Monday, December 10, 2007

বেশি ভিতরে ঢুকো না ( সাবধান, বিব্রতকর কথা আছে)

এই মহান বানীটি কে কবে কাকে প্রথম দিয়েছিলো , জানি না । তবে এই বানীটি যে মহান এতে কোন সন্দেহ নাই ।

কলেজে এক প্রেমিক জুটি ছিলো; দিন নাই, রাত নাই , খালি মেয়েদের ( আমিও সেই দলে) পিছনে লাগে । মাথায় কাপড় দাও না কেন ? বোরখা পড়া ছেড়ে দিলা কেন ? ছেলেদের সাথে এত হেসে হেসে কথা বলো কেন? নামায পড়ো না কেন? কার ওড়না কত লম্বা , কার বউ সবার সামনে স্বামীর হাত ধরেছে ! সবার মাথাটাই খারাপ করে দেয় আর কি ! তারা হইলো যাকে বলে টিপিকাল সুশীল সমাজের প্রতিনিধি , বুদ্ধিজীবী মেডিকেল স্টুডেন্ট । তো , ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় মেয়ে ফেল করলো । আমার প্রিয় বান্ধবী না হইলেও , একটা ভালো স্টুডেন্ট হুট করে ফেল করলে খারাপই লাগে । তব্ধা খাইলাম, বুঝলাম না কিছুই । হঠাত ফেল করলো কেন? মাইয়া কয় শরীর খারাপ। সত্য কখনো চাপা থাকে না । যেই ক্লিনিকে গর্ভপাত ঘটিয়েছিলেন এই মহিয়সী এবং তার সুশীল প্রেমিক , সেই ক্লিনিকেই একেবারে পড়বি পড় মালির ঘাড়ে , আমারই বন্ধুর সাথে দেখা এবং পালাতে গিয়ে ধরা খাওয়া । আমি অবাক হয়ে বন্ধুরে কইলাম , তাহলে আমাদের এত সমালোচনা করে , এত উপদেশ দিয়ে বেড়ালো যেই সুশীল , ধর্মপরায়ন প্রেমিক জুটি , তারা নিজেরা বিবাহের পূর্বেই এত সব কান্ড ঘটিয়ে ফেললো ? প্রিম্যারিটাল সেক্স আর একটা প্রান হত্যা তাইলে নামায না পড়ার চেয়ে কম খারাপ ? বন্ধু খালি হেসে বললো , "বেশি ভিতরে ঢুকো না।" আমি মাথা চুল্কাই । "কারে কইলা ?" দুস্ত কয় , তোমারে আর ঐ প্রেমিক -দুইটারেই !

তখনো পাশ করি নাই । পরিচয় হইলো এক বিদেশীর সাথে । ব্যাটা আমার ক্লাস প্রেজেন্টেশন দেখে পুরা পাংখা । সবার সাথে সেও প্রশংসায় পঞ্চমুখ । ইউনিসেফ এর ইয়া বড় কর্ম কর্তা । কার্ড দিয়া , ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকলো । আমি তো আর নাই! লাখ টাকা বেতনের চাকুরী হেটে হেটে নিজে থেকে ধরা দিচ্ছে ! স্বপ্ন না মরীচীকা ! ইন্টারভিউতে আমি উত্তর দিবো কি, সে নিজেই আমি কত ভালো , কত বুদ্ধিমতী , কত সম্ভাবনাময় , ইনোভেটিভ ইত্যাদি ইত্যাদি বলে কুল পায় না। (দুনিয়াতে খুব কম বিষয়ে জানি। তবে নিজের বিষয়টা বোধ হয় খারাপ জানি না) কথা গুলা শিক্ষকদের মুখ থেকেও সারা বছর শোনার সৌভাগ্য হয়েছিলো বলে আমি তখনো সন্দেহ করতে পারিনি - আসলে কি ব্যাপার ! চাকরী আমার নিশ্চিত প্রায় , প্রথমে ছোট খাট প্রজেক্ট দিয়ে শুরু হবে । তারপর পার্মানেন্ট । তো কাজের অভিজ্ঞতা লাভের জন্য আমি আগামী সপ্তাহান্তে তার সাথে রাজেন্দ্রপুর সি ডি এম -এ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্কশপে যোগ দিতে পারবো কিনা । দুই দিন থাকতে হবে । পাক্কা দশ মিনিট আমার মাথাতে ঢুকেই নাই আসলে কি চাওয়া হচ্ছে ( আমি চরম গাধা নাকি বেশি অনভিজ্ঞ ছিলাম- এইটা এখন মনে হয় ) । আমি আরো বসে বসে চিন্তা ভাবনা করছি , ক্লাস আছে কিনা, পরীক্ষা আছে কিনা -- ভাবতে ভাবতে হঠাতই মাথায় দিমাগ কি বাত্তি জ্বলে গেলো । দ্রুত কথা শেষ করে বেরিয়ে এলাম। বের হতে না হতেই এক জিগিরী বান্ধবী অতি উতসাহে ফুন দিলো , " কি রে , কবে খাওয়াবি ?" অপমানে চোখ দিয়ে টপ টপ কইরা পানি গড়াইতাসে , তাও হাসতে হাসতে কইলাম, "লাখ টাকায় নিজেরে বিক্রি করার স্কিলটা এখনো শিখতে পারি নাই ।" বান্ধবী জিগাইলো , তাইলে "----" আপা চাকরী করে কেমনে ? আমি কইলাম , "বেশি ভিতরে ঢুকো না।"

প্রথম চাকরীটা করতাম একটা স্কুলে । বেতন তেমন বেশি না । কারো কারো ছুটি নিয়ে বিদেশ বেড়ানো আর হীরার আংটি , লেটেস্ট পারফিউম , গুচির ব্যাগ - কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারতাম না। আমি সকালে চাকরী করি , বিকালে ক্লিনিক , তাও শালার হিল্লী দিল্লী করার কথা চিন্তাই করতে পারি না তখনো । বান্ধবীর বিয়ে হইলো ব্যাংকারের সাথে । তার স্বামীর অফিসেও দুই এক পিস এই রকম আছে । হিসাব মিলাই দিলো বান্ধবী। বসের সাথে পার ট্রিপ - এক সুটকেস কাপড় আর ক্যাশ টাকা । এখন আয়ের সাথে ব্যয়ের তুমুল অসঙ্গতিআলা কাউকে দেখলেই মনে হয় , " ইমন , চুপ! বেশি ভিতরে ঢুকো না।"

ছেলেটা মোবাইল বিশারদ । ল্যাভিশ লাইফ লিড করে ।গাড়ি, বিদেশ ভ্রমন , বান্ধবী ইয়ত্তা নাই । কোথায় পায় এত টাকা ? নতুন সেট কিনবো বলে তার সেটটা দেখার জন্য নিলাম । বেশ দামী সেটটার ভাও বুঝতে একটু সময় নিচ্ছিলাম । হঠাত কুতুব ফিস ফিস করে উঠলো , " আপি , প্লিজ , বেশি ভিতরে ঢুকো না ।" বদ্দার ডায়লগ ঝেড়ে দিলাম, " কি রাখছিস ? শরমের ছবি না গরমের?" মামুর হাসিতে যা বুঝার বুঝে নিলাম । ক্যামেরাটা ৫ মেগাপিক্সেল।

কর্পোরেট দুনিয়া । মাল্টি ন্যাশনাল দুনিয়া । দেশী বিদেশী ব্যাংক । মিডিয়া ওয়ার্ল্ড । ছিটে ফোটা ঘুরে বেড়ানো । কোথাও বন্ধু , কোথাও আত্মীয় । আমি মোটামুটি দুরেই থাকি । তাও কাজের সূত্রে বা বন্ধুদের মুখে জানতে পারি নানান কাহিনী । এইচ আই ভি প্রোগ্রাম গোপন প্রকাশিত , পরিচিত , পরিচয়হীন অনেক মানুষের কথা বলে দেয় । ডিজিএফাই এ ক্লাস মেট চাকরী করে । শুনি রঙ্গিলা সব ঘটনা ।

মানুষ বদলে গেছে ভীষন ভাবে । আমার প্রজন্মের ছেলে মেয়ে গুলোকেই আমি চিনতে পারি না । যাদের বয়স এখন ২৫ থেকে ৩০+ । কি এক সর্বগ্রাসী ক্ষুধা তাদের ভিতর । পেতেই হবে । সব কিছু পেতে হবে । সবাইকেই পেতে হবে । যে কোন মূল্যে । মানি , মাদক , মেয়েমানুষ - তিন এম এর পিছনে ছুট ছুট ছুট । মেয়েরাও পিছিয়ে নেই । সবাইকে পেছনে ফেলে সামনে যাওয়ার জন্য অনেক মাশুল গুনতে রাজি ।

বাংলাদেশে কি সার্ভাইভাল এতই কঠিন হয়ে গেছে ? কোন নীতি মেনে আর জীবন ধারন সম্ভব নয় ? নাকি আমাদের লোভ বেড়ে গেছে ? মানুষ নই আর , হয়ে গেছি কঞ্জিউমার ? পুঁজি অবশ্য বাজার খোঁজে । আর ক্রেতা । মানুষ তার দরকার নেই ।

মানুষে মানুষে সম্পর্ক তৈরী করাটাও এখন পুঁজিবাদী ভীষন ।

আমার বন্ধু আমার প্রোফাইল নেম দিয়েছে ।পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট গাধা ।

কেন? কারন আমার নাকি রাসূলের সময় জন্ম নেওয়া উচিত ছিলো । ওই যে, যখন সবাই সদা সত্য কথা বলিত । আমি মানতে পারলাম না । গাধা বলেছে আপত্তি নাই । হতেই পারি । কিন্তু , রাসূলের সময়ের মত কঠিন বিধি নিষেধ মেনে চলবে সবাই - এইটা তো আমি জীবনেও আশা করি না । কে বোরখা পরবে , আর কে ফ্রি সেক্স করে বেড়াবে - আমার তাই নিয়ে সামান্যতম চিন্তা নাই । যার যেই ভাবে বাঁচতে ইচ্ছা করে , বাঁচুক । ব্যক্তিগত ভালো মন্দ, পছন্দ -অপছন্দ মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার । আমি কি আল্লাহ নাকি ? আমি কেন বিচার করতে যাবো ? আমি শুধু বন্ধুকে এইটুকুই বলছিলাম, আমি চাই মানুষ সত্য কথা বলুক । তুমি যা , নিজেকে সৎ ভাবে সেইটাই প্রকাশ করো । তার পরে আমার সাথে তোমার আকাশ পাতাল তফাত থাকলেও আমার কোন সমস্যা থাকবে না । তুমি সমকামী না চার্চের হেড নান , তাতে আমার কিছু যায় আসে না । তোমার বিশ্বাস তোমার কাছে । আমার বিশ্বাস আমার কাছে । আমরা বন্ধু হতেই পারি । এই টুকু চাওয়াতেই , " সর্বোৎকৃষ্ট গাধা " উপাধি পেয়ে গেলাম। আর বন্ধু ১ লক্ষ ১ বারের মত মনে করিয়ে দিলো , আমি রাগ ইমন এই দুনিয়ার জন্য ফিট না । জিগাইলাম, "তাহলে অনুমতি দাও, বিদায় নিয়ে অন্য দুনিয়ায় চলে যাই? " রাস্কেলটা এখনো জবাব দেয় নাই ।

আইরিনের বিবাহ সংক্রান্ত পোস্ট পড়ে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো । বায়োডাটা দেখা হয়েছে । আব্বু আম্মু যথারীতি ছেলের পড়া লেখা , পরিবার , কাজ কর্ম , সামাজিক - অর্থনৈতিক অবস্থানের খোঁজ নিলেন । "মানুষ কেমন " দেখার দায়িত্ব পড়লো আমার উপর । কথা বলে মনে হলো, পারফেক্ট । কোথাও কোন দাগ খুঁজে পাওয়া যাবে না । কিন্তু , ততদিনে গাধার গোবর ভরা মাথাতেও কিছু ঘাস গজিয়েছে । ফলে মাথায় কিছু অক্সিজেন ও বহিতেছে । আমি আমার মত করে খোঁজ নিলাম । স্কুলে ও হাসপাতালে চাকুরী করার সুবিধা হলো , চোখের সামনে দেখেছি ক্লাসের ফার্স্ট বয় , পারফেক্ট অল রাউন্ডার ছেলেদের " অফ দা রেকর্ড" লাইফ এর কান্ড কীর্তি । এই গুলা কাহিনী তাদের পরিবার পর্যন্ত পৌঁছায় না । আম্মু চিল্লা পাল্লা করে জানতে চাইছে , " এই ছেলেটাকে বিয়ে করতে তোমার সমস্যাটা কোথায় ? খারাপ কি দেখলা ? " কি করে বলবো মাকে , আমার প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা কি করে বেড়ায় ! যা জানি , মুখ ফুটে বলতে পারলাম না । আম্মা সহ্য করতে পারবে না । স্রেফ বললাম , " বেশি ভিতরে ঢুকো না।"

মানসিক শান্তি বজায় রাখার কোন উপায় বুঝি আজকাল বাকি নেই । কানে তুলো , পিঠে কুলো দিয়ে গাধা হয়ে সারাদিন ঝিমাও । সি নো ইভিল। হিয়ার নো ইভিল । আর হ্যাঁ , বেশি ভিতরে ঢুকো না ।

No comments: