Monday, May 30, 2011

"হেলথ ফর অল (health for all)" এর জায়গায় "সমান উন্নয়ন সবার জন্য (Equal development for all)" কবে দেখবো? পর্ব - ১

বাংলাদেশের হেলথ সার্ভিস অর্থাৎ সরকারী, বেসরকারী (স্বাস্থ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) বা এন জি ও প্রদত্ত স্বাস্থ্য সেবা নিতে গিয়ে -
১। আপনি কি কোন বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়েছেন?
২। আপনি কি কোন আর্থিক, মানসিক, শারীরীক বা সামাজিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন?
৩। অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে কোন আপন জন হারিয়েছেন?
৪। অবহেলা- ভুল চিকিৎসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বা কাউকে হতে দেখেছেন?


আমার কাছে কোন ভরসাযোগ্য দেশব্যাপী পরিচালিত জনমিতি (population statistics) নেই। কিন্তু কেন যেন মনে হয়, উপরের যে কোন একটি প্রশ্নের উত্তর আপনি যেই হোন না কেন, বাংলাদেশবাসী হলে, "হ্যাঁ" হবেই। আমি ১০০% নিশ্চিত। আসুন, মূল আলোচনায় যাবার আগে দেখি, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কি ধরণের সেবা পাওয়ার অধিকার আপনার আমার আছে।

বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের অধিকার

চিকিৎসা একটি সেবা, অর্থাৎ Public Good। কোন ব্যবসা পণ্য নয়। এর মানে হলো, আপনি বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী স্থান, কাল, পাত্র, জাতি, ধর্ম, উপার্জন- এমন কি নাগরিকত্ব নির্বিশেষে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত যে কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার অধিকারী। (per Section 15(A) of the Bangladesh Constitution, and develop the health and nutrition status of the people as per Section 18(A) of the Bangladesh Constitution.)

বাংলাদেশের হেলথ পলিসি আমাদেরকে বলে-
Health is defined asঃ

“A state of complete physical, mental and social well-being and not merely the absence of disease or infirmity.” -- অর্থাৎ শুধু নিরোগ হইলেই চলবে না, রাষ্ট্র আপনাকে আমাকে শারীরীক, মানসিক ও সামাজিক "ভালো থাকা"কে নিশ্চিত করতে অঙ্গীকার করছে। সেই ভালো থাকার রুপটি কেমন?

১। Every Citizen has the basic right to adequate health care - চিকিত্তসা সেবা পাওয়ার অধিকার
২। The State and the government are constitutionally obliged to ensure health care for its citizens - নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারের
৩। To ensure an effective health care system that responds to the need of a healthy nation, a health policy provides the vision and mission for development. - একটি লিখিত নীতি দ্বারা উল্লেখিত
৪। Pursuance of such policy will fulfill the demands of the people of the country, while the health service providers will be encouraged and inspired. People’s physical well-being and free thought process have proved to be a precondition for the growth and intellectual enrichment in today’s human society -- সেই লিখিত সনদ এর বাস্তবায়ন নাগরিকের চাওয়াকে মেটাবে, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহী করবে।
এর পাশাপাশি একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। মানুষের সুস্বাস্থ্য ও স্বাধীন চিন্তা চেতনা আধুনিক মানব সমাজের উন্নয়ন ও মানসিক বিকাশের আবশ্যিক পূর্ব শর্ত।

সাক্ষরিত চুক্তি সমূহঃ Bangladesh expressed agreement on the declarations:
১। Alma Ata, 1978
২। The World Summit for Children 1990
৩। International Conference on Population and Development, 1994
৪। Beijing Women’s Conference, 1995

Ministry of Health & Family Welfare seeks to create conditions whereby the people of Bangladesh have the opportunity to reach and maintain the highest attainable level of people health. It is a vision that recognizes health as a fundamental human right and therefore the need to promote health and reduce suffering in the spirit of social justice. --- এইটা আমাদের বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের "vision" আর এইটা হইলো "objective" ।

ভিশন অনুযায়ী , তিনটা বিষয় গুরুত্ব পূর্ণ। অর্জনযোগ্য সর্বোচ্চ স্তরের স্বাস্থ্য, মৌলিক মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যয় অর্জনের সাথে দেশের স্বাস্থ্য অধিকার-সেবা - সিস্টেমকে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে ।

মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে আরো দেওয়া আছে এই সব ভিশন, মিশন, অব্জেক্টিভ, গোল ইতাদি অর্জন করার রুপ রেখা। তার ভিতরে একটি গুরুত্ব পূর্ণ সনদ হইলো আলমা আটা ১৯৭৮ । এইটা রুচি কিংবা তীর আটা নয়, একটা চুক্তি যাতে বাংলাদেশ সরকার সাইন করে এই প্রতিজ্ঞা করেছে যে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য সেবা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। এই কারণেই প্রতিটা স্বাস্থ্য, মা, বাবা, নাতি-পুতি, বন্ধু দিবসে, নিরাপদ পানি, ভাত, পায়খানা দিবসে, এবং বিভিন্ন আমাশা, ডায়রিয়া, এইডস, ম্যালেরিয়া দিবসে ঘুরে ফিরে এই "সকলের জন্য স্বাস্থ্য" বাক্যটি বারংবার উচ্চারিত হয়।

এইবার আসুন দেখি, বাস্তবায়ন পর্যায়ে এসে এই সব ঘোষণা ও দিবসের কি হাল?
এইখানে ১৯৯৭-২০০৭ সন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যখাতের খরচের হিসাব আছে ।

এইখানে আছে হাসপাতাল গুলোর রিপোর্ট কার্ড ২০০৭

কারা সেবা প্রাপ্ত হয়, সেই বেনিফিশিয়ারী রিপোর্টের পিডি এফ টাই নামানো গেলো না। মুমূর্ষু পি ডি এফ নিজেই।

এত গেলো সরকারী হিসেব কিতাবে। এখন কাজীর গরু মাঠে নামলে কি দেখা যায়?

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, মেডিকেল স্টুডেন্টদের এক নম্বর পছন্দের কলেজ ঢাকা, দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ব্যবস্থা (টারশিয়ারী) একাডেমিক মেডিকেল হসপিটাল ঢাকার রাতের অবস্থা

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে ব্লগার রেজোয়ানসহ অনেকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

বিশেষজ্ঞসহ ডাক্তাররা স্বাস্থ্যসেবার সরকারী খাত ছেড়ে পালাচ্ছেন ।

রাজধানী ছেড়ে একটু বাইরে গেলেই স্বাস্থ্যসেবা কেতাবী গরু হয়ে যায়। দূর ভোলার চিত্র কি হতে পারে? সমকালের রিপোর্ট ঝাড়ূদার যখন ডাক্তার!

ভুক্তভোগী রোগী ও দর্শক হিসেবে আমাদের কু অভিজ্ঞতার শেষ নাই। ডাক্তাররা নিজেরা কি বলছেন?

বেসরকারি ব্যয়বহুল হাসপাতালে সুযোগ-সুবিধা বেশি, এটি সত্য। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে কোনো সরকারই চিকিৎসকদের মেধার গুরুত্ব দেয়নি। বদলি, পদোন্নতি ও পদায়নে রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য হয়ে গেছে। তাই হতাশ ও বাধ্য হয়ে তাঁরা চাকরি ছেড়েছেন।

ঢাকার বাইরে বেশির ভাগ জায়গায় এখনো সপরিবারে থাকার মতো অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। মূলত সে কারণেই তিনি চাকরি ছেড়েছেন।

তাঁর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ যে বিষয়ের ওপর, তা প্রয়োগের জন্য ঢাকাই একমাত্র জায়গা

কিন্তু তাঁকে বদলি করা হয় টাঙ্গাইলের একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে রোগীদের প্যারাসিটামল ও হিস্টাসিন দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ ছিল না।

চিকিৎসকদের বদলির ভয়ে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রভাব পড়ছে দরিদ্র সাধারণ মানুষের ওপর।

এক সময় বিএনপি-সমর্থিত ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) একজন ব্যক্তি সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখন স্বাচিপের অসংখ্য দরবেশ, মোয়াজ্জিন গজিয়েছে। তাদের তোষামোদ করে চলা কোনো সুস্থ, শিক্ষিত, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চিকিৎসকের পক্ষে সম্ভব নয়। তিনিও চাকরি ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।


এর পাশাপাশি বেতন বৈষম্য নিয়ে একজন পাঠকের মন্তব্য ঃ

একজন অধ্যাপক চিকিৎসকের সর্বচ্চ বেতন ৪০,০০০ টাকা। একজন সদ্য প্রকৌশলী তো এই বেতনে চাকরী করতে চাইবেন না।

সূত্রঃ প্রথম আলো

এবার আলোচনাঃ

উপরের উদাহরণ গুলো থেকে দেখা যাচ্ছে , স্বাস্থ্য সেবা খাতের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান, সেবা প্রদানকারী এবং রোগীরা কেউই ভালো নেই। সংবিধান এবং স্বাস্থ্যনীতি আমাদের যে "ভালো থাকার" অঙ্গীকার করে, বাস্তবে তার দেখা পাওয়া মুশকিল। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ, প্রধান্মন্ত্রীর কানের চিকিৎসা করার সামর্থ বাংলাদেশে নাই। মন্ত্রী , সাংসদসহ সকল ধনী ব্যক্তিরা পারলে বিদেশে চিকিসা নেয়। গরীব লোকেরা সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, আমেরিকা না পারুন, অন্তত পাশের দেশ ভারতের কোলকাতা, মাদ্রাজ -এ গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার চেষ্টা করে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই রকম হযবরল অবস্থা ও ভেঙে পড়ার কারণ কি?

অনেকেই বলেন আমাদের জনবল, যন্ত্রপাতি ও অর্থের অভাব। যথাযত পলিসির অভাব। মানুষের স্বভাব চরিত্র (মূলত ডাক্তার) খারাপ, সেবা দেওয়ার সঠিক মনভাব নাই। প্রচুর প্রস্তাবে মানুষ ভেটো দিয়ে বসে থাকে। যেমন - হাসপাতালের টিকেটের দাম বাড়ানো যাবে না অথচ এমনিতেও আগত রোগীদের পকেট থেকে শত শত টাকা খরচ হয়ে যায়। স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের জন্য অর্থ খরচের বেলায় দাতা দেশের কাছে হাত পেতে বসে থাকতে হয় অথচ সকল প্রকার চিকিৎসা "ফ্রি" । সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বলতে কতগুলো ইটকাঠের বিল্ডিং করে রাখা হয়েছে কিন্তু সেই অবকাঠামো চালাতে হলে পারিপার্শ্বিক যেই সুযোগ সুবিধা (পলিসি, জনবল, বিদ্যুৎ, পানি থেকে শুরু করে জীবন যাপনের মৌলিক চাহিদা পূরণের উন্নত ব্যবস্থা) দরকার , সেসবের সমন্বয় করতে বলতে " ইহা আমাদের দায়িত্ব নহে" ধরনের মনভাব।


পোস্ট বেশ বড় হয়ে গেলো। পরের পর্বে এই সব কারণ , সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে লিখবো।

No comments: