Friday, March 25, 2011

লাক্স এর চামড়া ব্যবসা , দর্শকের দেহ কামনা আর ব্লগে ধর্ষকামী ভূতের আছর - ১ম পর্ব

শিরোণাম পড়েই হয়ত বুঝে নিয়েছেন সাম্প্রতিক আলোচিত , নন্দিত (সামান্যই) এবং নিন্দিত লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার অনুষ্ঠান্টি নিয়ে আরো একটি লেবু কচলানো হতে যাচ্ছে । নাহ, এখনই বিরক্ত হয়ে ফিরে যাবেন না । মেয়েদের শরীর প্রদর্শন , বাঙ্গালীত্ব , ধর্ম তত্ত্ব - এই সব কচলানো লেবু নিয়ে তিতা করার কোন ইচ্ছা আমার নাই । আমি বরং আমার ফিল্ডের কাছাকাছি মেডিকেল ও বৈজ্ঞানিক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই । আর যেই বিষয়টায় আমার চিরকালীন এলার্জি আছে , সেই মেগা কর্পোরেট দুনিয়া কি ভাবে আমাদের মন, মেধা , মনন ও স্বাভাবিক বুদ্ধি বিবেচনা খেয়ে ফেলছে , তাই নিয়ে দু'চারটা কথা বলতে চাই ।

নিঃসন্দেহে সৌন্দর্য চর্চা একটা ব্যবসা । ট্রিলিওন ট্রিলিওন ডলারের ব্যবসা । এই ব্যবসার মূলে আছে মূলত কর্পোরেট পুঁজিবাদ । পুঁজিবাদ কি বলে? পুঁজিবাদ বলে প্রোডাকশন বা উৎপাদনের সব রকমের উপাদান , মালামাল বা সার্ভিস, বিক্রি ও লাভ - সব কিছুর মালিক হবে ব্যক্তি । উৎপাদন প্রক্রিয়ার লেন দেন হবে মার্কেটে এবং বেতন ও দাম নির্ধারন করবে মার্কেট । কর্পোরেট পুঁজিবাদ বলা হয় সাধারণত ঐ ধরনের ব্যবস্থাকে যেইখানে , আইন অনুযায়ী কর্পোরেশন বা সংস্থাকে হতে হবে প্রফিট ওরিয়েন্টেড । অর্থাৎ , একটা হাঁচি কাশি দিতে গেলেও সেইখানে আপনার লাভ থাকতে হবে । অর্থনীতির ড্রাইভার সমূহ একটি এবং একটি মাত্র লক্ষ্য নিয়ে আগাবে তা হলো " প্রফিট বা লাভ" ।

কমিউনিজম বা সোসালিজম এর সাথে এর মূল পার্থক্যটা হলো , কমুইনিটি বা সোসাইটির সার্বিক লাভালাভ এইখানে বিবেচ্য থাকে না । বিবেচ্য থাকে কর্পোরেট এর লাভ। মালিক যেহেতু ব্যক্তি তাই ব্যক্তিগত লাভ। তাতে সমস্যাটা কি ?

সমস্যাটা হলো , আপনাকে যখন পুরো কমিউনিটি বা সোসাইটির লাভ মাথায় রেখে লেন দেন করতে হবে , তখন আপনি এই কমিউনিটি বা সোসাইটির কোন সদস্যের কোন ক্ষতি হয় , এমন কোন লেন দেন বা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না । সুতরাং, আপনাকে এথিকাল ট্রেডিং করতে হবে । এখন একটা রাষ্ট্র যদি গণতান্ত্রিক হয় , তাহলে সে তার জনগণের কাছে একাউন্টেবল এবং জনগণের জন্য অনিষ্ট করে এমন কোন সিদ্ধান্ত , ব্যবসা করতে পারবে না । দুনিয়ার কর্পোরেট গুলা যতদিন রাষ্ট্রের অধীনে ছিলো , তারাও এই নৈতিকতা মেনে চলতে বাধ্য ছিলো । কিন্তু এখন মাল্টীন্যাশনাল কোম্পানি গুলা ধনে, সম্পদে , পলিটিকাল পাওয়ারে যে কোন একটি রাষ্ট্রের অধীনে নয় । আগে রাষ্ট্র কর্পোরেটকে নিয়ন্ত্রন করত। এখন কর্পোরেটই উলটা রাষ্ট্রকে চালায় । সুতরাং , ভোটের মাধ্যমে কে নির্বাচিত হবে , সেইটাও আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। মূলত পৃথিবীর সমস্ত ধন সম্পদ, পলিটিকাল ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রন চলে গেছে জনগণ তথা রাষ্ট্রের বাইরে , কতগুলা মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেটের হাতে । ন্যায়, নীতি , উচিত , অনুচিত বলে তাই আর দুনিয়াতে কিছু নাই । সবই প্রফিট ওরিয়েন্টেড । দুনিয়া জুড়ে যেই তথা কথিত এন জি ও , ডেভেলপমেন্ট, ডোনার , হেলথ , ডেভেলপমেন্ট এইড ইত্যাদি ইত্যাদি গাল ভরা নাম আর কার্যক্রম চলে , এইটাও আসলে কর্পোরেট বাণিজ্যেরই আরেকটা রুপ । নামেই নন প্রফিট , আসলে বিজনেস।

বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে ? কল্পনা করুন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীকে । এদের কত্তগুলা হাত আছে ?

ক। নন আর্মস , লিগাল ব্যবসার হাত
১। পলিটিকাল দল বা রাজনৈতিক ব্যবসার হাত
২। সম্পূর্ণ ফর প্রফিট ব্যবসার হাত - যেমন কম্পিউটার, ব্যাংক , প্রকাশনা
৩। প্রফিট - নন প্রফিট মিক্স সেবা খাত হিসেবে ধরা হয় এমন ব্যবসা - হাস্পাতাল, ইউনিভার্সিটি
৪। সম্পূর্ণ নন প্রফিট ( আসলে প্রফিট) ব্যবসা - এন জি ও
খ। আর্মড ও ইলিগাল ব্যবসার হাত
১। অস্ত্র চোরাচালান ও বিক্রি
২। মাদক এবং অন্যান্য অবৈধ পণ্যের বেচাবিক্রি
৩। আদম পাচার ইত্যাদি

এখন একটু চিন্তা করে দেখেন , এই সব কয়টা হাত মিলিয়ে জামায়াত কিন্তু বাংলাদেশের একেবারে গরীবের চেয়ে গরীব এবং উপরের ধনীর চেয়ে ধনী সব কয়টা স্তরেই ব্যবসা করছে । ক্ষুদ্র ঋণ থেকে শুরু করে ভার্সিটি, ব্যাংকিং, হাসপাতাল , তার উপরে ধর্ম ও পলিটিক্স । তার মানে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ হইলাম আমরা জামায়াতের ক্রেতা গোষ্ঠী এবং আমাদের শ্রম ও শ্রমের পয়সা চলে যাচ্ছে তাদের পকেটে । তাই রাজনৈতিক গ্রহনযোগ্যতা না থাকলেও জামায়াত গেড়ে বসেছে আমাদের গলার কাঁটা হয়ে , এবং এইটা ঘটেছে গত ৩০ বছরে । ঠিক এই ভাবেই কল্পনা করুন, বিশ্বের কয়েকটা মাত্র কোম্পানি এক এক করে কিনে নিচ্ছে অর্থনীতির সব কয়টা হাত । কি ঘটবে?

সারা বিশ্বই তখন পরিণত হবে একটা বাজারে যেইখানে সকলেই ক্রেতা বা কঞ্জিউমার । যে যত বড় বা বেশি কনজিউমার , তার দাম তত বেশি। আর সকল কার্যক্রমের মূলে রয়েছে শুধুই লাভ আর লাভ। লাভ নাই তো সব বন্ধ। এর ভিতরে লাক্সের চামড়া আসল কই থেকে , এইটাই ভাবছেন তো ?

পড়ুন২য় পর্ব

প্রথম পর্ব থেকে দুইটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা ।
১। কর্পোরেট পুঁজিবাদ চালিত হয় একমাত্র লাভ বা প্রফিটের দ্বারা , এইখানে নিয়ম নীতি , উচিত -অনুচিত , এথিকাল - নন এথিকালের বালাই নাই

২। এই মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেট গুলো অর্থনীতির লিগাল, ইলিগাল, সোসাল - সব কয়টা হাত কিনে নিয়ে নিয়ন্ত্রন করছে ।

অর্থাৎ , যেই কোম্পানি মানুষের পয়সা চুষে খেয়ে ফুলে ফেপে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে , সেই আবার কর্পোরেট সোসাল রেস্পন্সিবিলিটির নামে সোসাল ওয়ার্ক করে বেড়াচ্ছে ।

মানে , ধরুন আপনার কাছে একটা গরু আছে । ঐটা দিয়ে আপনি দুধ উৎপাদন করতেন , নিজে খাইতেন , পরিবারকে খাওয়াইতেন আর বাড়তিটুকু বিক্রি করে সংসার চালাইতেন। এখন আমি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আপনার কাছ থেকে অনেক টাকায় গরুটা কিনে নিলাম । এবং দুধ আপনার কাছে বিক্রি করা শুরু করলাম , আপনিও কিনতে বাধ্য কারন আপনার নিজের আর গরু নাই। আপনি টাকার লোভে গরু বিক্রি করে দিলেও কিছু দিন পরেই ভুলটা বুঝলেন, টাকা তো চিরদিন থাকে না, খরচ হয়ে যাচ্ছে , কিন্তু তখন আর কিছু করার নাই । আপনার পয়সা ফুরায় গেলে আমার কাছেই হাত পাতলেন । আমি আপনাকে আমার মালিকানাধীন গরু যেইটা আগে আপনার ছিলো সেইটা দেখা শোনার দায়িত্ব দিলাম এমন বেতনে যেইটা দিয়ে বাচ্চা কাচ্চা দূরে থাক , আপনার নিজেরই এক গ্লাস দুধ জুটে না । এইবার আমি আমার কর্পোরেট সোসাল রেস্পন্সিবিলিটির নামে আপনারে দুধ কিনার ঋণ দিলাম। সেইটা দিয়ে আপনি নিজের বাচ্চার জন্য দুধ কেনা শুরু করলেন। আপনাকে বিক্রির কমিশন দেওয়ার লোভ দেখালাম ও ক্রেতা বাড়াতে বললাম। অচিরেই আপনি বুঝতে পারলেন , আয় না বাড়ালে ঋণ শোধ করা যাচ্ছে না । বাচ্চার লেখা পড়া বন্ধ হয়ে গেছে । আর আশে পাশের বাড়িতে যতদিন দুধ আলা গাভী থাকবে , আপনার বিক্রি বাড়বে না । আমাকে আর কিছু করতে হইলো না । বাঁচার তাগিদে আপনি আশে পাশে লোকজনকে গাভী বিক্রির জন্য মূলামূলি শুরু করলেন। ইতমধ্যে আমার লাভের টাকা দিয়ে আমি একটি স্কুল খুললাম । আমার কাছ থেকে স্বল্পসুদে ঋণ নিয়ে সেইখানে বাচ্চা কাচ্চারে পড়াতে শুরু করলেন। সেইখানে আমি তাদের আমার সুবিধা মত উচিত, অনুচিত, ভ্যালু শিক্ষা দিলাম । কিন্তু দিনে দিনে খরচ বেড়েই চলেছে , শেষে ভিটা মাটি বন্ধক পড়লো আমার কাছে । স্বভাবতই , আমি মহান । তাই আপনার বউকে নিয়ে এলাম , ট্রেনিং দিলাম ও একটা মিষ্টির কারখানা বানিয়ে তাতে কাজে লাগালাম। আগে ২২ টাকা লিটারের দুধ আমি নিতাম ২০ টাকা । আপনার বেতন ছিল ২ টাকা । মিষ্টির কারখানায় দুধ বেচে এখন পান ৪ টাকা (কমিশন সহ) । বউ এর বেতন ২ টাকা ( যেহেতু মেয়ে) । মিষ্টির কেজি ১৪০ টাকার ১৩৬ টাকা আমার । ভুলে যাবেন না , আপনার ৬ টাকা থেকে আমাকে কিস্তি দিতে হয় কিন্তু । ধরে নেই , কিস্তি ২ টাকা । সেখান থেকে আমি রাখি ১ টাকা । বাকি ১ টাকা দেই আপনার ছেলেকে যে মাসে মাসে কিস্তির টাকা আমাকে এনে দেওয়ার কাজ নিয়েছে আমি যেই নতুন ব্যাংকটা খুলেছি সেইখানে। ইতমধ্যে আপনার মেয়ে স্কুল পাশ দিয়েছে । আমি তাকে ট্রেনিং দিয়ে পোল্ট্রির কাজে লাগিয়েছি যেইটা আপনার আগের ভিটায়/ বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত । শিক্ষিত বলে তার বেতন আড়াই টাকা । চাইলে অবশ্য সে ঋণ নিয়ে আমার পোল্ট্রির মুরগীগুলাকে বেচার ব্যবসা করতেই পারে। এই রকম ভয়ানক পরিশ্রমের ফলে অসুখ বিসুখ হইতেই পারে । তাই আমি একটা হাসপাতাল দিয়েছি । সংস্থার কর্মী হিসেবে ঐখানে আপনি ৩০% ডিস্কাউন্টে চিকিৎসা পান। এর ভিতরে এলাকায় ইলেক্ট্রিসিটি নিয়ে এসেছি। আমার নতুন গার্মেন্টস আর বিড়ি সিগারেটের কারখানাইয় আপনার আত্মীয় স্বজন, পাড়া পড়শীরা কাজ করে , যাদের গরু গুলোকে আপনিই তাদের প্রলব্ধ করেছিলেন আমার কাছে বেঁচে দিতে । এরাই আবার আমার মিষ্টি, কাপড় , বিড়ি, শিক্ষা , চিকিৎসা ইত্যাদির ক্রেতাও ।

এই গল্পটা থেকে ৩টা জিনিস শিখবেন ।

১। আপনার বেতন যতই বাড়ুক, আপনি কোনদিনই আমার মতন বড়লোক হইতে পারবেন না , আর ১৪ জেনারেশন ধরে চেষ্টা করেও পুরাপুরি ঋণ মুক্ত হইতে পারবেন না । শুভংকরের ফাঁকিটা ঐখানেই ।

২। আপনার বেতন আমি তখনই বাড়াব যখন আমার উৎপাদিত পণ্যের ক্রেতা বাড়ানোর জন্য একটা নির্দিষ্ট ক্রয় ক্ষমতা সম্পন্ন কনজিউমার বাজার লাগবে ।

৩। আগে আপনি ও আপনার আশে পাশের সবাই গরু নামক একটি উৎপাদক যন্ত্রের মালিক ছিলো । আজকে আমি হইলাম মালিক আর আপনারা সবাই আমার ইচ্ছার অধীন , উচ্চ বেতন সম্পন্ন , মাল্টিন্যাশনালে কর্মরত গর্বিত কর্মী । পাশাপাশি আমার ক্রেতা।আপনে যতই উপরে উঠেন, আমি মালিক, আপনি আমার চাকুরে/চাকর


এর নাম কর্পোরেট বাণিজ্য । আমি আপনাকে প্রতি পদে পদে ঠকাচ্ছি , ঠকিয়ে নিজে লাভ করছি । প্রথমে ঠকাচ্ছি বেশি দামে গরু বিক্রির লোভ দেখিয়ে ( অনেক বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন) , তারপর বেতনে , তারপর ঋণে , তারপর সুদে , তারপর ডিস্কাউন্ট দেওয়ার নামে উৎপাদিত পণ্যের বান্ধা কাস্টমার বানিয়ে , এবং পরিশেষে আপনাকে চিরদিনের জন্য ঋণে বেধে ফেলে ।

আপনার গরু , আপনার গরুর দুধ এখন একবার দুয়ানোর জন্য শ্রম দিবেন, তারপর কেনার জন্য শ্রম দেবেন , তারপর বেঁচার জন্য শ্রম দিবেন । সুতরাং, কইয়ের তেলে কইই শুধু ভাঁজছি না আমি , একটা মাত্র উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাঝে আমি আপনাকে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ধাপে শোষন ও করছি ।

শুরুতে এই কর্পোরেট নামক শোষক যন্ত্রটি ছোটই থাকে । আস্তে আস্তে এরা গ্রাস করে নেয় খাদ্য , বস্ত্র, বাসস্থান , শিক্ষা , চিকিৎসা, বিনোদনের মত মৌল চাহিদা মেটানোর সব কয়টা উৎপাদনের উপকরণ ।

এখন এই গ্রাস তারা কেমনে সম্ভব করে? কিছু দিন আগেও প্রধান তরিকা ছিলো যুদ্ধের মাধ্যমে দখল ও সরাসরি শোষণ। যেমন, বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারত শাসন। কিন্তু এতে দেখা গেলো দুই দিন পর পর, খালি স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করে দেয় ফাউল পোলাপাইন । এইবার নতুন তরিকা । সেই ম্যাট্রিক্স ছবিটার মতন সবাইরে ঘুম পাড়ায় রাখো । তুমি মনে করবা তুমি স্বাধীন , বাস্তবে স্বাধীন না । ঠিক এই কাজটাই এখনকার মাল্টিন্যাশনাল বিজনেস ওয়ার্ল্ড করে থাকে যার নাম মার্কেটিং ( আসলে ব্রেইন ওয়াশিং) । তা মার্কেটিং কাকে বলে ?

মার্কেটিং হলো সেই প্রক্রিয়া যা আপনাকে কিনতে বাধ্য করবে এমন একটা বস্তু যা আপনার কোন কালেই দরকার ছিলো না এবং অবশ্যই উৎপাদনের দশগুণ দামে ।

এখন এই মার্কেটিং এর সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হইলো মিডিয়া । ২৪ ঘন্টা যেই মিডিয়া আমাদেরকে কিছু ভ্যালু বা মূল্যবোধ শিক্ষা দেয় । আপনারা হয়ত ভাবতে পারেন আপনার উপরে মিডিয়ার কোন প্রভাব নেই । কিন্তু মাথা ঠান্ডা করে খুব সূক্ষ ভাবে চিন্তা করলেই দেখবেন , আজকের মিডিয়া আমাদেরকে কি দেয়? তথ্য ? বিনোদন ? নাকি শিক্ষা ?

কোনটাই না ।

মিডিয়া আমাদেরকে দেয় অর্থ বা মিনিং । প্রতিটা মানুষেরই মূল তিনটা প্রশ্ন থাকে , আমি কে , আমি কি এবং আমি কেন ? আমরা বেশির ভাগই হন্যে হয়ে এই প্রশ্ন গুলার উত্তর খুঁজে বেড়াই আর মাল্টি কর্পোরেশনের মার্কেটিং বিভাগ ঠিক এই উত্তর গুলাই তাদের সুবিধামত আমাদের সামনে হাজির করে । লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা এই কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডের বাণিজ্যের সাথে এই ভাবেই জড়িত । তারা প্রতিনিয়ত ঠিক করে দিচ্ছে , বাংলাদেশের একজন নারী কে? কি এবং কেন ?

