Monday, May 30, 2011

"হেলথ ফর অল (health for all)" এর জায়গায় "সমান উন্নয়ন সবার জন্য (Equal development for all)" কবে দেখবো? পর্ব - ২

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই রকম হযবরল অবস্থা ও ভেঙে পড়ার কারণ কি?

আসুন এক এক করে কমন কিছু সমস্যাকে আলোচনা করে দেখি আসলেই সমস্যা যা মনে হয় তাই নাকি অন্য কোথাও। আমাদেরকে প্রথমেই মনে রাখতে হবে, দেশের ভিতরে যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমেই দরকার হবে সেই সমস্যার আদ্যপান্ত বিশ্লেষণ করে তার সমাধানে একটি রুপরেখা । রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাই যে কোন চাহিদাপূরণে বা সমস্যার সমাধানে দেশব্যপী বাস্তবায়নের একটি পলিসি পেপার থাকে। সেই পলিসি পেপারে সমস্যার উল্লেখ, চরিত্র ও সমাধানে করনীয় মূল দর্শন উল্লেখিত থাকে। এজন্য, প্রতিটা সমস্যার সমাধানে আমরা আগে দেখবো সেই সমস্যার ব্যাপারে আমাদের স্বাস্থ্যনীতি না পলিসি পেপারে কি বলা আছে, তারপর এর বাস্তবায়নে কি কি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, এবং তারপর বাস্তবতার নিরিখে এর সমাধান/ প্রস্তাবিত সমাধান।

আমাদের জনবল এর অভাবঃ
সন্দেহ নেই যে আমাদের জনবলের অভাব আছে । সেইটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবী জুড়েই আছে । ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন এর এই ওয়েব সাইটে গেলে এ বিষয়ে নানা তথ্য পাবেন। বিশ্বব্যপী স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা মাপার জন্য জনপ্রতি ডাক্তারের সংখ্যা হিসাব করা হয়। পরিমাপ হিসেবে এর কার্যকারিতা খুব একটা ভালো নয়। কারণ একজন ডাক্তার ঠিক কয়জন নাগরিকের স্বাস্থ্যের দেখভাল করতে পারবেন তা নির্ভর করে সেই ডাক্তার, প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো , টেকনোলজির পাশাপাশি লোকালয়ের মানুষ কে কয়জন কি ধরণের অসুখে ভুগেন তার উপর। সুতরাং, আমেরিকা কিংবা ইউরোপে বসে আম একজন ডাক্তার হয়ত ৩০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যের দেখা শোনা করতে পারি, কিন্তু বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া কিংবা বেনিনে তা সম্ভব নয়। সুতরাং, জনবলের সংখ্যা তাত্ত্বিক হিসেব করে ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ালেই সেবার মান বৃদ্ধি হবে না।

আমাদের যন্ত্রপাতির অভাবঃ

হেলথ টেকনোলজি বলতে আমরা অনেকেই যন্ত্রপাতি , সুঁচ সিরিঞ্জ বুঝি। আসলে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে হেলথ টেকনোলজি বলতে বুঝায় ঃ

১। সব ধরণের ফার্মাসিউটিক্যালস । এর ভিতর ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাক্সিন, টিকা, হোমিওপ্যাথি সব রকম কেমিকেলই পড়বে।
২। স্বাস্থ্য খাতে ব্যবহৃত সকল প্রকার যন্ত্রপাতি বা ডিভাইস । সেইটা সুতাও হইতে পারে, সিটি স্ক্যানারও হতে পারে, আবার মোবাইল টেলিফোন সহ যে কোন মোবাইল ডিভাইস যা রোগ প্রতিরোধ, রোগের নির্ণয় বা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে ।
৩। যে কোন ধরনের মাইনর ও মেজর সার্জিকাল প্রসিডিউর । মানে কাটাছেঁড়ার পদ্ধতি । ট্রিট্মেন্ট প্রটোকল ( যেমন - ক্যান্সার চিকিৎসার গাইড লাইন) এবং ক্লিনিকাল গাইড লাইন।
4. এমন কি স্বাস্থ্য সেবা কি ভাবে সাজানো গুছানো থাকবে এইটাও টেকনোলজির অন্তরভূক্ত ।
এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন ঃ
health technology include the following.
• Drugs: e.g., aspirin, beta-blockers, antibiotics, HMG-CoA reductase inhibitors (“statins”)
• Biologics: vaccines, blood products, cellular and gene therapies
• Devices, equipment and supplies: e.g., cardiac pacemakers, CT scanners, surgical gloves,diagnostic test kits
• Medical and surgical procedures: e.g., psychotherapy, nutrition counseling, coronary angiography, gall bladder removal
• Support systems: e.g., electronic patient record systems, tele-medicine systems, drug formularies,blood banks, clinical laboratories
• Organizational and managerial systems: e.g., prospective payment using diagnosis-related groups, alternative health care delivery configurations, clinical pathways, total quality management programs


এখন কথা হলো,
ক) এই টেকনোলজি গুলোর কয়টা আমাদের দেশে কোনখানে কয় পিস করে লাগবে, বেশি আছে না কম, কয়টা রোগীর জন্য কয়টা টেকনোলজি আসলেই দরকার -সেই সব ডাটা সংগ্রহ করা হয় কি?
-না হয় না। এই ধরনের ডাটা কালেকশন , এনালাইসিস এবং প্রাপ্ত রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে যদি ডিসিশন নেওয়া হত তাহলে আমাদের অলরেডি অপ্রতুল রিসোর্স ( সেইটা জনবল, টেকনলজি বা অর্থ- সবই হতে পারে) কে এলোকেশন বা ভাগাভাগি করার সিদ্ধান্ত গুলো আরেকটু সঠিক হত। সম্পদের অপচয় হত না।

খ) বাংলাদেশ এখন যেই সব টেকনলজি ব্যবহার করে তাদের ভিতরে কোনটা কতটুকু নিরাপদ, কতটুকু ইফেক্টিভ ( যা করার কথা তা করে কি না) কতটুকু কস্ট ইফেক্টিভ ( সর্বনিম্ন দামে সর্বোচ্চ উপকার দেয় কিনা বা মূল্যের বিপরীতে পাওয়া উপকারের পরিমাণ) তা স্টাডি করা হয় কি না?
--- না হয় না । আমরা অন্ধের মত উন্নত বিশ্বের দেওয়া প্রেস্ক্রিপশন অনুকরণ করি। যদিও তাদের প্রেক্ষাপটে যা অমৃত , আমাদের প্রেক্ষাপটে তা বিষ হতে পারে। আবার, দামী দামী অনেক যন্ত্রপাতি কিনে এনে চালাতে পারি না, ফেলে রাখি। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা অনেক যন্ত্র অনুদান দেয়, যা অনেক সময় আউট ডেটেড বা সমস্যাযুক্ত।
প্রচুর প্রযুক্তি দাতা দেশের কোন কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করে । যেমন ভিটামিন যুক্ত ফর্টিফায়েড বিস্কিট কিংবা প্লাম্পি নাট । মানুষের খাবার উৎপাদন কিংবা ক্রয় ক্ষমতা অর্জনে উপার্জনের ব্যবস্থা না করে ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করে এই নাট কেন খেতে হবে ? আবার, সবার জন্য নিরাপদ পানির সরবরাহে দেশীয় বিনিয়োগে পানি শোধনাগার স্থাপন না করে কেন কলেরা ভ্যাক্সিন উৎপাদন করতে হবে - এই গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা কর্মকান্ড গুলার কারণ হইলো সঠিক এভিডেন্স বেজড ডিসিশন মেকিং প্রসেসের অভাব।

গ) টেকনোলজি গুলোর দাম কি আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত?
--- এক ওষুধ ছাড়া আর কিছুই আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত দাম নিয়ে আসে না। ওষুধ দেশীয় কোম্পানি গুলো তৈরী করে বলে তাও কিছুটা গা সোয়া। আগের ওষুধ নীতি অনুযায়ী উৎপাদন মূল্যের উপরে মাত্র ২০% লাভে ওষুধের দাম নির্ধারিত হত । পরে ওষুধ কোম্পানি গুলোর লবিং এর কারণে পলিসিতে পরিবর্তন করা হয়, এখন কোম্পানি গুলো ইচ্ছামত দাম নির্ধারণ করতে পারে। বিদেশে নতুন ওষুধ গবেষণায় বিলিওন বিলিওন টাকা ইনভেস্ট করে বলে কোম্পানি গুলোকে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে যাতে গবেষণায় উৎসাহ পায়। কিন্তু বাংলাদেশের কোন কোম্পানিরই রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এ কোন বিনিয়োগ নেই। এরা সকলেই জেনেরিক ড্রাগ বা অন্যের আবিষ্কার করা ফর্মূলায় নিজেদের ওষুধ উৎপাদন করে। সুতরাং, এই ইচ্ছেমত দাম নির্ধারণের সুবিধা পাওয়াটা এক রকম সাংবিধানিক অধিকার লংঘন করে নাগরিকের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়।

ঘ) টেকনোজির দাম সহনীয় রাখতে দেশে উৎপাদন সম্ভব?
--- অবশ্যই সম্ভব। এমন অনেক টেকনোলজি আছে যেইটা দেশেই উৎপাদন করা যায়, আমদানি করার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু উদ্যোগ। কিন্তু হায় হতিস্মি! দেশে একটা কম্পিউটার উৎপাদনের কোম্পানি নেই, কিন্তু বুয়েটসহ সকল টেকনিকাল ভার্সিটিতে সবাই হাক ডাক দিয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায়। অথচ একটা ভার্সিটিও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে না। আমাদের ছেলে মেয়েরা নাসার জন্য রোবট বানাইতে খুবই উৎসাহী কিন্তু দেশের ১৬ কোটি মানুষের ব্যবহারে লাগবে এমন হেলথ টেকনোলজির কোটি কোটি টাকার মার্কেট পড়ে আছে অবহেলিত।

ডাক্তারদের গালি দেওয়ার লোকের অভাব নাই। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বলা যায়, ডাক্তাররা যদি এক একটা কসাই হয়, তাহলে দেশের হেলথ টেকনলোজির অবহেলিত মার্কেটের জন্য ইঞ্জিনিয়াররাও এক একটা কসাই। চাঁদের দেশে মাটি কেমনে তোলা যাবে- এইটা নিয়ে চিন্তা করতে ভালো লাগে , কিন্তু নিজের দেশের মাটির প্রতি কোন দায় দায়িত্ববোধ এদের নাই। কেন বলছি? বুয়েট আর ঢাকা মেডিকেল পাশাপাশি। যতদিন ঢাকা মেডিকেলে ছিলাম, বহুবার বুয়েটের বন্ধুরা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে, বেড়াতে, সিঙ্গারা খেতে, প্রেম করতে এসেছেন- কিন্তু আজ পর্যন্ত দেখিনি বা শুনিনি কেউ এসে বলেছেন - মেডিকেলের এই সমস্যাটার সমাধান এই ডিজাইন দিয়ে করা যায়- কিংবা, ঐ সমস্যাটার একটা টেকনোলজিকাল সমাধান সম্ভব! এই অভিযোগ আমার নিজের বন্ধুদের বিরুদ্ধেও। কষ্ট লাগে যখন ভাবি, বুয়েটের বন্ধুরা প্রয়োজন হলে মেডিকেলে এসে বন্ধুর জন্য রক্ত দিয়ে গেছে - অথচ তাদের মাথায় একবারো আসে নাই যে তার শিক্ষা ও জ্ঞান প্রয়োগের ক্ষেত্রটাও তো হতে পারে ঢাকা মেডিকেল! আমি ডাক্তার হয়ে যখন নিজে হেলথ টেকনোলজি নিয়ে শিক্ষা লাভ করলাম, তখন জানলাম , আমার ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুদেরও অনেক কিছু করার ছিলো , আছে- কিন্তু তারা এসব নিয়ে ভাবেই না! টিকেটিং সিস্টেম, পেশেন্ট রেকর্ড, পেশেন্ট ডাটাবেজ, মনিটরিং সিস্টেম, ড্রাগ ডিস্পেন্সারী ও কন্ট্রোল, ডিউটি রোস্টার, কমিউনিকেশন, লজিস্টিক্স , ম্যানেজমেন্ট --- কত কিছুই না ইঞ্জিনিয়ারদের উপর নির্ভরশীল, টেকনোলজিস্টদের উপরে নির্ভরশীল- কত্ত কিছু করার আছে!

আমাদের অর্থের অভাবঃ

এইটা একটা আরোপিত জুজুর ভয় জনিত সমস্যা । সন্দেহ নাই যে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের হার্টের একটা করে পেস মেকার, একবার করে এম আর আই / সিটি স্ক্যান কিংবা ৩০টা করে সিপ্রোফ্লক্সাসিন দেওয়া মত টাকা আমাদের নাই। কিন্তু এইটা মোটেই সত্যি কথা না যে বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে অর্থ দিয়ে চিকিৎসা সেবা কেনার সামর্থ নাই। আগেও বলেছি , হাসপাতালে আসতে যাতায়াতে, আসার পরে বিভিন্ন টেস্ট আর ওষুধের পিছনে মানুষের শত শত টাকা খরচ হয়। কিন্তু টাকার কোন হিসাব নিকাশ নাই। এইটা কতিপয় কর্মকর্তা কিংবা দোকানীর পকেটে না ঢুকে সিস্টমেটিকালি সরকারী রেভেনিউ খাতে ঢুকলে হাসপাতাল গুলো অন্তত এখনকার চেয়ে বেশি ভালো ভালে পরিচালিত হতে পারত ।

দেখুন, আমাদের দেশের মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব । এর জন্য যদি প্রতিনিয়ত দাতার কাছে ভিক্ষা চাইতে হয়, সে তো কুকুর লেলিয়ে দেবেই। তখন সেই কুকুরকে ডগ বিস্কিট খাওয়াতে আমাদের ঋণের অর্থ শেষ হয়ে যাবে। ঠিক এই কারণেই কষ্ট করে হলেও আমাদের উচিত স্বাস্থ্যখাত পরিচালনার পয়সাটা সঠিক জায়গায় দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এখন, সেই দেওয়াটা কি ভাবে হবে ট্যাক্স নাকি হেলথ ইন্সুরেন্স - এইটা আলোচনার দরকার আছে । অনেকেই মনে করেন, এখনকার পরিস্থিতিতে আমার যখন দরকার হচ্ছে আমি শুধু তখনই , নিজের জন্য টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিচ্ছি । আর দরকার না হলে খরচ করছি না। এতে খুউউউউব লাভ হচ্ছে। কিন্তু সত্যি কথা হলো , ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে আপনাকে যখন চিকিৎসা নিতে হচ্ছে- সেইটা জীবনে একবার হলেও - আপনি এক সাথে এত বেশি টাকা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন যে ঐ একবারেই আপনাকে পথে বসে যেতে হতে পারে।

অল্টারনেটিভ কি?

কয়েক ধাপে বিভক্ত স্বাস্থ্য সেবা । এর খরচ যোগাড় করা হবে বিভিন্ন ট্যাক্স ও হেলথ ইন্সুরেন্সসহ অনুদানের মাধ্যমে। সেবা পাবেন সকল নাগরিক। সেবা পাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক থাকবে কিন্তু সেবা নেওয়ার/ না নেওয়ার ফ্রিডম থাকবে। মূলত, সকল উপার্জনক্ষম নাগরিক একটা বেসিক হেলথ স্কীম দিয়ে সুরক্ষিত থাকবেন। কেউই বাদ পড়বেন না। বেসিকের নিচের মানুষ গতর খেটে এবং বেসিকের উপরের ধনী ব্যক্তিরা অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে হাইয়ার স্কীমের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। আধুনিক কোন সেবার জন্য যেন বাংলাদেশের বাইরে যেতে না হয়, সেইটা সরকার নিশ্চিত করবে ডাক্তারদের ট্রেনিং ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোকবল দিয়ে।

বেসিক স্কীম ঃ

স্বাস্থ্য সেবা খাতের উন্ন্যনের জন্য কেবল মাত্র স্বাস্থ্য ট্যাক্স নেওয়া যায়- যা সকল নাগরিকের উপর বাধ্যতামূলক। এইটা বাধ্যতামূলক বেসিক হেলথ ইন্সুরেন্সও বলতে পারেন। বাংলাদেশের সকল উপার্জনক্ষম নাগরিক একটা ন্যুনতম অর্থ প্রতিমাসে দেবেন। এর বিপরীতে বেসিক চিকিৎসা সেবা স্কীম এর আন্ডারে কিছু নির্দিষ্ট সেবা এবং এসেন্সিয়াল মেডিসিন লিস্টের যে কোন ওষুধ নিতে পারবেন। কস্ট ইফেক্টিভনেস স্টাডি এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের উপরে পরিচালিত রিসার্চ দ্বারা প্রাপ্ত রিয়েল এভিডেন্স এর উপর নির্ভর করে একটা জাতীয় সাইন্টিফিক কাউন্সিল সরকারকে পরামর্শ দেবে - এই বেসিক স্কীমে কোন কোন সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সরকারী সহ সকল বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যারা বেসিক সেবা দিতে চায় , তাদেরকে লাইসেন্স ভূক্ত হতে হবে। এই বেসিক স্কীম পাওয়ার অধিকার সকলের।

বেসিকের নীচে পুওর স্কীমঃ

যাদের দেওয়ার সামর্থ নেই, তারা সরকারের স্পেশাল স্কীমের আন্ডারে থাকতে পারেন। যেমন - কাজের বিনিময়ে খাদ্যের মত কাজের বিনিময়ে চিকিৎসা। সুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন কাজ করে দিয়ে আপনি বিভিন্ন ধরণের ভাউচার উপার্জন করতে পারবেন । অসুস্থ হলে ঐ ভাউচার দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন। যারা সিজনাল ওয়ার্কার - অর্থাৎ নিয়মিত আয় করতে পারেন না কিন্তু মাঝে মাঝে উপার্জন করেন - তারাও এই ভাউচার কিনতে পারবেন। এক একটি সেবার জন্য এক একটি ভাউচার থাকতে পারে। যেমন- মাতৃসেবা পাওয়ার জন্য ভাউচার। মেডিসিন ভাউচার ইত্যাদি। রোগী নিজেই নিজের প্রয়োজন মত তার জন্য দরকারী ভাউচার নিতে পারবে। এতে করে প্রচুর পার্ট টাইম কাজের সুযোগ হবে।

যথাযত পলিসির অভাবঃ

আমাদের মূল স্বাস্থ্যনীতি যথেষ্ট ভালো একটা পলিসি পেপার। প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য কমুইনিটি ক্লিনিক এবং ধাপে ধাপে কমিউনিটি থেকে ইউনিয়ন--> উপজেলা--> জেলা--> বিভাগ--> জাতীয় পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থাটা আসলেই খুব ভালো । সুচিন্তিত এবং সিস্টেমেটিক। তাইলে সমস্যাটা কোথায় ? সামগ্রিক ভাবে চিকিৎসা সেবা বা স্বাস্থ্য পরামর্শ দিতে হইলে কিছু পূর্ব শর্ত পালিত হইতে হবে। যেমন-

১। সেবাদানকারীর নিজের জ্ঞান
২। সেবাদানকারীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য লোকবল
৩। সহায়তাকারী টেকনোলজি
৪। রোগ নির্ণইয়ের ব্যবস্থা
৫। রোগ নির্নয়ের পরে চিকিৎসা প্রদানের সরঞ্জাম, অবকাঠামো , ওষুধ পাতি ইত্যাদি ।

প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্যতৈরী করা কমিউনিটি ক্লিনিক/ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স/ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মানুষকে সেবা দেবে সেখানে কারা থাকবে? একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের জন্য সরকার স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও এবং স্বাস্থ্য সহকারীর ব্যবস্থা হেলথ কেয়ার নেটোয়ার্কে রেখেছেন। আবার ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন এম বি বি এস ডাক্তার এর পোস্ট তৈরী করা হয়েছে। উপজেলা, জেলা পর্যায়ে প্রচুর পোস্ট আছে কিন্তু এদের অনেক গুলোই খালি ।

চাকুরীর এই সোনার হরিণের বাজারেও কেন পোস্ট খালি পড়ে থাকে? এর বিবিধ কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের রাজধানী কেন্দ্রিক উন্নয়ন। আমার জন্মের পর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত গত ৩ যুগে ঢাকা পরিবর্তিত হয়েছে দ্রুত । বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগের এক মাত্র খোলা জানালা হলো ঢাকা । মানুষের জীবনের মৌল চাহিদার নিরিখে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, বাসস্থানের জন্য পানি, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট , স্যানিটেশন , স্বাস্থ্য সেবার উন্নত প্রতিষ্ঠান, দেশের বড় বড় ফ্যাশন হাউজ, বিনোদন এর মাধ্যম - সবই ঢাকায় । যখন মেডিকেলে ভর্তি হই, রাজশাহী যেতে হয়েছিলো--- আমার মনে হচ্ছিলো পুরো রাজশাহী শহর ঢাকার যে কোন বড় পাড়া/মহল্লার ভিতরে অনায়াসে ঢুকে যাবে। সেখানে রাস্তার এক পাশে পাকা বাড়ি তো অন্য পাশে কাঁচা ঘর, উঠান, গরু চরে বেড়াচ্ছে । একই অভিজ্ঞতা ময়মনসিংহকে নিয়ে। ৪০ বছর পরে দিনাজপুরের সাদীপুরে বেড়াতে গিয়ে আমার মায়ের মন্তব্য " কিছুই বদলায়নি- যা ছিলো সবই আগের মত" । ভাবখানা এই রকম - ঢাকাই বাংলাদেশ । ঢাকা খাবে, ঘুমাবে, হাগু করবে - আর ঢাকার বাইরে পুরো দেশটা রয়েছেই শুধু ঢাকাকে খাদ্য, বস্ত্র, বিলাস ব্যাসনের উপকরণের যোগান দিতে।

সৌদি আরব যেমন তেলের টাকায় সারা বিশ্ব থেকে আগত সম্পদ ভোগ করে আর সেদেশে যাওয়া শ্রমিকদের "মিসকিন মিসকিন" বলে গালি দেয় - সত্যিকার অর্থে আমরা ঢাকাবাসীদের আচরণে খুব একটা পার্থক্য নেই। ঢাকার বাইরের মানুষেরা , বিশেষ করে চাষী-কামার- কুমোর- মুচি- শ্রমিকরা আমাদের কাছে মিসকিন। তাই ঐ সব মিসকিনদের জন্য ওয়াসার পানির লাইন, ডেসকোর বিদ্যুতের লাইন, কিউ বির ইন্টারনেট এর লাইন কিংবা উন্নত কল কারখানা, ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ কিংবা হাসপাতাল করতে আমাদের খুব গায়ে লাগে।

আমরা এতটাই স্বার্থপর শুয়োর প্রকৃতির মানুষ যে সারাদেশের সকল জেলায় ইউনিভার্সিটি স্থাপনের কথা শুনলে আমরা হায় হায় করে উঠি ! হায়, শিক্ষা ব্যবস্থার মানের তাহলে কি হবে? সত্যিই তো ! দেশের সবাই যদি ব্যাচেলর ডিগ্রী নিয়ে ফেলে, তাইলে আমি তো আর এক্সক্লুসিভ রইলাম না! অতএব, যে কোন মূল্যে মানুষের শিক্ষিত হওয়া ঠেকাও!

শুয়োর শব্দটা কি আপনাকে নাড়া দিলো ? তাহলে দেখুন-

আমাদের সমাজের উপর তলার মানুষেরা হয়ত দেখতে চান একদিন এমনকি ৩য় -৪র্থ শ্রেণীর চাকুরিজিবী রাও graduate , post graduate হবে । সেটা জাতির জন্য কতটা গৌরবের হবে তা চিন্তা করতেও আমি শিউরে উঠি । ---- এই হলো আমাদের অবস্থা । কোথায় শিক্ষার মান যাতে উন্নত ও সমান থাকে তার জন্য চেষ্টা করবো - তা না শিক্ষার মান এর স্বার্থে শিক্ষার পথই বন্ধ করে দাও! হক মাওলা!

তো এই ঢাকা কেন্দ্রিক উন্নয়নের ফলাফল হইলো ঢাকার বাইরে সম মানের শিক্ষা সহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নাই। ফলে, কেউই ঢাকার বাইরে থাকতে চায় না। সকলেই বাইরে থেকে ঢাকায় চলে আসতে চায়। এই সমস্যার কথা যে সব ডাক্তার সরকারী চাকুরি ছেড়ে দিচ্ছেন তাদের কথাতেও উঠে এসেছে। যেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সকলেই ঢাকায় থাকতে চায়, সেখানে কেবল ডাক্তারদের মফস্বলে পড়ে থাকতে বলাটা অন্যায় এবং তারা সেখানে থাকবেন- এইটা আশা করাটা নিতান্তই আহাম্মকি।

কেন?

দেশের সেরা মেধাবীরা ডাক্তারী পড়ে। ডাক্তারী পড়াটা অনেক কষ্টের কাজ। ডাক্তাররা পোস্ট গ্রাজুয়েশন করতে চায়। ডাক্তারের পরিবারের (স্ত্রী/স্বামী) রাও মেধাবী কেউ হয় যারা ঢাকার মত বড় শহরে থেকে কাজ করে/করতে চায়। আর পরিবার চাকুরী না করলেও সন্তানদের দেশের সেরা স্কুল/কলেজে পড়াতে সকলেই চায়। তার উপরে বিদ্যুৎ, পানি, ইন্টারনেটের ব্যাপার তো আছেই। সুতরাং, শুধু ডাক্তার নয়, পাশাপাশি মেধাবী নার্স, প্যারামেডিক, টেকনিশিয়ানদের মফস্বলে, গ্রামে, ধরে রাখতে চাইলে তাদের থাকার জায়গাটাতে বিদ্যুৎ, পানি , ইন্টারনেটের সুবিধা দিতে হবে। তাদের সন্তানদের পড়ালেখার জন্য আশে পাশে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। ঢাকার মার্কেট যে সব খাদ্য, বস্ত্র ও বিনোদন অফার করতে পারে - সেই মফস্বল বা গ্রামেও তা পৌছানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।

এই দৃষ্টিকোন থেকে চিন্তা করলে , বাংলাদেশের যে কোন রাজনৈতিক দল, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগকারী - কেউই সঠিক পলিসিতে চলে না। যেখানে দেশের হাজার হাজার বর্গ মাইল পড়ে আছে, কোটি কোটি কাঁচা ঘর - সেখানে কোন উন্নয়নের চিত্র নাই। পাকা বাড়ি বানানোর ব্যবস্থা করা - সে সব বাড়িতে ন্যুনতম বিদ্যুৎ, পানি, একটা করে টেলিফোন, ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা - এই ধরনের কোন কার্যক্রম না লীগের ইশতেহারে আছে, না বি এন পির। এমন কি সাধারণ মানুষের দাবীতেও তেমন নেই। কারণ তারাও চায়, দরকার হইলে সরকার ফ্লাই ওভার, ওয়াক অভার, আকাশে বাতাসে ফ্ল্যাট গড়ে হলেও ঢাকায় থাকার ব্যবস্থা করে দিক।

তাহলে এর সমাধান কি?

সবার আগে দরকার কিছু পলিসি বা নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া। যেমন-

যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক , সকল বিভাগ-->জেলা-->উপজেলা-->ইউনিয়ন--> গ্রাম পর্যায়ে সুযোগ, সুবিধা ও উন্নয়নের সমান মান, পরিমাণ ও চরিত্র বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকিবে।

সোজা বাংলায়, সুযোগ সুবিধার কিছু বেসিক লিস্ট থাকবে যেইটা সারা বাংলাদেশের জন্য সমান হবে।

ঢাকা বিভাগে যা যা থাকবে, বাকি সকল বিভাগে তা তা-ই থাকতে হবে।

ঢাকা বিভাগ সহ একই বিভাগের অধীনে সকল জেলায় সমান সুযোগ, সুবিধা ও সেবার ব্যবস্থা থাকবে।

একই ভাবে উপজেলা পর্যায়ে সকল উপজেলার জন্য একই ধরনের নাগরিক সেবা দিতে হবে। ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের বেলাতেও তাই।

কিছু মৌলিক অধিকারের কথা সকল নাগরিকের জন্য সমান ভাবেই সংবিধানে রচিত আছে । কিন্তু বাংলাদেশের যে কোন সরকার যখন কোন প্রকল্প নেয়, তখন সেই সব উন্নয়ন প্রকল্পের মূলনীতি হিসেবে কখনোই " সকলের জন্য সমান উন্নয়ন" - এই নীতি মেনে প্রকল্প ডিজাইন করে না। নইলে, যেদিন থেকে ঢাকায় ওয়াসা হয়েছে সেইদিন থেকেই বাংলাদেশের প্রতিটা জেলার পরিশোধিত পানির ব্যবস্থা চালুর প্রকল্প নেওয়া হত। প্রতিটা জেলায় , উপজেলায় একটা করে আগোরার মত সুপার মল থাকতো। কক্সবাজারকে বাই পাস করে ইন্টারনেট এর সুবিধা ঢাকায় ঢুকতে পারতো না । প্রতিটা নাগরিককে ইন্টারনেটের সুবিধার আওতায় আনার ইচ্ছা থাকলে ভারতে ইন্টারনেট রপ্তানির মত উদ্ভট প্রস্তাব শুনতে হত না।

আমেরিকায় বেশ কয়েক বছর থাকার পরে আমার এক আত্মীয় বলেছিলেন- সব শহর ঘোরার দরকার নেই। আমেরিকার কয়েকটা শহর দেখে ফেললে বাকি গুলো একই রকম লাগে। বাস থেকে নেমে চোখে পড়বে একটা ওয়াল মার্ট ।

হল্যান্ডবাসী এক বন্ধুর মন্তব্য ঃ
প্রায়ই পথ হারিয়ে ফেলি। কারণ রাস্তা - বাড়ি সব একই রকম দেখতে। এক শহরে বাস থেকে নামলে যে সব প্রতিষ্ঠান চোখে পড়ে, বাকি শহর গুলোতেও তাই। কেমন যেন সব কপি পেস্ট !

একি স্বপ্ন? না সম্ভব?

নিঃ সন্দেহে একদিনে সম্ভব না । আমেরিকা কিংবা হল্যান্ড এর মত দেশ কয়েক শত বছর ধরে একটু একটু করে আজকের অবস্থানে এসেছে। কারণ তাদের রাষ্ট্রনীতিতে স্পষ্ট লেখা আছে --- দেশের একটি এলাকা , তা রাজধানী থেকে যত দূরেই হউক আর কাছেই হউক --- অন্য সকল এলাকার মত সমান সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত হইবে।

তাই, তারা যখন উন্নয়ন প্রকল্প নেয়, শুধু ঢাকা , শুধু চট্টগ্রাম কিংবা খুলনার জন্য নেয় না --- দেশের সকল জেলার জন্য নেয়। সকল উপজেলার জন্য নেয়।

মানুষের স্বভাব চরিত্র (মূলত ডাক্তার) খারাপ, সেবা দেওয়ার সঠিক মনভাব নাই।

এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । পুরো সিস্টেমটাই যখন নষ্ট হয়ে গেছে , যার যা ইচ্ছা তাই করছে , তখন এই ধরনের অধঃপতন হবেই। দরজা খোলা রেখে ঘুমালে চোরকে নামায পড়িয়ে লাভ নেই। সে চুরি করবেই। দরকার হলো দরজা বন্ধ করা, সামনে ক্যামেরা লাগানো, চোরের জন্য বিকল্প উপার্জনের পথ করা এবং তারপর মানুষকে উপদেশ দেওয়া যাতে তারা চোরাই মাল না কেনে।

একদিনে যেহেতু সারা বাংলাদেশকে ঢাকা বানায় ফেলা সম্ভব না - সেই জন্য এখনি অল্প অল্প করে কিছু কঠোর , কিছু সহযোগিতা মূলক পলিসি নেওয়া। যেমন- ঢাকায় আর নতুন আবাসন তৈরী করতে না দেওয়া । ঢাকার বাইরে অন্যান্য এলাকায় সরকারী - বেসরকারী - ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন, ইন্টারনেট সুবিধা সহ বাড়ি/ ফ্লাট বানানো। মানুষ যদি কিনে তো ভালো। না কিনতে পারলে কিস্তিতে ভাড়া দেওয়া । ঢাকার বাইরের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারী স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে এখনি উন্নত লাইব্রেরী, ইন্টারনেট , নিরাপদ পানি এবং প্রয়োজনে হোস্টেলের ব্যবস্থা করে দেওয়া।

ঢাকার বাইরে আবাসন, বিশ্ববিদ্যালয়, পরিশধিত পানির কারখানা ( ওয়াসার মত) এবং উন্নত মার্কেট স্থাপনের জন্য প্রাইভেট- পাবলিক বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা। যারা এসব প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে তাদের বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সুবিধা দেওয়া ।

