ট , আপনি সার্বিক বিচারে আপনার ক্লাসের টপ ১০% এ পড়েন কিনা জাতীয় তথ্যসহ এক নজরে একটা ছক আকারে দিয়ে দেবে। দুঃখের কথা হলো, এই ট্রান্সক্রিপ্ট জিনিসটা খায় না মাথায় দেয় সেইটা অনেক সরকারী ও বনেদী মেডিকেল কলেজ কিংবা বায়োলজি শিখানেওয়ালা বিশ্ববিদ্যালয় জানবেই না । জানলেও যা দেবে সেইটা আপনার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা চেয়েছে তার ধারে কাছে নাও থাকতে পারে। এত ডিটেইলস বেশির ভাগ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়/মেডিকেল/ডেন্টাল দেয় না।
ঠেকায় পড়লে নিজেই বানিয়ে নিন। তারপর অফিসিয়াল প্যাডে প্রিন্ট করে অফিস থেকে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন ছিল ছাপ্পর, সাক্ষরসহ। খেয়াল রাখবেন, ওরা খোঁজ করলে এইদিকে কেউ যেন রেফারেন্স হিসেবে সত্যতা প্রমান দিতে পারে । কথা হলো, আপনার কাগজ আপনার বানানো হইলে সমস্যা নাই যতক্ষন পর্যন্ত আপনার সব কিছু অফিসিয়াল প্যাডে থাকে আর সংশ্লিষ্ট লোক জন জানে এই রকম একটা কিছু কোথাও পাঠানো হয়েছে । বলা যায় না, আল্লাহ করে তো আপনারটা দেখেই হয়ত ওরা নিজেদেরটা বদলে নেবে। আপনার ট্রান্সক্রিপ্ট যদি আপনাকেই বানাইতে হয় তাহলে সেইটার কয়েক কপি মেডিকেলের/ইউনির অফিসে দিয়ে রাখবেন।
খ) মোটিভেশন লেটার- আপনি কেন পড়তে চান, পড়িলে কি করিবেন, পাশ দিয়া আল্লাহর দুনিয়াতে কি কি বিপ্লব করিবার ইচ্ছা রাখেন সহ আরো অনেক কিছু উল্লেখ করে এই লেটার লিখতে হতে পারে । সুতরাং, আগে দেখে নিন যাকে পাঠাবেন সে কোন ফর্ম আগেই দিয়ে রেখেছে কিনা। অনেক সময় ফর্ম না থাকলেও আগের বছরের সাকসেস্ফুল কুতুবেরা কি লিখিয়াছিলেন তা দেওয়া থাকে। ঐ সব পড়ে জ্ঞানী হইয়া তারপর লিখেন। নিশ্চিত থাকেন যে এই লেটার আপনার গন্ডায় গন্ডায় পারমুটেশন কম্বিনেশন করে শ’খানেক লিখতেই হবে। এক একটা এক এক জায়গার ইউনির জন্য।
গ) আগের গবেষনা কিংবা কাজের অভিজ্ঞতার বর্ননা ( যদি প্রযোজ্য হয়) – এইটার সারাংশ থেকে শুরু করে কাকে কবে চোখ মেরেছিলেন জাতীয় ডিটেইলসসহ চাহ্নেওয়ালা লোকও এই দুনিয়ায় আছে। সুতরাং, যেখানে যা চায় যেভাবে চায় খেয়াল করে এইটার বর্ননা লিখুন এবং নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোল্ডারে সেভ করুন।কি নিয়ে গবেষনা করেছিলেন, কারো ফান্ড জিতেছিলেন কিনা, ডিজাইন থেকে কন্ডাক্ট ও রিপোর্ট রাইটিং পুরোটাই আপনার নিজের কুকাম কিনা এই সব উল্লেখ করতে হইতে পারে।
ঘ) রেকমেন্ডেশন লেটার- অনেক জায়গায় সাধারন কাগজে প্রিন্ট করে প্রফেসর , বস ইত্যাদির সাইন নিয়ে নিজে পাঠালেই চলে। তবে আজকাল বেশির ভাগ ইউনি নির্দিষ্ট ফর্ম দিয়ে দেয়। ওয়েব সাইট থেকে প্রিন্ট করে সেইটা যেই প্রফেসর কিংবা বস রেকমেন্ড করবেন তিনি নিজে পূরণ করবেন, সম্পূর্ন গোপনীয়তা রক্ষা করে সিল গালা মেরে তিনিই পাঠাবেন। মানে আপনার নিজের সেইখানে কিছু করার নাই। তবে, ইউনি তো আর এসে দেখে যাচ্ছে না। সুতরাং, ব্যস্ত প্রফেসরের পিছনে না ঘুরে যা করার করে নেন, তারপর তাকে ভালো করে দেখিয়ে সাইন করে অবশ্যই অবশ্যই অফিসিয়ালি , মানে অফিসের খামে , সিল সহ পাঠান।এই কান্ঠামিটা করতে বলতে খারাপ লাগছে কিন্তু ভুক্তভোগী হিসেবে জানি রেকমেন্ডেশনের মত একটা অতি জরুরী কাজ অনেক প্রফেসর হয় বোঝেনা, নয় করতে চায় না। এইসব ব্যাপারে লাক আর ব্যক্তির উপর নির্ভর করে সময়মত ভালো জিনিস পাবেন কিনা।