লাক্সের বিজ্ঞাপন অনুযায়ী ,

কে? - আমি একজন সুপারস্টার
কি? - অন্যদের চেয়ে অনেক অনেক উপরে, অনেক বেটার
কেন? - কারন আমি বিশেষ একটি ইমেজ যাপন করি

লক্ষ্য করে দেখুন, একটা মানুষের আত্মপরিচয়, অস্তিত্বের মাপ কাঠি এবং জীবন যাপনের উদ্দেশ্য বিধেয় লাক্স ঠিক করে দিচ্ছে । লাক্স আমাদের ব্রেইন ওয়াশ করে এইটা প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে যে একটি নির্দিষ্ট চেহারা , নির্দিষ্ট কিছু স্কিল (নাচ, ক্যাট ওয়াক, শপিং , দেহের মাপ ধরে রাখা ইত্যাদি) আমাদেরকে মানুষ হিসেবে অন্যদের চেয়ে বেশি দামী করে তুলবে । এবং আমরা তখন সুপারস্টার হয়ে যাব । আর সুপার স্টার হলেই আমরা মানুষের ভালোবাসা , সম্মান, প্রতিষ্ঠা , সাফল্য পাব। সেই সাফল্যের সংজ্ঞা , সেই ভালোবাসা পাওয়ার তরিকা বাতলে দিতে পারে কেবল লাক্স আর চ্যানেল আই।

আমাদের , বাংলাদেশের ২০০০ বছরের সংস্কৃতি , প্রাচ্যের দর্শন , জীবন বোধ কি বলে? আমরা কি সাফল্যের এই সংজ্ঞায় অভ্যস্ত? আমাদের হাজার বছরের জীবন ভাবনা আমাদের এতদিন শিখিয়েছে ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। মাত্র দুটি কাপড়েই জীবন ভালো ভাবে চলে যেতে পারে। অল্প খাও কিন্তু খাঁটি খাও । কিছুদিন আগে পর্যন্তও বেশি শুকনা মেয়েদের বিয়ের সমস্যা হইত কারন আমরা একটু স্বাস্থ্যবতী বউ পছন্দ করতাম। সৌন্দর্য্যের মাপ ছিল সাদামাটা টানা টানা কাজল কালো চোখ আর খোঁপায় বেলী ফুলের মালা। টিভি মিডিয়ার বদৌলতে আমরাও শুকনা ভালোবাসতে শিখেছি । এখন ক্যাট্রিনা হইলো আদর্শ । আমাদের ভ্যালু বদলাচ্ছে । আমরা চাই আর না-ই চাই , আমাদের আদর্শ বদলে যাচ্ছে । শুধু বাংলাদেশ না, সারা বিশ্বের মানুষের মাথায় হাতুড়ি পিটা করে শিখানো হচ্ছে , ক্যাটরিনা মানে সাফল্য , ক্যাটরিনা মানে আদর্শ । যার সব টুকুই মিথ্যা আর ভয়াবহ রকমের প্রেজুডিসড, রেসিস্ট , পাশবিক।

এখন প্রশ্ন হইলো সারাজীবন মাল্টিন্যাশনালে চাকরী করে আমরা সবাই কি মাল্টিন্যাশনালের মালিক হইতে পারবো ?

সারা জীবন লাক্স , চ্যানেল আই এর সাথে গা ঘষাঘষি করলেই কি আমরা সবাই সুপারস্টার হইতে পারবো?

এখন এই -গ্ল্যামারই জীবনের সাফল্যের মাপকাঠি- ধরনের ব্রেইন ওয়াশে দর্শকের দেহকামনা , ধর্ষকামী ভূতের আছর আসলো কেন? এদের ভূমিকাই বা কি?

পড়ুন ৩য় পর্ব । 

১ম ও ২য় পর্ব থেকে যদি সার সংক্ষেপ কিছু নিতে চান তাহলে নিচের উপলব্ধি গুলো গুরুত্বপূর্ণ ।

১। আজকের বিশ্বে কর্পোরেট দুনিয়া আমরা কি খাব, কি পরবো, কি রকম বাড়িতে বাস করবো, কি ধরনের মূল্যবোধকে দাম দেব, কিসে বিনোদিত হবো , কাকে বিয়ে করবো , কোন অবস্থানকে জীবনের সাফল্য আর কোনটাকে জীবনের ব্যর্থতা হিসেবে মানবো - এই সব কিছুই ঠিক করে দেয় । ( কারন, একই মালিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , সেবা খাত আর পলিটিকাল দলকে চালায়)

২। এই কর্পোরেট দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হইলো মিডিয়া । বিশেষ করে মাল্টি মিডিয়া যা প্রতিনয়ত এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর সুবিধা ও লাভ অনুযায়ী আমাদের ভ্যালু সিস্টেম ( কিসের মূল্য কত টুকু) , আমাদের কালচার, আমাদের জীবন দর্শনকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছে । যা কিছু ব্যবসার সহায়ক তাকে উৎসাহ দিচ্ছে , যা কিছু ব্যবসার পথে প্রতিবন্ধক তাকে খারাপ বলে শিক্ষা দিচ্ছে ।

৩। এইটা করাটা খুব বেশি জরুরী কারন মানুষ যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করা শুরু করলেই এই দানব মাল্টিন্যাশনাল গুলা হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়বে । আরো একটা কারণে এই মিডিয়ার প্রচার প্রয়োজন কারণ , পুঁজিবাদ বেঁচে থাকার জন্য একটা কাজ প্রতিনিয়ত করে তা হলো প্রফিট । অর্থাৎ , প্রফিট বা লাভ ছাড়া পুঁজিবাদী মার্কেটিং সিস্টেম বাঁচতে পারে না । এইটা কোন সেলফ সাস্টেইনেবল সিস্টেম না বরং সেলফ ডিস্ট্রাক্টিভ সিস্টেম। ক্রমাগত বাড়তে না পারলে পুঁজিবাদী মার্কেট ভেঙে পড়ে ।

একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝাই । আগের পোস্টের গরুটাকে মনে আছে ? ওই যে , লাভ করার জন্য আপনি পাড়াপ্রতিবেশীকে গাভী বেচে দেওয়ার জন্য ছল, বল ও কৌশল ব্যবহার করলেন? এখন এই পুরা উৎপাদন প্রক্রিয়াটিতে কর্পোরেট পুঁজিবাদ লাভ করে দুই ভাবে । এক হলো , শোষন ( শ্রম শোষণ) , আর ২য় হল উৎপাদনের বেশি দামে বিক্রি ।

কর্পোরেট বাণিজ্য-তে আপনার গরু (ছিলো), আপনার গরুর দুধ এখন একবার দুয়ানোর জন্য ( আমি কিনে নেওয়ার পর) শ্রম দিবেন, তারপর কেনার জন্য শ্রম দেবেন , তারপর বেঁচার জন্য শ্রম দিবেন । সুতরাং, কইয়ের তেলে কই-ই শুধু ভাঁজছি না আমি , একটা মাত্র উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাঝে আমি আপনাকে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ধাপে শোষনও করছি ।

২য় পদ্ধতিতে লাভ করতে হলে চাই বিক্রি । বিক্রি করতে হলে চাই ডিমান্ড । ডিমান্ড ক্রিয়েট করতে হলে চাই নতুন নতুন বাজার বা কঞ্জিউমার / ক্রেতা। মানে, বাজারে সকল ক্রেতার কাছেই যদি দুধ থাকে তাহলে আমার দুধ আর বিক্রি হবে না । সুতরাং হয় আমাকে,

১। সকলের দুধ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে (স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ডিমান্ড তৈরী)
২। নাইলে নতুন ক্রেতা খুঁজে নিতে হবে ( নতুন ক্রেতা মানে নতুন ডিমান্ড)
৩। বা মানুষের দরকার থাকুক আর নাই থাকুক , ক্রেতাকে দিয়ে যে কোন মূল্যে দুধ কেনাতে হবে । ( কৃত্রিম ডিমান্ড বা মিথ্যা ডিমান্ড তৈরী)

আমাদের লাক্স কিংবা চ্যানেল আই বাঁচে এই ৩য় প্রকার ডিমান্ড তৈরী করার মধ্য দিয়ে । প্রসাধন জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় না । যেমন জরুরী না টিভি দেখা । এমন কি খাদ্য কিংবা জীবন্রক্ষাকারী ওষুধ এর মত জরুরী পণ্য হলেও যদি তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হয় (মার্কেট স্যাচুরেশন করে ফেলে, যেমন পানিতে লবণ ঢালতে ঢালতে এক সময় যখন পানি আর লবণ নিতে পারে না) অথবা দাম বেশি বলে ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তখন কর্পোরেট পুঁজিকে দৌড়াতে হয় নতুন ক্রেতা ধরতে - থাকলে খুঁজে নাও , না থাকলে বানাও ।

বিল গেটস শিক্ষা দীক্ষা নিয়ে আকুল হইতেন না; যদি না কম্পিউটার কেনার জন্য এবং ব্যবহারের জন্য একটা নির্দিষ্ট লেভেলের শিক্ষা, দরকার না হইত ।

এখন পৃথিবীর সকল জায়গায় কোন দুইটা জিনিসের ডিমান্ড চিরকাল থাকবে , যতদিন মানুষ থাকবে , ততদিন থাকবে?

১। খাদ্য । যেইখানেই জীবন থাকবে সেইখানেই ক্ষুধা থাকবে।

২। সেক্স । যেইখানেই মানুষ থাকবে , সেইখানেই সেক্স থাকবেই ।

লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার এই দ্বিতীয় বাজারটির কারবারী । কি করতে হবে? সুন্দর হইতে হবে । কেন সুন্দর হইতে হবে? সুন্দর হইলে সুপারস্টার হওয়া যাবে । কেন সুপারস্টার হইতে হবে? সুপারস্টার হইলে সেক্সের বাজারে দাম বাড়বে ( সেই সেক্স বিবাহের বাইরেই হোক আর ভিতরে ) । এর সাথে আনুসাঙ্গিক হিসেবে টাকা, প্রভাব, খ্যাতি - কে না চায় এই সব?

কি ভাবে মিথ্যা ডিমান্ড তৈরী করে টিভি মিডিয়া ?

আমাদের চাওয়া এবং প্রয়োজনের বোধকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করে দিয়ে।

হাত ধোয়ার সাবানের মার্কেট শেষ । তাইলে সাবান এখন কেন দরকার? সুন্দর হওয়ার জন্য । শীত বা গরম ও লজ্জা থেকে বাঁচার জন্য যতটুকু কাপড় মানুষ এর দরকার হয় , এখন তার চেয়ে অনেক বেশি কাপড় উৎপাদিত হয় । তাই কি দরকার ? ফ্যাশন । বিউটি সোপ আর ফ্যাশনেবল কাপড় এ বাজার ছেয়ে গেছে । তাইলে এখন কি দরকার ? এখন দরকার সুপারস্টার হওয়া ।

আসেন দেখি কর্পোরেট পুঁজিবাদ ইউনিলিভার কি ভাবে এই ফলস ডিমান্ড তৈরী করে?


বিশ্ব ব্যাপী সুন্দরের যেই সংঙ্গা কর্পোরেট গুলা তৈরী করেছে , তার মূলে আছে মানুষের অদম্য কামনা । যা মানুষ হতে পারবে না কোন দিন -তাকেই আদর্শ হিসেবে সেট করে দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মিডিয়া বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে । কি রকম?

১। আফ্রিকা ও এশিয়ার উপমহাদেশে সারাক্ষণ প্রচার হচ্ছে ফর্সা হউন।
ইউরোপ ও আমেরিকায় সারাক্ষণ প্রচার হচ্ছে , কালো (ট্যান) হউন।

২। কালো চুলের মেয়েদের সারাক্ষণ দেখানো হচ্ছে , কালোদের স্ট্রেইট চুলে বেশি ভালো লাগে। আর যাদের চুল এম্নিতেই স্ট্রেইট , সেই সাদাদের দেখানো হচ্ছে কোকড়া চুল বেশি সেক্সি ।

৩। শুকনা মেয়েদের - তোমার বড় বুক নেই । মোটা মেয়েদের - তোমার চিকন কোমর নেই।

৪। খাট পুরুষদের - লম্বা হউন। লম্বা পুরুষদের - মাস্কুলার হউন। মাস্কুলার পুরুষদের - যৌণ শক্তি বাড়ান।

মানে , আপনি ফর্সা, কালো, খাট - লম্বা, চিকন - মোটা - যাই হোন না কেন , আপনার শান্তি নাই । আপনি কিছুতেই সেক্সের যোগ্য না । প্রেমের যোগ্য না। ভালোবাসার যোগ্য না। সম্মানের যোগ্য না । আপনি কিছুতেই সফল না না না না না, যতক্ষণ না তাদের পণ্যটি ব্যবহার করছেন । আমি যতই বলি আপনি পারফেক্ট , আপনি বিশ্বাস করবেন না , কারণ মিডিয়া আপনাকে সারাক্ষণ শিখাচ্ছে , আপনি পারফেক্ট নন। ইউ নিড মোর । মোর মানি।মোর সেক্স । মোর মোর মোর ।

এই ঝামেলায় কি খালি মেয়েরাই? নাহ। নিঃসন্দেহে মেয়েরা তাদের দেহ এবং রুপ দিয়ে বিচার্য হয় বলে ৯০% টার্গেট মেয়েদের শরীর । ত্বক, বুক, নিতম্ব, মুখমন্ডল - আমাদের সমস্যার অন্ত নেই আর কোম্পানি গুলার সমাধানেরও অন্ত নেই । কিন্তু ছেলেরাও কম ঝামেলায় নেই । ৪২ ইঞ্চি ছাতি , ব্র্যাড পিটের নিতম্ব আর সিক্স প্যাক না হইলে চলবে না । এদিকে আবার দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী পুরুষ গুলা সব ভুড়িয়াল , তাতে কি? সব কয়টা নোবেল প্রাইজ উইনারও অতি সাধারন দেখতে, তাতে কি? অবশ্য পুরুষের সাফল্য মানে সাধারণত দেহ নয়, কাড়ি কাড়ি টাকা । সোজা ভাষায় যা আপনি হইতে পারবেন না ( বায়োলজি, ইকোনমি কিংবা সোসাল কারনে), তা হইতে উদ্বুদ্ধ করাটাই হইলো মার্কেটিং , ব্রেইন ওয়াশিং এর কাজ ।

অতএব লাক্স এবং চ্যানেল আই এর কাজ হইলো বঙ্গবাসীকে আগে এইটা শিখানো ,

হোয়াট ইজ সেক্সি? ( উত্তর অতি অবশ্যই লাক্স সুন্দরী। এইটা তো লাল সালুর ব্লগে প্রমান হয়েই গেছে যে লাক্স এই কাজে পুরাপুরি সফল হয়েছে )

এই জন্য চোখ , ঠোঁট আর ভঙ্গিমায় আবেদন খুঁজে বেড়াইলেন আমাদের দাদু শামসুল হক ।

পরের ধাপ হইলো ,

হু ইজ সেক্সি ? ( উত্তর অতি অবশ্যই যারা লাক্স সুন্দরীদের মত দেখতে, চলনে, বলনে ইত্যাদি । এইখানেও তারা সফল)

এর পরের ধাপ, মানে আসল ধাপ , আপনি কিভাবে সেক্সি হবেন? ( লাক্স , জগৎজোড়া বিখ্যাত কোম্পানির প্রসাধন ব্যবহার করতে হবে )

প্রথম পোস্টের কথা মনে আছে ? ঐ যে বলেছিলাম , একই কর্পোরেট অঙ্গের বিভিন্ন ব্যবসার হাত? মিমি কাপড়ের ব্যবসা, সুবর্ণা এ্যাড মেকার , শামসুল হক চিত্রনাট্য লেখক । তাহসিন, ইষানা , মেহজাবিনরা পণ্য নন , পণ্যের বিক্রেতা । এরা একই কর্পোরেট বাণিজ্যের এক একটি অনুসঙ্গ । সকলেই একটি মাত্র উৎপাদন থেকে বিক্রি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত !

দর্শকদের দেহ কামনাঃ

আগেই বলেছি , যেখানেই মানুষ থাকবে সেইখানেই সেক্স থাকবে। হয় প্রকাশ্যে নয় গোপনে। এইটা মানুষের মৌলিক চাহিদা । এর ডিমান্ডের শেষ নাই । তাই সাপ্লাইএর ও শেষ নাই। যারা " মা বোনেরা বেশ্যা হয়ে গেলো " বলে বোল তুলেছে তাদের জ্ঞাতার্থে বলি, ২০০০ বছর আগেও বঙ্গে বেশ্যালয় ছিল। তখন লাক্স চ্যানেল আই ছিলো না । কিন্তু আমার-আপনার বাপ, ভাইয়েরা ছিলো বলে ডিমান্ড ছিলো । তাই সাপ্লাইও ছিলো । ইট ইজ দ্যাট সিম্পল। লাক্স চ্যানেল আই ডিমান্ড তৈরী করছে না । তৈরী হয়ে থাকা ডিমান্ড নিয়ে ব্যবসা করছে শুধু ।

সেক্স হলো বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পণ্য । হয় সেক্স , না হয় সেক্সুয়ালিটি। ৪ বিলিওন মানুষ এর ক্রেতা অথবা বিক্রেতা ( এক তৃতীয়াংশ মানুষকে শিশু ধরে নিয়ে বাদ দিলাম) সারা বিশ্ব জুড়ে । তাহলে বুঝেন এর ডিমান্ড কেমন?

লাক্স, ইউনি লিভার এর নতুন করে ডিমান্ড তৈরী করার দরকারই নাই , দরকার শুধু এই ডিমান্ডের সাথে তাদের পণ্য গুলাকে এলাইন করা , আমাদের বুঝানো যে তাহাদের পণ্য , মাখিলেই বন্য!

তার মানে কি তারা নারীকে পণ্য করছে না? অবশ্যই করছে । শুধু নারী কেন, তারা পুরুষ ও বাচ্চাদেরও পণ্য করছে । কেন খেয়াল করেন নাই? ২০০০ বছরে হয় নাই , আজ কাল হঠাৎ করেই বাচ্চাদের ত্বক শুষ্ক আর খসখসে হয়ে উঠেছে ? যেই দিন থেকে লাক্স বেবি লোশন ক্রিম নিয়ে মাঠে নেমেছে সেইদিন থেকে আমাদের শিশুরা ত্বকের আর্দ্রতা হারাচ্ছে ?