টেকনোলজির সর্বোচ্চ ব্যবহারঃ

বাংলাদেশের অনেক অনেক টাকা নেই। তাই অনেক কিছু হুট করে করা সম্ভব হয় না। কিন্তু আজকের যুগে স্রেফ টেকনোলজির সাহায্য নিয়ে সারা বাংলাদেশের মানুষকে সমান সুযোগ ও সুবিধা দেওয়া সম্ভব। সেই রকম টেকনোলজি হচ্ছে আই সি টি এবং আই টি । আর কিছু না হোক, সারা বাংলাদেশে শুধু যদি হাই স্পিড ইন্টারনেট এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায় তাহলে বাকি আরো অনেক মৌল চাহিদা মেটানোর রাস্তা মানুষ নিজে ব্যক্তিগত উদ্যোগে, সমষ্টিগত ভাবে কমিউনিটি চেষ্টা বা প্রাইভেট বিনিয়োগে নিজেরাই করে নিতে পারবে।

টেকনোলজি তথা ইন্টেরনেট , কম্পিউটার, ভিডিও-অডিও ইত্যাদি নানা রকম টেকনোলজির কারণে এখন আর গ্রামে গ্রামে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল গড়ে তোলার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু আমাদের থিংকিং প্রসেস বদলানোর । আমেরিকার বাঙ্গালী সালমান খানের নাম আপনারা হয়ত শুনেছেন। সালমান আমাদের অতি পরিচিত ইন্টারনেট এবং ভিডিও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষা দানের ব্যবস্থাটাকেই পালটে ফেলার চেষ্টা করছেন । না- তিনি স্কুল বন্ধ করতে বলেন নি। টিচারদের চাকুরী থেকে ছাটাই করে দিতে বলেননি । স্রেফ এইটুকু বলেছেন যে মিলে মিশে আনন্দ নিয়ে, এক একজনের সুবিধা ও সময় মত শিক্ষা দানের পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে। আগে যেমন শিক্ষা দানের গুরুরা বাসায় শিক্ষা দিতেন, একজন শিক্ষার্থী গুরুর সাথে আলোচনায় বসতেন, বছরের পর বছর দীক্ষা নিয়ে গুরু যখন বলতেন - হ্যাঁ , তোমার শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে - তখন তারা বাকিদের দীক্ষা দিতে বেরুতেন। অনেকটা সেই রকম।

এই শিক্ষা ব্যবস্থার উপকারিতা কি?

প্রথম উপকারিতা ঃ সকলের জন্য সমান মানের শিক্ষক

আধুনিক যুগে মুশকিল হয়েছে আমরা সবাই মিলে গুরুর বাড়িতে গিয়ে থাকতে পারছি না । আবার একই গুরুর পক্ষে হাজার হাজার মানুষকে শিক্ষা দিয়ে বেড়ানোও সম্ভব না । তাই দেশে দেশে স্কুলের প্রচলন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সব গ্রামে কি একই মানের শিক্ষক পাঠানো সম্ভব?
না।

কিন্তু একই মানের ভিডিও শিক্ষক পাঠানো সম্ভব?

হ্যাঁ। এই জন্যই সালমানের ১০ মিনিটের ভিডিও শিক্ষা এত জনপ্রিয় হয়েছে। সারা বিশ্ব থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন শিক্ষার্থী - বয়স কিংবা লেভেল নির্বিশেষে এই সব ভিডিও থেকে শিক্ষা নিচ্ছে । আমি নিজেও অংক করছি কয়েক দিন ধরে ।

দ্বিতীয় উপকারিতা ঃ সকলের জন্য সমান মানের সনদ

এর চেয়ে গণতান্ত্রিক, সামাজিক ন্যায় আর হয় না। পৃথিবীর কোন শিক্ষা যদি দাবী করতে পারে যে তারা সকল মানুষকে সমান সুযোগ, সমান সুবিধা , সমান দক্ষতার সনদ দিয়ে থাকে - তাহলে তা হলো এই সালমান খান একাডেমি । এখানে মানুষ ৮০-১০০% এর জন্য পড়ে না। এখানে সকলেরই লক্ষ্য থাকে ১০০% অর্জনের।

চিন্তা করে দেখুন - এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যা বাধ্য করছে প্রতিটা শিক্ষার্থীকে ১০০% বা সুপার এ গ্রেড পেতে । তুমি যতক্ষণ না একটি বিষয়ের একটি লেসনে ১০০% দক্ষতা না পাচ্ছো , ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি পরের লেসনে যাবেই না ! কি আশ্চর্য সাম্য! কি সুন্দর ন্যায়!

আমরা এখন কি করছি? কাউকে এ গ্রেড, কাউকে বি গ্রেড , কাউকে সি গ্রেডের সিল কপালে লাগিয়ে এস এস সি, এইচ এস সি সনদ দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। যারা ফার্স ক্লাস , তারা মাত্র ৬০% দক্ষতা নিয়ে পাশ করছে ।

একটু ভেবে দেখুন তো ! আপনি কোন গাড়িতে চড়বেন যার ব্রেক ৬০% কাজ করে? কিন্তু আপনি সেই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেবেন যে কিনা মাত্র ৫০% দক্ষ । ( বাংলাদেশে মেডিকেলে পাশের জন্য ৫০% নম্বর পেতে হয়) তার মানে, বাকি ৫০% না জেনেও আমি আপনার গলায় ছুরি চালাতে আইনত অনুমোদিত !!!!!

অথচ সালমানের পদ্ধতিতে এনাটমিতে ১০০% দক্ষতা অর্জন না করে আমার পক্ষে সম্ভবই ছিলো না পরের সাবজেক্টে যাওয়ার।

এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে স্কুলে স্কুলে মান সম্মত ভিডিও পাঠানো যায়। দরকার শুধু ভিডিও প্লেয়ার একটি কম্পিউটার , আর বিদ্যুৎ। সোলার বিদ্যুৎ দিয়ে যে সব স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব হচ্ছে - সেখানে এই ধরণের ভিডিও চালানো যায়।

বাংলাদেশ সরকার টিভিতে ভালো স্কুলের ক্লাস প্রচার করবে। আমার কথা হলো, সেইটা রেকর্ড করে ইন্টারনেটে আপলোড করে দিলে দেশের যে কোন স্থান থেকে বার বার , যতবার ইচ্ছা , যতজনের ইচ্ছা নামিয়ে ব্যবহার করতে পারবে।

এর ফলে, (কি ভয়ানক কথা) আমাদের ৩য়-৪র্থ শ্রেনীর কর্মকর্তারাও অফিসের শেষে বাসায় বসে বসে পড়ালেখা করতে পারবেন। হাজার হাজার , লক্ষ লক্ষ মান সম্মত শিক্ষক তৈরীর প্রয়োজন কালকেই মিটানো সম্ভব না। কিন্তু এইটা খুবই সম্ভব যে মান সম্মত শিক্ষকদের দিয়ে ১০ মিনিটের ভিডিও বানিয়ে বানিয়ে সেইটা সারা বাংলাদেশে পৌছানোর ব্যবস্থা করা।

হাসপাতাল গুলোর ক্ষেত্রেঃ

কিছু জিনিসের অটোমাইজেশন প্রয়োজন । হাসপাতালে টিকেটিং, পেশেন্ট রেকর্ড ইত্যাদি প্রচুর ক্ষেত্রে ডাটা কালেকশন ও লজিস্টিক্সকে অটোমাইজ করে ভুল ত্রুটি , রোগীর চাপ ইত্যাদি কমানো সম্ভব। পাশাপাশি, আরেকটা জিনিস করা দরকার । তাহলো , ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানদের কাছে রেজিষ্ট্রি বাধ্যতামূলক করা । গ্রামের রোগীরা এবং শহরের ওয়ার্ডের রোগীরা প্রথমে তার নিজস্ব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান এর কাছে যাবে। এরপর ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান রেফার করলে বিশেষজ্ঞদের কাছে যাবে। এতে করে সর্দি কাশির জন্য জাতীয় অধ্যাপকের কাছে যাওয়া বন্ধ হবে। এবং কেউ ২০ টাকায় বসে ওষুধের দোকানে রোগী দেখবে আর কেউ ধান্মন্ডিতে বসে কোটি টাকা কামাবে - এই অন্যায় ও বন্ধ হবে। যতজন এম বি বি এস , বি ডি এস রা পাশ করে বেরিয়েছেন - তাদের সকলের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে।

এই ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রিকৃত সকল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ঐ এম বি বি এস এবং বি ডি এস দায়ী থাকবেন। সরকারের কাজ হবে মাঝে মাঝে র‍্যান্ডমলি কিছু লোকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা , তার কাগজ পত্র দেখা। প্রতি ৬ মাস অন্তর একজন বিডি এস কাছে চেক আপ করতে হবে। প্রতি এক বছর অন্তর এম বি বি এস এর কাছে । এর বাইরে অসুস্থ হলে তো দেখাবেই। সরকার যদি দেখে কোন ডাক্তারের আন্ডারে থাকা সকল মানুষের চেক আপের কাগজ পত্র, স্বাস্থ্য ইত্যাদি দেখ ভাল ঠিক মত আছে - তাহলে সেই অনুযায়ী বেতনের উপরে ডাক্তারদের ইঙ্ক্রিমেন্ট বাড়বে।

যেই ডাক্তার যত বেশি রিমোট অঞ্চলে কাজ করবেন , তিনি তত বেশি বেতন পাবেন। ( এইটা চালু থাকবে, যতদিন না রিমোট অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নত হচ্ছে) ।

৬০০০ মানুষের কাগজ পত্র ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যদি অবহেলা পাওয়া যায় , তাহলে ডাক্তারকে শো কজ করা যাইতে পারে। এতে করে , ডাক্তারদের "গড" এর আচরণ করা কমবে। ভুয়া ডাক্তারীও বন্ধ হবে- যেহেতু মানুষের স্বাস্থ্যের উপরে নির্ভর করছে সেবাদানকারীর বেতন-ভাতা।

অনেক আপত্তি থাকতে পারে এই সব সমাধানে । আপনারা আলোচনা করুন। সমাধান বেরিয়ে আসুক।

"হেলথ ফর অল (health for all)" এর জায়গায় "সমান উন্নয়ন সবার জন্য (Equal development for all)" কবে দেখবো? পর্ব - ১

বাংলাদেশের হেলথ সার্ভিস অর্থাৎ সরকারী, বেসরকারী (স্বাস্থ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) বা এন জি ও প্রদত্ত স্বাস্থ্য সেবা নিতে গিয়ে -
১। আপনি কি কোন বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়েছেন?
২। আপনি কি কোন আর্থিক, মানসিক, শারীরীক বা সামাজিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন?
৩। অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে কোন আপন জন হারিয়েছেন?
৪। অবহেলা- ভুল চিকিৎসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বা কাউকে হতে দেখেছেন?


আমার কাছে কোন ভরসাযোগ্য দেশব্যাপী পরিচালিত জনমিতি (population statistics) নেই। কিন্তু কেন যেন মনে হয়, উপরের যে কোন একটি প্রশ্নের উত্তর আপনি যেই হোন না কেন, বাংলাদেশবাসী হলে, "হ্যাঁ" হবেই। আমি ১০০% নিশ্চিত। আসুন, মূল আলোচনায় যাবার আগে দেখি, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কি ধরণের সেবা পাওয়ার অধিকার আপনার আমার আছে।

বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের অধিকার

চিকিৎসা একটি সেবা, অর্থাৎ Public Good। কোন ব্যবসা পণ্য নয়। এর মানে হলো, আপনি বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী স্থান, কাল, পাত্র, জাতি, ধর্ম, উপার্জন- এমন কি নাগরিকত্ব নির্বিশেষে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত যে কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার অধিকারী। (per Section 15(A) of the Bangladesh Constitution, and develop the health and nutrition status of the people as per Section 18(A) of the Bangladesh Constitution.)

বাংলাদেশের হেলথ পলিসি আমাদেরকে বলে-
Health is defined asঃ

“A state of complete physical, mental and social well-being and not merely the absence of disease or infirmity.” -- অর্থাৎ শুধু নিরোগ হইলেই চলবে না, রাষ্ট্র আপনাকে আমাকে শারীরীক, মানসিক ও সামাজিক "ভালো থাকা"কে নিশ্চিত করতে অঙ্গীকার করছে। সেই ভালো থাকার রুপটি কেমন?

১। Every Citizen has the basic right to adequate health care - চিকিত্তসা সেবা পাওয়ার অধিকার
২। The State and the government are constitutionally obliged to ensure health care for its citizens - নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারের
৩। To ensure an effective health care system that responds to the need of a healthy nation, a health policy provides the vision and mission for development. - একটি লিখিত নীতি দ্বারা উল্লেখিত
৪। Pursuance of such policy will fulfill the demands of the people of the country, while the health service providers will be encouraged and inspired. People’s physical well-being and free thought process have proved to be a precondition for the growth and intellectual enrichment in today’s human society -- সেই লিখিত সনদ এর বাস্তবায়ন নাগরিকের চাওয়াকে মেটাবে, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহী করবে।
এর পাশাপাশি একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। মানুষের সুস্বাস্থ্য ও স্বাধীন চিন্তা চেতনা আধুনিক মানব সমাজের উন্নয়ন ও মানসিক বিকাশের আবশ্যিক পূর্ব শর্ত।

সাক্ষরিত চুক্তি সমূহঃ Bangladesh expressed agreement on the declarations:
১। Alma Ata, 1978
২। The World Summit for Children 1990
৩। International Conference on Population and Development, 1994
৪। Beijing Women’s Conference, 1995

Ministry of Health & Family Welfare seeks to create conditions whereby the people of Bangladesh have the opportunity to reach and maintain the highest attainable level of people health. It is a vision that recognizes health as a fundamental human right and therefore the need to promote health and reduce suffering in the spirit of social justice. --- এইটা আমাদের বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের "vision" আর এইটা হইলো "objective" ।

ভিশন অনুযায়ী , তিনটা বিষয় গুরুত্ব পূর্ণ। অর্জনযোগ্য সর্বোচ্চ স্তরের স্বাস্থ্য, মৌলিক মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যয় অর্জনের সাথে দেশের স্বাস্থ্য অধিকার-সেবা - সিস্টেমকে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে ।

মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে আরো দেওয়া আছে এই সব ভিশন, মিশন, অব্জেক্টিভ, গোল ইতাদি অর্জন করার রুপ রেখা। তার ভিতরে একটি গুরুত্ব পূর্ণ সনদ হইলো আলমা আটা ১৯৭৮ । এইটা রুচি কিংবা তীর আটা নয়, একটা চুক্তি যাতে বাংলাদেশ সরকার সাইন করে এই প্রতিজ্ঞা করেছে যে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য সেবা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। এই কারণেই প্রতিটা স্বাস্থ্য, মা, বাবা, নাতি-পুতি, বন্ধু দিবসে, নিরাপদ পানি, ভাত, পায়খানা দিবসে, এবং বিভিন্ন আমাশা, ডায়রিয়া, এইডস, ম্যালেরিয়া দিবসে ঘুরে ফিরে এই "সকলের জন্য স্বাস্থ্য" বাক্যটি বারংবার উচ্চারিত হয়।

এইবার আসুন দেখি, বাস্তবায়ন পর্যায়ে এসে এই সব ঘোষণা ও দিবসের কি হাল?
এইখানে ১৯৯৭-২০০৭ সন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যখাতের খরচের হিসাব আছে ।

এইখানে আছে হাসপাতাল গুলোর রিপোর্ট কার্ড ২০০৭

কারা সেবা প্রাপ্ত হয়, সেই বেনিফিশিয়ারী রিপোর্টের পিডি এফ টাই নামানো গেলো না। মুমূর্ষু পি ডি এফ নিজেই।

এত গেলো সরকারী হিসেব কিতাবে। এখন কাজীর গরু মাঠে নামলে কি দেখা যায়?

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, মেডিকেল স্টুডেন্টদের এক নম্বর পছন্দের কলেজ ঢাকা, দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ব্যবস্থা (টারশিয়ারী) একাডেমিক মেডিকেল হসপিটাল ঢাকার রাতের অবস্থা

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে ব্লগার রেজোয়ানসহ অনেকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

বিশেষজ্ঞসহ ডাক্তাররা স্বাস্থ্যসেবার সরকারী খাত ছেড়ে পালাচ্ছেন ।

রাজধানী ছেড়ে একটু বাইরে গেলেই স্বাস্থ্যসেবা কেতাবী গরু হয়ে যায়। দূর ভোলার চিত্র কি হতে পারে? সমকালের রিপোর্ট ঝাড়ূদার যখন ডাক্তার!

ভুক্তভোগী রোগী ও দর্শক হিসেবে আমাদের কু অভিজ্ঞতার শেষ নাই। ডাক্তাররা নিজেরা কি বলছেন?

বেসরকারি ব্যয়বহুল হাসপাতালে সুযোগ-সুবিধা বেশি, এটি সত্য। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে কোনো সরকারই চিকিৎসকদের মেধার গুরুত্ব দেয়নি। বদলি, পদোন্নতি ও পদায়নে রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য হয়ে গেছে। তাই হতাশ ও বাধ্য হয়ে তাঁরা চাকরি ছেড়েছেন।

ঢাকার বাইরে বেশির ভাগ জায়গায় এখনো সপরিবারে থাকার মতো অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। মূলত সে কারণেই তিনি চাকরি ছেড়েছেন।

তাঁর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ যে বিষয়ের ওপর, তা প্রয়োগের জন্য ঢাকাই একমাত্র জায়গা

কিন্তু তাঁকে বদলি করা হয় টাঙ্গাইলের একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে রোগীদের প্যারাসিটামল ও হিস্টাসিন দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ ছিল না।

চিকিৎসকদের বদলির ভয়ে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রভাব পড়ছে দরিদ্র সাধারণ মানুষের ওপর।

এক সময় বিএনপি-সমর্থিত ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) একজন ব্যক্তি সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখন স্বাচিপের অসংখ্য দরবেশ, মোয়াজ্জিন গজিয়েছে। তাদের তোষামোদ করে চলা কোনো সুস্থ, শিক্ষিত, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চিকিৎসকের পক্ষে সম্ভব নয়। তিনিও চাকরি ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।


এর পাশাপাশি বেতন বৈষম্য নিয়ে একজন পাঠকের মন্তব্য ঃ

একজন অধ্যাপক চিকিৎসকের সর্বচ্চ বেতন ৪০,০০০ টাকা। একজন সদ্য প্রকৌশলী তো এই বেতনে চাকরী করতে চাইবেন না।

সূত্রঃ প্রথম আলো

এবার আলোচনাঃ

উপরের উদাহরণ গুলো থেকে দেখা যাচ্ছে , স্বাস্থ্য সেবা খাতের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান, সেবা প্রদানকারী এবং রোগীরা কেউই ভালো নেই। সংবিধান এবং স্বাস্থ্যনীতি আমাদের যে "ভালো থাকার" অঙ্গীকার করে, বাস্তবে তার দেখা পাওয়া মুশকিল। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ, প্রধান্মন্ত্রীর কানের চিকিৎসা করার সামর্থ বাংলাদেশে নাই। মন্ত্রী , সাংসদসহ সকল ধনী ব্যক্তিরা পারলে বিদেশে চিকিসা নেয়। গরীব লোকেরা সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, আমেরিকা না পারুন, অন্তত পাশের দেশ ভারতের কোলকাতা, মাদ্রাজ -এ গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার চেষ্টা করে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই রকম হযবরল অবস্থা ও ভেঙে পড়ার কারণ কি?

অনেকেই বলেন আমাদের জনবল, যন্ত্রপাতি ও অর্থের অভাব। যথাযত পলিসির অভাব। মানুষের স্বভাব চরিত্র (মূলত ডাক্তার) খারাপ, সেবা দেওয়ার সঠিক মনভাব নাই। প্রচুর প্রস্তাবে মানুষ ভেটো দিয়ে বসে থাকে। যেমন - হাসপাতালের টিকেটের দাম বাড়ানো যাবে না অথচ এমনিতেও আগত রোগীদের পকেট থেকে শত শত টাকা খরচ হয়ে যায়। স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের জন্য অর্থ খরচের বেলায় দাতা দেশের কাছে হাত পেতে বসে থাকতে হয় অথচ সকল প্রকার চিকিৎসা "ফ্রি" । সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বলতে কতগুলো ইটকাঠের বিল্ডিং করে রাখা হয়েছে কিন্তু সেই অবকাঠামো চালাতে হলে পারিপার্শ্বিক যেই সুযোগ সুবিধা (পলিসি, জনবল, বিদ্যুৎ, পানি থেকে শুরু করে জীবন যাপনের মৌলিক চাহিদা পূরণের উন্নত ব্যবস্থা) দরকার , সেসবের সমন্বয় করতে বলতে " ইহা আমাদের দায়িত্ব নহে" ধরনের মনভাব।


পোস্ট বেশ বড় হয়ে গেলো। পরের পর্বে এই সব কারণ , সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে লিখবো।

দেশের সব খেটে খাওয়া মানুষেরাই কি দালাল?

আজকে প্রথম আলো পত্রিকার একটা খবরে চোখ আটকে গেলো । বাংলাদেশের শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে প্রায়ই খবর আসে। দেশের ভিতরে যার মাধ্যমে টাকা দিয়ে ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে পৌঁছায়, রিক্রুটিং এজেন্সি, বাংলাদেশের দূতাবাস এবং সংশ্লিষ্ট দেশের কোম্পানিসহ প্রশাসন - কারো কাছেই এই গরীব মানুষ গুলো কোন সাহায্য পায় না। বরং পদে পদে হয়রানির শেষ নাই। বছর শেষে গাল ভরা " রেমিটেন্স" স্ট্যাটিস্টিক্স ছাড়া এই রক্ত মাংসের মানুষ গুলো বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের "আধুনিক দাস" , শোষিত , অবহেলিত।

উল্লেখিত খবরেও এর ব্যাতিক্রমী কোন নতুন তথ্য নেই। তবে তথ্য আছে কিছু "দালালের সম্পর্কে" । এরা হোল মধ্যস্বত্তভোগী । সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে -ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সির হয়ে এরা - বিদেশে যেতে ইচ্ছুক - শ্রমিক সংগ্রহ করে।

উল্লেখিত খবরে পাওয়া কিছু তথ্যঃ

১। ঢাকার বাইরে কারও অফিস নেই: বায়রার তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন এক হাজার রিক্রুটিং এজেন্সি আছে। কিন্তু এদের সবার অফিসই ঢাকায়। সরকারিভাবে ঢাকার বাইরে তাদের অফিস নেওয়ার জন্য বলা হলেও কেউ-ই ঢাকার বাইরে অফিস নেয়নি।

এর কারণ সুনির্দিষ্ট ভাবে জানা যায়নি। একজন মন্তব্যকারী আকরাম তানিম বলেছেন,
সরকারিভাবে ঢাকার বাইরে তাদের অফিস নেওয়ার জন্য বলা হলেও কেউ-ই ঢাকার বাইরে অফিস নেয়নি। " কিভাবে নেবে ? আমার জানা অভিগ্ণতা থেকে বলছি, এলাকার মাস্তানরা চাঁদা চাইবে, অফিস ভাংচুর করবে, প্রশাসনও ঝামেলা করবে। কি দরকার ?

তারমানে, ঢাকার বাইরে ব্যবসা করার মত যথেষ্ট নিরাপত্তা সরকার দিতে পারছে না। আবার কারণটা এইটাও হতে পারে- ঢাকায় বসেই যদি ব্যবসা করা যায়, ঢাকার বাইরে তারা যাবে কেন? অর্থাৎ এইখানেও সরকারের নিয়ন্ত্রনের অভাব। মনিটরিং এর অভাব।

২। দালালদের সহায়তায় বিদেশে যেতে পারলেও সরকার-নির্ধারিত খরচের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়। মালয়েশিয়া যেতে সরকারি খরচ ৮৪ হাজার টাকা, অথচ দিতে হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।

এইখানেও সরকারের মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রনের অভাব।

৩। অথচ গ্রামগঞ্জ ও শহরে ছড়িয়ে আছে ৫০ হাজার থেকে লাখ খানেক দালাল। ----লক্ষ্য করুণ, এই এজেন্টদের সঠিক সংখ্যা কারো জানা নেই। এইখানেও সরকারের তথ্য সংগ্রহ , সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রনের অভাব।


৪। ‘বিদেশগামী এবং রিক্রুটিং এজেন্সি দুই পক্ষই এখন দালালদের ওপর নির্ভরশীল। একজন কর্মী বিদেশে যেতে চাইলে কোথায় যাবেন, কী করবেন—সে ব্যাপারে যথেষ্ট সরকারি তথ্য নেই। এই সুযোগ নেয় দালালেরা। আবার রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর তৃণমূলে কোনো কার্যক্রম নেই। তাদের সবার অফিস ঢাকায়। ফলে তাদেরও বিদেশে পাঠানোর জন্য লোক আনতে এই দালালদের ওপর নির্ভর করতে হয়। এভাবেই দালালপ্রথা টিকে আছে বছরের পর বছর। --- এই পারস্পরিক নির্ভরশীলতাই কি দুর্নীতির কারণ নাকি এই চক্র এর উপর কোন নিয়ন্ত্রন না থাকাটা আসল সমস্যা?

৫। প্রমাণ ছাড়াই অর্থ লেনদেনের ফলে প্রতারণা, নিঃস্ব হয়ে যাওয়া, বিদেশ যাওয়ার খরচ বেড়েই চলেছে।

৬। বিদেশে আদম রপ্তানির সাথে জড়িতরা সকলেই রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রীর আত্মীয়। অনেক নেতা নিজেরাই ব্যবসার সাথে জড়িত। ফলে শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা হয় - এমন কোন আইন হয় না। হলেও তার প্রয়োগ হয় না।

গরীব মানুষ গুলোই কি সমস্যা?

কথায় কথায় আমরা দালাল আখ্যা দিয়ে যে কোন প্রক্রিয়াকে দালালমুক্ত করার কথা হুট করে বলে ফেলি। অথচ সারা খবরে এমন কোন তথ্য নেই যে এই দালালেরা কোটিপতি। বরং আদম ব্যবসায়ী , লাইসেন্সপ্রাপ্ত, নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সী গুলোর অনেক মালিকই বরং চরম ধনী।

একবারও কি ভেবে দেখছি যে এই লোক গুলোর অন্য কর্ম সংস্থান নেই? এই দালালির ইনকাম বন্ধ করে দেওয়ার পরে এরা কি করবে? চুরি? ডাকাতি? হত্যা? আমাদেরকে আরেকটু গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করে তারপর পরামর্শ দেওয়া উচিত। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, প্রতারণা যেমন বন্ধ করতে হবে, সেই রকম ভাবে - শ্রমিকের স্বার্থ, রিক্রুটিং এজেন্সির স্বার্থ, এই এক লাখ মানুষের উপার্জনের স্বার্থও দেখতে হবে। দেশে কোন কর্ম সংস্থান নেই। হুট করে দালাল বলে গালি দিচ্ছি, আমরা এই মানুষ গুলা বা তাদের পরিবারকে খাওয়ানো পরানোর দায় দায়িত্ব নেব? কিন্তু সরকারের তো এই দায়িত্ব ভুলে গেলে চলে না, তাই না?

কারো উপার্জনের পথ বন্ধ করে না দিয়ে বরং প্রতারণা আর নিয়ন্ত্রনহীনতাকে বরং দূর করা উচিত। সরকারের কাজ মানুষের রোজগারের পথ বন্ধ করে দেওয়া নয়, রোজগারের পথ নিয়ন্ত্রন করা - যাতে একজনের রোজগার অন্য কারো ক্ষতি না করে।

কারো রুটি রুজির পথ বন্ধ না করে বরং নিম্ন লিখিত ব্যবস্থা গুলো নিন। সরকার বা রিক্রুটিং এজেন্সি - কেউই যখন গ্রামে গঞ্জে এমপ্লয়মেন্ট অফিস খুলছেন না (আপাতত) পুরো প্রক্রিয়াটাকে নিয়ন্ত্রন করুন। যারা অলরেডি এই ফিল্ডে কাজ করছে, তাদেরকে সঠিক ভাবে আইন ও লাইসেন্সের আওতায় আনুন।

১। যারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে লোক সংগ্রহ করে, তাদেরকে লাইসেন্স দিন, তাদের নাম-ধাম-ঠিকানা- সম্পূর্ণ পরিচয় লিপিবদ্ধ করে কাগজে , পেপারে, অনলাইন ওয়েব সাইটে ( সরকারী ওয়েবসাইট ও অনলাইন পত্রিকা) পাবলিশ করে দিন।

ক) কারা এই ধরনের কাজ করতে পারবেন তার একটা বর্ননা ও লাইসেন্স পাওয়া পদ্ধতি ঠিক করে দিন।
খ) শ্রমিকদের সন্তুষ্টির উপরে নম্বর/রেটিং দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। যার ইউজার রেটিং যত ভালো হবে, তার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করুন। এই রেটিং নির্ভর করবে, ঐ জবে যাওয়ার পরে শ্রমিক ভাই বোনেরা কতটা ভালো আছেন তার উপরে ( কাজ, বেতন, সুবিধা শর্তমত পেয়েছে কিনা)
পুরস্কার দেওয়া উচিত কারণ এই মানুষ গুলো কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করছে। সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে এতে দেশের আয় হয়।

২। দালাল ও শ্রমিক, উভয় পক্ষের জন্য ব্যাংক একাউন্ট খুলে দিন । সমস্ত টাকা পয়সার লেন দেন ব্যাংকের মাধ্যমে করার ব্যবস্থা করুন। ব্যাংক ব্যবহারের জন্য ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করুন। বিদেশ থেকে কি ভাবে টাকা পাঠাবেন, কি ভাবে দেশে যোগাযোগ করবেন ইত্যাদির ট্রেনিং দিন। এই ট্রেনিং এর ব্যবস্থা রিক্রুটিং এজেন্সিই করতে পারে। সরকার শুধু আইন তৈরী ও মনিটরিং করবে।

৩। প্রতিটা এজেন্ট কাকে কাকে, কোন রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে নিয়ে যাচ্ছে - তার রেকর্ড রাখার ( কাগজ ও অনলাইনে) ব্যবস্থা করুন।

৪। প্রতিটা শ্রমিক যখন বিদেশে যায় - তখন সেই শ্রমিকের পরিচয়ের পূর্ণ বিবরণ, যেমন --
ক) নাম
খ) ঠিকানা
গ) ছবি
ঘ) ব্যাংক একাউন্ট এর তথ্য
ঞ) তার পরিবারের তথ্য-পরিচয়, যোগাযোগের ঠিকানা, টেলিফোন, ছবি
চ) যার মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে গেছে তার তথ্য- পরিচয়, যোগাযোগের ঠিকানা, টেলিফোন, ছবি, লাইসেন্স নম্বর
ছ) রিক্রুটিং এজেন্সির তথ্য-নাম, অফিসের ঠিকানা, টেলিফোন, লাইসেন্স নম্বর
জ) যেই কোম্পানিতে কাজ করতে যাচ্ছে সেই কোম্পানির পরিচয়- নাম, অফিসের ঠিকানা, টেলিফোন, লাইসেন্স নম্বর
ঝ) যে কাজ করতে যাচ্ছে তার বর্ননা-পদ, দায়িত্বের বিবরণ, বেতন, শর্তসমূহ

--- উপরের সমস্ত তথ্যে এক কপি বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়সমূহ, এক কপি রিক্রুটিং এজেন্সি ও এক কপি সেই দেশের দূতাবাসে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

এই তথ্যগুলো যাচাই ও সম্পন্নের জন্য এয়ারপোর্টে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অফিস, কম্পিউটারের শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মী রাখার ব্যবস্থা করুন। -- দেশের অন্য কোথাও যদি কেউ মিস হয়েও যায় - অন্তত এয়ারপোর্টে , প্লেনে উঠার আগে তাকে ধরার এবং সাহায্য করার ব্যবস্থা করুন।

৫। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে ভিসা দেওয়া হবে না।

৬। শ্রমিকদের ডিজিটাল পরিচয় পত্র দিন যেখানে ৪ নম্বরের সমস্ত তথ্য ঐ ডিজিটাল কার্ডের চিপে সংরক্ষিত থাকবে। যে কোন প্রশাসন কার্ড রিডারের মাধ্যমে এই তথ্য যে কোন সময় এক্সেস করতে পারবেন। এয়ারপোর্টে এই কার্ড দেখিয়ে , তথ্য যাচাই করে প্লেনে উঠার অনুমতি দেওয়া হবে, নইলে নয়।

আজকের টেকনলজির যুগে নিয়ম করে এই সামান্য কাজ টুকু করা কোন ব্যাপারই না।