ফজরের আযান দিলো । নামায পড়বো একটু পরে। ২১শে অগাস্ট প্রায় শুরু হয়ে গেছে। ভয়াল একটা দিন। শত শত মানুষের জীবন পঙ্গু হয়ে যাওয়ার দিন। আইভির খুন হওয়ার দিন। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর নারকীয় হামলার ঠিক পরের দিন।
গত কয়েক দিনে একুশে টিভির লাইভ অনুষ্ঠান দেখছি । খবরের কাগজ ও ফলো করছি আগের চেয়ে বেশি। ( ই মেলা ডট কমে নিউজ পড়া যায় ২১ টা পত্রিকা থেকে ) । ঘটনার পরে ঘটনা । কিছু চিন্তা এসেই যায় ।
একুশে টিভি দেখতে দেখতে ছাত্র রজনীতির সাথে জড়িত এক বন্ধুর কথায় কিছু ইস্যু উঠে এলো । আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
তার ভাষায় , দেশ স্বাধীনের পর থেকে খুব ধীরে ধীরে আর ইদানিং কালে দ্রুতই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গীবাদের উত্থান হয়েছে। গত ৩০ বছর ধরেই সারাদেশে চলেছে ধর্মীয় লেবাশ ব্যবহার করে নানা ধরনের ব্রেইন ওয়াশ। কখনো খুন, জখম , ভয় দেখানো। দেশের অন্যতম গেরিলা কারখানা পার্বত্য চট্টগ্রামে চলেছে তালেবান ট্রেনিং।প্রমান হিসেবে বিভিন্ন দেশে , যেমন, ইরাক, প্যালেস্টাইন, আফঘানিস্তানে পাওয়া গেছে বাঙালী মুসলমান সৈনিক। ধর্মীয় ফ্যানাটিক দলের অস্ত্রধারী অঙ্গ সংগঠন গুলোর বিভিন্ন নামে বিভিন্ন জায়গায় লোক জন ধরা পড়েছে । ধরা পড়েছে অস্ত্র । এই গুলো সবই কিন্তু বিভিন্ন সময়ে পত্র পত্রিকা, বিবিসি , ভয়েস অফ আমেরিকা থেকে প্রচারিত রিপোর্ট।
বন্ধুর কথা হলো, আমরা জানি খুব ভালো করেই জামায়াত শিবির ৭১ এর পরে আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে গেলেও ৭৫ এর পর থেকেই সরকারী পৃষ্ঠ পোষকতায় ( এবং সেটা ৭৫ পরবর্তী সব সরকারের আমলেই) এবং বিদেশী প্রভুদের সাহায্য পুষ্ট হয়ে সারা বাংলাদেশেই তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছে। দেশব্যাপী তাদের বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্কিং এর আওতায় একদিকে নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহ ( ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ) আরেক দিকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ( বর্তমানে বছরে ১২০৬ কোটি টাকার টার্ন ওভারের ব্যবসা) চলে আসছে। নাশকতামূলক কার্যক্রমের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততা তারা মাঝে মধ্যেই অস্বীকার করে । কিন্তু, মজার ব্যাপার হলো , এই পর্যন্ত যত গুলো বিরাট ঘটনা ঘটেছে বোমা, অস্ত্র, খুন, গোপন হত্যা তালিকা ইত্যাদি নিয়ে - সবখানে যে সব লোক জন ধরা পড়েছে বা মারা গেছে , তাদের পাওয়া গেছে জামায়াত কানেকশন। তারা জীবনে কোন না কোন সময়ে জামায়াত করতো । তাদের কাছে পাওয়া দলিল এর ভিতর মওদুদীর বই পাওয়া গেছে সব ঘটনায়। সবচেয়ে কাছের ঘটনা হলো "বাংলা ভাই"।
এখন কত গুলা প্রশ্ন যে গুলো অনেকের ভিতরেই দেখছি -
১। "বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি" এবং "ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে মিলিট্যান্সির পথ অনিবার্য" - এই দুইটাই কিন্তু মতিউর রহমান নিজামীর বানী । বাংলা বাইয়ের ফাঁসি হতে পারলে "বাংলা ভাইকে বানানো নাটক বলে লুকিয়ে নিরাপদে রাখার চেষ্টার " কারনে নিজামীর কেন ৩০৪ ধারায় বিচার হবে না?
২। বছরে ১২০৬ কোটি টাকার ব্যবসা করার প্রথম পুঁজিটা জামায়াত কোথায় পেয়েছিলো ? দ্বীনের পথের লোক জনের এত কোটি কোটি টাকার ব্যবসার কি দরকার?
৩। জামায়াতের পেয়ারে নেতা মওদুদী তো পথে পথে ঘুরে লোক জনকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার কথা বলে নাই । ইসলামের বিভিন্ন সমালোচনা করার পাশাপাশি ( মওদুদী কড়া ভাষায় ইসলামের সমালোচনা করেছেন ,মওদুদীর সব কটা বই না পড়লে বুঝবেন না ,পড়ে দেখুন) রাষ্ট্রযন্ত্র দখল করার , দরকার হলে রক্ত বিপ্লব করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে, সেই নেতার প্রতিষ্ঠিত দল জঙ্গী বিপ্লবের সাথে জড়িত না, এইটা বিশ্বাসযোগ্য?
৩। খবরে প্রকাশিত সেই বহুল আলোচিত অস্ত্র ভরা জাহাজ । ফকা চৌধুরীর ছেলে সাকা চৌধুরীর জাহাজ ছিলো সাগরে। জাহাজটি ভেড়ার কথা ছিলো যেই সার কারখানার জেটিতে সেটি কৃষি মন্ত্রনালয় ,( নিজামীরমন্ত্রনালয়) এর আওতাভুক্ত । ঐ ঘটনার তদন্ত কই?
৩। বগুড়ার দুই ট্রাক অস্ত্র। ধরা পড়া লোক গুলার জামায়াত কানেকশন । কি হলো তারপর?
৪। ২১শে অগাস্টের বোমা হামলায় সাকা চৌধুরীর নাম শোনা গেছে বার বার । শোনা গেছে জামায়াতের নাম। ব্যাপারটা কি?
সাংবাদিক ভাইয়েরা , জিজ্ঞেস করেন না কেন-
বাংলা ভাই এর গ্রেফতার না করে উলটা তাকে নিরাপত্তা দিয়েছিলেন বর্ত্মানের আই জি । তিনি কেন সেদিন বাংলা ভাইকে গ্রেফতার করতে পারেন নাই ? বাংলা ভাই মানুষ খুন করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখার পরেও, সারা দেশের পত্রিকায় নির্যাতিত মানুষের সাক্ষাতকার , ছবি ছাপানোর পরেও কেন আই জি সাহেব এই লোকটার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেন নাই?
বাংলা ভাইয়ের ফাঁসী হলেই সব কিছু শেষ হয়ে যায় না। আই জিকে বলতে হবে তার হাত পা বেঁধে রেখেছিলো কারা ? নাকি তিনি সুবিধাভোগী ছিলেন কোন দলের?
[বিচার আচার না হওয়ার একটা কারন অবশ্য বন্ধু বলেছে । যারা দায়ী তারাই বিচারের প্রক্রিয়া আর ক্ষমতার সাথে যুক্ত থাকতে পারে। তাইলে আর আসামী ধরবেন কি করে? ]
যে কোন যুদ্ধে হেরে যাওয়া সেনা বাহিনীর সদস্যদের আর চাকরীতে রাখা হয় না। স্যাক করে দেওয়া হয় । সাইকোলজিকাল প্রবলেমের আশঙ্কায়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের হেরে যাওয়া আর্মি অফিসারদের চাকরী থেকে বরখাস্ত করেছে ।
পৃথিবীর ইতিহাস ঘেটে দেখেন, প্রতিটা জাতি তাদের নিজেদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছে ,লড়াই করেছে , এই রকম সকল ব্যক্তিকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে । এমন কি পেয়ারে পাকিস্তানের মওদুদীও পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতার কারনে পাকিস্তানেই নিষিদ্ধ ছিলো ১৯৪৭ এর পরে বহুত দিন। বহু কান্নাকাটি করে পরে পাকিস্তানে ফিরতে পেরেছিলো।
কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা দেখেন। গোলাম আজমের আপন ছেলে সেনাবাহিনীর বিরাট অফিসার । বাংলাদেশের বিরোধী পরিবারের উপর বাংলাদেশ রক্ষার দায়িত্ব?
আমরা কি কোন দিন আমাদের বাড়ির দরজায় দারোয়ান হিসেবে কোন বিতর্কিত ব্যক্তিকে চাকুরী দেই? আপনি দেবেন কোন দাগী আসামীকে দারোয়ানের চাকরী ? যেখানে নিজের বাড়ির মত একটা জিনিসকে কোন বিতর্কিত ব্যক্তির হাতে আপনি ছাড়তে রাজি না, সেইখানে নিজের দেশটাকেই " স্বাধীনতা বিরোধী " পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া সমর্থন করছেন?
গোলাম আজমের ছেলেকে সেনা বাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হবে না কেন? তাকে "দেশরক্ষা বাহিনী"তে ঢুকতে দিলো কে? কেনই বা কোন প্রতিবাদ হলো না?
বাংলাদেশের কোন সরকারের আমলে যারা কোন দিন খারাপ থাকে না, তা হলো , সেনাবাহিনী। তাদের বাজেট আজও গোপন । আমাদের ট্যাক্সের টাকায় সেনাবাহিনী যা ইচ্ছা তাই করে, আমরা জানিও না কত টাকা কোথায় খরচ হইলো । সবার আয়ের ব্যায়ের হিসাব চাইছে দুদক, সেনা বাহিনীর ব্যায়ের হিসাবের কি হবে?
গোলাম আজমের ছেলের হাতে যদি থাকে সেনা বাহিনী আর দেশ থাকে সেনা বাহিনীর হাতে , তাহলে , জামায়াতের বিচার কি করে হবে? কি করে চলবে বিচারের আইন , তদন্ত তার নিজের স্বাধীন গতিতে?
আমি আমার বন্ধুর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি । আপনি পারবেন?
No comments:
Post a Comment