Monday, December 10, 2007

একটা সমন্বিত তথ্য ঘর কেন পাই না ? (সিডার)

সকালে এসে অফিসের সেকেন্ড ইন কমান্ডের কাছ থেকে আপডেট পেলাম । সিডোরের ত্রান কাজে গতকাল পর্যন্ত কি হয়েছে , তাই জানালো । সংখ্যা গুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সরকারী হিসেবে আক্রান্ত মানুষ, অনাথ শিশু , মৃত গবাদি পশু আর নষ্ট হয়ে যাওয়া ফসলের হিসাব । সাথে কোথায় কি বিতরন হয়েছে তার বর্ননা । আর ও কি কি লাগবে , কতদিনের জন্য , তার একটা দ্রুত করা অংক । একবার ভাবলাম , ব্লগে দেব নাকি আপডেট গুলো? মানুষ কি উৎসাহিত হবে জেনে তাদের পাঠানো টাকা গুলো কোথায় যাচ্ছে ! আবার মনে হলো , নাহ । মানুষ অর্ধেক কথা বোঝে না আর বাকি অর্ধেক ভুল বোঝে । যা আমি লিখবো উৎসাহ দেওয়ার জন্য , অথবা , স্রেফ জানানোর জন্য - তা হয়ে যাবে বিজ্ঞাপনী প্রচার । বাদ দিলাম । শুধু মাথার ভিতর দপ দপ করছে কয়েকটা তথ্য । আক্রান্ত সকল মানুষের অর্ধেক শিশু আর তাদের ভিতর ৫ বছরের নিচে শিশুর সংখ্যা ৬ লাখ। ঠিক কত জন শিশু এক বা দুই জন অভিভাবকই হারিয়েছে তার সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায় নাই , কিন্তু সেইটা বৃহত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই সব শিশুরা শুধু অনাহার , আশ্রয়হীনতা কিংবা রোগের ঝুঁকির ( মহামারী আকারে ডায়রিয়া , কলেরা ইত্যাদি) ভিতরেই নেই - অরক্ষিত অবস্থায় তারা শিশুশ্রম , পাচার কিংবা শারীরীক মানসিক নির্যাতনের শিকারও হতে পারে । যেই শিশুরা অনাথ হয়ে গেলো , তাদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী সাহায্যের দরকার হবে। শুধু খাবার, পানি , ওষুধ দিয়ে তাদের বাঁচিয়ে রাখাটাই তো যথেষ্ট নয়। তাদের জন্য নতুন পরিবার চাই , চাই নতুন বাবা মা। চাই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা । অনেক লম্বা সময় ধরে পুনর্বাসনের কাজ চালাতে হবে । আমরা কয় জন এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারছি? সরকারী হিসেবেই দক্ষিণাঞ্চলের এলাকা ভেদে ৯৫% ফসল নষ্ট হয়ে গেছে । সরকারী গুদামজাত খাদ্যের মেয়াদ হলো ২০০৮ সালের মার্চ পর্যন্ত । কিন্তু , পরবর্তী ফসল মে মাসের আগে ঘরে উঠবে না । পাক্কা দুই মাসের বিশাল গ্যাপ ডিমান্ড এবং সাপ্লাই এ। ঝুঁকিপুর্ন গোষ্ঠীর জন্য খাদ্য সরবরাহের কাজ শুরু করবে সরকার ডিসেম্বর মাস থেকে । কিন্তু আসলেই কতজনকে এই ভাবে বসিয়ে খাওয়াবে সরকার? ক্ষেতের ফসল নেই। হালের বলদ নেই ।মাথা গোঁজার ঘর নেই।হাতে কোন পুঁজি নেই ।বীজ ধান নেই । কেউ কেউ সম্পুর্ন পরিবার হারিয়েছেন । কি করে পূনর্বাসিত হবে এই মানুষ গুলো ? এই ম্যাসিভ আকারের কাজ করার জন্য কতটা যুথবদ্ধ হতে হবে আমাদের ? কারো কোন ধারনা আছে ? ৫০ লক্ষ মানুষকে খাওয়াতে হবে, পরাতে হবে , নতুন করে উপার্জনের পথ করে দিতে হবে। আপনারা এখনো কি নিয়ে ব্যস্ত বন্ধুরা ? কারো চশমা ? কারো লুঙ্গি ? খুব গুরুত্বপূর্ন জিনিস বোধ হয় । ৫০ লক্ষ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন । ব্লগে কম্পু জিনিয়াস অনেক আছেন জেনেছি । ত্রান কাজে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে সমন্বয়হীনতার । কেউ কারো খোঁজ রাখতে পারছেন না । কোথাও একাধিক বার ত্রান বিতরন হচ্ছে । কোথাও একেবারেই পৌঁছাচ্ছে না । আচ্ছা , সারা দেশ এবং বিদেশ থেকে কে কোথায় কি করছে , এই তথ্য গুলো একটা মাত্র ওয়েব সাইটে ঢুকানো যায় না রে ভাই? মানে , একটা নির্দিষ্ট লিংকে ক্লিক করলাম, জেনে গেলাম কোথায় কোথায় কি কি সাহায্য লাগবে। কতটা গেছে । আরও কতটা চাই । আমার সংস্থা কোথায় কি পাঠালো তার একটা আপডেট নিজ দায়িত্বে দিয়ে এলাম । এমন কিছু কি করা যায়? সামহোয়ার ইন কর্তৃপক্ষ , এই উদ্যোগটা নেবেন? একটা কমন প্লাটফর্ম । যে কেউ এসে তাদের ত্রান কাজের আপডেট দিয়ে যেতে পারে । যে কেউ এসে জেনে যেতে পারে । সমস্ত লিংক গুলো এক জায়গায় থাকতে পারে । মানে একটা "ইনফরমেশন সেন্ট্রাল হাব" এর মত । বুঝাই তো যাচ্ছে , অন্তত মে মাস পর্যন্ত ত্রান কাজ চলবে । করতে পারলে এইটা একটা খুব গুরুত্বপূর্ন রিসোর্স হবে সকলের জন্য । লিংকের প্রচারের কাজটা করতে পারবো । দেশী, বিদেশী , সরকারী , বেসরকারী বিভিন্ন গ্রুপে এই " হাব " এর খবর এবং লিংক পাঠানোর দায়িত্ব সম্মিলিত ভাবেই নিতে পারি । আপনারা এই ধরনের ডাটা ব্যাংক বানানোর একটা উদ্যোগ কি নেবেন? ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কমিটির ওয়েব সাইট থাকতে পারে । কিন্তু , সেটা ইন্টার এক্টিভ হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখি না । কারো মাথায় কিছু এসে থাকলে একটু শেয়ার করেন। [সিডারের কাজ করতে করতে মন মেজাজ কিছুতেই ভালো রাখতে পারছি না । লেখাটা পড়ে কারো খারাপ লাগলে দুইটা গালি দিয়ে মাফ করে দিয়েন । ]

No comments: