স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই রকম হযবরল অবস্থা ও ভেঙে পড়ার কারণ কি?
আসুন এক এক করে কমন কিছু সমস্যাকে আলোচনা করে দেখি আসলেই সমস্যা যা মনে হয় তাই নাকি অন্য কোথাও। আমাদেরকে প্রথমেই মনে রাখতে হবে, দেশের ভিতরে যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমেই দরকার হবে সেই সমস্যার আদ্যপান্ত বিশ্লেষণ করে তার সমাধানে একটি রুপরেখা । রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাই যে কোন চাহিদাপূরণে বা সমস্যার সমাধানে দেশব্যপী বাস্তবায়নের একটি পলিসি পেপার থাকে। সেই পলিসি পেপারে সমস্যার উল্লেখ, চরিত্র ও সমাধানে করনীয় মূল দর্শন উল্লেখিত থাকে। এজন্য, প্রতিটা সমস্যার সমাধানে আমরা আগে দেখবো সেই সমস্যার ব্যাপারে আমাদের স্বাস্থ্যনীতি না পলিসি পেপারে কি বলা আছে, তারপর এর বাস্তবায়নে কি কি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, এবং তারপর বাস্তবতার নিরিখে এর সমাধান/ প্রস্তাবিত সমাধান।
আমাদের জনবল এর অভাবঃ
সন্দেহ নেই যে আমাদের জনবলের অভাব আছে । সেইটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবী জুড়েই আছে । ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন এর এই ওয়েব সাইটে গেলে এ বিষয়ে নানা তথ্য পাবেন। বিশ্বব্যপী স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা মাপার জন্য জনপ্রতি ডাক্তারের সংখ্যা হিসাব করা হয়। পরিমাপ হিসেবে এর কার্যকারিতা খুব একটা ভালো নয়। কারণ একজন ডাক্তার ঠিক কয়জন নাগরিকের স্বাস্থ্যের দেখভাল করতে পারবেন তা নির্ভর করে সেই ডাক্তার, প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো , টেকনোলজির পাশাপাশি লোকালয়ের মানুষ কে কয়জন কি ধরণের অসুখে ভুগেন তার উপর। সুতরাং, আমেরিকা কিংবা ইউরোপে বসে আম একজন ডাক্তার হয়ত ৩০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যের দেখা শোনা করতে পারি, কিন্তু বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া কিংবা বেনিনে তা সম্ভব নয়। সুতরাং, জনবলের সংখ্যা তাত্ত্বিক হিসেব করে ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ালেই সেবার মান বৃদ্ধি হবে না।
আমাদের যন্ত্রপাতির অভাবঃ
হেলথ টেকনোলজি বলতে আমরা অনেকেই যন্ত্রপাতি , সুঁচ সিরিঞ্জ বুঝি। আসলে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে হেলথ টেকনোলজি বলতে বুঝায় ঃ
১। সব ধরণের ফার্মাসিউটিক্যালস । এর ভিতর ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাক্সিন, টিকা, হোমিওপ্যাথি সব রকম কেমিকেলই পড়বে।
২। স্বাস্থ্য খাতে ব্যবহৃত সকল প্রকার যন্ত্রপাতি বা ডিভাইস । সেইটা সুতাও হইতে পারে, সিটি স্ক্যানারও হতে পারে, আবার মোবাইল টেলিফোন সহ যে কোন মোবাইল ডিভাইস যা রোগ প্রতিরোধ, রোগের নির্ণয় বা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে ।
৩। যে কোন ধরনের মাইনর ও মেজর সার্জিকাল প্রসিডিউর । মানে কাটাছেঁড়ার পদ্ধতি । ট্রিট্মেন্ট প্রটোকল ( যেমন - ক্যান্সার চিকিৎসার গাইড লাইন) এবং ক্লিনিকাল গাইড লাইন।
4. এমন কি স্বাস্থ্য সেবা কি ভাবে সাজানো গুছানো থাকবে এইটাও টেকনোলজির অন্তরভূক্ত ।
এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন ঃ
health technology include the following.
• Drugs: e.g., aspirin, beta-blockers, antibiotics, HMG-CoA reductase inhibitors (“statins”)
• Biologics: vaccines, blood products, cellular and gene therapies
• Devices, equipment and supplies: e.g., cardiac pacemakers, CT scanners, surgical gloves,diagnostic test kits
• Medical and surgical procedures: e.g., psychotherapy, nutrition counseling, coronary angiography, gall bladder removal
• Support systems: e.g., electronic patient record systems, tele-medicine systems, drug formularies,blood banks, clinical laboratories
• Organizational and managerial systems: e.g., prospective payment using diagnosis-related groups, alternative health care delivery configurations, clinical pathways, total quality management programs
এখন কথা হলো,
ক) এই টেকনোলজি গুলোর কয়টা আমাদের দেশে কোনখানে কয় পিস করে লাগবে, বেশি আছে না কম, কয়টা রোগীর জন্য কয়টা টেকনোলজি আসলেই দরকার -সেই সব ডাটা সংগ্রহ করা হয় কি?
-না হয় না। এই ধরনের ডাটা কালেকশন , এনালাইসিস এবং প্রাপ্ত রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে যদি ডিসিশন নেওয়া হত তাহলে আমাদের অলরেডি অপ্রতুল রিসোর্স ( সেইটা জনবল, টেকনলজি বা অর্থ- সবই হতে পারে) কে এলোকেশন বা ভাগাভাগি করার সিদ্ধান্ত গুলো আরেকটু সঠিক হত। সম্পদের অপচয় হত না।
খ) বাংলাদেশ এখন যেই সব টেকনলজি ব্যবহার করে তাদের ভিতরে কোনটা কতটুকু নিরাপদ, কতটুকু ইফেক্টিভ ( যা করার কথা তা করে কি না) কতটুকু কস্ট ইফেক্টিভ ( সর্বনিম্ন দামে সর্বোচ্চ উপকার দেয় কিনা বা মূল্যের বিপরীতে পাওয়া উপকারের পরিমাণ) তা স্টাডি করা হয় কি না?
--- না হয় না । আমরা অন্ধের মত উন্নত বিশ্বের দেওয়া প্রেস্ক্রিপশন অনুকরণ করি। যদিও তাদের প্রেক্ষাপটে যা অমৃত , আমাদের প্রেক্ষাপটে তা বিষ হতে পারে। আবার, দামী দামী অনেক যন্ত্রপাতি কিনে এনে চালাতে পারি না, ফেলে রাখি। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা অনেক যন্ত্র অনুদান দেয়, যা অনেক সময় আউট ডেটেড বা সমস্যাযুক্ত।
প্রচুর প্রযুক্তি দাতা দেশের কোন কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করে । যেমন ভিটামিন যুক্ত ফর্টিফায়েড বিস্কিট কিংবা প্লাম্পি নাট । মানুষের খাবার উৎপাদন কিংবা ক্রয় ক্ষমতা অর্জনে উপার্জনের ব্যবস্থা না করে ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করে এই নাট কেন খেতে হবে ? আবার, সবার জন্য নিরাপদ পানির সরবরাহে দেশীয় বিনিয়োগে পানি শোধনাগার স্থাপন না করে কেন কলেরা ভ্যাক্সিন উৎপাদন করতে হবে - এই গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা কর্মকান্ড গুলার কারণ হইলো সঠিক এভিডেন্স বেজড ডিসিশন মেকিং প্রসেসের অভাব।
গ) টেকনোলজি গুলোর দাম কি আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত?
--- এক ওষুধ ছাড়া আর কিছুই আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত দাম নিয়ে আসে না। ওষুধ দেশীয় কোম্পানি গুলো তৈরী করে বলে তাও কিছুটা গা সোয়া। আগের ওষুধ নীতি অনুযায়ী উৎপাদন মূল্যের উপরে মাত্র ২০% লাভে ওষুধের দাম নির্ধারিত হত । পরে ওষুধ কোম্পানি গুলোর লবিং এর কারণে পলিসিতে পরিবর্তন করা হয়, এখন কোম্পানি গুলো ইচ্ছামত দাম নির্ধারণ করতে পারে। বিদেশে নতুন ওষুধ গবেষণায় বিলিওন বিলিওন টাকা ইনভেস্ট করে বলে কোম্পানি গুলোকে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে যাতে গবেষণায় উৎসাহ পায়। কিন্তু বাংলাদেশের কোন কোম্পানিরই রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এ কোন বিনিয়োগ নেই। এরা সকলেই জেনেরিক ড্রাগ বা অন্যের আবিষ্কার করা ফর্মূলায় নিজেদের ওষুধ উৎপাদন করে। সুতরাং, এই ইচ্ছেমত দাম নির্ধারণের সুবিধা পাওয়াটা এক রকম সাংবিধানিক অধিকার লংঘন করে নাগরিকের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়।
ঘ) টেকনোজির দাম সহনীয় রাখতে দেশে উৎপাদন সম্ভব?
--- অবশ্যই সম্ভব। এমন অনেক টেকনোলজি আছে যেইটা দেশেই উৎপাদন করা যায়, আমদানি করার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু উদ্যোগ। কিন্তু হায় হতিস্মি! দেশে একটা কম্পিউটার উৎপাদনের কোম্পানি নেই, কিন্তু বুয়েটসহ সকল টেকনিকাল ভার্সিটিতে সবাই হাক ডাক দিয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায়। অথচ একটা ভার্সিটিও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে না। আমাদের ছেলে মেয়েরা নাসার জন্য রোবট বানাইতে খুবই উৎসাহী কিন্তু দেশের ১৬ কোটি মানুষের ব্যবহারে লাগবে এমন হেলথ টেকনোলজির কোটি কোটি টাকার মার্কেট পড়ে আছে অবহেলিত।
ডাক্তারদের গালি দেওয়ার লোকের অভাব নাই। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বলা যায়, ডাক্তাররা যদি এক একটা কসাই হয়, তাহলে দেশের হেলথ টেকনলোজির অবহেলিত মার্কেটের জন্য ইঞ্জিনিয়াররাও এক একটা কসাই। চাঁদের দেশে মাটি কেমনে তোলা যাবে- এইটা নিয়ে চিন্তা করতে ভালো লাগে , কিন্তু নিজের দেশের মাটির প্রতি কোন দায় দায়িত্ববোধ এদের নাই। কেন বলছি? বুয়েট আর ঢাকা মেডিকেল পাশাপাশি। যতদিন ঢাকা মেডিকেলে ছিলাম, বহুবার বুয়েটের বন্ধুরা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে, বেড়াতে, সিঙ্গারা খেতে, প্রেম করতে এসেছেন- কিন্তু আজ পর্যন্ত দেখিনি বা শুনিনি কেউ এসে বলেছেন - মেডিকেলের এই সমস্যাটার সমাধান এই ডিজাইন দিয়ে করা যায়- কিংবা, ঐ সমস্যাটার একটা টেকনোলজিকাল সমাধান সম্ভব! এই অভিযোগ আমার নিজের বন্ধুদের বিরুদ্ধেও। কষ্ট লাগে যখন ভাবি, বুয়েটের বন্ধুরা প্রয়োজন হলে মেডিকেলে এসে বন্ধুর জন্য রক্ত দিয়ে গেছে - অথচ তাদের মাথায় একবারো আসে নাই যে তার শিক্ষা ও জ্ঞান প্রয়োগের ক্ষেত্রটাও তো হতে পারে ঢাকা মেডিকেল! আমি ডাক্তার হয়ে যখন নিজে হেলথ টেকনোলজি নিয়ে শিক্ষা লাভ করলাম, তখন জানলাম , আমার ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুদেরও অনেক কিছু করার ছিলো , আছে- কিন্তু তারা এসব নিয়ে ভাবেই না! টিকেটিং সিস্টেম, পেশেন্ট রেকর্ড, পেশেন্ট ডাটাবেজ, মনিটরিং সিস্টেম, ড্রাগ ডিস্পেন্সারী ও কন্ট্রোল, ডিউটি রোস্টার, কমিউনিকেশন, লজিস্টিক্স , ম্যানেজমেন্ট --- কত কিছুই না ইঞ্জিনিয়ারদের উপর নির্ভরশীল, টেকনোলজিস্টদের উপরে নির্ভরশীল- কত্ত কিছু করার আছে!
আমাদের অর্থের অভাবঃ
এইটা একটা আরোপিত জুজুর ভয় জনিত সমস্যা । সন্দেহ নাই যে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের হার্টের একটা করে পেস মেকার, একবার করে এম আর আই / সিটি স্ক্যান কিংবা ৩০টা করে সিপ্রোফ্লক্সাসিন দেওয়া মত টাকা আমাদের নাই। কিন্তু এইটা মোটেই সত্যি কথা না যে বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে অর্থ দিয়ে চিকিৎসা সেবা কেনার সামর্থ নাই। আগেও বলেছি , হাসপাতালে আসতে যাতায়াতে, আসার পরে বিভিন্ন টেস্ট আর ওষুধের পিছনে মানুষের শত শত টাকা খরচ হয়। কিন্তু টাকার কোন হিসাব নিকাশ নাই। এইটা কতিপয় কর্মকর্তা কিংবা দোকানীর পকেটে না ঢুকে সিস্টমেটিকালি সরকারী রেভেনিউ খাতে ঢুকলে হাসপাতাল গুলো অন্তত এখনকার চেয়ে বেশি ভালো ভালে পরিচালিত হতে পারত ।
দেখুন, আমাদের দেশের মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব । এর জন্য যদি প্রতিনিয়ত দাতার কাছে ভিক্ষা চাইতে হয়, সে তো কুকুর লেলিয়ে দেবেই। তখন সেই কুকুরকে ডগ বিস্কিট খাওয়াতে আমাদের ঋণের অর্থ শেষ হয়ে যাবে। ঠিক এই কারণেই কষ্ট করে হলেও আমাদের উচিত স্বাস্থ্যখাত পরিচালনার পয়সাটা সঠিক জায়গায় দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এখন, সেই দেওয়াটা কি ভাবে হবে ট্যাক্স নাকি হেলথ ইন্সুরেন্স - এইটা আলোচনার দরকার আছে । অনেকেই মনে করেন, এখনকার পরিস্থিতিতে আমার যখন দরকার হচ্ছে আমি শুধু তখনই , নিজের জন্য টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিচ্ছি । আর দরকার না হলে খরচ করছি না। এতে খুউউউউব লাভ হচ্ছে। কিন্তু সত্যি কথা হলো , ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে আপনাকে যখন চিকিৎসা নিতে হচ্ছে- সেইটা জীবনে একবার হলেও - আপনি এক সাথে এত বেশি টাকা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন যে ঐ একবারেই আপনাকে পথে বসে যেতে হতে পারে।
অল্টারনেটিভ কি?
কয়েক ধাপে বিভক্ত স্বাস্থ্য সেবা । এর খরচ যোগাড় করা হবে বিভিন্ন ট্যাক্স ও হেলথ ইন্সুরেন্সসহ অনুদানের মাধ্যমে। সেবা পাবেন সকল নাগরিক। সেবা পাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক থাকবে কিন্তু সেবা নেওয়ার/ না নেওয়ার ফ্রিডম থাকবে। মূলত, সকল উপার্জনক্ষম নাগরিক একটা বেসিক হেলথ স্কীম দিয়ে সুরক্ষিত থাকবেন। কেউই বাদ পড়বেন না। বেসিকের নিচের মানুষ গতর খেটে এবং বেসিকের উপরের ধনী ব্যক্তিরা অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে হাইয়ার স্কীমের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। আধুনিক কোন সেবার জন্য যেন বাংলাদেশের বাইরে যেতে না হয়, সেইটা সরকার নিশ্চিত করবে ডাক্তারদের ট্রেনিং ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোকবল দিয়ে।
বেসিক স্কীম ঃ
স্বাস্থ্য সেবা খাতের উন্ন্যনের জন্য কেবল মাত্র স্বাস্থ্য ট্যাক্স নেওয়া যায়- যা সকল নাগরিকের উপর বাধ্যতামূলক। এইটা বাধ্যতামূলক বেসিক হেলথ ইন্সুরেন্সও বলতে পারেন। বাংলাদেশের সকল উপার্জনক্ষম নাগরিক একটা ন্যুনতম অর্থ প্রতিমাসে দেবেন। এর বিপরীতে বেসিক চিকিৎসা সেবা স্কীম এর আন্ডারে কিছু নির্দিষ্ট সেবা এবং এসেন্সিয়াল মেডিসিন লিস্টের যে কোন ওষুধ নিতে পারবেন। কস্ট ইফেক্টিভনেস স্টাডি এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের উপরে পরিচালিত রিসার্চ দ্বারা প্রাপ্ত রিয়েল এভিডেন্স এর উপর নির্ভর করে একটা জাতীয় সাইন্টিফিক কাউন্সিল সরকারকে পরামর্শ দেবে - এই বেসিক স্কীমে কোন কোন সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সরকারী সহ সকল বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যারা বেসিক সেবা দিতে চায় , তাদেরকে লাইসেন্স ভূক্ত হতে হবে। এই বেসিক স্কীম পাওয়ার অধিকার সকলের।
বেসিকের নীচে পুওর স্কীমঃ
যাদের দেওয়ার সামর্থ নেই, তারা সরকারের স্পেশাল স্কীমের আন্ডারে থাকতে পারেন। যেমন - কাজের বিনিময়ে খাদ্যের মত কাজের বিনিময়ে চিকিৎসা। সুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন কাজ করে দিয়ে আপনি বিভিন্ন ধরণের ভাউচার উপার্জন করতে পারবেন । অসুস্থ হলে ঐ ভাউচার দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন। যারা সিজনাল ওয়ার্কার - অর্থাৎ নিয়মিত আয় করতে পারেন না কিন্তু মাঝে মাঝে উপার্জন করেন - তারাও এই ভাউচার কিনতে পারবেন। এক একটি সেবার জন্য এক একটি ভাউচার থাকতে পারে। যেমন- মাতৃসেবা পাওয়ার জন্য ভাউচার। মেডিসিন ভাউচার ইত্যাদি। রোগী নিজেই নিজের প্রয়োজন মত তার জন্য দরকারী ভাউচার নিতে পারবে। এতে করে প্রচুর পার্ট টাইম কাজের সুযোগ হবে।
যথাযত পলিসির অভাবঃ
আমাদের মূল স্বাস্থ্যনীতি যথেষ্ট ভালো একটা পলিসি পেপার। প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য কমুইনিটি ক্লিনিক এবং ধাপে ধাপে কমিউনিটি থেকে ইউনিয়ন--> উপজেলা--> জেলা--> বিভাগ--> জাতীয় পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থাটা আসলেই খুব ভালো । সুচিন্তিত এবং সিস্টেমেটিক। তাইলে সমস্যাটা কোথায় ? সামগ্রিক ভাবে চিকিৎসা সেবা বা স্বাস্থ্য পরামর্শ দিতে হইলে কিছু পূর্ব শর্ত পালিত হইতে হবে। যেমন-
১। সেবাদানকারীর নিজের জ্ঞান
২। সেবাদানকারীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য লোকবল
৩। সহায়তাকারী টেকনোলজি
৪। রোগ নির্ণইয়ের ব্যবস্থা
৫। রোগ নির্নয়ের পরে চিকিৎসা প্রদানের সরঞ্জাম, অবকাঠামো , ওষুধ পাতি ইত্যাদি ।
প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্যতৈরী করা কমিউনিটি ক্লিনিক/ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স/ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মানুষকে সেবা দেবে সেখানে কারা থাকবে? একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের জন্য সরকার স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও এবং স্বাস্থ্য সহকারীর ব্যবস্থা হেলথ কেয়ার নেটোয়ার্কে রেখেছেন। আবার ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন এম বি বি এস ডাক্তার এর পোস্ট তৈরী করা হয়েছে। উপজেলা, জেলা পর্যায়ে প্রচুর পোস্ট আছে কিন্তু এদের অনেক গুলোই খালি ।
চাকুরীর এই সোনার হরিণের বাজারেও কেন পোস্ট খালি পড়ে থাকে? এর বিবিধ কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের রাজধানী কেন্দ্রিক উন্নয়ন। আমার জন্মের পর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত গত ৩ যুগে ঢাকা পরিবর্তিত হয়েছে দ্রুত । বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগের এক মাত্র খোলা জানালা হলো ঢাকা । মানুষের জীবনের মৌল চাহিদার নিরিখে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, বাসস্থানের জন্য পানি, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট , স্যানিটেশন , স্বাস্থ্য সেবার উন্নত প্রতিষ্ঠান, দেশের বড় বড় ফ্যাশন হাউজ, বিনোদন এর মাধ্যম - সবই ঢাকায় । যখন মেডিকেলে ভর্তি হই, রাজশাহী যেতে হয়েছিলো--- আমার মনে হচ্ছিলো পুরো রাজশাহী শহর ঢাকার যে কোন বড় পাড়া/মহল্লার ভিতরে অনায়াসে ঢুকে যাবে। সেখানে রাস্তার এক পাশে পাকা বাড়ি তো অন্য পাশে কাঁচা ঘর, উঠান, গরু চরে বেড়াচ্ছে । একই অভিজ্ঞতা ময়মনসিংহকে নিয়ে। ৪০ বছর পরে দিনাজপুরের সাদীপুরে বেড়াতে গিয়ে আমার মায়ের মন্তব্য " কিছুই বদলায়নি- যা ছিলো সবই আগের মত" । ভাবখানা এই রকম - ঢাকাই বাংলাদেশ । ঢাকা খাবে, ঘুমাবে, হাগু করবে - আর ঢাকার বাইরে পুরো দেশটা রয়েছেই শুধু ঢাকাকে খাদ্য, বস্ত্র, বিলাস ব্যাসনের উপকরণের যোগান দিতে।
সৌদি আরব যেমন তেলের টাকায় সারা বিশ্ব থেকে আগত সম্পদ ভোগ করে আর সেদেশে যাওয়া শ্রমিকদের "মিসকিন মিসকিন" বলে গালি দেয় - সত্যিকার অর্থে আমরা ঢাকাবাসীদের আচরণে খুব একটা পার্থক্য নেই। ঢাকার বাইরের মানুষেরা , বিশেষ করে চাষী-কামার- কুমোর- মুচি- শ্রমিকরা আমাদের কাছে মিসকিন। তাই ঐ সব মিসকিনদের জন্য ওয়াসার পানির লাইন, ডেসকোর বিদ্যুতের লাইন, কিউ বির ইন্টারনেট এর লাইন কিংবা উন্নত কল কারখানা, ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ কিংবা হাসপাতাল করতে আমাদের খুব গায়ে লাগে।
আমরা এতটাই স্বার্থপর শুয়োর প্রকৃতির মানুষ যে সারাদেশের সকল জেলায় ইউনিভার্সিটি স্থাপনের কথা শুনলে আমরা হায় হায় করে উঠি ! হায়, শিক্ষা ব্যবস্থার মানের তাহলে কি হবে? সত্যিই তো ! দেশের সবাই যদি ব্যাচেলর ডিগ্রী নিয়ে ফেলে, তাইলে আমি তো আর এক্সক্লুসিভ রইলাম না! অতএব, যে কোন মূল্যে মানুষের শিক্ষিত হওয়া ঠেকাও!
শুয়োর শব্দটা কি আপনাকে নাড়া দিলো ? তাহলে দেখুন-
আমাদের সমাজের উপর তলার মানুষেরা হয়ত দেখতে চান একদিন এমনকি ৩য় -৪র্থ শ্রেণীর চাকুরিজিবী রাও graduate , post graduate হবে । সেটা জাতির জন্য কতটা গৌরবের হবে তা চিন্তা করতেও আমি শিউরে উঠি । ---- এই হলো আমাদের অবস্থা । কোথায় শিক্ষার মান যাতে উন্নত ও সমান থাকে তার জন্য চেষ্টা করবো - তা না শিক্ষার মান এর স্বার্থে শিক্ষার পথই বন্ধ করে দাও! হক মাওলা!
তো এই ঢাকা কেন্দ্রিক উন্নয়নের ফলাফল হইলো ঢাকার বাইরে সম মানের শিক্ষা সহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নাই। ফলে, কেউই ঢাকার বাইরে থাকতে চায় না। সকলেই বাইরে থেকে ঢাকায় চলে আসতে চায়। এই সমস্যার কথা যে সব ডাক্তার সরকারী চাকুরি ছেড়ে দিচ্ছেন তাদের কথাতেও উঠে এসেছে। যেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সকলেই ঢাকায় থাকতে চায়, সেখানে কেবল ডাক্তারদের মফস্বলে পড়ে থাকতে বলাটা অন্যায় এবং তারা সেখানে থাকবেন- এইটা আশা করাটা নিতান্তই আহাম্মকি।
কেন?
দেশের সেরা মেধাবীরা ডাক্তারী পড়ে। ডাক্তারী পড়াটা অনেক কষ্টের কাজ। ডাক্তাররা পোস্ট গ্রাজুয়েশন করতে চায়। ডাক্তারের পরিবারের (স্ত্রী/স্বামী) রাও মেধাবী কেউ হয় যারা ঢাকার মত বড় শহরে থেকে কাজ করে/করতে চায়। আর পরিবার চাকুরী না করলেও সন্তানদের দেশের সেরা স্কুল/কলেজে পড়াতে সকলেই চায়। তার উপরে বিদ্যুৎ, পানি, ইন্টারনেটের ব্যাপার তো আছেই। সুতরাং, শুধু ডাক্তার নয়, পাশাপাশি মেধাবী নার্স, প্যারামেডিক, টেকনিশিয়ানদের মফস্বলে, গ্রামে, ধরে রাখতে চাইলে তাদের থাকার জায়গাটাতে বিদ্যুৎ, পানি , ইন্টারনেটের সুবিধা দিতে হবে। তাদের সন্তানদের পড়ালেখার জন্য আশে পাশে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। ঢাকার মার্কেট যে সব খাদ্য, বস্ত্র ও বিনোদন অফার করতে পারে - সেই মফস্বল বা গ্রামেও তা পৌছানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
এই দৃষ্টিকোন থেকে চিন্তা করলে , বাংলাদেশের যে কোন রাজনৈতিক দল, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগকারী - কেউই সঠিক পলিসিতে চলে না। যেখানে দেশের হাজার হাজার বর্গ মাইল পড়ে আছে, কোটি কোটি কাঁচা ঘর - সেখানে কোন উন্নয়নের চিত্র নাই। পাকা বাড়ি বানানোর ব্যবস্থা করা - সে সব বাড়িতে ন্যুনতম বিদ্যুৎ, পানি, একটা করে টেলিফোন, ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা - এই ধরনের কোন কার্যক্রম না লীগের ইশতেহারে আছে, না বি এন পির। এমন কি সাধারণ মানুষের দাবীতেও তেমন নেই। কারণ তারাও চায়, দরকার হইলে সরকার ফ্লাই ওভার, ওয়াক অভার, আকাশে বাতাসে ফ্ল্যাট গড়ে হলেও ঢাকায় থাকার ব্যবস্থা করে দিক।
তাহলে এর সমাধান কি?
সবার আগে দরকার কিছু পলিসি বা নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া। যেমন-
যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক , সকল বিভাগ-->জেলা-->উপজেলা-->ইউনিয়ন--> গ্রাম পর্যায়ে সুযোগ, সুবিধা ও উন্নয়নের সমান মান, পরিমাণ ও চরিত্র বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকিবে।
সোজা বাংলায়, সুযোগ সুবিধার কিছু বেসিক লিস্ট থাকবে যেইটা সারা বাংলাদেশের জন্য সমান হবে।
ঢাকা বিভাগে যা যা থাকবে, বাকি সকল বিভাগে তা তা-ই থাকতে হবে।
ঢাকা বিভাগ সহ একই বিভাগের অধীনে সকল জেলায় সমান সুযোগ, সুবিধা ও সেবার ব্যবস্থা থাকবে।
একই ভাবে উপজেলা পর্যায়ে সকল উপজেলার জন্য একই ধরনের নাগরিক সেবা দিতে হবে। ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের বেলাতেও তাই।
কিছু মৌলিক অধিকারের কথা সকল নাগরিকের জন্য সমান ভাবেই সংবিধানে রচিত আছে । কিন্তু বাংলাদেশের যে কোন সরকার যখন কোন প্রকল্প নেয়, তখন সেই সব উন্নয়ন প্রকল্পের মূলনীতি হিসেবে কখনোই " সকলের জন্য সমান উন্নয়ন" - এই নীতি মেনে প্রকল্প ডিজাইন করে না। নইলে, যেদিন থেকে ঢাকায় ওয়াসা হয়েছে সেইদিন থেকেই বাংলাদেশের প্রতিটা জেলার পরিশোধিত পানির ব্যবস্থা চালুর প্রকল্প নেওয়া হত। প্রতিটা জেলায় , উপজেলায় একটা করে আগোরার মত সুপার মল থাকতো। কক্সবাজারকে বাই পাস করে ইন্টারনেট এর সুবিধা ঢাকায় ঢুকতে পারতো না । প্রতিটা নাগরিককে ইন্টারনেটের সুবিধার আওতায় আনার ইচ্ছা থাকলে ভারতে ইন্টারনেট রপ্তানির মত উদ্ভট প্রস্তাব শুনতে হত না।
আমেরিকায় বেশ কয়েক বছর থাকার পরে আমার এক আত্মীয় বলেছিলেন- সব শহর ঘোরার দরকার নেই। আমেরিকার কয়েকটা শহর দেখে ফেললে বাকি গুলো একই রকম লাগে। বাস থেকে নেমে চোখে পড়বে একটা ওয়াল মার্ট ।
হল্যান্ডবাসী এক বন্ধুর মন্তব্য ঃ
প্রায়ই পথ হারিয়ে ফেলি। কারণ রাস্তা - বাড়ি সব একই রকম দেখতে। এক শহরে বাস থেকে নামলে যে সব প্রতিষ্ঠান চোখে পড়ে, বাকি শহর গুলোতেও তাই। কেমন যেন সব কপি পেস্ট !
একি স্বপ্ন? না সম্ভব?
নিঃ সন্দেহে একদিনে সম্ভব না । আমেরিকা কিংবা হল্যান্ড এর মত দেশ কয়েক শত বছর ধরে একটু একটু করে আজকের অবস্থানে এসেছে। কারণ তাদের রাষ্ট্রনীতিতে স্পষ্ট লেখা আছে --- দেশের একটি এলাকা , তা রাজধানী থেকে যত দূরেই হউক আর কাছেই হউক --- অন্য সকল এলাকার মত সমান সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত হইবে।
তাই, তারা যখন উন্নয়ন প্রকল্প নেয়, শুধু ঢাকা , শুধু চট্টগ্রাম কিংবা খুলনার জন্য নেয় না --- দেশের সকল জেলার জন্য নেয়। সকল উপজেলার জন্য নেয়।
মানুষের স্বভাব চরিত্র (মূলত ডাক্তার) খারাপ, সেবা দেওয়ার সঠিক মনভাব নাই।
এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । পুরো সিস্টেমটাই যখন নষ্ট হয়ে গেছে , যার যা ইচ্ছা তাই করছে , তখন এই ধরনের অধঃপতন হবেই। দরজা খোলা রেখে ঘুমালে চোরকে নামায পড়িয়ে লাভ নেই। সে চুরি করবেই। দরকার হলো দরজা বন্ধ করা, সামনে ক্যামেরা লাগানো, চোরের জন্য বিকল্প উপার্জনের পথ করা এবং তারপর মানুষকে উপদেশ দেওয়া যাতে তারা চোরাই মাল না কেনে।
একদিনে যেহেতু সারা বাংলাদেশকে ঢাকা বানায় ফেলা সম্ভব না - সেই জন্য এখনি অল্প অল্প করে কিছু কঠোর , কিছু সহযোগিতা মূলক পলিসি নেওয়া। যেমন- ঢাকায় আর নতুন আবাসন তৈরী করতে না দেওয়া । ঢাকার বাইরে অন্যান্য এলাকায় সরকারী - বেসরকারী - ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন, ইন্টারনেট সুবিধা সহ বাড়ি/ ফ্লাট বানানো। মানুষ যদি কিনে তো ভালো। না কিনতে পারলে কিস্তিতে ভাড়া দেওয়া । ঢাকার বাইরের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারী স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে এখনি উন্নত লাইব্রেরী, ইন্টারনেট , নিরাপদ পানি এবং প্রয়োজনে হোস্টেলের ব্যবস্থা করে দেওয়া।
ঢাকার বাইরে আবাসন, বিশ্ববিদ্যালয়, পরিশধিত পানির কারখানা ( ওয়াসার মত) এবং উন্নত মার্কেট স্থাপনের জন্য প্রাইভেট- পাবলিক বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা। যারা এসব প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে তাদের বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সুবিধা দেওয়া ।
টেকনোলজির সর্বোচ্চ ব্যবহারঃ
বাংলাদেশের অনেক অনেক টাকা নেই। তাই অনেক কিছু হুট করে করা সম্ভব হয় না। কিন্তু আজকের যুগে স্রেফ টেকনোলজির সাহায্য নিয়ে সারা বাংলাদেশের মানুষকে সমান সুযোগ ও সুবিধা দেওয়া সম্ভব। সেই রকম টেকনোলজি হচ্ছে আই সি টি এবং আই টি । আর কিছু না হোক, সারা বাংলাদেশে শুধু যদি হাই স্পিড ইন্টারনেট এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায় তাহলে বাকি আরো অনেক মৌল চাহিদা মেটানোর রাস্তা মানুষ নিজে ব্যক্তিগত উদ্যোগে, সমষ্টিগত ভাবে কমিউনিটি চেষ্টা বা প্রাইভেট বিনিয়োগে নিজেরাই করে নিতে পারবে।
টেকনোলজি তথা ইন্টেরনেট , কম্পিউটার, ভিডিও-অডিও ইত্যাদি নানা রকম টেকনোলজির কারণে এখন আর গ্রামে গ্রামে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল গড়ে তোলার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু আমাদের থিংকিং প্রসেস বদলানোর । আমেরিকার বাঙ্গালী সালমান খানের নাম আপনারা হয়ত শুনেছেন। সালমান আমাদের অতি পরিচিত ইন্টারনেট এবং ভিডিও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষা দানের ব্যবস্থাটাকেই পালটে ফেলার চেষ্টা করছেন । না- তিনি স্কুল বন্ধ করতে বলেন নি। টিচারদের চাকুরী থেকে ছাটাই করে দিতে বলেননি । স্রেফ এইটুকু বলেছেন যে মিলে মিশে আনন্দ নিয়ে, এক একজনের সুবিধা ও সময় মত শিক্ষা দানের পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে। আগে যেমন শিক্ষা দানের গুরুরা বাসায় শিক্ষা দিতেন, একজন শিক্ষার্থী গুরুর সাথে আলোচনায় বসতেন, বছরের পর বছর দীক্ষা নিয়ে গুরু যখন বলতেন - হ্যাঁ , তোমার শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে - তখন তারা বাকিদের দীক্ষা দিতে বেরুতেন। অনেকটা সেই রকম।
এই শিক্ষা ব্যবস্থার উপকারিতা কি?
প্রথম উপকারিতা ঃ সকলের জন্য সমান মানের শিক্ষক
আধুনিক যুগে মুশকিল হয়েছে আমরা সবাই মিলে গুরুর বাড়িতে গিয়ে থাকতে পারছি না । আবার একই গুরুর পক্ষে হাজার হাজার মানুষকে শিক্ষা দিয়ে বেড়ানোও সম্ভব না । তাই দেশে দেশে স্কুলের প্রচলন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সব গ্রামে কি একই মানের শিক্ষক পাঠানো সম্ভব?
না।
কিন্তু একই মানের ভিডিও শিক্ষক পাঠানো সম্ভব?
হ্যাঁ। এই জন্যই সালমানের ১০ মিনিটের ভিডিও শিক্ষা এত জনপ্রিয় হয়েছে। সারা বিশ্ব থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন শিক্ষার্থী - বয়স কিংবা লেভেল নির্বিশেষে এই সব ভিডিও থেকে শিক্ষা নিচ্ছে । আমি নিজেও অংক করছি কয়েক দিন ধরে ।
দ্বিতীয় উপকারিতা ঃ সকলের জন্য সমান মানের সনদ
এর চেয়ে গণতান্ত্রিক, সামাজিক ন্যায় আর হয় না। পৃথিবীর কোন শিক্ষা যদি দাবী করতে পারে যে তারা সকল মানুষকে সমান সুযোগ, সমান সুবিধা , সমান দক্ষতার সনদ দিয়ে থাকে - তাহলে তা হলো এই সালমান খান একাডেমি । এখানে মানুষ ৮০-১০০% এর জন্য পড়ে না। এখানে সকলেরই লক্ষ্য থাকে ১০০% অর্জনের।
চিন্তা করে দেখুন - এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যা বাধ্য করছে প্রতিটা শিক্ষার্থীকে ১০০% বা সুপার এ গ্রেড পেতে । তুমি যতক্ষণ না একটি বিষয়ের একটি লেসনে ১০০% দক্ষতা না পাচ্ছো , ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি পরের লেসনে যাবেই না ! কি আশ্চর্য সাম্য! কি সুন্দর ন্যায়!
আমরা এখন কি করছি? কাউকে এ গ্রেড, কাউকে বি গ্রেড , কাউকে সি গ্রেডের সিল কপালে লাগিয়ে এস এস সি, এইচ এস সি সনদ দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। যারা ফার্স ক্লাস , তারা মাত্র ৬০% দক্ষতা নিয়ে পাশ করছে ।
একটু ভেবে দেখুন তো ! আপনি কোন গাড়িতে চড়বেন যার ব্রেক ৬০% কাজ করে? কিন্তু আপনি সেই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেবেন যে কিনা মাত্র ৫০% দক্ষ । ( বাংলাদেশে মেডিকেলে পাশের জন্য ৫০% নম্বর পেতে হয়) তার মানে, বাকি ৫০% না জেনেও আমি আপনার গলায় ছুরি চালাতে আইনত অনুমোদিত !!!!!
অথচ সালমানের পদ্ধতিতে এনাটমিতে ১০০% দক্ষতা অর্জন না করে আমার পক্ষে সম্ভবই ছিলো না পরের সাবজেক্টে যাওয়ার।
এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে স্কুলে স্কুলে মান সম্মত ভিডিও পাঠানো যায়। দরকার শুধু ভিডিও প্লেয়ার একটি কম্পিউটার , আর বিদ্যুৎ। সোলার বিদ্যুৎ দিয়ে যে সব স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব হচ্ছে - সেখানে এই ধরণের ভিডিও চালানো যায়।
বাংলাদেশ সরকার টিভিতে ভালো স্কুলের ক্লাস প্রচার করবে। আমার কথা হলো, সেইটা রেকর্ড করে ইন্টারনেটে আপলোড করে দিলে দেশের যে কোন স্থান থেকে বার বার , যতবার ইচ্ছা , যতজনের ইচ্ছা নামিয়ে ব্যবহার করতে পারবে।
এর ফলে, (কি ভয়ানক কথা) আমাদের ৩য়-৪র্থ শ্রেনীর কর্মকর্তারাও অফিসের শেষে বাসায় বসে বসে পড়ালেখা করতে পারবেন। হাজার হাজার , লক্ষ লক্ষ মান সম্মত শিক্ষক তৈরীর প্রয়োজন কালকেই মিটানো সম্ভব না। কিন্তু এইটা খুবই সম্ভব যে মান সম্মত শিক্ষকদের দিয়ে ১০ মিনিটের ভিডিও বানিয়ে বানিয়ে সেইটা সারা বাংলাদেশে পৌছানোর ব্যবস্থা করা।
হাসপাতাল গুলোর ক্ষেত্রেঃ
কিছু জিনিসের অটোমাইজেশন প্রয়োজন । হাসপাতালে টিকেটিং, পেশেন্ট রেকর্ড ইত্যাদি প্রচুর ক্ষেত্রে ডাটা কালেকশন ও লজিস্টিক্সকে অটোমাইজ করে ভুল ত্রুটি , রোগীর চাপ ইত্যাদি কমানো সম্ভব। পাশাপাশি, আরেকটা জিনিস করা দরকার । তাহলো , ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানদের কাছে রেজিষ্ট্রি বাধ্যতামূলক করা । গ্রামের রোগীরা এবং শহরের ওয়ার্ডের রোগীরা প্রথমে তার নিজস্ব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান এর কাছে যাবে। এরপর ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান রেফার করলে বিশেষজ্ঞদের কাছে যাবে। এতে করে সর্দি কাশির জন্য জাতীয় অধ্যাপকের কাছে যাওয়া বন্ধ হবে। এবং কেউ ২০ টাকায় বসে ওষুধের দোকানে রোগী দেখবে আর কেউ ধান্মন্ডিতে বসে কোটি টাকা কামাবে - এই অন্যায় ও বন্ধ হবে। যতজন এম বি বি এস , বি ডি এস রা পাশ করে বেরিয়েছেন - তাদের সকলের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে।
এই ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রিকৃত সকল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ঐ এম বি বি এস এবং বি ডি এস দায়ী থাকবেন। সরকারের কাজ হবে মাঝে মাঝে র্যান্ডমলি কিছু লোকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা , তার কাগজ পত্র দেখা। প্রতি ৬ মাস অন্তর একজন বিডি এস কাছে চেক আপ করতে হবে। প্রতি এক বছর অন্তর এম বি বি এস এর কাছে । এর বাইরে অসুস্থ হলে তো দেখাবেই। সরকার যদি দেখে কোন ডাক্তারের আন্ডারে থাকা সকল মানুষের চেক আপের কাগজ পত্র, স্বাস্থ্য ইত্যাদি দেখ ভাল ঠিক মত আছে - তাহলে সেই অনুযায়ী বেতনের উপরে ডাক্তারদের ইঙ্ক্রিমেন্ট বাড়বে।
যেই ডাক্তার যত বেশি রিমোট অঞ্চলে কাজ করবেন , তিনি তত বেশি বেতন পাবেন। ( এইটা চালু থাকবে, যতদিন না রিমোট অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নত হচ্ছে) ।
৬০০০ মানুষের কাগজ পত্র ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যদি অবহেলা পাওয়া যায় , তাহলে ডাক্তারকে শো কজ করা যাইতে পারে। এতে করে , ডাক্তারদের "গড" এর আচরণ করা কমবে। ভুয়া ডাক্তারীও বন্ধ হবে- যেহেতু মানুষের স্বাস্থ্যের উপরে নির্ভর করছে সেবাদানকারীর বেতন-ভাতা।
অনেক আপত্তি থাকতে পারে এই সব সমাধানে । আপনারা আলোচনা করুন। সমাধান বেরিয়ে আসুক।
আসুন এক এক করে কমন কিছু সমস্যাকে আলোচনা করে দেখি আসলেই সমস্যা যা মনে হয় তাই নাকি অন্য কোথাও। আমাদেরকে প্রথমেই মনে রাখতে হবে, দেশের ভিতরে যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমেই দরকার হবে সেই সমস্যার আদ্যপান্ত বিশ্লেষণ করে তার সমাধানে একটি রুপরেখা । রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাই যে কোন চাহিদাপূরণে বা সমস্যার সমাধানে দেশব্যপী বাস্তবায়নের একটি পলিসি পেপার থাকে। সেই পলিসি পেপারে সমস্যার উল্লেখ, চরিত্র ও সমাধানে করনীয় মূল দর্শন উল্লেখিত থাকে। এজন্য, প্রতিটা সমস্যার সমাধানে আমরা আগে দেখবো সেই সমস্যার ব্যাপারে আমাদের স্বাস্থ্যনীতি না পলিসি পেপারে কি বলা আছে, তারপর এর বাস্তবায়নে কি কি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, এবং তারপর বাস্তবতার নিরিখে এর সমাধান/ প্রস্তাবিত সমাধান।
আমাদের জনবল এর অভাবঃ
সন্দেহ নেই যে আমাদের জনবলের অভাব আছে । সেইটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবী জুড়েই আছে । ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন এর এই ওয়েব সাইটে গেলে এ বিষয়ে নানা তথ্য পাবেন। বিশ্বব্যপী স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা মাপার জন্য জনপ্রতি ডাক্তারের সংখ্যা হিসাব করা হয়। পরিমাপ হিসেবে এর কার্যকারিতা খুব একটা ভালো নয়। কারণ একজন ডাক্তার ঠিক কয়জন নাগরিকের স্বাস্থ্যের দেখভাল করতে পারবেন তা নির্ভর করে সেই ডাক্তার, প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো , টেকনোলজির পাশাপাশি লোকালয়ের মানুষ কে কয়জন কি ধরণের অসুখে ভুগেন তার উপর। সুতরাং, আমেরিকা কিংবা ইউরোপে বসে আম একজন ডাক্তার হয়ত ৩০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যের দেখা শোনা করতে পারি, কিন্তু বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া কিংবা বেনিনে তা সম্ভব নয়। সুতরাং, জনবলের সংখ্যা তাত্ত্বিক হিসেব করে ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ালেই সেবার মান বৃদ্ধি হবে না।
আমাদের যন্ত্রপাতির অভাবঃ
হেলথ টেকনোলজি বলতে আমরা অনেকেই যন্ত্রপাতি , সুঁচ সিরিঞ্জ বুঝি। আসলে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে হেলথ টেকনোলজি বলতে বুঝায় ঃ
১। সব ধরণের ফার্মাসিউটিক্যালস । এর ভিতর ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাক্সিন, টিকা, হোমিওপ্যাথি সব রকম কেমিকেলই পড়বে।
২। স্বাস্থ্য খাতে ব্যবহৃত সকল প্রকার যন্ত্রপাতি বা ডিভাইস । সেইটা সুতাও হইতে পারে, সিটি স্ক্যানারও হতে পারে, আবার মোবাইল টেলিফোন সহ যে কোন মোবাইল ডিভাইস যা রোগ প্রতিরোধ, রোগের নির্ণয় বা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে ।
৩। যে কোন ধরনের মাইনর ও মেজর সার্জিকাল প্রসিডিউর । মানে কাটাছেঁড়ার পদ্ধতি । ট্রিট্মেন্ট প্রটোকল ( যেমন - ক্যান্সার চিকিৎসার গাইড লাইন) এবং ক্লিনিকাল গাইড লাইন।
4. এমন কি স্বাস্থ্য সেবা কি ভাবে সাজানো গুছানো থাকবে এইটাও টেকনোলজির অন্তরভূক্ত ।
এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন ঃ
health technology include the following.
• Drugs: e.g., aspirin, beta-blockers, antibiotics, HMG-CoA reductase inhibitors (“statins”)
• Biologics: vaccines, blood products, cellular and gene therapies
• Devices, equipment and supplies: e.g., cardiac pacemakers, CT scanners, surgical gloves,diagnostic test kits
• Medical and surgical procedures: e.g., psychotherapy, nutrition counseling, coronary angiography, gall bladder removal
• Support systems: e.g., electronic patient record systems, tele-medicine systems, drug formularies,blood banks, clinical laboratories
• Organizational and managerial systems: e.g., prospective payment using diagnosis-related groups, alternative health care delivery configurations, clinical pathways, total quality management programs
এখন কথা হলো,
ক) এই টেকনোলজি গুলোর কয়টা আমাদের দেশে কোনখানে কয় পিস করে লাগবে, বেশি আছে না কম, কয়টা রোগীর জন্য কয়টা টেকনোলজি আসলেই দরকার -সেই সব ডাটা সংগ্রহ করা হয় কি?
-না হয় না। এই ধরনের ডাটা কালেকশন , এনালাইসিস এবং প্রাপ্ত রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে যদি ডিসিশন নেওয়া হত তাহলে আমাদের অলরেডি অপ্রতুল রিসোর্স ( সেইটা জনবল, টেকনলজি বা অর্থ- সবই হতে পারে) কে এলোকেশন বা ভাগাভাগি করার সিদ্ধান্ত গুলো আরেকটু সঠিক হত। সম্পদের অপচয় হত না।
খ) বাংলাদেশ এখন যেই সব টেকনলজি ব্যবহার করে তাদের ভিতরে কোনটা কতটুকু নিরাপদ, কতটুকু ইফেক্টিভ ( যা করার কথা তা করে কি না) কতটুকু কস্ট ইফেক্টিভ ( সর্বনিম্ন দামে সর্বোচ্চ উপকার দেয় কিনা বা মূল্যের বিপরীতে পাওয়া উপকারের পরিমাণ) তা স্টাডি করা হয় কি না?
--- না হয় না । আমরা অন্ধের মত উন্নত বিশ্বের দেওয়া প্রেস্ক্রিপশন অনুকরণ করি। যদিও তাদের প্রেক্ষাপটে যা অমৃত , আমাদের প্রেক্ষাপটে তা বিষ হতে পারে। আবার, দামী দামী অনেক যন্ত্রপাতি কিনে এনে চালাতে পারি না, ফেলে রাখি। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা অনেক যন্ত্র অনুদান দেয়, যা অনেক সময় আউট ডেটেড বা সমস্যাযুক্ত।
প্রচুর প্রযুক্তি দাতা দেশের কোন কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করে । যেমন ভিটামিন যুক্ত ফর্টিফায়েড বিস্কিট কিংবা প্লাম্পি নাট । মানুষের খাবার উৎপাদন কিংবা ক্রয় ক্ষমতা অর্জনে উপার্জনের ব্যবস্থা না করে ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করে এই নাট কেন খেতে হবে ? আবার, সবার জন্য নিরাপদ পানির সরবরাহে দেশীয় বিনিয়োগে পানি শোধনাগার স্থাপন না করে কেন কলেরা ভ্যাক্সিন উৎপাদন করতে হবে - এই গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা কর্মকান্ড গুলার কারণ হইলো সঠিক এভিডেন্স বেজড ডিসিশন মেকিং প্রসেসের অভাব।
গ) টেকনোলজি গুলোর দাম কি আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত?
--- এক ওষুধ ছাড়া আর কিছুই আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত দাম নিয়ে আসে না। ওষুধ দেশীয় কোম্পানি গুলো তৈরী করে বলে তাও কিছুটা গা সোয়া। আগের ওষুধ নীতি অনুযায়ী উৎপাদন মূল্যের উপরে মাত্র ২০% লাভে ওষুধের দাম নির্ধারিত হত । পরে ওষুধ কোম্পানি গুলোর লবিং এর কারণে পলিসিতে পরিবর্তন করা হয়, এখন কোম্পানি গুলো ইচ্ছামত দাম নির্ধারণ করতে পারে। বিদেশে নতুন ওষুধ গবেষণায় বিলিওন বিলিওন টাকা ইনভেস্ট করে বলে কোম্পানি গুলোকে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে যাতে গবেষণায় উৎসাহ পায়। কিন্তু বাংলাদেশের কোন কোম্পানিরই রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এ কোন বিনিয়োগ নেই। এরা সকলেই জেনেরিক ড্রাগ বা অন্যের আবিষ্কার করা ফর্মূলায় নিজেদের ওষুধ উৎপাদন করে। সুতরাং, এই ইচ্ছেমত দাম নির্ধারণের সুবিধা পাওয়াটা এক রকম সাংবিধানিক অধিকার লংঘন করে নাগরিকের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়।
ঘ) টেকনোজির দাম সহনীয় রাখতে দেশে উৎপাদন সম্ভব?
--- অবশ্যই সম্ভব। এমন অনেক টেকনোলজি আছে যেইটা দেশেই উৎপাদন করা যায়, আমদানি করার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু উদ্যোগ। কিন্তু হায় হতিস্মি! দেশে একটা কম্পিউটার উৎপাদনের কোম্পানি নেই, কিন্তু বুয়েটসহ সকল টেকনিকাল ভার্সিটিতে সবাই হাক ডাক দিয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায়। অথচ একটা ভার্সিটিও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে না। আমাদের ছেলে মেয়েরা নাসার জন্য রোবট বানাইতে খুবই উৎসাহী কিন্তু দেশের ১৬ কোটি মানুষের ব্যবহারে লাগবে এমন হেলথ টেকনোলজির কোটি কোটি টাকার মার্কেট পড়ে আছে অবহেলিত।
ডাক্তারদের গালি দেওয়ার লোকের অভাব নাই। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বলা যায়, ডাক্তাররা যদি এক একটা কসাই হয়, তাহলে দেশের হেলথ টেকনলোজির অবহেলিত মার্কেটের জন্য ইঞ্জিনিয়াররাও এক একটা কসাই। চাঁদের দেশে মাটি কেমনে তোলা যাবে- এইটা নিয়ে চিন্তা করতে ভালো লাগে , কিন্তু নিজের দেশের মাটির প্রতি কোন দায় দায়িত্ববোধ এদের নাই। কেন বলছি? বুয়েট আর ঢাকা মেডিকেল পাশাপাশি। যতদিন ঢাকা মেডিকেলে ছিলাম, বহুবার বুয়েটের বন্ধুরা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে, বেড়াতে, সিঙ্গারা খেতে, প্রেম করতে এসেছেন- কিন্তু আজ পর্যন্ত দেখিনি বা শুনিনি কেউ এসে বলেছেন - মেডিকেলের এই সমস্যাটার সমাধান এই ডিজাইন দিয়ে করা যায়- কিংবা, ঐ সমস্যাটার একটা টেকনোলজিকাল সমাধান সম্ভব! এই অভিযোগ আমার নিজের বন্ধুদের বিরুদ্ধেও। কষ্ট লাগে যখন ভাবি, বুয়েটের বন্ধুরা প্রয়োজন হলে মেডিকেলে এসে বন্ধুর জন্য রক্ত দিয়ে গেছে - অথচ তাদের মাথায় একবারো আসে নাই যে তার শিক্ষা ও জ্ঞান প্রয়োগের ক্ষেত্রটাও তো হতে পারে ঢাকা মেডিকেল! আমি ডাক্তার হয়ে যখন নিজে হেলথ টেকনোলজি নিয়ে শিক্ষা লাভ করলাম, তখন জানলাম , আমার ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুদেরও অনেক কিছু করার ছিলো , আছে- কিন্তু তারা এসব নিয়ে ভাবেই না! টিকেটিং সিস্টেম, পেশেন্ট রেকর্ড, পেশেন্ট ডাটাবেজ, মনিটরিং সিস্টেম, ড্রাগ ডিস্পেন্সারী ও কন্ট্রোল, ডিউটি রোস্টার, কমিউনিকেশন, লজিস্টিক্স , ম্যানেজমেন্ট --- কত কিছুই না ইঞ্জিনিয়ারদের উপর নির্ভরশীল, টেকনোলজিস্টদের উপরে নির্ভরশীল- কত্ত কিছু করার আছে!
আমাদের অর্থের অভাবঃ
এইটা একটা আরোপিত জুজুর ভয় জনিত সমস্যা । সন্দেহ নাই যে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের হার্টের একটা করে পেস মেকার, একবার করে এম আর আই / সিটি স্ক্যান কিংবা ৩০টা করে সিপ্রোফ্লক্সাসিন দেওয়া মত টাকা আমাদের নাই। কিন্তু এইটা মোটেই সত্যি কথা না যে বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে অর্থ দিয়ে চিকিৎসা সেবা কেনার সামর্থ নাই। আগেও বলেছি , হাসপাতালে আসতে যাতায়াতে, আসার পরে বিভিন্ন টেস্ট আর ওষুধের পিছনে মানুষের শত শত টাকা খরচ হয়। কিন্তু টাকার কোন হিসাব নিকাশ নাই। এইটা কতিপয় কর্মকর্তা কিংবা দোকানীর পকেটে না ঢুকে সিস্টমেটিকালি সরকারী রেভেনিউ খাতে ঢুকলে হাসপাতাল গুলো অন্তত এখনকার চেয়ে বেশি ভালো ভালে পরিচালিত হতে পারত ।
দেখুন, আমাদের দেশের মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব । এর জন্য যদি প্রতিনিয়ত দাতার কাছে ভিক্ষা চাইতে হয়, সে তো কুকুর লেলিয়ে দেবেই। তখন সেই কুকুরকে ডগ বিস্কিট খাওয়াতে আমাদের ঋণের অর্থ শেষ হয়ে যাবে। ঠিক এই কারণেই কষ্ট করে হলেও আমাদের উচিত স্বাস্থ্যখাত পরিচালনার পয়সাটা সঠিক জায়গায় দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এখন, সেই দেওয়াটা কি ভাবে হবে ট্যাক্স নাকি হেলথ ইন্সুরেন্স - এইটা আলোচনার দরকার আছে । অনেকেই মনে করেন, এখনকার পরিস্থিতিতে আমার যখন দরকার হচ্ছে আমি শুধু তখনই , নিজের জন্য টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিচ্ছি । আর দরকার না হলে খরচ করছি না। এতে খুউউউউব লাভ হচ্ছে। কিন্তু সত্যি কথা হলো , ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে আপনাকে যখন চিকিৎসা নিতে হচ্ছে- সেইটা জীবনে একবার হলেও - আপনি এক সাথে এত বেশি টাকা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন যে ঐ একবারেই আপনাকে পথে বসে যেতে হতে পারে।
অল্টারনেটিভ কি?
কয়েক ধাপে বিভক্ত স্বাস্থ্য সেবা । এর খরচ যোগাড় করা হবে বিভিন্ন ট্যাক্স ও হেলথ ইন্সুরেন্সসহ অনুদানের মাধ্যমে। সেবা পাবেন সকল নাগরিক। সেবা পাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক থাকবে কিন্তু সেবা নেওয়ার/ না নেওয়ার ফ্রিডম থাকবে। মূলত, সকল উপার্জনক্ষম নাগরিক একটা বেসিক হেলথ স্কীম দিয়ে সুরক্ষিত থাকবেন। কেউই বাদ পড়বেন না। বেসিকের নিচের মানুষ গতর খেটে এবং বেসিকের উপরের ধনী ব্যক্তিরা অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে হাইয়ার স্কীমের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। আধুনিক কোন সেবার জন্য যেন বাংলাদেশের বাইরে যেতে না হয়, সেইটা সরকার নিশ্চিত করবে ডাক্তারদের ট্রেনিং ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোকবল দিয়ে।
বেসিক স্কীম ঃ
স্বাস্থ্য সেবা খাতের উন্ন্যনের জন্য কেবল মাত্র স্বাস্থ্য ট্যাক্স নেওয়া যায়- যা সকল নাগরিকের উপর বাধ্যতামূলক। এইটা বাধ্যতামূলক বেসিক হেলথ ইন্সুরেন্সও বলতে পারেন। বাংলাদেশের সকল উপার্জনক্ষম নাগরিক একটা ন্যুনতম অর্থ প্রতিমাসে দেবেন। এর বিপরীতে বেসিক চিকিৎসা সেবা স্কীম এর আন্ডারে কিছু নির্দিষ্ট সেবা এবং এসেন্সিয়াল মেডিসিন লিস্টের যে কোন ওষুধ নিতে পারবেন। কস্ট ইফেক্টিভনেস স্টাডি এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের উপরে পরিচালিত রিসার্চ দ্বারা প্রাপ্ত রিয়েল এভিডেন্স এর উপর নির্ভর করে একটা জাতীয় সাইন্টিফিক কাউন্সিল সরকারকে পরামর্শ দেবে - এই বেসিক স্কীমে কোন কোন সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সরকারী সহ সকল বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যারা বেসিক সেবা দিতে চায় , তাদেরকে লাইসেন্স ভূক্ত হতে হবে। এই বেসিক স্কীম পাওয়ার অধিকার সকলের।
বেসিকের নীচে পুওর স্কীমঃ
যাদের দেওয়ার সামর্থ নেই, তারা সরকারের স্পেশাল স্কীমের আন্ডারে থাকতে পারেন। যেমন - কাজের বিনিময়ে খাদ্যের মত কাজের বিনিময়ে চিকিৎসা। সুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন কাজ করে দিয়ে আপনি বিভিন্ন ধরণের ভাউচার উপার্জন করতে পারবেন । অসুস্থ হলে ঐ ভাউচার দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন। যারা সিজনাল ওয়ার্কার - অর্থাৎ নিয়মিত আয় করতে পারেন না কিন্তু মাঝে মাঝে উপার্জন করেন - তারাও এই ভাউচার কিনতে পারবেন। এক একটি সেবার জন্য এক একটি ভাউচার থাকতে পারে। যেমন- মাতৃসেবা পাওয়ার জন্য ভাউচার। মেডিসিন ভাউচার ইত্যাদি। রোগী নিজেই নিজের প্রয়োজন মত তার জন্য দরকারী ভাউচার নিতে পারবে। এতে করে প্রচুর পার্ট টাইম কাজের সুযোগ হবে।
যথাযত পলিসির অভাবঃ
আমাদের মূল স্বাস্থ্যনীতি যথেষ্ট ভালো একটা পলিসি পেপার। প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য কমুইনিটি ক্লিনিক এবং ধাপে ধাপে কমিউনিটি থেকে ইউনিয়ন--> উপজেলা--> জেলা--> বিভাগ--> জাতীয় পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থাটা আসলেই খুব ভালো । সুচিন্তিত এবং সিস্টেমেটিক। তাইলে সমস্যাটা কোথায় ? সামগ্রিক ভাবে চিকিৎসা সেবা বা স্বাস্থ্য পরামর্শ দিতে হইলে কিছু পূর্ব শর্ত পালিত হইতে হবে। যেমন-
১। সেবাদানকারীর নিজের জ্ঞান
২। সেবাদানকারীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য লোকবল
৩। সহায়তাকারী টেকনোলজি
৪। রোগ নির্ণইয়ের ব্যবস্থা
৫। রোগ নির্নয়ের পরে চিকিৎসা প্রদানের সরঞ্জাম, অবকাঠামো , ওষুধ পাতি ইত্যাদি ।
প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্যতৈরী করা কমিউনিটি ক্লিনিক/ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স/ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মানুষকে সেবা দেবে সেখানে কারা থাকবে? একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের জন্য সরকার স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও এবং স্বাস্থ্য সহকারীর ব্যবস্থা হেলথ কেয়ার নেটোয়ার্কে রেখেছেন। আবার ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন এম বি বি এস ডাক্তার এর পোস্ট তৈরী করা হয়েছে। উপজেলা, জেলা পর্যায়ে প্রচুর পোস্ট আছে কিন্তু এদের অনেক গুলোই খালি ।
চাকুরীর এই সোনার হরিণের বাজারেও কেন পোস্ট খালি পড়ে থাকে? এর বিবিধ কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের রাজধানী কেন্দ্রিক উন্নয়ন। আমার জন্মের পর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত গত ৩ যুগে ঢাকা পরিবর্তিত হয়েছে দ্রুত । বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগের এক মাত্র খোলা জানালা হলো ঢাকা । মানুষের জীবনের মৌল চাহিদার নিরিখে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, বাসস্থানের জন্য পানি, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট , স্যানিটেশন , স্বাস্থ্য সেবার উন্নত প্রতিষ্ঠান, দেশের বড় বড় ফ্যাশন হাউজ, বিনোদন এর মাধ্যম - সবই ঢাকায় । যখন মেডিকেলে ভর্তি হই, রাজশাহী যেতে হয়েছিলো--- আমার মনে হচ্ছিলো পুরো রাজশাহী শহর ঢাকার যে কোন বড় পাড়া/মহল্লার ভিতরে অনায়াসে ঢুকে যাবে। সেখানে রাস্তার এক পাশে পাকা বাড়ি তো অন্য পাশে কাঁচা ঘর, উঠান, গরু চরে বেড়াচ্ছে । একই অভিজ্ঞতা ময়মনসিংহকে নিয়ে। ৪০ বছর পরে দিনাজপুরের সাদীপুরে বেড়াতে গিয়ে আমার মায়ের মন্তব্য " কিছুই বদলায়নি- যা ছিলো সবই আগের মত" । ভাবখানা এই রকম - ঢাকাই বাংলাদেশ । ঢাকা খাবে, ঘুমাবে, হাগু করবে - আর ঢাকার বাইরে পুরো দেশটা রয়েছেই শুধু ঢাকাকে খাদ্য, বস্ত্র, বিলাস ব্যাসনের উপকরণের যোগান দিতে।
সৌদি আরব যেমন তেলের টাকায় সারা বিশ্ব থেকে আগত সম্পদ ভোগ করে আর সেদেশে যাওয়া শ্রমিকদের "মিসকিন মিসকিন" বলে গালি দেয় - সত্যিকার অর্থে আমরা ঢাকাবাসীদের আচরণে খুব একটা পার্থক্য নেই। ঢাকার বাইরের মানুষেরা , বিশেষ করে চাষী-কামার- কুমোর- মুচি- শ্রমিকরা আমাদের কাছে মিসকিন। তাই ঐ সব মিসকিনদের জন্য ওয়াসার পানির লাইন, ডেসকোর বিদ্যুতের লাইন, কিউ বির ইন্টারনেট এর লাইন কিংবা উন্নত কল কারখানা, ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ কিংবা হাসপাতাল করতে আমাদের খুব গায়ে লাগে।
আমরা এতটাই স্বার্থপর শুয়োর প্রকৃতির মানুষ যে সারাদেশের সকল জেলায় ইউনিভার্সিটি স্থাপনের কথা শুনলে আমরা হায় হায় করে উঠি ! হায়, শিক্ষা ব্যবস্থার মানের তাহলে কি হবে? সত্যিই তো ! দেশের সবাই যদি ব্যাচেলর ডিগ্রী নিয়ে ফেলে, তাইলে আমি তো আর এক্সক্লুসিভ রইলাম না! অতএব, যে কোন মূল্যে মানুষের শিক্ষিত হওয়া ঠেকাও!
শুয়োর শব্দটা কি আপনাকে নাড়া দিলো ? তাহলে দেখুন-
আমাদের সমাজের উপর তলার মানুষেরা হয়ত দেখতে চান একদিন এমনকি ৩য় -৪র্থ শ্রেণীর চাকুরিজিবী রাও graduate , post graduate হবে । সেটা জাতির জন্য কতটা গৌরবের হবে তা চিন্তা করতেও আমি শিউরে উঠি । ---- এই হলো আমাদের অবস্থা । কোথায় শিক্ষার মান যাতে উন্নত ও সমান থাকে তার জন্য চেষ্টা করবো - তা না শিক্ষার মান এর স্বার্থে শিক্ষার পথই বন্ধ করে দাও! হক মাওলা!
তো এই ঢাকা কেন্দ্রিক উন্নয়নের ফলাফল হইলো ঢাকার বাইরে সম মানের শিক্ষা সহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নাই। ফলে, কেউই ঢাকার বাইরে থাকতে চায় না। সকলেই বাইরে থেকে ঢাকায় চলে আসতে চায়। এই সমস্যার কথা যে সব ডাক্তার সরকারী চাকুরি ছেড়ে দিচ্ছেন তাদের কথাতেও উঠে এসেছে। যেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সকলেই ঢাকায় থাকতে চায়, সেখানে কেবল ডাক্তারদের মফস্বলে পড়ে থাকতে বলাটা অন্যায় এবং তারা সেখানে থাকবেন- এইটা আশা করাটা নিতান্তই আহাম্মকি।
কেন?
দেশের সেরা মেধাবীরা ডাক্তারী পড়ে। ডাক্তারী পড়াটা অনেক কষ্টের কাজ। ডাক্তাররা পোস্ট গ্রাজুয়েশন করতে চায়। ডাক্তারের পরিবারের (স্ত্রী/স্বামী) রাও মেধাবী কেউ হয় যারা ঢাকার মত বড় শহরে থেকে কাজ করে/করতে চায়। আর পরিবার চাকুরী না করলেও সন্তানদের দেশের সেরা স্কুল/কলেজে পড়াতে সকলেই চায়। তার উপরে বিদ্যুৎ, পানি, ইন্টারনেটের ব্যাপার তো আছেই। সুতরাং, শুধু ডাক্তার নয়, পাশাপাশি মেধাবী নার্স, প্যারামেডিক, টেকনিশিয়ানদের মফস্বলে, গ্রামে, ধরে রাখতে চাইলে তাদের থাকার জায়গাটাতে বিদ্যুৎ, পানি , ইন্টারনেটের সুবিধা দিতে হবে। তাদের সন্তানদের পড়ালেখার জন্য আশে পাশে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। ঢাকার মার্কেট যে সব খাদ্য, বস্ত্র ও বিনোদন অফার করতে পারে - সেই মফস্বল বা গ্রামেও তা পৌছানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
এই দৃষ্টিকোন থেকে চিন্তা করলে , বাংলাদেশের যে কোন রাজনৈতিক দল, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগকারী - কেউই সঠিক পলিসিতে চলে না। যেখানে দেশের হাজার হাজার বর্গ মাইল পড়ে আছে, কোটি কোটি কাঁচা ঘর - সেখানে কোন উন্নয়নের চিত্র নাই। পাকা বাড়ি বানানোর ব্যবস্থা করা - সে সব বাড়িতে ন্যুনতম বিদ্যুৎ, পানি, একটা করে টেলিফোন, ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা - এই ধরনের কোন কার্যক্রম না লীগের ইশতেহারে আছে, না বি এন পির। এমন কি সাধারণ মানুষের দাবীতেও তেমন নেই। কারণ তারাও চায়, দরকার হইলে সরকার ফ্লাই ওভার, ওয়াক অভার, আকাশে বাতাসে ফ্ল্যাট গড়ে হলেও ঢাকায় থাকার ব্যবস্থা করে দিক।
তাহলে এর সমাধান কি?
সবার আগে দরকার কিছু পলিসি বা নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া। যেমন-
যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক , সকল বিভাগ-->জেলা-->উপজেলা-->ইউনিয়ন--> গ্রাম পর্যায়ে সুযোগ, সুবিধা ও উন্নয়নের সমান মান, পরিমাণ ও চরিত্র বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকিবে।
সোজা বাংলায়, সুযোগ সুবিধার কিছু বেসিক লিস্ট থাকবে যেইটা সারা বাংলাদেশের জন্য সমান হবে।
ঢাকা বিভাগে যা যা থাকবে, বাকি সকল বিভাগে তা তা-ই থাকতে হবে।
ঢাকা বিভাগ সহ একই বিভাগের অধীনে সকল জেলায় সমান সুযোগ, সুবিধা ও সেবার ব্যবস্থা থাকবে।
একই ভাবে উপজেলা পর্যায়ে সকল উপজেলার জন্য একই ধরনের নাগরিক সেবা দিতে হবে। ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের বেলাতেও তাই।
কিছু মৌলিক অধিকারের কথা সকল নাগরিকের জন্য সমান ভাবেই সংবিধানে রচিত আছে । কিন্তু বাংলাদেশের যে কোন সরকার যখন কোন প্রকল্প নেয়, তখন সেই সব উন্নয়ন প্রকল্পের মূলনীতি হিসেবে কখনোই " সকলের জন্য সমান উন্নয়ন" - এই নীতি মেনে প্রকল্প ডিজাইন করে না। নইলে, যেদিন থেকে ঢাকায় ওয়াসা হয়েছে সেইদিন থেকেই বাংলাদেশের প্রতিটা জেলার পরিশোধিত পানির ব্যবস্থা চালুর প্রকল্প নেওয়া হত। প্রতিটা জেলায় , উপজেলায় একটা করে আগোরার মত সুপার মল থাকতো। কক্সবাজারকে বাই পাস করে ইন্টারনেট এর সুবিধা ঢাকায় ঢুকতে পারতো না । প্রতিটা নাগরিককে ইন্টারনেটের সুবিধার আওতায় আনার ইচ্ছা থাকলে ভারতে ইন্টারনেট রপ্তানির মত উদ্ভট প্রস্তাব শুনতে হত না।
আমেরিকায় বেশ কয়েক বছর থাকার পরে আমার এক আত্মীয় বলেছিলেন- সব শহর ঘোরার দরকার নেই। আমেরিকার কয়েকটা শহর দেখে ফেললে বাকি গুলো একই রকম লাগে। বাস থেকে নেমে চোখে পড়বে একটা ওয়াল মার্ট ।
হল্যান্ডবাসী এক বন্ধুর মন্তব্য ঃ
প্রায়ই পথ হারিয়ে ফেলি। কারণ রাস্তা - বাড়ি সব একই রকম দেখতে। এক শহরে বাস থেকে নামলে যে সব প্রতিষ্ঠান চোখে পড়ে, বাকি শহর গুলোতেও তাই। কেমন যেন সব কপি পেস্ট !
একি স্বপ্ন? না সম্ভব?
নিঃ সন্দেহে একদিনে সম্ভব না । আমেরিকা কিংবা হল্যান্ড এর মত দেশ কয়েক শত বছর ধরে একটু একটু করে আজকের অবস্থানে এসেছে। কারণ তাদের রাষ্ট্রনীতিতে স্পষ্ট লেখা আছে --- দেশের একটি এলাকা , তা রাজধানী থেকে যত দূরেই হউক আর কাছেই হউক --- অন্য সকল এলাকার মত সমান সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত হইবে।
তাই, তারা যখন উন্নয়ন প্রকল্প নেয়, শুধু ঢাকা , শুধু চট্টগ্রাম কিংবা খুলনার জন্য নেয় না --- দেশের সকল জেলার জন্য নেয়। সকল উপজেলার জন্য নেয়।
মানুষের স্বভাব চরিত্র (মূলত ডাক্তার) খারাপ, সেবা দেওয়ার সঠিক মনভাব নাই।
এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । পুরো সিস্টেমটাই যখন নষ্ট হয়ে গেছে , যার যা ইচ্ছা তাই করছে , তখন এই ধরনের অধঃপতন হবেই। দরজা খোলা রেখে ঘুমালে চোরকে নামায পড়িয়ে লাভ নেই। সে চুরি করবেই। দরকার হলো দরজা বন্ধ করা, সামনে ক্যামেরা লাগানো, চোরের জন্য বিকল্প উপার্জনের পথ করা এবং তারপর মানুষকে উপদেশ দেওয়া যাতে তারা চোরাই মাল না কেনে।
একদিনে যেহেতু সারা বাংলাদেশকে ঢাকা বানায় ফেলা সম্ভব না - সেই জন্য এখনি অল্প অল্প করে কিছু কঠোর , কিছু সহযোগিতা মূলক পলিসি নেওয়া। যেমন- ঢাকায় আর নতুন আবাসন তৈরী করতে না দেওয়া । ঢাকার বাইরে অন্যান্য এলাকায় সরকারী - বেসরকারী - ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন, ইন্টারনেট সুবিধা সহ বাড়ি/ ফ্লাট বানানো। মানুষ যদি কিনে তো ভালো। না কিনতে পারলে কিস্তিতে ভাড়া দেওয়া । ঢাকার বাইরের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারী স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে এখনি উন্নত লাইব্রেরী, ইন্টারনেট , নিরাপদ পানি এবং প্রয়োজনে হোস্টেলের ব্যবস্থা করে দেওয়া।
ঢাকার বাইরে আবাসন, বিশ্ববিদ্যালয়, পরিশধিত পানির কারখানা ( ওয়াসার মত) এবং উন্নত মার্কেট স্থাপনের জন্য প্রাইভেট- পাবলিক বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা। যারা এসব প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে তাদের বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সুবিধা দেওয়া ।
টেকনোলজির সর্বোচ্চ ব্যবহারঃ
বাংলাদেশের অনেক অনেক টাকা নেই। তাই অনেক কিছু হুট করে করা সম্ভব হয় না। কিন্তু আজকের যুগে স্রেফ টেকনোলজির সাহায্য নিয়ে সারা বাংলাদেশের মানুষকে সমান সুযোগ ও সুবিধা দেওয়া সম্ভব। সেই রকম টেকনোলজি হচ্ছে আই সি টি এবং আই টি । আর কিছু না হোক, সারা বাংলাদেশে শুধু যদি হাই স্পিড ইন্টারনেট এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায় তাহলে বাকি আরো অনেক মৌল চাহিদা মেটানোর রাস্তা মানুষ নিজে ব্যক্তিগত উদ্যোগে, সমষ্টিগত ভাবে কমিউনিটি চেষ্টা বা প্রাইভেট বিনিয়োগে নিজেরাই করে নিতে পারবে।
টেকনোলজি তথা ইন্টেরনেট , কম্পিউটার, ভিডিও-অডিও ইত্যাদি নানা রকম টেকনোলজির কারণে এখন আর গ্রামে গ্রামে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল গড়ে তোলার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু আমাদের থিংকিং প্রসেস বদলানোর । আমেরিকার বাঙ্গালী সালমান খানের নাম আপনারা হয়ত শুনেছেন। সালমান আমাদের অতি পরিচিত ইন্টারনেট এবং ভিডিও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষা দানের ব্যবস্থাটাকেই পালটে ফেলার চেষ্টা করছেন । না- তিনি স্কুল বন্ধ করতে বলেন নি। টিচারদের চাকুরী থেকে ছাটাই করে দিতে বলেননি । স্রেফ এইটুকু বলেছেন যে মিলে মিশে আনন্দ নিয়ে, এক একজনের সুবিধা ও সময় মত শিক্ষা দানের পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে। আগে যেমন শিক্ষা দানের গুরুরা বাসায় শিক্ষা দিতেন, একজন শিক্ষার্থী গুরুর সাথে আলোচনায় বসতেন, বছরের পর বছর দীক্ষা নিয়ে গুরু যখন বলতেন - হ্যাঁ , তোমার শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে - তখন তারা বাকিদের দীক্ষা দিতে বেরুতেন। অনেকটা সেই রকম।
এই শিক্ষা ব্যবস্থার উপকারিতা কি?
প্রথম উপকারিতা ঃ সকলের জন্য সমান মানের শিক্ষক
আধুনিক যুগে মুশকিল হয়েছে আমরা সবাই মিলে গুরুর বাড়িতে গিয়ে থাকতে পারছি না । আবার একই গুরুর পক্ষে হাজার হাজার মানুষকে শিক্ষা দিয়ে বেড়ানোও সম্ভব না । তাই দেশে দেশে স্কুলের প্রচলন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সব গ্রামে কি একই মানের শিক্ষক পাঠানো সম্ভব?
না।
কিন্তু একই মানের ভিডিও শিক্ষক পাঠানো সম্ভব?
হ্যাঁ। এই জন্যই সালমানের ১০ মিনিটের ভিডিও শিক্ষা এত জনপ্রিয় হয়েছে। সারা বিশ্ব থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন শিক্ষার্থী - বয়স কিংবা লেভেল নির্বিশেষে এই সব ভিডিও থেকে শিক্ষা নিচ্ছে । আমি নিজেও অংক করছি কয়েক দিন ধরে ।
দ্বিতীয় উপকারিতা ঃ সকলের জন্য সমান মানের সনদ
এর চেয়ে গণতান্ত্রিক, সামাজিক ন্যায় আর হয় না। পৃথিবীর কোন শিক্ষা যদি দাবী করতে পারে যে তারা সকল মানুষকে সমান সুযোগ, সমান সুবিধা , সমান দক্ষতার সনদ দিয়ে থাকে - তাহলে তা হলো এই সালমান খান একাডেমি । এখানে মানুষ ৮০-১০০% এর জন্য পড়ে না। এখানে সকলেরই লক্ষ্য থাকে ১০০% অর্জনের।
চিন্তা করে দেখুন - এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যা বাধ্য করছে প্রতিটা শিক্ষার্থীকে ১০০% বা সুপার এ গ্রেড পেতে । তুমি যতক্ষণ না একটি বিষয়ের একটি লেসনে ১০০% দক্ষতা না পাচ্ছো , ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি পরের লেসনে যাবেই না ! কি আশ্চর্য সাম্য! কি সুন্দর ন্যায়!
আমরা এখন কি করছি? কাউকে এ গ্রেড, কাউকে বি গ্রেড , কাউকে সি গ্রেডের সিল কপালে লাগিয়ে এস এস সি, এইচ এস সি সনদ দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। যারা ফার্স ক্লাস , তারা মাত্র ৬০% দক্ষতা নিয়ে পাশ করছে ।
একটু ভেবে দেখুন তো ! আপনি কোন গাড়িতে চড়বেন যার ব্রেক ৬০% কাজ করে? কিন্তু আপনি সেই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেবেন যে কিনা মাত্র ৫০% দক্ষ । ( বাংলাদেশে মেডিকেলে পাশের জন্য ৫০% নম্বর পেতে হয়) তার মানে, বাকি ৫০% না জেনেও আমি আপনার গলায় ছুরি চালাতে আইনত অনুমোদিত !!!!!
অথচ সালমানের পদ্ধতিতে এনাটমিতে ১০০% দক্ষতা অর্জন না করে আমার পক্ষে সম্ভবই ছিলো না পরের সাবজেক্টে যাওয়ার।
এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে স্কুলে স্কুলে মান সম্মত ভিডিও পাঠানো যায়। দরকার শুধু ভিডিও প্লেয়ার একটি কম্পিউটার , আর বিদ্যুৎ। সোলার বিদ্যুৎ দিয়ে যে সব স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব হচ্ছে - সেখানে এই ধরণের ভিডিও চালানো যায়।
বাংলাদেশ সরকার টিভিতে ভালো স্কুলের ক্লাস প্রচার করবে। আমার কথা হলো, সেইটা রেকর্ড করে ইন্টারনেটে আপলোড করে দিলে দেশের যে কোন স্থান থেকে বার বার , যতবার ইচ্ছা , যতজনের ইচ্ছা নামিয়ে ব্যবহার করতে পারবে।
এর ফলে, (কি ভয়ানক কথা) আমাদের ৩য়-৪র্থ শ্রেনীর কর্মকর্তারাও অফিসের শেষে বাসায় বসে বসে পড়ালেখা করতে পারবেন। হাজার হাজার , লক্ষ লক্ষ মান সম্মত শিক্ষক তৈরীর প্রয়োজন কালকেই মিটানো সম্ভব না। কিন্তু এইটা খুবই সম্ভব যে মান সম্মত শিক্ষকদের দিয়ে ১০ মিনিটের ভিডিও বানিয়ে বানিয়ে সেইটা সারা বাংলাদেশে পৌছানোর ব্যবস্থা করা।
হাসপাতাল গুলোর ক্ষেত্রেঃ
কিছু জিনিসের অটোমাইজেশন প্রয়োজন । হাসপাতালে টিকেটিং, পেশেন্ট রেকর্ড ইত্যাদি প্রচুর ক্ষেত্রে ডাটা কালেকশন ও লজিস্টিক্সকে অটোমাইজ করে ভুল ত্রুটি , রোগীর চাপ ইত্যাদি কমানো সম্ভব। পাশাপাশি, আরেকটা জিনিস করা দরকার । তাহলো , ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানদের কাছে রেজিষ্ট্রি বাধ্যতামূলক করা । গ্রামের রোগীরা এবং শহরের ওয়ার্ডের রোগীরা প্রথমে তার নিজস্ব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান এর কাছে যাবে। এরপর ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান রেফার করলে বিশেষজ্ঞদের কাছে যাবে। এতে করে সর্দি কাশির জন্য জাতীয় অধ্যাপকের কাছে যাওয়া বন্ধ হবে। এবং কেউ ২০ টাকায় বসে ওষুধের দোকানে রোগী দেখবে আর কেউ ধান্মন্ডিতে বসে কোটি টাকা কামাবে - এই অন্যায় ও বন্ধ হবে। যতজন এম বি বি এস , বি ডি এস রা পাশ করে বেরিয়েছেন - তাদের সকলের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে।
এই ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রিকৃত সকল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ঐ এম বি বি এস এবং বি ডি এস দায়ী থাকবেন। সরকারের কাজ হবে মাঝে মাঝে র্যান্ডমলি কিছু লোকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা , তার কাগজ পত্র দেখা। প্রতি ৬ মাস অন্তর একজন বিডি এস কাছে চেক আপ করতে হবে। প্রতি এক বছর অন্তর এম বি বি এস এর কাছে । এর বাইরে অসুস্থ হলে তো দেখাবেই। সরকার যদি দেখে কোন ডাক্তারের আন্ডারে থাকা সকল মানুষের চেক আপের কাগজ পত্র, স্বাস্থ্য ইত্যাদি দেখ ভাল ঠিক মত আছে - তাহলে সেই অনুযায়ী বেতনের উপরে ডাক্তারদের ইঙ্ক্রিমেন্ট বাড়বে।
যেই ডাক্তার যত বেশি রিমোট অঞ্চলে কাজ করবেন , তিনি তত বেশি বেতন পাবেন। ( এইটা চালু থাকবে, যতদিন না রিমোট অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নত হচ্ছে) ।
৬০০০ মানুষের কাগজ পত্র ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যদি অবহেলা পাওয়া যায় , তাহলে ডাক্তারকে শো কজ করা যাইতে পারে। এতে করে , ডাক্তারদের "গড" এর আচরণ করা কমবে। ভুয়া ডাক্তারীও বন্ধ হবে- যেহেতু মানুষের স্বাস্থ্যের উপরে নির্ভর করছে সেবাদানকারীর বেতন-ভাতা।
অনেক আপত্তি থাকতে পারে এই সব সমাধানে । আপনারা আলোচনা করুন। সমাধান বেরিয়ে আসুক।