ঙ) ইংরেজী কিংবা মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য ভাষার লেভেল – আগে দেখে নিন ভাষার ব্যাপারে ওরা কি চাচ্ছে। টোফেল, জি আর ই, আই ই এল টি এস ইত্যাদির গ্রেডিং এর পদ্ধতি ওদের নিজের । ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার ব্যাপারে অফিসিয়াল সার্টিফিকেট (কোন অথরিটি থেকে পরীক্ষা দিয়ে পাওয়া) না থাকলে রিডিং, রাইটিং, স্পোকেন, লিসেনিং এই ভাবে ভাগ করে নিজেই গ্রেড দেওয়া লাগতে পারে । সেক্ষেত্রে দেখে নিন গ্রেডিং এর বর্ননা বা স্ট্যান্ডার্ড কোথাও ব্যাখ্যা করা আছে কিনা। আপনার নিজের লেভেল কোন গ্রেডের সাথে মেলে। গুগুল করলেই পাবেন।যেমন- বাংলা ইংরেজির বাইরে আমি হিন্দী কেবল বলতেই জানি, লিখতে পড়তে পারি না ইত্যাদি। বায়োলজির জন্য আলাদা জি আর ই আছে। বাংলাদেশ থেকে দেওয়া যায় কিনা জানি না। না গেলে জেনারেলটাই সই। উল্লেখ্য, জি আর ই পড়তে কয়েক মাস থেকে বছর খানেক সময় লেগে যেতে পারে । সুতরাং যেই মহান ভোরে বাইরে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিবেন, সেই দিন থেকেই কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়তে শুরু করে দিন।
চ) এর বাইরে কিছু কাগজ লাগলেও লাগতে পারে । সাধারনত লাগে না । যেমন- বার্থ সার্টিফিকেট যদি যেখানে জন্মাইছিলেন সেইখানে যাওয়া লাগে তো বিরাট ক্যাচাল। সিটিজেনশীপ (নাগরিকত্ব) এর সার্টিফিকেট লাগে না, লাগার কথা না কারন আপনার পাসপোর্ট প্রমান করে আপনি বাংলাদেশের নাগরিক। ম্যারেজ সার্টিফিকেট হইলো সবচেয়ে ঝামেলার।কাজীর অফিস থেকেই রেজিষ্ট্রির জন্য পাঠিয়ে দেবে। দায়িত্ব নিয়ে উঠানোর দায় আপনার। তারপর অবশ্যই ফরেন মিনিষ্ট্রি থেকে সত্যায়িত করে নিবেন। আল্লাহর রহমতে পরিচিত কেউ না থাকলে এইটা করতে বছর কাবার না হয়ে যায়, এইটা মনে রাইখেন। যারা শহীদ হইয়া বাইরে যাইতে চান ও বউ/স্বামী সাথে লইবেন ভাবেন, তারা বিবাহের পরে হানিমুন বাদ দিয়া আগে এই কাজটা করবেন। অনেকে দেখি পুলিশ ভেরিফিকেশন, এন ও সি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। এই সব লাগে ভাই মাইগ্রেশন করতে। পড়তে যাওয়ার জন্য এই সব লাগে না।
ছ) কাগজ পত্তর সব রেডি হয়ে গেলে সব কয়টার স্ক্যান করে পি ডি এফ বানায় সেভ করে রাখেন। আখেরে অনেক কাজে দিবে।
জ) যেই সব এক্সট্রা কারিকুলার কাজ, কর্ম, শখরে আমাগো আব্বা আম্মা কিংবা চাচা -মামারা পাত্তাই দেয় না , সেই সবের দাম বাইরে অনেক বেশি। বুকিশ পাব্লিক কেউ চায় না, পছন্দও করে না। স্কলারশীপ পাইতে হইলে যা যা করেন, করেছেন সেইটার একটা কাগুজে বা প্রমান করা যায় ডকুমেন্ট রাখতে পারলে ভালো। খেলা ধুলা, গান বাজনা , প্রতিযোগিতা তো আছেই, আপনি যদি ভলান্টিয়ার, অর্গানাইজার হোন তাইলে ছবি তুলেন, পত্রিকায় প্রকাশ হইলে কাইটা রাখেন, অন লাইন ম্যাগাজিন হইলে লিঙ্ক সেভ করেন, স্কুল কলেজের ওয়েব সাইট বা বই পত্তরে ছাপায়ে রাখেন। কখন যে কোনটা কাজে লাগবে, কিছুই বলা যায় না। টেরিফক্স রান, নিখিল বাংলাদেশ কুত্তা রক্ষা কমিটি, গাছপ্রেমী যাই হোন না কেন, আপনার সদস্যপদ সি ভিতে উল্লেখ কইরেন। তবে, আগে বুইঝা নিবেন কে কি চায়, আর কে কি একেবারেই চায় না।
সবার শেষে সবচেয়ে জরুরী জিনিস এপ্লিকেশন। ফর্ম সব কয়টা ইউনির ওয়েব সাইটেই পাবেন। আজকের দুনিয়াতে অন লাইন এপ্লিকেশন করা ডাল ভাত। অনেক ইউনিতেই এই ব্যবস্থা আছে। আবার অনেক ইউনি কমন একটা ওয়েব এপ্লিকেশন নেয়, আলাদা আলাদা করে করার দরকার হয় না। পূরণ করলে আপনাকে নাম্বার দেবে একটা পাসোয়ার্ড , একাউন্ট ইত্যাদি সহ। দরকার হইলে পরে ঢুকে আরো তথ্য যোগ করতে পারবেন। অনেক জায়গায় একাডেমিক কাগজ পত্র পি ডি এফ চায়। সেইগুলা আপ্লোডাইতে পারবেন। পাশাপাশি হার্ড কপি মেইল করে দিতে হবে। অবশ্যই রেজিস্ট্রি মেইল করবেন, অন লাইন ট্রাকিং করা যায় এমন জায়গা থেকে মেইল করবেন। এই সব মেইল হারানো গেলে জীবনটাই বিলা!
ভাই, ভুল করেও মূল কপির ফটোকপি নোটারি কিংবা বোর্ড, মিনিস্ট্রি এই সব জায়গায় সত্যায়িত করতে দৌড়াবেন না। মূলকপি সাথে থাকা মানেই এক সাথে দেখে যিনি দেখলেন তিনি নিজেই সত্যায়িত করে দিতে পারবেন। সেইটা এম্ব্যাসির লোক নিজেই হইতে পারে। সুতরাং, ভালোভাবে জেনে নিন সত্যি সত্যি ভেরিফিকেশন লাগবে কিনা। কেউ মাতবরি করতে চাইলে ভদ্র কিন্তু শক্ত ভাষায় চ্যালেঞ্জ করুন। কাগজ পত্র রেডি? এইবার তাহলে , পাঠানোর পালা।
4 comments:
ঢাকা: যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে, ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই’ তার রচিত গান কবিতায় ফুটে ওঠে মানুষের মুক্তির কথা। বাংলা ভাষার নতুন পথ রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি রচনা করেন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’।
পঁচিশে বৈশাখ, বিখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের get more
You can also easily seomarta.com Facebook like,twitter followers,youtube like,article writing,traffic,graphics design you do this kind of income can be $5 to $10 dollars.can more details visit http://www.seomarts.com
SSC Result 2021 Check Online: SSC Result 2021
SSC Result 2021 Check Online: SSC Result 2021
Garena Free Fire Redeem Codes Today Singapore Server 2021
BRAC Job Circular check Here BRAC Job Circular
Garena Free Fire Redeem Codes Garena Free Fire Redeem Codes
HSC Result 2021
Govt School Admission Result 2022
ভালোছিল ভাই। আমাদের ভালোবাসা পরীক্ষা করার উপায় দেখার অনুরোধ থাকলো :)
Post a Comment