আগেই বলেছি , নতুন ক্রেতার বাজার তৈরী করতে না পারলে এই সর্বগ্রাসী প্রফিট ওরিয়েন্টেড কর্পোরেট পুঁজিবাদ বেঁচে থাকতে পারে না । মা বোনের , কিশোর কিশোরীদের মার্কেট স্যাচুরেটেড হয়ে গেছে , এখন তাই বাচ্চার চামড়া দরকার , ব্যবসার জন্য !


আমি খুবই দুঃখিত, এই পর্বেও শেষ করতে পারলাম না । পরের পর্বে আশা করি শেষ করতে পারবো ।

পড়ুন শেষ পর্ব । 

আগের পর্ব গুলা থেকে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে,

১। যেই কর্পোরেট বাণিজ্য গুলাকে আমরা ভিন্ন ভিন্ন সেক্টর , ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসা বলে মানি , সেই গুলো হতেই পারে একই বাণিজ্যিক মালিকের ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসা (গরু কাহিনী)। আর যদি তা নাও হয় , তারপরেও তারা একই প্রোডাকশন লাইনের ( এন্টারটেইন্মেন্ট মিডিয়া) বিভিন্ন পর্যায়ে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত এবং সার্ভাইভালের জন্য একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল। অর্থাৎ , মিমির কাপড়ের ব্যবসা সুবর্ণার নাটকের উপর , সুবর্নার নাটক হকের লেখার উপর, হকের নাটকের প্রচার ইউনিলিভারের বিজ্ঞাপনের উপর, ইউনিলিভারের বিজ্ঞাপন ফুয়াদের জিঙ্গেলের উপর , ফুয়াদের জিঙ্গেল পণ্যের মডেলের উপর এবং পণ্যের মডেল দর্শকের সেক্স ও সেক্সুয়ালিটির উপরে নির্ভরশীল। এই সম্পর্কটি লিনিয়ার নয় বরং মাকড়সার জালের মত ইন্টারকানেক্টেড।

২। এনটারটেইনমেন্ট মিডিয়ার কর্পোরেট দুনিয়া নিজেদের এবং পৃষ্ঠপোষক ( এবং শোষক) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লাভের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে প্রতিনয়ত এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলার সুবিধা ও লাভ অনুযায়ী আমাদের ভ্যালু সিস্টেম ( জীবনের কোন জিনিস, কোন শিক্ষা , কোন অনুভূতি সবচেয়ে মূল্যবান , তুলনামূলক ভাবে কিসের মূল্য কত টুকু) , আমাদের কালচার, আমাদের জীবন দর্শনকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করে। যা কিছু ব্যবসার সহায়ক তাকে উৎসাহ আর যা কিছু ব্যবসার পথে প্রতিবন্ধক তাকে খারাপ বলে শিক্ষা ব্রেইন ওয়াশ করতে থাকে।

৩। এইটা করাটা খুব বেশি জরুরী কারন মানুষ যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করা শুরু করলেই এই দানব মাল্টিন্যাশনাল গুলা হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়বে ।

গরু কাহিনীতে ফেরত যাই । মনে করুন, হঠাৎ একদিন আপনার প্রতিবেশীরা ঘুম থেকে জেগেই উপলব্ধি করলেন , তাদের গরুগুলো ( উৎপাদনের যন্ত্র ) যেদিন থেকে হাতছাড়া হয়েছে , সেদিন থেকেই তারা আমার দাসানুদাস হতে শুরু করেছেন। এই উপলব্ধি হলে তারা কি আমাকে ছেড়ে কথা বলবেন ? আন্দোলন করে ফাটিয়ে দেবেন না ?

নাহ ।

ভুলে গেছেন , আমার কাছে গরু বেচতে আমি বলিনি , বলেছেন আপনি ! একটু অনুসন্ধান করে এই সত্যও বের করা কঠিন না যে নিজের দুধের বিক্রি বাড়ানোর জন্যই আপনি এই ছলের আশ্রয় নিয়েছিলেন । ফলে মানুষ লাঠি নিয়ে পিটা লাগাবে আপনাকে । আর আমি? আমার কিছুই হবে না । এলাকায় স্কুল, হাসপাতাল, ব্যাংক প্রতিষ্ঠাকারী আমি প্রেস কনফারেন্স করবো , " এই দেশের কোন এবিলিটি নাই। পলিটিকাল স্ট্যাবিলিটি নাই। আমি চললাম মালয়শিয়া , ওরা আমার মুসলিম ভাই !" দেশের একজন বিশিষ্ট ইনভেস্টরকে তাড়ানোর জন্য আপনি ও আপনার প্রতিবেশীরা পিটা খাবেন এরপর । দয়া পরবশ হয়ে আমি ব্যবসা গুটিয়ে ( বিক্রি করে) চলে যাওয়ার আগে সেই বুড়া গরুগুলিকে
১০ গুণ দামে আপনাদের কাছেই বিক্রি করে দিব , আন্দোলন থেমে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে । আমি মহান রয়ে যাব। ( গরুর জায়গায় কৃষি জমি কিংবা অন্য যে কোন উৎপাদন্মুখী খাতকে বসিয়ে নিতে পারেন। )

এখন কথা হইলো , এই হঠাৎ করে জাগার কারন কি? মালয়শিয়া যদি বুঝে আপনারে খেপাইলে ব্যবসা তার দ্বারে যাবে তাইলে মালয়রা নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে আপনার জ্ঞানচক্ষু খুলার জন্য " দা ইভিল অফ ক্যাপিটালিজম" ক্লাস নিবে। তবে , আপনি আমার কাছে গরু বিক্রির আগে না , অবশ্যই পরে।

যে সময়টা জেগে উঠলে আপনার লাভ , সেই সময়ে চক্ষু খুলার একটাই উপায়, তা হলো শিক্ষা ও জ্ঞানের চর্চা। সারা দুনিয়া জুড়ে কে কি কেন করছে , সেই পলিটিকাল জ্ঞান থাকা। স্বচ্ছ ও অবাধ তথ্যের আদান প্রদান ও সেই তথ্যের মিনিং বুঝার জ্ঞান । আমেরিকা ইরাক আক্রমন করেছে - এইটা তথ্য । আমেরিকা ইরাক থেকে তেল নিবে বলে আক্রমন করেছে হইলো জ্ঞান । আর তেলের পাইপ লাইন টানার জন্য আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে ডিক্টেটরশীপ গুলাকে পয়সা দিয়ে পালছে- এইটা হইলো মিনিং । আমি মালয়শিয়া পালানোর আগেই আমাকে ধরতে হলে কিংবা ঠেকাতে হলে এই মিনিংটা বুঝতে হবে ।

লাল সালুর আক্রমনের টার্গেট মেয়ে গুলা , বড় জোর বিচারক । তার পিছনে চ্যানেল আই না । চ্যানেল আই এর পিছনে লাক্স না। লাক্সের পিছনে ইউনিলিভার না। আগেই বলেছি , লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার জাতীয় প্রতিযোগিতা গুলো সেক্সের ডিমান্ড তৈরী করে না । যে ডিমান্ড সমাজে তৈরী হয়েই আছে , অত্যন্ত সুস্থ এবং স্বাভাবিক জৈব চাহিদা হিসেবেই আছে , তাকে ব্যবসার খাতিরে ব্যবহার করে, উস্কে দেয় । ছেলেদের ধরে ধরে সুড়সুড়ি দেওয়াই যে এর মূল উদ্দেশ্য ঠিক তা না , তবে অস্থির করলে এই বেনিয়াদেরই লাভ। পণ্য বিক্রি ও পণ্যের বিপণণ আসল উদ্দেশ্য হইলেও সমাজকে বিশেষ করে তরুন সমাজকে অস্থির করে রাখলে এই বেনিয়াদের যেই লাভটা হয় তা হলো , অস্থির মানুষ চিন্তা ভাবনা করে কম। ক্রিয়া করে কম, করলেও সেইটা রতিক্রিয়াই হবে, তবে রতিক্রিয়ার চেয়েও অনেক বেশি করে প্রতিক্রিয়া। কোন কিছু নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করতে চাইলে চাই শান্ত মন। সুস্থির বিবেক। চাই যুক্তি ও জ্ঞানের সঠিক সম্মেলন। কিন্তু এই সুড়সুড়ি মার্কা প্রতিযোগিতাতে অস্থির যুবকরা অস্থির হয়ে উঠে তাদের প্রতিবাদের ভদ্র ভাষাটাও ভুলে যায় । লাল সালুর ব্লগ পোস্টে তার স্পষ্ট প্রমান আছে । অস্থির , অসংলগ্ন মানুষকে প্রভাবিত করা বা ব্রেইন ওয়াশ করা অনেক সোজা। সুতরাং তুমি লাক্স কেনো আর নাই কেনো , মানুষ যত অস্থির , তত প্রতিক্রিয়াশীল, যত প্রতিক্রিয়াশীল তত দুর্বল , যত দুর্বল ততই সহজ তার কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রন করা ।

এই জন্যই সুস্থির , চিন্তাশীল সমাজ ও সামাজিক জীবন পুঁজিবাদের পছন্দ না । পুঁজিবাদের চাই অস্থির গতি , আরো আরো আরো গতি ! মানুষ সারাক্ষণ ছুটবে । হয় রোজগার নেই বলে ছুটবে , নয়ত রোজগার আছে বলে ছুটবে। আর খাবে । কামাবে আর খরচ করবে। মুখ দিয়ে খাবে । চোখ দিয়ে খাবে । মন দিয়ে খাবে। স্পর্শে খাবে, গন্ধে খাবে , চিন্তা চেতনায় খাবে । এই গ্রহন গুলো থেকে সে কিছু অর্জন করবে না , স্রেফ হজম করবে । কিছুই চিন্তা করবে না , পাগলের মত চ্যানেল ঘুরাবে , ছাগলের মত ফাস্ট ফুড চিবাবে , উঠতে বসতে ছটফট করে বেড়াবে - তাইলেই লাভ, লাভই লাভ!

চিন্তাশীল মানুষ নিজের বিপদ টের পায় সবার আগে । অস্থির মানুষ টের পায় দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর। এখন তাই ফাস্ট এর জয় জয়কার সারা মিডিয়া জুড়ে । শিল্পী ( স্লো পদ্ধতি ) চাই না, স্টার (ফাস্ট) চাই। ফাস্ট ফুড , ফাস্ট সেক্স , ফাস্ট লাইফ !

কারন যেই মুহুর্তে আপনি চিন্তা করতে শুরু করবেন , আরেকটা সিম কেন কিনবো? কি লাভ? আরেকটা গাড়ি কেন লাগবে? ইষানা কেন, কুলসুমও তো সুন্দরী ! ৮০০ টাকা দিয়ে চিকেন ফ্রাই কেন খাব , বাসাতে ১২০ টাকা দিয়ে নিজেই বানাতে পারি তো! ক্যাটস আই এর শার্ট লাগবে কেন? শার্ট তো শার্টই ! - সেই মুহুর্ত থেকে আপনি পুঁজিবাদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠলেন ।

পুঁজিবাদ চিন্তাবিদ চায় না। চায় ক্রেতা । যে খালি কিনবে আর কিনবে । আসলেই দরকার আছে না নাই, এই সব ভাববে না । তাকে শেখানো যাবে - বিজ্ঞাপন বলেছে দরকার , তাই দরকার!

পুঁজিবাদের সবচাইতে বড় শত্রু তাই কমিউনিজম নয় , সোসালিজম নয় । পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় শত্রু সচেতন , চিন্তাশীল মানুষ যা তাকে যুক্তিবাদ ও র‌্যাশনাল কেনা বেচা লেন দেন শিখায় । পুঁজিবাদের বড় শত্রু প্রাচ্যের জীবন দর্শন যা মানুষকে নির্লোভ ও আত্মত্যাগী ও সংযম শিক্ষা দেয় । যা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় , অন্যের ক্ষতি করে নিজে লাভবান হওয়াটা লাভ নয়, ক্ষতি । ঠিক একই কারণে পুঁজিবাদ এর বড় শত্রু ইসলাম । কারন, ইসলাম বলে দুনিয়াতে এত কেনাকাটার দরকার নাই , আখিরাতেই সব কিছু পাবা । ( আরব আমিরাতের ইসলাম না , আমাদের উপমহাদেশের সুফিবাদী , আত্মত্যাগী , নির্লোভ ও অল্পে সন্তুষ্ট জীবন দর্শন ধারী ইসলাম যেই দর্শনের দেখা পাওয়া যায় উপমহাদেশের হিন্দু ও বৌদ্ধ বিশ্বাসেও। ) পরকালের সুখের জন্য ইহকালে ত্যাগী জীবনযাপন করাটা পুঁজিবাদী বাণিজ্যের জন্য বিশেষ অপকারী ।

ঠিক এই কারণেই বাংলাদেশে ইদানিং মিডিয়া বিস্ফোরন ঘটেছে । একের পর এক প্রিন্ট , টিভি মিডিয়া আসছে । জনগণের উন্নতির জন্য আসছে ? নাহ । বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া তথা উপমহাদেশের জীবন দর্শন , যাতে ভোগের বদলে ত্যাগ , উপভোগের বদলে উপলব্ধি আর ইন্দ্রিয় সুখের বদলে ইবাদতের কথা বলা হয়েছে । এই দেড় বিলিওন ক্রেতার মন মানসিকতা চেঞ্জ করে পুঁজিবাদ নামক নতুন ধর্ম শিক্ষা দেওয়ার জন্যই এই মিডিয়া এসেছে এবং মাল্টিন্যাশনাল গুলা এদের পেছনে এত টাকা ঢালছে । কালচারাল ও পলিটিকাল মূল্যবোধ , ধ্যান ধারনা বদলে মুনাফালোভী করে তোলা , পণ্যের প্রচার ও নতুন ধর্মে ( পুঁজিবাদ) দীক্ষা দেওয়ার জন্য এই এনটারটেইনমেন্ট মিডিয়ার কোন জুড়ি নেই। আমেরিকা , ইউরোপ জয় করে পরীক্ষীত ও সফল অস্ত্র হিসেবে এটি প্রচার হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশে । সুন্দরী প্রতিযোগিতা , ফুয়াদের সেক্সি গান আর লস প্রজেক্ট মার্কা ফারুকী বর্জ্য এই বিপুল " ব্রেইন ওয়াশ " কার্যক্রমের অংশ মাত্র!

অস্থির করার পাশাপাশি ছেলেদের মনের ভিতর কিছু নির্দিষ্ট ইমেজ তৈরী করাটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্রেইন ওয়াশ । আমরা বুঝি আর নাই বুঝি , অবচেতন মনে আমরা প্রতিনিয়ত শিখছি , সুন্দর মানে মেহজাবিন। সুন্দর মানে ইষানা। সুন্দর মানে অর্ষা । আমরা যখন সুন্দরকে খুঁজবো , এই রকমই খুঁজবো। পার্থক্য শুধু তারা আমার সামনে ছাড়া আর কারো সামনে কাপড় খুলবে না । ওরাও মডেলই হবে , ভদ্র মডেল ।

এইটা আরো ভয়ংকর। ভয়ংকর এই কারণে যে একটি নির্দিষ্ট মাপ কাঠির বাইরের সবাইকে আমরা " অনাকর্ষনীয় " আখ্যা দিয়ে ফেলছি। আমরা নারী মাত্রেই শরীর বানিয়ে ফেলছি। নারীও মানুষ, অনুভূতি, মগজ সম্পন্ন - সেই বোধ হারিয়ে যাচ্ছে । আমরা বিদূষী বাদ দিয়ে বিদিশা খুঁজছি এখন ক্রমাগত । মানুষ হয়ে যাচ্ছে পদার্থ ।

এই পরিবর্তন , এই ব্রেইন ওয়াশ কতখানি সফল তার একটা উদাহরণ দেই -

প্রথম দিকের কোন পর্বে একটা মেয়ে দুর্দান্ত রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলো , অথচ এই মেয়েদের কোন ট্যালেন্ট পর্ব আমি পাইনি খুঁজে। নিশ্চয়ই অন্য মেয়েরাও এই রকম কিছু না কিছু প্রতিভা নিয়ে এসেছিলো , কিন্তু মাংসের কারবারী ঐদিকে নজর দেয় নাই। যেই মেয়েটা " সবাই ভালো বলেছে তাই আমি কিনেছি" ধরনের প্যাসিভ বক্তব্য দিয়েছিলো , সে বাদ পড়েছে । এইটা একটা ভালো দিক যে একটা মানুষ যার নিজস্ব মতামত বলতে কিছু নাই , তাকে সাথে সাথে বাদ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট বাজেট ও সময়ে কি করে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হয় , এইটা আমাদের সরকারী প্রোকিউরমেন্টের লোক জনও জানে না । জানাটা জরুরী । কিভাবে ক্লু দেখে রহস্যভেদ করতে হয় , কি ভাবে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয় - এই গুলা খুবই জরুরী গুণ । আমি নিশ্চিত ভাবেই বলতে পারি , ট্রেনিং ক্যাম্পের শিক্ষা গুলা যদি বাদ পড়া মেয়েরা নিজেদের জীবনে ধরে রাখতে পারে ( ভোর পাঁচটায় উঠে শরীর চর্চা আমারে দিয়াও হয় না) তাহলে তাদের উপকারই হবে । সঠিক নিউট্রিশন এবং ফিটনেস মানুষের অনেক বড় সম্পদ । এতগুলা ভালো ভালো দিক চোখে পড়ার পরেও আমি এই প্রতিযোগিতার পক্ষ নিতে পারছি না ।

কেন?

কারণ, সহজাত ভাবেই এই প্রতিযোগিতা যেই কর্পোরেট পুঁজিবাদিতার মন মানসিকতাকে উৎসাহ দেয় , যেভাবে একটা মানুষকে মানুষ থেকে বদলে শরীর সর্বস্ব অব্জেক্ট বানায় , যেভাবে শেখায় তারা ছাড়া বাকি সব অসুন্দর , সুপারস্টার না হলে জীবন ব্যর্থ - এই সব ঘৃণ্য শিক্ষা , মূল্যবোধের অবক্ষয় আর মানুষ না হয়ে ক্রেতা হওয়ার এই ইঁদুর দৌড়কে কোন ভাবেই সমর্থন করা যায় না ।

লাক্স প্রতিযোগিতায় অনেক কিছুই ছিলো , কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে শরীরটাকেই ফোকাসে রাখা হয়েছে , সব সময় ।

সবচাইতে বড় কারন ঃ

কর্পোরেট পুঁজিবাদিতার সব কিছুই ভন্ডামি আর মিথ্যাচারে ভরপুর



কি ভাবে কর্পোরেট পুঁজিবাদ আপনাকে ঘোরের ভিতরে আচ্ছন্ন করে রাখে? তাদের এই শরীর পূজাও এক বিশাল ফাঁকি !


জেনেটিক সাইন্স বলে একটা মানুষ কতটুকু লম্বা , মোটা কিংবা সুন্দর হবে তা নির্ভর করে জেনেটিক্স এর উপর । ক্রিম , সাবান , লতা পাতা ঘষে এইটার খুব একটা পরিবর্তন করা যায় না। ত্বক ফর্সা করার প্রতিটা ক্রিম ভুয়া । স্রেফ মিথ্যা । ত্বকের মেলানিন বেশি হলে আপনি কালো হবেন , মেলানিন কম হলে ফর্সা হবেন । ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমে ভয়াবহ ক্ষতিকারক কেমিকেলস থাকে।

সুন্দর ফিগারের একমাত্র উপায় হইলো খাদ্যাভাস আর শরীর চর্চা। তারপরেও মানুষের শরীর এর মাপ তিন রকম। তবে কাটায় কাটায় তিন আলাদা রকম না । মিক্সড ও আছে । তবে মোটামুটি এপেল , পিয়ার কিংবা দোহারা গড়নই বেশি। মেয়েদের বেলায় যেই আওয়ার গ্লাস ফিগারকে বিশ্ব ব্যাপী আদর্শ বানানো হয়েছে সেই মাপের দেহ পেতে পারবেন কেবল মাত্র ৫% মহিলা । বাকিদের কেউ কেউ সার্জারী করে পারবেন , তারপরেও বেশির ভাগই পাবেন না ।

তার মানে কি দাঁড়াইলো ?

প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ৫ জনের মত হওয়ার জন্য বাকি ৯৫ জন ক্রমাগত ক্রিম ঘষবেন, জিমে যাবেন, ডায়েট করবেন, বিশেষ ধরনের পোশাক পরবেন , কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে সার্জারী করাবেন। কিন্তু কেন?

কারণ , মিডিয়া আপনাকে শেখাবে , তোমার মডেল , তোমার আদর্শ হইলো আওয়ার গ্লাস । এইটা হইলো এমন এক খেলা যাতে মাঠে নামার আগেই আপনি হেরে বসে আছেন কিন্তু আপনাকে প্রতিনিয়তই ব্রেইন ওয়াশ করা হচ্ছে যে , আপনি জিতে যাবেন , আর একটা কিছু কিনলেই!

হু দা হেল আর দে টু টিচ আস হোয়াট ইজ , হু ইস বিউটিফুল? হু ইজ নট?

বাঙালী কয়টা ছেলের সিক্স প্যাক থাকে? সিক্স প্যাক না থাকলেই অন্য কারো গলায় ঝুলে পড়তে হবে? ব্লিঙ ব্লিঙ ডায়মন্ড রিং দিতে না পারলে রাস্তা মাপো ?
আওয়ার গ্লাস না হলে ভালোবাসা যাবে না?

এই প্রশ্ন গুলা আপনি তখন করবেন যখন আপনি একজন মুক্ত চিন্তার, যুক্তিবাদি , স্বাধীন মতের মানুষ হবেন । বিজ্ঞাপনের চটকে বিভ্রান্ত হবেন না । আমরা কয়জন তা পারি?

মানুষের সব চাইতে বড় সৌন্দর্য তার বৈচিত্র । বিচিত্র মানুষ তার বিচিত্র শরীর নিয়ে প্রেম , ভালোবাসা, সেক্স নিয়ে সুখে থাকুক। এইটাই হওয়া উচিত ।

কিন্তু মিডিয়া মোঘলরা , ফ্যাশন এন্ড কসমেটিকদের সাথে হাত মিলিয়ে আমাদের ব্রেইনে সুন্দরের একটা ফিক্সড ইমেজ গেঁথে দিতে বদ্ধ পরিকর । তাও আবার সেইটা শরীর এবং শরীর এর পূজারী।

-----------------------------------------------------

এই ধরনের বিজ্ঞাপন কি আসলেই মানুষকে অন্ধ করতে পারে ?

পারে । গবেষনায় দেখা গেছে একটা সৌন্দর্য পণ্য আদৌ কাজ করে কি করে না তা জানার দরকার নাই । ক্রেতা যদি বিশ্বাস করে যে পণ্যটা কাজ করলেও করতে পারে , তাহলেই চলবে । মানুষের কল্পনা ও সহজাত প্রবৃত্তি এর জন্য দায়ী। খুব ইমেডিয়েট , ক্ষুদ্র সাফল্যকে আমরা বড় করে দেখি । এবং ক্ষুদ্র সাফল্যের উপরে বেস করে বড় বড় রিস্ক নেই । এইটা একটা গেম অফ চান্স ।

লাস ভেগাসে ৯৮% ক্ষেত্রে জুয়াড়িদের জিততে দেওয়া হয় । মাত্র ২% লাভ করা হয় । আর এই মাত্র ২% লাভ দিয়েই মিলিওন মিলিওন ডলারের ব্যবসা চলে । কারন, মানুষ যতক্ষণ বিশ্বাস করবে , " আর একবার খেললেই সে জিতবে " - ততদিন লাস ভেগাসের ব্যবসা সেইফ । আর এক টিউব ফেয়ার এন্ড লাভলী মাখলেই আপনি ফর্সা হবেন ( পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও) , ইউনি লিভারের ব্যবসা সেইফ । স্রেফ হাওয়ার উপরে, মিথ্যার উপরে, ছলনার উপরে সাজানো এই ট্রিলিওন ট্রিলিওন ডলারের প্রসাধন ব্যবসা।

ক্রিম ঘষে আর সার্জারী করেই যদি এনজেলিনা জোলি হওয়া যেত, খোদ হলিউডেই প্রতিদিন ১০টা করে এনজেলিনা পয়দা হইত না?
----------------------------------

শেষের অংশটুকু আসলে লাল সালুর পোস্টে বলা হয়ে গেছে । সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে কামার্ত ব্লগাররা যেই হারে তাদের আদিরসাত্মক ফান করলেন আর দেশের ১০ হাজার " সম্ভাব্য পণ্য বিক্রেতাকে" বেশ্যা বানিয়ে ফেললেন , সেইটা আমার কাছে সেই ১৯৭১ এর ধর্ষকামী ভূতের আছর মনে হয়েছে। একটা মানুষের উপর চড়াও হওয়া তখনই সম্ভব যখন কোন ভাবে সবাইকে কনভিন্স করা সম্ভব যে তারা মানুষ নয় , আমাদের সমান নয়।

The first step towards the most horrific atrocities against human kind is to establish that they are "less than human" , less than what you are .


This happened with black slaves in Africa, this happened with the witch hunt in Europe, this happened with Jews in the holocaust, this happened exactly with 30 lakh people and 2 lakh women in the 1971 genocide in Bangladesh.

Not because they were black.
Not because they were witches.
Not because they were Jews.
Not because they were Bangali.

Because , they were less than human to their oppressors.

পূর্ব পাকিস্তানের মেয়েরা মানুষ নয় । ওরা হিন্দু। ওরা হিন্দুয়ানী ভাষায় কথা বলে। হিন্দুয়ানী পোশাক (শাড়ি) পরে । হিন্দু আচার সংস্কৃতি পালন করে । ওরা মুসল্মান নয় । সুতরাং উহারা মানবেতর ( মানুষের চেয়ে ইতর) প্রাণী ।

অতএব , পূর্ব পাকিস্থানী হিন্দু মেয়েদের খান সেনাদের খাট কাঁপানোর জন্য দিয়ে দেওয়া হউক।
-----------------------
লাক্স সুন্দরীরা বাঙ্গালী নয় । ওরা পশ্চিমা । ওরা বাংলা বলতে পারে না, ওরা খোলামেলা পোশাক পরে , ওরা পশ্চিমা আচার সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত । ওরা মুসলমান নয় । সুতরাং উহারা মানবেতর ( মানুষের চেয়ে ইতর ) প্রানী ।

সুতরাং , ইহাদের দিয়ে খাট কাঁপানো হউক।

-----------------------------------


দুইটা গল্পে আমি কোন পার্থক্য পাই না ।

প্রথম গল্পে পাকিস্তানী জোশে জোশিলা রাজাকার ।

দ্বিতীয় গল্পে পাকিস্তানী জোশে জোশিলা বাঙ্গালী ।

সন্দেহ নাই , এই ধরনের প্রতিযোগিতাকে আমি সমর্থন করি না । কিন্তু প্রতিবাদ কিংবা ফানের নামে প্রতিযোগিনীদের সম্ভাব্য বেশ্যা বলে অপমান করাটা কিছুতেই সহ্য করা উচিত না । যেই ১০ হাজার মেয়ে অংশ নিয়েছে তারাও মানুষ । তাদের লাইফ চয়েস নিয়ে আমাদের আপত্তি থাকতে পারে , তার মানে এই না যে আমরা যাচ্ছেতাই ভাবে তাদের হেয় করবো, অবমাননা করবো।
-----------------------------------------------------

সুন্দরী প্রতিযোগিতা কিংবা কর্পোরেট পুঁজিবাদ কেবল নারী নয় , সবাইকেই পণ্য বানায় , ক্রেতা বানায় । হয় তুমি বিক্রি করবে নয় তুমি বিক্রি হবে । কারন এই মতবাদের মূলে আছে শুধুই লাভ , কেবল সাপ্লাই আর ডিমান্ড ।

কিন্তু মানুষের সবচেয়ে বড় যেই ডিমান্ড ,
ভালোবাসা । আধ্যাত্মিক বা স্পিরিচুয়াল নিড । মূল্য পাওয়া বা মূল্য দেওয়া । সম্মান ও সাফল্যের ভিতরে প্রচ্যের যেই দর্শন রয়েছে , সেই দর্শনকে পুঁজিবাদ ধ্বংস করতে চায় ।

আমরা যে বিশ্বাস করি , এই জীবনটাই সব নয় , এইখানে সব কিছু পাওয়ার নেশায় আশে পাশের সবাইকে, ন্যায় - নীতি - মূল্যবোধকে পায়ে দলে যাবার দরকার নেই ! সব কিছু খুবলে খাওয়া নয় , যা আছে - সেই সামান্যটুকুই সবাই মিলে ভাগ করে খাওয়ার ভেতরে আনন্দ অনেক বেশি - এই সব পুঁজিবাদ বুঝে না ।

পুঁজিবাদ হলো সেই আগুন যা খেতে খেতে বড় হয় । যারা উচ্ছিষ্টটুকু পায়, তারা এর নানান গুণাগুণ বর্ননা করে । ইনোভেশন , ক্রিয়েটিভিটি, ডিস্কভারি , ব্লাহ ব্লাহ ।

কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে , কিসের মূল্যে ? এট দা কস্ট অফ হোয়াট?
------------------------------------------

আজকের যুগে আপনার বউ এর পেটে যেই ভ্রুণটা আছে সেইটাকে বের করে একজন ক্যান্সার রোগী , একজন হার্টের রোগী কিংবা একজন কিডনীর রোগীকে বাঁচানো সম্ভব।

এখন এই টেকনোলজিটাকে যদি কর্পোরেট পুঁজিবাদের সাথে তুলনা করি তাহলে , আপনি এই ধরনের পুঁজিবাদ ও অর্থনীতিকে সমর্থন করবেন কিনা তা নির্ভর করবে আপনি কি সেই
১। মা?
২। ভ্রুণ ?
৩। সার্জন ?
নাকি ,
৪। মৃত্যু পথযাত্রী রোগী?


লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার কারো কারো জন্য কিছু কিছু উপকার বয়ে আনবে এইটা সত্য। কিন্তু , প্রশ্ন সেই একটাই , কিসের বিনিময়ে? কতখানি মূল্যে?

http://www.somewhereinblog.net/blog/valobashablog/29085855


বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে উচ্চশিক্ষা, বৃত্তি/স্কলারশীপ এবং (এপ্লিকেশন পর্ব)

আগেই বলেছি , এখন অনলাইনে এপ্লিকেশন করা কোন ব্যাপারই না । মূল কাজটা ওয়েবে বসেই করে ফেলা যায়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পিডিএফ নিয়েই খুশি থাকে । সশরীরে যেদিন গিয়ে উপস্থিত হবেন তার আগে কিছু নাও লাগতে পারে এক টাকা পয়সার ব্যাপার স্যাপার ছাড়া । অনেক জায়গায় হয়ত সফট কপির সাথে হার্ড কপিও পাঠাতে হতে পারে মেইল করে । যেই সব ইউনিতে অন লাইন এপ্লিকেশনের ব্যবস্থা নেই তাদেরকে রেজিস্টার্ড মেইলে , যে সবে অনলাইন ট্র্যাকিং করা যায় এই রকম ভাবে পাঠিয়ে দিন। কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো নিরাপদ কিন্তু বুহতেই পারছেন এক একবারে কত টাকা করে লাগতে পারে।

এপ্লিকেশন পাঠানোর আগে দেখে নিন সমস্ত কাগজ পত্র ঠিক আছে কিনা।
১। একাডেমিক কাগজ পত্র , মোটিভেশন লেটার ইত্যাদি আপনি নিজেই পাঠাবেন।

২। ইউনি যদি চায় , তাহলে আই ই এল টি এস বা টয়েফেল ইত্যাদির রেজাল্ট হয়ত অফিসিয়ালি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠাতে বলবে । সেক্ষেত্রে আপনি একটা নির্দিষ্ট ফি দিয়ে কোম্পানিকে অনুরোধ করলে ওরাই আপনার রেজাল্ট ইউনিকে পাঠিয়ে দেবে।

৩। রেকমেন্ডেশন লেটার সংশ্লিষ্ট প্রফেসর অফিসিয়াল খামে, অফিসিয়াল সিল সহ পাঠাবেন। আপনি শুধু তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। আর কিছু না । আমেরিকাতে এইসব নিয়ে বেগড়বাই বেশি করে । তো সাবধান। যদি ওদের মনে হয় আপনি নিজে এই রেকমেন্ডেশনকে কোন ভাবে প্রভাবিত করেছেন, তাইলেই সব শেষ ।

৪। ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠাবে আপনার কলেজ/মেডিকেল/ইউনি। কিন্তু আমাদের দেশে সব জায়গায় এইটা করা যায় না । আবার ট্রান্সক্রিপ্ট জিনিসটা আপনি যতবার অনুরোধ করবেন ততবারই আপনার হয়ে আপনার কলেজ।ইউনির দেওয়ার কথা । কি এক অদ্ভুত কারনে , এইটা সবাই বার বার দেয় না । স্কুল কলেজের ট্রান্সক্রিপ্ট তো সোনার হরিণ ।

সুতরাং , চাইলেই লাফ দিয়ে মূল কপিটা পাঠিয়ে দেবেন না । একটাই কপি হলে ফটোকপি পাঠান এবং বুঝিয়ে বলুন কেন মূল কপি পাঠাতে পারছেন না কিংবা আপনার হয়ে কলেজ কেন পাঠাচ্ছে না । ভদ্র ভাবে বুঝিয়ে বললে আর সৎ হলে বেশির ভাগ ইউনিই ঝামেলা করে না ।

৫। সব কাগজ এক সাথে পাঠানোর জন্য দেরী করবেন না । যেমন আই ঈ এল টি এসের রেজাল্ট পরে পাঠালেও চলে। কিন্তু এপ্লিকেশন দেরীতে পৌছালে স্কলারশীপ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে ।

এখন আসেন , কখন পাঠাবেন?

আমেরিকা , কানাডা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ বেশি গবেষনা করে , তাই আর ডিটেইলস এ গেলাম না । যে কোন ভালো স্কলারশীপ পেতে হলে অন্তত এক বছর আছে কাগজ পত্র পাঠাতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় , লাস্ট ডেট অনেক পরে শেষ হয়। কিন্তু খেয়াল না করলে এইটা হয়ত আপনার চোখেই পড়বে না যে ভর্তির লাস্ট ডেটের ৬ মাস আগেই স্কলারশীপের লাস্ট ডেট শেষ। আবার আমেরিকার এক এক স্টেটে এক এক নিয়মের কারনে কোন সাধারন নিয়ম বলা খুবই মুশকিল। কোথাও নিয়ম কানুন খুব কড়া , কোথাও বেশ শিথিল। সুতরাং, বছর খানেক আগে থেকেই দেখে নিন কোন স্কলারশীপের ডেট সাধারনত কখন শেষ হয় ।

মিড ইয়ার সেমিস্টারে ভর্তি হলে বা পার্ট টাইম ( বিদেশী স্টুডেন্ট অবশ্য প্রায় সবই ফুল টাইম) হলে অনেক স্কলারশীপ দেয় না । অতএব সাধু সাবধান।

অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ডে সেমিস্টার শুরু সাধারনত ফেব্রুয়ারী মার্চের দিকে । ইউরোপে সেপ্টেম্বর । কিন্তু দেখা যায় , ক্লাস সেপ্টেম্বর হলেও ভালো ভালো স্কলারশীপ গুলোর ডেট ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারীর ভিতরই শেষ। তার উপর অনেক জায়গায় লেখা থাকে আগে আসিলে আগে পাইবেন, আগে বিবেচিত হইবেন ধরনের কথা । তাই যত আগে এপ্লাই করা যায় , স্কলারশীপ পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি ।

স্কলারশীপের আবেদন কে করবে ?

এই জায়গাটাতেও অনেক রকমের হ্যাপা জড়িত। কোন কোন স্কলারশীপ এর আবেদন আপনাকে নিজেই করতে হতে পারে । এক একটার এলিজিবিলিটি এক এক রকম । কেউ হয়ত চায় আপনার এডমিশন কনফার্মেশন। কেউ চাইবে যেখানে ভর্তি হবেন তাদের রেকমেন্ডেশন, সেক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্ট যা করার করবে , আপনি শুধু উল্লেখ করবেন যে আপনি বিবেচিত হইতে চান । আবার অনেক ইউনি বলেই দেবে যে সকল বিদেশী ছাত্র অটমেটিক বিবেচিত হয় সুতরাং আলাদা করে এপ্লাই করার দরকার নেই ।

যেহেতু এক এক জায়গায় এক এক নিয়ম , তাই আগে থেকে ভর্তি বা এপ্লাই করার ফর্মালিটি সেরে নিয়ে লেগে পড়ুন কাজে ।

আপনি কখন বিবেচিত হবেন?

আমেরিকা , অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের ভিতর গ্রেট ব্রিটেন এবং এশিয়ার বেশ কয়টি দেশ একটা নিয়ম মেনে চলে । তা হলো , আগে ভর্তি তারপর স্কলারশীপ। তার মানে ভর্তি হতে , ভিসা পেতে এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রথম এক বছর বা প্রথম এক সেমিস্টারের টাকার যোগাড় আপনাকে করে রাখতে হবে । এই সব কিছু খরচ পাতি করে , রেজাল্ট ভালো দেখায় ২য় সেমিস্টার বা ২য় বছরে আপনি প্রচুর স্কলারশীপ পাবেন অস্ট্রেলিয়াতে ।

তবে, লিডারশীপ, কমন ওয়েলথ, এডিবি, এন এফ পি জাতীয় স্কলারশীপ গুলো দেশ থেকে নিয়েই বাইরে যাওয়া যায় ।

ডাক্তারী যে কোন বিদ্যায় এই প্রাথমিক খরচটা অসম্ভব রকমের বেশি। তবে বায়ো লজি, বায়ো ফিজিক্স, বায়ো কেমিস্ট্রি, বায়ো টেকনোলজি, মেডিকেল বায়োলজি , মলিকিউলার বায়োলজি জাতীয় নন ক্লিনিকাল কোন সাব্জেক্টের ভর্তি খরচ এত না। এই সব দেশে যেতে হলে তাই আগে পকেটের অবস্থা আর স্কলারশীপ ছাড়াই প্রথম এক বছর সামলাইতে পারবেন কিনা বুঝে নিন।

স্টুডেন্টদের কাজ করার অনুমতি আছে কিনা , থাকলেও কয় ঘন্টা, কাজের সহজলভ্যতা ইত্যাদি আগেই হিসাব করে নিবেন।

ইউরোপে ওরা স্কলারশীপ ভর্তির সাথে সাথে জানিয়ে দেয়। সেই কাগজ নিয়ে ভিসা পাওয়াও সম্ভব । তাই অনেক নিরাপদ । বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অনেক কম যেহেতু আগে থেকেই জেনে যাচ্ছেন কত পাচ্ছেন, কত খরচ হবে আর নিজে পকেটে করে কত নিয়ে যেতে হবে। মাস্টার্স লেভেলে কাজ করার অনুমতি আছে এবং সেইটা দিয়ে কোন মতে থাকা খাওয়া চলে যায় । কিন্তু খবরদার সেলফ ফাইন্যন্সে যাওয়ার চিন্তা করবেন না এবং এইটা মনে রাখবেন , বেশির ভাগ ইউরোপে কেউ ইংরেজি বলে না , তাই কাজ পাওয়া খুবই কঠিন । অবশ্যই আগে ভাষা শিখতে হয়। কিছু দেশে প্রথম একটা বছর নষ্ট করতে হয় স্রেফ ভাষা শিখে । তারপর আসল পড়ালেখা শুরু। ইংলিশ মাস্টার্স হইলে অন্য কথা ।

স্কলারশীপের পরিমাণ কত ?

এডিবি, লিডারশীপ, কমন ওয়েলথ, ফোর্ড, রোটারি , এন এফ পি আরো হাবিজাবি স্কলারশীপ আছে । এগুলো সব ফুল স্কলারশীপ। টিউশন , থাকা , খাওয়া , মায় প্লেনের টিকেট পর্যন্ত দিয়ে দেবে। কিন্তুক , ঝামেলাটা হইলো, এই ধরনের যত স্কলারশীপ আছে , সব গুলাই কোর্স শেষ হওয়ার সাথে সাথে কানে ধরে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে। এবং তারপরের দুই বছর সেই দেশে ঢুকা যাবে না , নিজের দেশে কাজ করতে হবে, কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তা হইতে হবে, আবার অন্য আর কোন স্কলারশীপের জন্য বিবেচিত হবেন না ধরনের নানা রকম শর্ত জুড়ে দেওয়া থাকে। তাই আগেই খুব ভালো করে ভেবে নিন, আপনি কি দেশে ফেরত আসবেন?

তাহলে এই ধরনের স্কলারশীপের জন্য আবেদন করুন। আগে থেকে চেষ্টা করলে, লেগে থাকলে আর সরকারী জ্যাক থাকলে পেয়ে যাবেন। এসবে রেজাল্ট খুবই ভালো থাকতে হয়। টপ ১০% বা ৮০% মার্ক্স চায় ইত্যাদি ইত্যাদি । খুব ভালো করে প্রতিটা ইংরেজি বাংলা দৈনিকের চিপায় চাপায় চোখ দিয়ে রাখবেন । আর মাঝে মাঝেই এম্ব্যাসির খাটাস্মুখী বা মুখিনীদের হাই হ্যালো করে জিজ্ঞেস করবেন বা ঢাকাস্থ এম্ব্যসির ওয়েব হুতাগুতি করবেন , কখন এড দেয় । বৃটিশ কাউন্সিল , ইউসিস , আব জাব সব খানে চর লাগায় রাখবেন ।

কিন্তু এই সব কুতুব আর কয়জন? বাকি বটম ৯০% এর জন্য খোজাখুজিই ভরসা ।

সাধারন ইউনি স্কলারশীপ গুলা ভ্যরি করে । যাদের ফান্ড বেশি , নাম বেশি তারা পয়সা দেয় বেশি । যাদের ফান্ড কম , তারা টিউশন মাফ করে দেয় , থাকা খাওয়া আপনের ।

তবে , সবচাইতে বেহুদা বান্দর হইলো আমেরিকা , অজি আর বেনিয়া বৃটিশ । কারনটা আগেই বলেছি । নিজে কিছু গচ্চা দেওয়ার পরেই কিছু পাইবেন । তার আগে না । ইউ কের বায়োলজি স্কলারশীপের অবস্থা বড়ই করুন । সর্বোচ্চ ৮০%। বাকিটা দিতে জান কাহিল । এইটা পাবলিক হেলথ জাতীয় সাব্জেক্টের বেলাতেও সত্যি । আমেরিকা আবার যখন দেয় তখন ভালো করেই দেয় । তো আপনি যদি ভর্তি ও ভিসা সংক্রান্ত টাকা পয়সার ঝামেলা কাটাইতে পারেন তাইলে তো আর চিন্তা নাই ।

তবে আগেই বলেছি , আমেরিকা হইলো সব সম্ভবের দেশ । অনেক ইউনি আছে যেখানে ভর্তি কনফার্ম হয়ে যাওয়ার পরে অনেক স্কলারশীপের সম্ভাবনা খুলে যায় । দেশে ছাড়ার আগেই সেখানে স্কলারশীপ কনফার্ম করতেই পারেন ।

কোন সাবজ়েক্ট , কেন ?

কান ধরে যদি দেশে পাঠিয়ে দেয় তাহলে স্কলারশীপ কমিটি দেখবে কোন সাবজেক্ট আপনার নিজের দেশের জন্য প্রযোজ্য। আর তা না করলে অবশ্যই দেখবে কোন সাব্জেক্ট এর লোক ওদের নিজেদের লাগবে । সারা দুনিয়ায় ডাক্তাররা হইলো এতিম জাত । মেডিকেল কিংবা ডেন্টালের কোন বিদ্যাতেই কোন রকম স্কলারশীপ নাই । একমাত্র বিশ্ববিখ্যাত নামী দামী স্কলারশীপ ছাড়া মেডিকেল , ডেন্টালের সাব্জেক্ট পড়া যায় না । তাও আবার নন ক্লিনিকাল সাব্জেক্ট হইতে হয় । ক্লিনিকাল সাব্জেক্টে বিদেশে পড়তে চাইলে সেইটার লাইন ঘাট একেবারেই ভিন্ন । সরকারী কর্মকর্তা হইলে , ঐ সব বিশ্ববিখ্যাত স্কলারশীপ পাইলে , দেশে ফেরত আসিবার শর্তে রাজি থাকিলে তখন এই সব ভাবা যাইতে পারে । নাইলে ডাক্তার হইয়া বাইরে স্কলারশীপ খুজিবার কোনই মানে নাই । বাপ মা কোটিপতি হইলে ভিন্ন কথা ।

যারা ক্লিনিকাল সাব্জেক্ট ছেড়ে পাবলিক হেলথ, এনাটমি, ফিজিওলজি কিংবা এপ্লাইড বায়োলজিকাল সাইন্সেস পড়তে আগ্রহী তারা সময় থাকতে থাকতে এপ্লিকেশন পাঠিয়ে দিন। সাব্জেক্ট বেছে নেওয়ার সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা আমেরিকা ও কানাডায় । অনেক রকমের কম্বিনেশন নেওয়া যায় । তাছাড়া সাব্জেক্টের বৈচিত্রও ওদের অনেক বেশি । যারা নন ডাক্তার বায়োলজির কোন সাব্জেক্ট পড়েছেন , তাদের জন্য আমেরিকা এখনো স্বর্গ । প্রচুর স্কলারশীপ, প্রচুর গবেষনা , কাজেরও সম্ভাবনা ।

দেশে ফিরতে না চাইলে ডাক্তার আর ডেন্টিস্টদের স্বর্গ এখন অস্ট্রেলিয়া । একটা যে কোন সাব্জেক্ট নিয়ে ঢুকে পড়ার পরে লাইসেন্স পরীক্ষা পাশ করুন। ২ -৩ বছরে মাইগ্রেন্ট হয়ে যান । তারপর খালি টাকা আর টাকা । এমন কি পড়াও লাগবে না । দেশ থেকেই মাইগ্রেন্ট হয়ে চলে যান ওদের ডাক্তার কম এমন কোন রিজিওনে। চুক্তি করুন দুই বছরের । ব্যাস । আর দেখতে হবে না । সাব্জেক্টের মধ্যে মেডিকেল বায়োলজি থেকে শুরু করে বায়োটেকনলজি সবই আছে । কিন্তু ওরা স্কলারশীপ দেয় শুধু নিজের দেশের লোকজনকেই । মাইগ্রেন্ট বা সিটিজেন না হলে মাসে ১০০ , ২০০ ডলার পাবেন । তবে , মেয়েদের জন্য বেশ কিছু ভালো ভালো স্কলারশীপ আছে ।

ইউরোপে বায়োলজিকাল সাইন্সের বিভিন্ন ব্রাঞ্চে এখন প্রায় রেভেলুশন চলছে । আমেরিকার যেমন স্টেম সেল, জেনেটিক্স নিয়ে নানান রকম ধর্মীয় হ্যাপা আছে , ইউরোপে সেটা বেশ কম। তাই নরমাল বায়োলজিকাল সাব্জেক্ট ছাড়াও অনেক চ্যালেঞ্জিং নতুন নতুন মাস্টার কোর্স পাওয়া যায় , স্কলারশীপের পরিমান ও ভালো । ভাষা জনিত সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে পারলে কেল্লাফতে । পি এইচ ডি পাওয়াও কঠিন না ।

ইউরোপের আরো একটা জিনিস ভালো লেগেছে । পি এইচ ডি জিনিসটা নাকি ইউরোপে জবের মত । স্টুডেন্ট না এম্পলয়ি হিসেবে পি এইচ ডি করা যায় । বেতন ও খারাপ না ।মাস্টার্সের পরে পি এইচ ডি করতে চাইলে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার সাথে এইটা তুলনা করা যাইতে পারে ।

বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে উচ্চশিক্ষা, বৃত্তি/স্কলারশীপ এবং (প্রস্তুতি পর্ব)

প্রথমেই বলে নেই , এই পোস্ট কোন গবেষনা নয়, স্রেফ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে লেখা । নিজের কাজে খোঁজ করতে গিয়ে যা দেখেছি তাই লিখে দিলাম। দ্বিতীয়ত , এই লেখায় শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষার জন্য, তার মানে ব্যাচেলর নয়, তদুর্ধ্ব শ্রেনীর বৃত্তি নিয়ে লেখা । তৃতীয়ত , এখানে আমেরিকা বলতে উত্তর আমেরিকার দেশ মূলত আমেরিকা এবং কানাডা , অস্ট্রেলিয়া বলতে নিউজিল্যান্ডসহ এবং ইউরোপ বলতে ইউরোপের ধনী ও পরিচিত যে দেশগুলোয় বাংলাদেশ থেকে মানুষ পড়তে যায়, তাদের কথাই বলা হয়েছে । পড়ার সময় সেইভাবে ধরে নেবেন। আর শেষ কথা হলো, আপনার পড়ালেখাতে যদি বায়োলজি বিষয়টা না থাকে তো এই সব স্কলারশীপ আপনার জন্য নয়, আপনার ভাই বোন বন্ধুর কাজে লাগতে পারে । তবে , প্রস্তুতি পর্বটা সবার জন্যই কমন।

শুরু বা পরিকল্পনা পর্যায় ঃ

১। সময় ঃ আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতি যাই হোক না কেন , আপনি যেই মহাদেশেই যান না কেন , কিছুটা যোগ বিয়োগ করে সব কিছু ঠিক ঠাক করে নিতে প্রায় ১২ মাস লাগবেই বিশেষ করে স্কলারশিপ ও টাকা পয়সা যোগাড় ইত্যাদি। সুতরাং যখনই শুরু করুন না কেন, আগে জেনে নিন আপনি যেখানে যেতে চাইছেন , সেখানে কোন মাসে ক্লাস শুরু হয়? সেই মতে আপনার হাতে কতটুকু সময় আছে বুঝে নিন। একটা সাধারন নিয়ম হলো যেই বছর যেতে চাই তার আগের বছর থেকে কাজ শুরু করা।
২।তথ্য সংগ্রহঃ এরপর সময় নিয়ে যেই দেশে যাবেন সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ওয়েবসাইট খুটিয়ে খুটিয়ে পড়া। এর কোনই বিকল্প নাই, প্রচুর দিন, প্রচুর রাত নষ্ট হবে এই কাজটার পিছনে। কিন্তু, দিন রাত ২৪ ঘন্টা যদি লেগে থাকতে পারেন , তাহলে তার ফলও পাবেন হাতে নাতে । এমন কোন তথ্য পেয়ে যেতে পারেন যেটা হয়ত আপনার সময় , তারচেয়েও বড় কথা টাকা বাচিয়ে দেবে অনেক। সব সময়ই ওয়েব সাইটের বাইরে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে এমন কারো কাছ থেকে কেমনে কি জেনে নিন যদি সেই সুযোগ থাকে।
৩। তথ্য সাজানোঃ নির্দিষ্ট কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর কোন কোর্স পছন্দ হলে সাথে সাথে সেই কোর্সের সমস্ত তথ্য সারাংশ , বিভিন্ন লিঙ্ক আপনার খাতা/ফাইল/কম্পিউটারে টুকে নিন। ওহ আচ্ছা, বলে রাখি, সাজিয়ে গুছিয়ে কাজ করলে সবচেয়ে ভালো। খাতা বই এর যুগ যেহেতু শেষ , কম্পিউটারে ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশের ফোল্ডার, তার ভিতরে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোল্ডার করে তাতে কিভাবে তথ্য সাজাবেন, কি করে সে গুলো দ্রুত খুঁজে পাবেন সেভাবে পরিকল্পনা করে নিন।
কিছু ফাইল সব খানেই থাকবে যেমন,
ক) একটা ফাইলে সব কয়টা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন তারিখ ( এপ্লিকেশন, স্কলারশীপ, রেস্পন্স, সেমিস্টার ডেট ইত্যাদি) , পুরোটা পড়েছেন কিনা, কাগজ পত্র পাঠানো হয়েছে কি হয়নি ধরনের ম্যাট্রিক্সসহ একটা ইন্ডেক্স পেজ।
খ) আরেকটা ফাইল থাকবে ঐ মহাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সাধারনত কোন কাগজ গুলো কি ভাবে চায় তার লিস্ট । একেক জায়গায় একেক ভাবে চাইতে পারে । কমন বাদ দিয়ে যেইটা ব্যতিক্রম সেইটা লাল কালিতে উল্লেখ করে রাখলেই ভালো ।
৪। কাগজ পত্র তৈরীঃ একাডেমিক সমস্ত কাগজ এর মূল এবং দরকার হলে ইংরেজী কপি (এটাও মূল) তৈরী রাখুন। বিভিন্ন সার্টিফিকেট বলতে আমরা যা বুঝি ( এস এস সি, এইচ এস সি , মেডিকেল/ডেন্টাল/ইউনি , ডাক্তারদের বি এম ডি সি রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি) তার বাইরে কিছু কাগজ নিয়ে মহা ঝামেলা লাগে । যেমন,

ক)ট্রান্সক্রিপ্ট- এইখানে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় একটা কাগজেই আপনি কি কি বিষয় পড়েছেন, সেই সবের মেজর মাইনর, কত অংশ তাত্ত্বিক আর কত অংশ প্র্যাক্টিকাল বা ল্যাব/ ক্লিনিকাল করেছেন তার ঘন্টা ও বিষয়সহ উল্লেখ, আপনার সমস্ত গ্রেড/রেজাল্ট , আপনি সার্বিক বিচারে আপনার ক্লাসের টপ ১০% এ পড়েন কিনা জাতীয় তথ্যসহ এক নজরে একটা ছক আকারে দিয়ে দেবে। দুঃখের কথা হলো, এই ট্রান্সক্রিপ্ট জিনিসটা খায় না মাথায় দেয় সেইটা অনেক সরকারী ও বনেদী মেডিকেল কলেজ কিংবা বায়োলজি শিখানেওয়ালা বিশ্ববিদ্যালয় জানবেই না । জানলেও যা দেবে সেইটা আপনার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা চেয়েছে তার ধারে কাছে নাও থাকতে পারে। এত ডিটেইলস বেশির ভাগ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়/মেডিকেল/ডেন্টাল দেয় না।
ঠেকায় পড়লে নিজেই বানিয়ে নিন। তারপর অফিসিয়াল প্যাডে প্রিন্ট করে অফিস থেকে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন ছিল ছাপ্পর, সাক্ষরসহ। খেয়াল রাখবেন, ওরা খোঁজ করলে এইদিকে কেউ যেন রেফারেন্স হিসেবে সত্যতা প্রমান দিতে পারে । কথা হলো, আপনার কাগজ আপনার বানানো হইলে সমস্যা নাই যতক্ষন পর্যন্ত আপনার সব কিছু অফিসিয়াল প্যাডে থাকে আর সংশ্লিষ্ট লোক জন জানে এই রকম একটা কিছু কোথাও পাঠানো হয়েছে । বলা যায় না, আল্লাহ করে তো আপনারটা দেখেই হয়ত ওরা নিজেদেরটা বদলে নেবে। আপনার ট্রান্সক্রিপ্ট যদি আপনাকেই বানাইতে হয় তাহলে সেইটার কয়েক কপি মেডিকেলের/ইউনির অফিসে দিয়ে রাখবেন।

খ) মোটিভেশন লেটার- আপনি কেন পড়তে চান, পড়িলে কি করিবেন, পাশ দিয়া আল্লাহর দুনিয়াতে কি কি বিপ্লব করিবার ইচ্ছা রাখেন সহ আরো অনেক কিছু উল্লেখ করে এই লেটার লিখতে হতে পারে । সুতরাং, আগে দেখে নিন যাকে পাঠাবেন সে কোন ফর্ম আগেই দিয়ে রেখেছে কিনা। অনেক সময় ফর্ম না থাকলেও আগের বছরের সাকসেস্ফুল কুতুবেরা কি লিখিয়াছিলেন তা দেওয়া থাকে। ঐ সব পড়ে জ্ঞানী হইয়া তারপর লিখেন। নিশ্চিত থাকেন যে এই লেটার আপনার গন্ডায় গন্ডায় পারমুটেশন কম্বিনেশন করে শ’খানেক লিখতেই হবে। এক একটা এক এক জায়গার ইউনির জন্য।
গ) আগের গবেষনা কিংবা কাজের অভিজ্ঞতার বর্ননা ( যদি প্রযোজ্য হয়) – এইটার সারাংশ থেকে শুরু করে কাকে কবে চোখ মেরেছিলেন জাতীয় ডিটেইলসসহ চাহ্নেওয়ালা লোকও এই দুনিয়ায় আছে। সুতরাং, যেখানে যা চায় যেভাবে চায় খেয়াল করে এইটার বর্ননা লিখুন এবং নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোল্ডারে সেভ করুন।কি নিয়ে গবেষনা করেছিলেন, কারো ফান্ড জিতেছিলেন কিনা, ডিজাইন থেকে কন্ডাক্ট ও রিপোর্ট রাইটিং পুরোটাই আপনার নিজের কুকাম কিনা এই সব উল্লেখ করতে হইতে পারে।
ঘ) রেকমেন্ডেশন লেটার- অনেক জায়গায় সাধারন কাগজে প্রিন্ট করে প্রফেসর , বস ইত্যাদির সাইন নিয়ে নিজে পাঠালেই চলে। তবে আজকাল বেশির ভাগ ইউনি নির্দিষ্ট ফর্ম দিয়ে দেয়। ওয়েব সাইট থেকে প্রিন্ট করে সেইটা যেই প্রফেসর কিংবা বস রেকমেন্ড করবেন তিনি নিজে পূরণ করবেন, সম্পূর্ন গোপনীয়তা রক্ষা করে সিল গালা মেরে তিনিই পাঠাবেন। মানে আপনার নিজের সেইখানে কিছু করার নাই। তবে, ইউনি তো আর এসে দেখে যাচ্ছে না। সুতরাং, ব্যস্ত প্রফেসরের পিছনে না ঘুরে যা করার করে নেন, তারপর তাকে ভালো করে দেখিয়ে সাইন করে অবশ্যই অবশ্যই অফিসিয়ালি , মানে অফিসের খামে , সিল সহ পাঠান।এই কান্ঠামিটা করতে বলতে খারাপ লাগছে কিন্তু ভুক্তভোগী হিসেবে জানি রেকমেন্ডেশনের মত একটা অতি জরুরী কাজ অনেক প্রফেসর হয় বোঝেনা, নয় করতে চায় না। এইসব ব্যাপারে লাক আর ব্যক্তির উপর নির্ভর করে সময়মত ভালো জিনিস পাবেন কিনা।

ঙ) ইংরেজী কিংবা মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য ভাষার লেভেল – আগে দেখে নিন ভাষার ব্যাপারে ওরা কি চাচ্ছে। টোফেল, জি আর ই, আই ই এল টি এস ইত্যাদির গ্রেডিং এর পদ্ধতি ওদের নিজের । ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার ব্যাপারে অফিসিয়াল সার্টিফিকেট (কোন অথরিটি থেকে পরীক্ষা দিয়ে পাওয়া) না থাকলে রিডিং, রাইটিং, স্পোকেন, লিসেনিং এই ভাবে ভাগ করে নিজেই গ্রেড দেওয়া লাগতে পারে । সেক্ষেত্রে দেখে নিন গ্রেডিং এর বর্ননা বা স্ট্যান্ডার্ড কোথাও ব্যাখ্যা করা আছে কিনা। আপনার নিজের লেভেল কোন গ্রেডের সাথে মেলে। গুগুল করলেই পাবেন।যেমন- বাংলা ইংরেজির বাইরে আমি হিন্দী কেবল বলতেই জানি, লিখতে পড়তে পারি না ইত্যাদি। বায়োলজির জন্য আলাদা জি আর ই আছে। বাংলাদেশ থেকে দেওয়া যায় কিনা জানি না। না গেলে জেনারেলটাই সই। উল্লেখ্য, জি আর ই পড়তে কয়েক মাস থেকে বছর খানেক সময় লেগে যেতে পারে । সুতরাং যেই মহান ভোরে বাইরে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিবেন, সেই দিন থেকেই কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়তে শুরু করে দিন।

চ) এর বাইরে কিছু কাগজ লাগলেও লাগতে পারে । সাধারনত লাগে না । যেমন- বার্থ সার্টিফিকেট যদি যেখানে জন্মাইছিলেন সেইখানে যাওয়া লাগে তো বিরাট ক্যাচাল। সিটিজেনশীপ (নাগরিকত্ব) এর সার্টিফিকেট লাগে না, লাগার কথা না কারন আপনার পাসপোর্ট প্রমান করে আপনি বাংলাদেশের নাগরিক। ম্যারেজ সার্টিফিকেট হইলো সবচেয়ে ঝামেলার।কাজীর অফিস থেকেই রেজিষ্ট্রির জন্য পাঠিয়ে দেবে। দায়িত্ব নিয়ে উঠানোর দায় আপনার। তারপর অবশ্যই ফরেন মিনিষ্ট্রি থেকে সত্যায়িত করে নিবেন। আল্লাহর রহমতে পরিচিত কেউ না থাকলে এইটা করতে বছর কাবার না হয়ে যায়, এইটা মনে রাইখেন। যারা শহীদ হইয়া বাইরে যাইতে চান ও বউ/স্বামী সাথে লইবেন ভাবেন, তারা বিবাহের পরে হানিমুন বাদ দিয়া আগে এই কাজটা করবেন। অনেকে দেখি পুলিশ ভেরিফিকেশন, এন ও সি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। এই সব লাগে ভাই মাইগ্রেশন করতে। পড়তে যাওয়ার জন্য এই সব লাগে না।

ছ) কাগজ পত্তর সব রেডি হয়ে গেলে সব কয়টার স্ক্যান করে পি ডি এফ বানায় সেভ করে রাখেন। আখেরে অনেক কাজে দিবে।

জ) যেই সব এক্সট্রা কারিকুলার কাজ, কর্ম, শখরে আমাগো আব্বা আম্মা কিংবা চাচা -মামারা পাত্তাই দেয় না , সেই সবের দাম বাইরে অনেক বেশি। বুকিশ পাব্লিক কেউ চায় না, পছন্দও করে না। স্কলারশীপ পাইতে হইলে যা যা করেন, করেছেন সেইটার একটা কাগুজে বা প্রমান করা যায় ডকুমেন্ট রাখতে পারলে ভালো। খেলা ধুলা, গান বাজনা , প্রতিযোগিতা তো আছেই, আপনি যদি ভলান্টিয়ার, অর্গানাইজার হোন তাইলে ছবি তুলেন, পত্রিকায় প্রকাশ হইলে কাইটা রাখেন, অন লাইন ম্যাগাজিন হইলে লিঙ্ক সেভ করেন, স্কুল কলেজের ওয়েব সাইট বা বই পত্তরে ছাপায়ে রাখেন। কখন যে কোনটা কাজে লাগবে, কিছুই বলা যায় না। টেরিফক্স রান, নিখিল বাংলাদেশ কুত্তা রক্ষা কমিটি, গাছপ্রেমী যাই হোন না কেন, আপনার সদস্যপদ সি ভিতে উল্লেখ কইরেন। তবে, আগে বুইঝা নিবেন কে কি চায়, আর কে কি একেবারেই চায় না।

সবার শেষে সবচেয়ে জরুরী জিনিস এপ্লিকেশন। ফর্ম সব কয়টা ইউনির ওয়েব সাইটেই পাবেন। আজকের দুনিয়াতে অন লাইন এপ্লিকেশন করা ডাল ভাত। অনেক ইউনিতেই এই ব্যবস্থা আছে। আবার অনেক ইউনি কমন একটা ওয়েব এপ্লিকেশন নেয়, আলাদা আলাদা করে করার দরকার হয় না। পূরণ করলে আপনাকে নাম্বার দেবে একটা পাসোয়ার্ড , একাউন্ট ইত্যাদি সহ। দরকার হইলে পরে ঢুকে আরো তথ্য যোগ করতে পারবেন। অনেক জায়গায় একাডেমিক কাগজ পত্র পি ডি এফ চায়। সেইগুলা আপ্লোডাইতে পারবেন। পাশাপাশি হার্ড কপি মেইল করে দিতে হবে। অবশ্যই রেজিস্ট্রি মেইল করবেন, অন লাইন ট্রাকিং করা যায় এমন জায়গা থেকে মেইল করবেন। এই সব মেইল হারানো গেলে জীবনটাই বিলা!

ভাই, ভুল করেও মূল কপির ফটোকপি নোটারি কিংবা বোর্ড, মিনিস্ট্রি এই সব জায়গায় সত্যায়িত করতে দৌড়াবেন না। মূলকপি সাথে থাকা মানেই এক সাথে দেখে যিনি দেখলেন তিনি নিজেই সত্যায়িত করে দিতে পারবেন। সেইটা এম্ব্যাসির লোক নিজেই হইতে পারে। সুতরাং, ভালোভাবে জেনে নিন সত্যি সত্যি ভেরিফিকেশন লাগবে কিনা। কেউ মাতবরি করতে চাইলে ভদ্র কিন্তু শক্ত ভাষায় চ্যালেঞ্জ করুন। কাগজ পত্র রেডি? এইবার তাহলে , পাঠানোর পালা।

এইটা কি পাইলাম? বাংলাদেশী কন্সপিরেসী থিওরী ? আমাদের নেতারা কে? কোথায় , কি ভাবে ? - ২

নেট ঘাঁটছিলাম অন্য কাজে । কেঁচো খুড়তে পরিবার বেরিয়ে গেলো । কিছুদিন আগে এই পোস্টটা লিখেছিলাম । সেখানে বলা ছিলো ঃ

আমি যেই তালিকা গুলো প্রতিটা বছর শেষে দেখতে চাই!

১। বাংলাদেশের প্রতিটা রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরা কে কার সাথে "ব্যবসা" , "আত্মীয়তা" , "রক্তের সম্পর্ক" সূত্রে আবদ্ধ । নাম ও আবদ্ধতার তরিকা সহকারে ।

২। প্রতিটা নেতা নেত্রীর ছেলে মেয়ে কে কোথায় পড়ে বা কাজ করে কিংবা কার সাথে সংসার করে ।

৩। নির্বাচিত প্রতিটা জনপ্রতিনিধির প্রত্যেকে প্রতি মাসে বাংলাদেশের জনগণের রক্ত জল করা ট্যাক্সের টাকার কি পরিমাণ বিভিন্ন সরকারী অফিস , সংসদ , সেবা (টেলিফোন, গাড়ি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি) ইত্যাদির মাধ্যমে ভোগ করেছেন । কত টাকা বিল বাকি রেখে সটকেছেন। অতীত , বর্তমান মিলিয়েই সন্নিবেশ করতে পারেন। বর্তমান ( আওয়ামী লীগ) হইলে আরো ভালো ।

এরশাদের বোনের নাম - যেই বোন ভিকারুন্নিসাতে ছিলো- নেট ঘাটতে গিয়ে কাছাকাছি কিছু একটা পেলাম। বড়ই মজার জিনিস !

----------------------------------------

লেখার শুরু প্রেমের জয় নিয়ে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিমের ছেলে ব্যারিষ্টার ফজলে নাঈম ও বি এন পির তুখোড় নেতা ইকবাল হাসান টুকুর কন্যা ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন এর প্রেম ও বিয়ে নিয়ে । কিন্তু প্রেম তো দেখা যায় এই এক বিয়েতেই না ! সব দেখি আমরা আমরাই!
--------------------------------------

মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই - আনন্দের আর সীমা নাই

পাকিস্তান ন্যাশনাল এসেমব্লির স্পীকার ছিলেন আব্দুল জব্বার। তাঁর পূত্র - কন্যারা

১। ওবায়দুল্লাহ খান প্রাক্তন মন্ত্রী, সেক্রেটারী ও কবি
২। সাংবাদিক সাদেক খান
৩। মরহুম এ জি এম এনায়েতুল্লাহ খান ( সাংবাদিক ও কূটনীতিবিদ)
৪। রাশেদ খান মেনন ( প্রেসিডেন্ট , ওয়ার্কার্স পার্টি)
৫। ব্যবসায়ী শহীদুল্লাহ খান বাদল , নিউ এজ পত্রিকার প্রকাশক
৬। মনন , প্রবাসী
৭। বাবলু ও লাবলু ( অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী)
৮। প্রাক্তন মন্ত্রী সেলিমা রহমান
৯। শিরিন, চেরী ও মিমি

এর ভিতর সেলিমা জোট সরকারের মন্ত্রীত্ব করেছেন আর আজকে রাশেদ খান মেনন সব পত্রিকার শিরোণামে ভিকারুন্নিন্সার ভর্তির টাকা কেলেংকারি নিয়ে।

সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খান মিন্টু ১ম বিয়ে করেন লীনা খানকে - পৃথিবী বিখ্যাত আর্কিটেক্ট এফ আর খান এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডঃ জিল্লুর রহমান এর বোন। ডঃ জিল্লুর রহমান আমেরিকা প্রবাসী এবং বিয়ে করেছেন তানজিনা রহমান লোটনকে - যিনি তাসমিমা হোসেইন এর বড় বোন। এই তাসমিমা হোসেইন আবার প্রাক্তনমন্ত্রী ও মানিক মিয়া এর পূত্র আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর স্ত্রী । এনায়েতুল্লাহ অবশ্য বার্মার এম্বেসেডর থাকাকালীন একজন বার্মিজকে বিয়ে করেন এবং পরে বিয়ে করেন ঢাকা ভার্সিটির সাবেক চ্যান্সেলর এর কন্যা টিভি ব্যক্তিত্ব নাজমা চৌধুরীকে । নাজমা নিজে অবশ্য আগে মেজর জেনারেল আব্দুর রহমান ও অভিনেতা উৎপলের সাথে বিবাহিত ছিলেন ।

শহীদুল্লাহ খান বাদল বিবাহিত ডাঃ নায়লা খান এর সাথে । কর্নেল কাজি নুরুজ্জামান - ১৯৭১ এর সেক্টর কমান্ডার- নায়লা ও বোন লুবনা মরিয়মকে অনেকেই হয়ত চিনবেন মুক্তির গান ছবিটি থেকে । নৃত্যশিল্পী লুবনার কন্যা আনুশেহ বিখ্যাত ব্যান্ড "বাংলা" এর গায়িকা এবং বিয়ে করেছেন বুনোকে , বুনো সিলেট - ৪ এর প্রাক্তন সাংসদ ইমরান আহমেদের পুত্র।
-----------------------------------------
রাষ্ট্রের পতি ও ডাক্তার ঃ

বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর বাবা ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের এম পি কফিলুদ্দিন চৌধুরী । বদরুদ্দোজা রাজনীতিতে নামেন জিয়ার হাত ধরে । প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেও শেষ পর্যন্ত বি এন পি ত্যাগ করে তাঁকে নতুন দল করতে হয় , বিকল্প ধারা - পরে এল ডি পি - এবং আবার বিকল্পধারা । এখন মজার ব্যাপার হইলো এই বি চৌধুরীর বউ হলেন মায়া। মায়া পান্না কায়সারের বোন। ফলে শমী কায়সার আর মাহী বি চৌধুরী আসলে খালাত ভাই ও বোন। পান্না কায়সারের স্বামী শহীদুল্লাহ কায়সার শহীদ বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক । শহীদুল্লাহ কায়সারের ছোট ভাই স্টপ জেনোসাইড খ্যাত জহির রায়হান , স্বাধীনতার পরে বড় ভাইকে খুঁজতে গিয়ে নিহত হন। এই জহির রায়হানের কাজিন হলেন সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। শাহরিয়ার কবির ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির হাল ধরেন মুক্তিযুদ্ধের বিখ্যাত গেরিলা রুমির মা জাহানারা ইমাম এর মৃত্যুর পরে। শাহরিয়ার কবির বিয়ে করেছেন বিচিত্রা সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরীর বোন ডানাকে । উল্লেখ্য , আশির দশকে এই শাহরিয়ার কবিরই বিচিত্রা পত্রিকার মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত শিবিরের উত্থান ও রগকাটা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন।
-----------------
জাদু - সব জাদু

রাজনীতিবিদ মসিউর রহমান যদু মিয়ার পুত্র শফিকুল গণি স্বপন ছিলেন এরশাদের যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী । যদু মিয়ার কন্যা মুক্তি রহমান বিয়ে করেন এরশাদের শালা কূটনীতিবিদ মহিউদ্দিন আহমেদকে । আরেক কন্যা সাংবাদিক রিটা রহমান বিয়ে করেন মেজর (অবঃ) খায়রুজ্জামানকে - মুজিব হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতার কথা উঠলেও পরে অভিযোগ সরিয়ে নেওয়া হয়। খায়রুজ্জামানকে রিকল করা হলে মালয়শিয়ার হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেও দেশে ফেরেন নাই। ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল যদু মিয়ার ভাই শিদু মিয়ার কন্যা।
---------------------
মোহন বাঁশী
রাজনীতিবিদ ও জমিদার মোহন মিয়ার পুত্র চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ও আকমল ইবনে ইউসুফ- বি এন পির নেতা । কামাল জোট সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন।

চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এর কন্যা বিয়ে করেছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের পুত্র শফিউর রহমান বাবুকে।
মোহন মিয়ার কন্যাকে বিয়ে করেন আলমগীর মোহাম্মদ আদেল। ইনি এরশাদের সময়কার মেয়র জাহাঙ্গীর মোঃ আদেল এর ভাই। আর এই জাহাঙ্গীর আদেল এর শ্বশুর হইলেন পূর্ব পাকিস্তানের কুখ্যাত গভর্নর ( ১৯৭১) মোনায়েম খান। ( কি সুন্দর কিসমত কানেকশন , তাই না?)
সায়মা , বি এন পি নেতা ওবায়দুর রহমানের কন্যা , বিয়ে করেন চয়ন ইসলামের ভাইকে - এই চয়ন সিরাজগঞ্জের আওয়ামী নেতা ও মরহুম ডাঃ মাজহারুল ইসলামের পুত্র।
সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাসের স্ত্রী হলেন রাশেদ খান মেনন এর কাজিন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তালুকদার মনিরুজ্জামানের কন্যা বিবাহ করেছেন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ডঃ এস এ মালেকের পুত্রকে । বি এন পির এম মোকাম্মেল হোসেন কায়কোবাদ এর ভাই বিয়ে করেছেন শেখ পরিবারে। ( ধুরু , ডিটেইলস কই?)
-------------------------
বাংলাদেশের আরেক সালমান ঃ

সালমান এফ রহমান এর বাবা ফজলুর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের মন্ত্রী । ভাই সোহেল এফ রহমান এর সাথে সালমান গড়ে তোলেন বেক্সিমকো গ্রুপ ( বাংলাদেশের জনগণের শত শত কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নিয়ে মেরে দিয়ে ) । মজা হইলো , সালমান আওয়ামী লীগের ম্যান্ডেটে নির্বাচন করেন ঢাকা দোহার আসন থেকে এবং হেরে যান নিজেরই ভাগনা কিংবা ভাতিজা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কাছে । জোট সরকারের সময় ঝামেলা হলেও এখন সালমান বেশ সুখেই আছেন । তার পুত্র সায়ান রহমান বি এন পি নেতা মোরশেদ খানের কন্যার সাথে বিবাহিত।

আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া , বি এন পির জাঁদরেল নেতা, এর পুত্র বিয়ে করেছেন শেখ কবিরের কন্যাকে। শেখ কবির হলেন শেখ মুজিবের কাজিন ও শেখ হাসিনার চাচা, রেড ক্রিসেন্টের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ছিলেন আইউব খানের শিল্পমন্ত্রী । তার পুত্র বি নে পি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু- জোট সরকারের মন্ত্রী- তার বোন ডঃ তাসমিমা বিয়ে করেছেন এরশাদের মন্ত্রী ডঃ মতিনকে।

ডঃ ফকরুদ্দিন আহমেদ এর বাবা বিক্রমপুরের ডঃ মহিউদ্দিন আহমেদ। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কর্মকর্তা ফকরুদ্দিন এর খালেদার নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার কথা থাকলেও ১/১১ এর পরে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে তিনি দেশ থেকে পালিয়েছেন। ইনি বিয়ে করেছেন সিলেটের বিখ্যাত চৌধুরী বংশে। তাঁর বউ এর ভাইয়েরা হলেন এম্বেসাডর ফারুক আহমেদ চৌধুরী , সেক্রেটারী ও খালেদা জিয়ার এডভাইসর এনাম আহমেদ চৌধুরী এবং ( ওয়াও ) ইউ এন এ বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ( আর কি লাগে!) ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কর্মকর্তা ডঃ ফখ্রুদ্দিন শালা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী এবং তার বউ এর কাজিন গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরীকে কেয়ারটেকার সরকারের উপদেষ্টা বানিয়েছিলেন এবং গীতি আরা সবার আগে যেই মহান পূণ্যটি করেন তা হলো আদমজী জুট বন্ধ করে হাজার হাজার মানুষকে পথে বসানো। তার স্বামী নাজিম কামরান চৌধুরী সিলেট চার থেকে বি এন পির সাংসদ নির্বাচিত হন ১৯৭৯ সালে।

এম্বেসেডর শমশের মবিন চৌধুরীকে আবার এম্বেসেডর ফারুক চৌধুরীর কাজিন।

তুমি আমি দুজনে নির্জনে সাজাব প্রেমের পৃথিবী ঃ নাজমুল হুদা - সিগমা হুদা ।

হুমায়ুন কবির , আলমগীর কবির , আকবর কবির ও ফিরোজ কবির হইলেন কবির ভাই'স ফ্রম ফরিদপুর ( ভাবযযযযযয)। চতুরঙ্গের সম্পাদক হুমায়ুন কবির ছিলেন নেহরুর মন্ত্রী। আলমগীর কবির আইজিপি ও কেয়ারটেকার সরকারের উপদেষ্টা। ফিরোজ কবির বিয়ে করেছেন রাঙামাটির রাজপরিবারে , হয়েছেন রাজা দেবাশীষের আঙ্কেল। তবে উনার ১ম স্ত্রী রোকেয়া রহমান , ঢাকা ইউনির ইতিহাসের প্রফেসর ও এন জি ও সপ্তগ্রামের ফাউন্ডার।

আকবর কবির- জিয়ার সরকারের ইনফরমেশন এডভাইসর - কন্যারা হলেন আলফা, সিগমা, খুশি ও পুত্র বাবর কবির । সিগমা একজন উকিল ও ব্যারিস্টার নাজমুদ হুদার সাথে বিবাহিত। খুশি কবির " নিজেরা করি' এন জি ও চালান।

চট্টলার ঃ মাই নেম ইজ খান থুক্কু চৌধুরী

পাহাড়ের নগরী , কর্নফুলীর চট্টলাতে তিনটি রাজনৈতিক পরিবার বেশ প্রসিদ্ধ ।

ফজলুল কাদের চৌধুরী ( ফকাচৌ) ও নবী মাহমুদ চৌধুরী পরিবার মুসলিম লীগের সমর্থক এবং এম এ আজিজ আওয়ামী লীগের। এম আজিজ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এম এন এ ছিলেন পাকিস্তান পিরিওডে। আর নবী চৌধুরী পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন তিন বার। তার ছেলে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছিলেন খালেদার বাণিজ্য মন্ত্রী।
ফকা চৌ ছিলেন পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী। তার দুই ছেলে সাকা চৌ ও গিকা চৌ । সাকা চৌ বিয়ে করেছেন আলমগীর মোহাম্মদ আদেলের কন্যা- অর্থাৎ কুখ্যাত মোনায়েম খানের জামাতা জাহাঙ্গীর আদেলের ভাইয়ের কন্যাকে। গিকা বিয়ে করেছেন সাবেক কেবিনেট সেক্রেটারী মুজিবুল হকের কন্যা মিনাকে।

আওয়ামী লীগ নেতা ও মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী হইলো আদতে কুখ্যাত ফকা চৌধুরীর কাজিন। এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী , সাকা চৌর কাজিন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের এম পি হন। সাকার ছেলে বিয়ে করেছেন ব্যবসায়ী রওনক খন্দকারের কন্যাকে।
হেদায়েত রশীদ চৌধুরী , এইচ আর সি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা , বিয়ে করেছেন ফকা চৌধুরীর বোনকে। তাদেরই দুই পুত্র হইলো সাবের হোসেন চৌধুরী আর সাঈদ হোসেন চৌধুরী। মানে ইনারা হইলেন সাকা চৌধুরীর কাজিন। সাবের কিন্তু শেখ হাসিনার কাছের লোক।
আবার এদিকে হারিস চৌধুরী , খালেদা জিয়ার পলিটিকাল সেক্রেটারী , সাবের হোসেন চৌধুরীর কাজিন। সাবের হোসেন চৌধুরীরই আরেক কাজিন হইলো সাবেক আর্মি চীফ মেজর জেনারেল নাসিম ( ব্যর্থ ক্যু এর জনক) ।

আবদুল্লাহ আল হারুন , বি এন পি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের ভাই, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা । নোমান নিজে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন, পরে বি এন পিতে যোগ দেন। নোমানের ভাই আবদুল্লাহ আল হাসান বিয়ে করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মালেক উকিলের কন্যাকে । মেয়র মহিউদ্দিন আবার এই নোমানের দুর সম্পর্কের মামা।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী নাকি আবার সাকা চৌ ও সালমান এফ রহমান এর আত্মীয় ( কেমনে, তা তো কইলো না)

মাই নেম ইজ খান, এ কে খান ঃ

এ কে খান পরিবার মূলত চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী পরিবার তবে এ কে খান পাকিস্তান পিরিয়ডে মন্ত্রী ছিলেন। ভাগনী দুরানী বিয়ে করেছেন বি এন পি নেতা ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানকে। আরো দুই ভাগনী ( নাকি ভাতিজি) বিয়ে করেন কর্নেল ফারুক ও কর্নেল রশীদকে - যারা শেখ মুজিবকে হত্যা করেন। জিনাত , আরেক ভাগনী , জেনারেল এরশাদের সাথে পরকীয়া করে বিখ্যাত হয়ে আছেন, স্বামী বি সি আই সির চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারি মুশাররফ হোসেন এর বর্তমানেই। পরে জিনাতকে ডিভোর্স দেন মোশাররফ। এই জিনাত আর (বি এন পি নেতা ও সালমান এফ রহমানের বেয়াই) মোরশেদ খান হলো কাজিন।

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছিলেন এরশাদের আমলে পানি সম্পদ মন্ত্রী। তিনি বর্তমান জাতীয় পার্টির এক্সেকিউটিভ চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী পারভিন পি কে এস এফ এর ডেপুটি ম্যানেজার । তার মা শামসুন নাহার পরাণ , চট্টগ্রামের একজন নারী নেত্রী ও ঘাসফুল এন জি ওর প্রতিষ্ঠাতা। পরাণের ভাই হলেন মেজর জেনারেল (অবঃ) সাঈদ । পরাণ জাতীয় পার্টি লিডার কাজী জাফরের ভাগ্নি/ ভাতিজি । কাজী জাফর ( চিনি জাফর?) এর আঙ্কেল কাজী জহিরুল কাইয়ুম আবার কুমিল্লা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৭১ এর এম এন এ।
আনিসুল ইসলামের কন্যা বিয়ে করেছেন ব্যারিস্টার মঈনুল হুসেন এর পুত্র জাভেদ হুসেনকে । আনিসুল - জাভেদের বর্তমান ফার্ম এনার্জি পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড এর চেয়ারম্যানও বটে।

শেখ কামালের বন্ধুমহল ( এইটা কেন দিলো? আরটিকেলটা কি লীগকে আক্রমণ করার জন্য ! মাবুদ জানে, কোন থিওরী না বানায় অনুবাদ করি)

নাহ, থাউক, বন্ধু হইলেই বা কি?

কিন্তু কথা হইলো , বি এন পি - জাতীয় পার্টি - লীগের আত্মীয়তা তো পাইলাম । জামায়াতের কানেকশন কই? নাকি জামাতের সাথে শুধু ব্যবসা ( গোপনে) আর রাজনীতির সম্পক্ক সব্বার? জামায়াত আসলে ঘাগু মাল। কমান্ডো স্টাইলে দল চালায় , তাও কারো কিছু জানা থাকলে আর কাপুরুষ না হইলে জানায়েন।

কেন রাজনীতিবিদদের খুন খারাবি, দুর্নীতি , কোন কিছুরই বিচার হয় না - এখন বুঝা যাচ্ছে । এরা সবাই আত্মীয় - পার্টনার । তবে এই তালিকা থেকে সমাজের সুশীল অংশ এবং বিচার বিভাগের আত্মীয় বন্ধুরা বাদ গেছে । বাদ গেছে অনেক আমলাদের নামও ।

খালেদা জিয়ার আত্মীয় স্বজনদের কানেকশন তেমন পেলাম না । পেলাম না এরশাদ কাক্কুর আত্মীয় স্বজনের বর্ননাও । পেলাম না নিজামীর এক পুত্র যে পাকিস্তানের আর্মি অফিসার - সেই খবরও । আপনারা কেউ কি এই ঘাটতি গুলা পূরণে সাহায্য করবেন প্লিজ?

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): বাংলাদেশরাজনীতিকেকোথায়কেন?লীগবি এন পিজাতীয় পার্টি দ ;

http://www.somewhereinblog.net/blog/valobashablog/29125814

এইটা কি পাইলাম? বাংলাদেশী কন্সপিরেসী থিওরী ? আমাদের নেতারা কে? কোথায় , কি ভাবে ?

নেট ঘাঁটছিলাম অন্য কাজে । কেঁচো খুড়তে পরিবার বেরিয়ে গেলো । কিছুদিন আগে এই পোস্টটা লিখেছিলাম । সেখানে বলা ছিলো ঃ

আমি যেই তালিকা গুলো প্রতিটা বছর শেষে দেখতে চাই!

১। বাংলাদেশের প্রতিটা রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরা কে কার সাথে " ব্যবসা" , " আত্মীয়তা" , " রক্তের সম্পর্ক" সূত্রে আবদ্ধ । নাম ও আবদ্ধতার তরিকা সহকারে ।

২। প্রতিটা নেতা নেত্রীর ছেলে মেয়ে কে কোথায় পড়ে বা কাজ করে কিংবা কার সাথে সংসার করে ।

৩। নির্বাচিত প্রতিটা জনপ্রতিনিধির প্রত্যেকে প্রতি মাসে বাংলাদেশের জনগণের রক্ত জল করা ট্যাক্সের টাকার কি পরিমাণ বিভিন্ন সরকারী অফিস , সংসদ , সেবা (টেলিফোন, গাড়ি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি) ইত্যাদির মাধ্যমে ভোগ করেছেন । কত টাকা বিল বাকি রেখে সটকেছেন। অতীত , বর্তমান মিলিয়েই সন্নিবেশ করতে পারেন। বর্তমান ( আওয়ামী লীগ) হইলে আরো ভালো ।

এরশাদের বোনের নাম - যেই বোন ভিকারুন্নিসাতে ছিলো- নেট ঘাটতে গিয়ে কাছাকাছি কিছু একটা পেলাম। বড়ই মজার জিনিস !

----------------------------------------

লেখার শুরু প্রেমের জয় নিয়ে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিমের ছেলে ব্যারিষ্টার ফজলে নাঈম ও বি এন পির তুখোড় নেতা সারাহ হোসেন এর প্রেম ও বিয়ে নিয়ে । কিন্তু প্রেম তো দেখা যায় এই এক বিয়েতেই না ! সব দেখি আমরা আমরাই!
--------------------------------------

শেখ পরিবার দিয়েই শুরু হোক ঃ

শেখ কামাল, শেখ মুজিবের বড় ছেলে ও হাসিনার বড় ভাই, বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ ছিলেন ক্রিড়াবিদ সুলতানার সাথে , ঢাকা ইউনিভার্সিটির চিফ ইঞ্জিনিয়ার এর কন্যা । সুলতানার ভাই রফিক ও খোকন এখন ঢাকায় বাস করেন।

শেখ জামাল , মুজিবের ২য় পূত্র বিয়ে করেন মুজিবের শালা জয়েন্ট সেক্রেটারি এ টী এম মোঃ হোসেন এর কন্যা পারভিন রোজিকে।
শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার বোন, বিয়ে করেন ডঃ শফিক সিদ্দিকিকে- যার ছোট দুই ভাই হোলেন রফিক সিদ্দিকি এবং মেজর জেনারেল (অবঃ) তারেক সিদ্দিকি । তারেক সিদ্দিকি ডিফেন্স এডভাইসর হিসেবে কাজ করেছেন। রেহানার শ্বশুর হল সিদ্দিক মাস্টার যার মালিকানা ছিলো এখন যেই এলাকা সবাই বনানী নামে চিনে সেই এলাকা , পাকিস্তান সরকার নিয়ে নেওয়ার আগে । আইভি রহমান , প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী , ছিলেম এই সিদ্দিক মাস্টারের শালী । তো , প্রেসিডেন্ট জিল্লুর তার মানে শেখ হাসিনার খালু।

শেখ মুজিবের ছোট ভাই শেখ নাসেরের পূত্র , বর্তমান সাংসদ শেখ হেলালের কন্যা বিয়ে করেছেন জাতীয় পার্টির নেতা নাজিউর রহমান মঞ্জুরের পূত্র ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থকে । পার্থ এখন ভোলার সাংসদ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট।

শেখ ফজলুল হক মণি , শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং শেখ মারুফ হলেন শেখ মুজিবের বড় বোনের তিন পূত্র । হাসিনার ফুফাত ভাই।

শেখ মণির দুই ছেলে - ব্যারিস্টার তাপস ও পরশ । তাপস ধান্মন্ডির সাংসদ।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ সেলিম বর্তমানে সাংসদ এবং যুবলীগের চেয়ারম্যান ও ছিলেন। প্রভাবশালী এই নেতার কন্যা বিয়ে করেছেন স্বঘোষিত ও বিতর্কিত রাজপূত্র মুসা বিন শমশের এর ছেলেকে । এই বিয়ের উকিল বাপ হইলো আমগো হো মো এরশাদ । মুসা আদম ব্যবসায়ী , গ্যাটকোর মালিক, লন্ডনে রাজনৈতিক দলে চান্দা দিয়ে বিতর্কিত এবং টিভিতে তার বাড়ি দেখানোর পরে একটি বিখ্যাত টিভি শো হোস্টের চাকুরী চলে যায়। সেলিম পূত্র ফজলে নাঈম সম্প্রতি বি এন পি নেতা টুকুর কন্যা ব্যারিস্টার সারাহ হোসেনকে বিয়ে করেছেন।

শেখ সেলিমের বোন বিয়ে করেছিলেন তৎকালীন জাতীয় পার্টির নেতা ও মন্ত্রী নাজিউর রহমান মঞ্জুরকে। দুই পরিবারে কিঞ্চিৎ দূরত্ব তৈরী হলেও মঞ্জুর পূত্র বাবার মৃত্যুর পরে জাতীয় পার্টির হাল ধরেছেন এবং ভোলা থেকে নির্বাচন করে জিতেছেন , তিনি শেখ হেলাল এর কন্যার সাথে বিবাহিত ।

আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ মুজিবের বোনের ছেলে যার বাবা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত মুজিব সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন। সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ-এর তিন ছেলে । এর মধ্যে আশিক আব্দুল্লাহ এবং সাদেক আব্দুল্লাহ এর বিরুদ্ধে মামলা আছে । আশিক বিবাহিত ইমনের বোনের সাথে ( মা কসম , আমার বোন না কিন্তু) যেই ইমন আবার ঢাকার টপ টেরর (কি তামশা) । আশিকের শ্বাশুড়ি, ইমনের মা হইলেন ডঃ সুলতানা জাহান !

শেখ শহীদুল ইসলাম , শেখ হাসিনার খালাত ভাই , সাবেক ছাত্রলীগ প্রেসিডেন্ট এই শেখ শহীদ ছিলেন এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী । তিনি বিয়ে করেন জনতা ব্যাংকের সাবেক এম ডি সালেহীন এর কন্যাকে - সালেহীন কেয়ারটেকার সরকার এর উপদেষ্টা ডঃ ফকরুদ্দিন এর কাজিন।
জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান হইলেন শেখ হাসিনার আঙ্কেল , শেখ মুজিবের কাজিনকে বিয়ে করেন। এঁকেই এল পি আর থেকে ফেরত এনে আর্মি চীফ অফ স্টাফ করা হয়।

প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মরহুমা স্ত্রী আইভি রহমান শিক্ষাবিদ জালাউদ্দিনের এর কন্যা। তাঁদের কন্যা দ্বয় তানিয়া, ময়না ও পূত্র নাজমুল হাসান পাপনের মধ্যে পাপন এখন ভৈরবের সাংসদ এবং বেক্সিমকো এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর - বিবাহ সূত্রে ব্যবসায়ী আব্দুল হাশেমের জামাতা ।

যেভাবে হাসিনা ও খালেদা আত্মীয় ঃ

চিরশত্রু খালেদা হাসিনার ভেতর খালেদা পূত্র তারেক রহমান বিয়ে করেছেন ডাঃ জুবাইদাকে , যিনি সাবেক নেভি চীফ এম এ খান এর কন্যাকে - এম এ খান শেখ হাসিনার আত্মীয় ( ধুরু , আরেকটু খোলাসা করলে ভালো হইত)

---------------------------

এই যে ব্যাটা সাম্বা ড্যান্সার থুক্কু সাম্বাদিক মামু আমার পোস্ট থেকে আইডিয়া মেরে দিলো , একটু কিরিতজ্ঞ জানাইলে কি এমন ক্ষতি হইত!

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): বাংলাদেশরাজনীতিকেকোথায়কেন?লীগবি এন পিজাতীয় পার্টি ;

http://www.somewhereinblog.net/blog/valobashablog/29125726

(নারী) পুরুষের যৌণ সমস্যা নাকি আমাদের শিক্ষার সমস্যা ?

এইটা একটি হালকা (বাজেট, অর্থনীতি , পুঁজিবাদ কিংবা ডিজিটাল বাংলাদেশের তুলনায়) লেখা । মানে , আপনি যদি তরুণ বয়সের কোন পুরুষ না হোন বা আপনার জীবনে জ্ঞানী বন্ধু , বড় ভাই কিংবা জ্ঞানের সূত্রের অভাব না থাকে , তাহলে এই অভিজ্ঞতার সাথে আপনি পরিচিত নন। তাই, নির্বিঘ্নে অন্য কোন পোস্টে চলে যেতে পারেন । এইটা কোন আদিরসাত্মক কিংবা ধর্মীয় পোস্ট নয় । সুতরাং, যারা ডাক্তারের মত নিরাসক্ত দৃষ্টি নিয়ে সমস্যাকে বিশ্লেষন করতে পারেন না , তারাও এখনি অন্য পোস্টে চলে যেতে পারেন।
-------------------------
শুরু করি একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে ।

আমার ধারণা ছিলো , ডাক্তার হিসেবে আমি খুব একটা খারাপ বুঝাই না। তো একজন অনুজ , নতুন বন্ধু আমার ডাক্তার পরিচয় পাওয়ার পরে একদিন সন্ধ্যায় ইচ্ছে করে আমার সাথে বাড়ি ফিরতে চাইলেন। তার বাড়ির রাস্তা ভিন্ন দিকে আর আমিও রোগী দেখে দেখে ততদিনে বুঝতে পারি অনেক কিছুই। বুঝলাম , একটু আড়ালে কিছু আলোচনা করতে চান। আন্দাজে ভুল হয়নি। অতি সংক্ষেপে তিনি আমাকে জানালেন তার প্রেমিকার সাথে তার প্রথম যৌণ অভিজ্ঞতায় তার অতি দ্রুত স্খলনের ( প্রি ম্যাচিউর ইজাকুলেশন) সমস্যার কথা। ঘটনাটা তাকে এতটাই বিপর্যস্ত করেছে, তিনি একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ নিয়েছেন। আরো অনেকের সাথে কথা বলে পথ্য সংগ্রহ করেছেন । এখন তিনি আমার কাছে সেই সব ওষুধের / ব্যবস্থাপত্রের ভালো মন্দ যাচাই করতে চান। আমি হতভম্ব !
প্রথমত , আমার ডাক্তারি বিদ্যা যৌণ সমস্যা লাইনের নয় । তাই বুঝলাম বাংলাদেশের মানুষ ডাক্তার শ্রেণীটার উপরে কতটা হতাশ ও আস্থাহীন হলে কেউ বিশ্বাসযোগ্য যে কোন মানুষ খোঁজে!
দ্বিতীয়ত, এই ছেলেটি যথেষ্ট শিক্ষিত, মুক্তমনা ও যৌক্তিক চিন্তার অধিকারী । সুতরাং , ইউনানী, কবিরাজি , তুক্তাক বিদ্যার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেনি।
তৃতীয়ত, তার কাছ থেকে ওষুধের লিস্ট দেখার পরে বুঝলাম, তার এই " শিক্ষা" ও "যুক্তি" তার কোন কাজেই আসে নাই । কারণ , কবিরাজি তুকতাক এড়াতে পারলেও এই তরুণ বৈজ্ঞানিক বা এলোপ্যাথির তুকতাক এড়াতে পারেন নাই।

মানে কি?

তার লিস্ট জুড়ে কেবল ভিটামিন আর ভিটামিনের নাম। একই ভিটামিন ভিন্ন ভিন্ন নামে। একই ধরনের মাল্টিভিটামিন ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির । তার ধারণা , উনি ১১ টি ভিন্ন অষুধের নাম লিখে এনেছেন । ( যে যা বলেছে , তার সব গুলাই । এবং যৌণ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রেসক্রিপ্শন শুদ্ধ )
এরপর , আমি তাকে যতই বুঝাই , যত ভাবেই বুঝাই , এগুলো কোন রোগের ওষুধ না । কিংবা , তার কোন রকম রোগ নাই। কিংবা , দ্রুত স্খলন বা প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন কোন যৌণ রোগ না - উনি কিছুতেই কিছু বুঝে না । কোন রকম গঠনগত (এনাটমিকাল) কিংবা কার্যকারিক (ফিজিওলজিকাল) কোন রকম রোগ বা সমস্যা যদি থেকেও থাকে , সেইটা ভিটামিন দিয়ে সারবে না - এইটাও তার মাথায় ঢুকাইতে পারলাম না ।
তার মাথায় গেঁথে গেছে , উনি যৌন ভাবে দুর্বল । আর আমি ভাবছি - ভিটামিনও একটা ওষুধ । এক সাথে এক গাদা খেলে ভিটামিনোসিস নামক বিষক্রিয়াতে না আক্রান্ত হয়!

শেষে কি হলো?

কিছুদিন পরে উনি জানালেন , ভিটামিন গুলো খাওয়াতে তার অনেক উপকার হয়েছে । তিনি এখন তার কাজে আগের চেয়ে ভালো মান দেখাতে পারছেন । আমি একই সাথে স্বস্তি আর হতাশার একটা কাষ্ঠ হাসি দিলাম। স্বস্তি , কারণ আমাদের নকল ও ভেজাল ভিটামিন কোম্পানির ( ছোট খাট কোম্পানি না শুধু , বড় বড় কোম্পানিও আটা চিনির গুড়া ক্যাপ্সুলে ভরে ভিটামিন হিসেবে বিক্রি করে) বদৌলতে বেচারা ভিটামিনোসিস এর হাত থেকে বেঁচে গেছে । আর হতাশা এই জন্য যে, এই ছেলেটি আরো হাজার হাজার বাংলাদেশী তরুণের মত হলফ করে বলবে,
১। আমার মত দুইপাতা ডাক্তারি পড়া ডাক্তাররা কিচ্ছু জানে না। যৌণ দুর্বলতা একটা ভয়ংকর রোগ।
২। মাত্র ১১ প্রকারের ( আসলে একই ) ভিটামিন , মাল্টিভিটামিন খেলেই এই রোগ থেকে ভালো হওয়া যায়।
৩। উপরের দুইটা কথার প্রমাণ উনি নিজে।

তাহলে সমস্যাটা কোথায় ?

আসুন , আমরা একটু বুঝার চেষ্টা করি ঘটনাটা আসলে কি ঘটেছে। ছেলেটির সমস্যা ছিলো অতিদ্রুত স্খলন। এর সরাসরি ফলাফল যেইটা হয় , পুরুষ বা নারীর যৌণ তৃপ্তি বা ক্লাইমেক্স / অর্গাজম এ পৌছানোর আগেই সঙ্গম শেষ হয়ে যাওয়া । ব্যাপারটা অনেকটা প্রচন্ড ক্ষুধার মুখে দুই লোকমা খাওয়ার পরে প্লেট কেড়ে নেওয়ার মতন। বিস্তারিত আর বললাম না ।

কেন ঘটে এই রকম? যাদের সত্যি সত্যি কোন রকম ইনফেকশন ( যৌণ রোগ), এনাটমিক বা যৌণাঙ্গের গঠনগত সমস্যা আছে কিংবা ফিজিওলজিকাল বা কার্যকারিতার দিক থেকে কোন সমস্যা আছে - তারা ছাড়া বাকি সবার জীবনেই এইটা ঘটতে পারে মানসিক কারণে ।
প্রথমত, জীবনে প্রথম যৌণ সঙ্গম করতে গেলে ১ম কিছুদিন অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে অতিদ্রুত স্খলন ঘটতে পারে। নিজের উত্তেজনাকে মানসিক ও শারীরীক ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে না পারাটাই কারণ ।
দ্বিতীয়ত , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণে কোন রকম অপরাধবোধে ভুগলে ।
তৃতীয়ত , কোন কারণে যথেষ্ট সময় না থাকলে তাড়াহুড়া ও টেনশনে ।
চতুর্থত , আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকে অতিরিক্ত টেনশনে ।
পঞ্চমত , সঙ্গিনীর সাথে কোন কারণে যথেষ্ট স্বস্তি বা কম্ফোর্ট লেভেল না থাকলে ।

এখন কথা হলো , এর জন্য ওষুধ বা ভিটামিন খাওয়া কত জরুরী?

যাদের কোন কারণে যৌণ রোগ বা ইনফেকশন আছে কেবল তাদের জন্যই ঔষুধ প্রয়োজন হতে পারে। জীবনের ১ম যৌণ অভিজ্ঞতায় কোন রোগ কারণ না হওয়ারই কথা । রইলো বাকি এনাটমিকাল ও ফিজিওলজিকাল কোন সমস্যা । এইটা প্রকৃতিতে খুবই রেয়ার। ডাক্তারের পরীক্ষা নিরীক্ষা থেকে এইটা বের হয়ে আসবে। কিন্তু উল্লেখিত তরুণের এই ধরনের কোন সমস্যা ধরা পড়ে নাই।

আর মানসিক সমস্যার জন্য ভিটামিন? বুঝতেই পারছেন, এইটা ঠিক খাপ খায় না । তারপরেও মাঝে মাঝে নাছোড়বান্দা রোগী হইলে কিছু ডাক্তার রোগীর মন রক্ষা করতে গিয়ে ভিটামিন, স্যালাইন - এইসব বেকার জিনিস পত্র প্রেস্ক্রাইব করেন। তাহলে ছেলেটি উপকার পেলো কি করে?

এখানে আমাদের আসলে তার সমস্যার মূলে পৌছাতে হবে। আমি যা বুঝেছিলাম, উনি তার প্রেমিকাকে তৃপ্ত করতে পারবেন কি পারবেন না সেই অতিরিক্ত টেনশন, সাথে ১ম বারের অতিরিক্ত উত্তেজনা = এর ফলে সমস্যায় পড়েছিলেন। ভিটামিন খাওয়ার পরে তার ভিতরে বিশ্বাস চলে আসে যে উনার সমস্যা মিটে গেছে । উনি এখন যৌন ভাবে সবল । এই ফিরে পাওয়া আত্মবিশ্বাস ও কমফোর্ট লেভেল তাকে যে রিল্যাক্সসেশন বা আরাম দিয়েছে - তাতেই উনি পরের বার গুলোতে ভালো পারফর্ম করতে পেরেছেন।

এখন , ঝড়ে বক পড়লো আর তাতে ফকিরের / ভিটামিনের কেরামতি বেড়ে গেলো।

এই রকম কেরামতি কেন দরকার হয়? মূল সমস্যা কি? সমাধান কি?

একজন ডাক্তার হয়েও সেই তরুণকে বুঝাতে ব্যর্থ হওয়ার পরে আমি এইটা নিয়ে অনেক ভেবেছি। কেন উনি বুঝতে চাইলেন না একেবারেই? এবং ভেবে ভেবে , তার সাথে এর উপরে পড়ালেখা করে আমি যা বের করেছি তা হলো , মানুষের বিশ্বাসের সাথে তথ্যের লড়াইয়ে বিশ্বাসের জয় হবেই। এই তরুণের বয়ঃসন্ধির সময় থেকেই কোন যৌণ শিক্ষা নেই । তার শেখার সূত্র ছিলো হয়ত আদিরসাত্মক সাহিত্য , নীল ছবি কিংবা নিদেন পক্ষে বড় ভাইদের অভিজ্ঞতা । এর কোনটাই সঠিক শিক্ষা দেয় না , দিতে পারে না । বরং এসব থেকে মানুষ বেশির ভাগ সময়েই ভয়াবহ ভুল শেখে । আবার এই সব সূত্র গুলো কোনটা স্বাভাবিক, কোনটা সমস্যা আর কোনটা রোগ- তাও শিক্ষা দেয় না । যারা এই সব নোংরা পথে কিছু শিখতে পছন্দ করেন না , তাদের জন্য কি কোন ভিন্ন পরিষ্কার পথ খোলা আছে? সার্বিক ভাবে - নাহ। যারা সেই রকম উচ্চ শিক্ষিত এবং ইন্টারনেট এ সংযুক্ত , তারা কিছুটা ভালো অবস্থানে আছেন। ইন্টারনেট থেকেই শিখতে পারেন কিন্তু সেই ওয়েবসাইট গুলো কি নির্ভরযোগ্য?

এইখানে, আবার একটা মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। অনেক দিন পর্যন্ত ইংরেজি ছবির নায়ক-নায়িকাদের দেখে দেখে আমার ধারণা ছিলো পশ্চিমা পুরুষ এর বুকে ও নারীদের হাতে পায়ে কোন লোম থাকে না । বড় হয়ে সেই কুশিক্ষা আমার দূর হয়েছে মেডিকেলে পড়তে গিয়ে। সুতরাং, দেখুন, এমন কি ছবিও কি ধরনের ভুল শিক্ষা দেয় মানুষকে !


আমাদের দেশের তরুণ তরুণিদের তাই মূল সমস্যা হলো একটা ভালো, ভদ্র , পদ্ধতিগত ও নির্ভরযোগ্য শিক্ষা বা জ্ঞানের মাধ্যম - যা থেকে মানুষ সঠিক শিক্ষাটা নিতে পারে- তার অভাব। আর এরই সুযোগ নেয় যত রকমের মঘা, ইউনানী, কবিরাজি , হার্বাল আব জাব কোম্পানি গুলো। বাংলাদেশে অশিক্ষা তো আছেই , তার চেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো , যারা স্কুল কলেজে পড়েন, তারা কুশিক্ষিত কিংবা অর্ধ শিক্ষিত ।



এখনো মানুষ জানে না , মেয়েদের প্রতি মাসে রক্তপাত হওয়াটা (মাসিক বা রজঃস্রাব) যেমন একটা স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া , সেই রকম পুরুষের কিছুদিন পর পর ইরেকশন বা যৌণাঙ্গ দৃঢ় হওয়া থেকে শুরু করে ইজাকুলেশন বা ধাতু নির্গত হওয়াটা একটা অতি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া । স্বপ্নদোষ নামে যাকে ধর্মভীরু মানুষ এটা সেটা খেয়ে রোগমুক্তির আশা করে, সেইটা আসলে কোন রোগই না । একবার চিন্তা করুন, মেয়েরা যদি দল বেধে "ঋতুদোষের" জন্য কবিরাজি ওষুধ খাওয়া শুরু করে তাহলে ব্যাপার কি দাঁড়াবে?

সময়ের আগেই ধাতু নির্গমন বা ইজাকুলেশন কোন দুর্বলতার লক্ষণ নয় । এইটা কোন রোগও নয়। তবে , পুষ্টিহীন নারী শরীরে যেমন ঋতুস্রাবের সমস্যা হতে পারে, অতিরিক্ত পুষ্টিহীনতায় ভুগলে পুরুষেরও পারফর্মেন্সে ঘাটতি হতে পারে। তবে সে সব ঘাটতি কবিরাজি, ইউনানী হালুয়া খেয়ে কিংবা মলম মেখে দূর করা যায় না । বেটার পার্ফর্মেন্সের জন্য চাই বেটার স্বাস্থ্য । সুস্বাস্থ্য।

যারা জানেন না , তাদের জন্য বলি, অতিরিক্ত শুকনা কিংবা অতিরিক্ত মোটা হলে , উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিস হলে , সিগারেট - মদ জাতীয় বদভ্যাস থাকলে - যৌণ দক্ষতা কমে যেতে পারে। বাচ্চা হতেও সমস্যা হতে পারে। তার মানে এইনা যে আপনাকে সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে জিমে গিয়ে ডাম্বেল ভাজতে হবে, কিন্তু , স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান না হলে প্রেমিকা /স্ত্রীর প্রেম পাইতে কিংবা বাচ্চার বাপ হইতে সমস্যা হতেই পারে।


যারা যৌণ শিক্ষার নাম শুনলেই সব গেলো গেলো বলে চিল্লাতে ভালোবাসেন, সেই সব মানুষদের মন রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের পাঠ্য বই গুলাতে যথা সম্ভব কম তথ্য দেওয়া থাকে। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে , উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আগে মানব দেহ সিলেবাসেই ছিলো না ( বায়োলজি) । আশা করি এখন সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মানুষের যৌণ বা রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেম আমি উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াতে দেখিনি। এমন কি , মেডিকেলের ফিজিওলজি ম্যাডাম আমাদের বলেছিলেন, " এইটা তোমরা বাড়িতে পড়ে নিও।" এই থেকেই বুঝা যায় , মানুষের দেহের এই অংশ বা সিস্টেমটিকে নিয়ে সঠিক শিক্ষার পরিবেশ বাংলাদেশে প্রায় অনুপস্থিত । কিন্তু তাতে কি প্রলয় বন্ধ আছে?

যারা বলেন, সঠিক যৌণ শিক্ষা দিলে মানুষের নৈতিক আচরণে ধ্বস নামবে , এতদিন তো এই শিক্ষা বাংলাদেশে বন্ধই আছে এক রকম, তাতে কি ধ্বস নামা বন্ধ হয়েছে? কমেছে? নাকি, বেড়েছে?
যৌণ শিক্ষা বন্ধ আছে । কিন্তু যৌণ সঙ্গম কি বেড়েছে না কমেছে?
যৌণ শিক্ষা বন্ধ আছে কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষকে যৌণ সুড়সুড়ি দেওয়া কি বন্ধ আছে?
যারা এর বিরোধিতা করেন, তারা কি দায়িত্ব নিয়েছেন ছেলে মেয়ে গুলো যাতে কোন বিপদে না পড়ে , অশিক্ষা - কুশিক্ষা জনিত স্বাস্থ্যহানি না ঘটায় - সেইটা বন্ধে?
অসামাজিক কার্যকলাপ বাদ দেন, যারা সামাজিক কার্যকলাপ (বিয়ে, বাচ্চা নেওয়া, একটা স্বাভাবিক যৌণ জীবন কাটাতে চান) করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিপদ , আপদ, রোগ, শোক, বিব্রতকর অবস্থা এবং কখনো কখনো মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছেন , তাদের শিক্ষার কোন ব্যবস্থা কি নিয়েছেন?

আমরা যারা ডাক্তার , তারা প্রতিদিনই কারো না কারো মারাত্মক কোন সমস্যার কথা শুনি বলে আমরা টের পাই , এই " লুকিয়ে রাখা" , " চেপে রাখা" , "দমিয়ে রাখা" যৌণ অজ্ঞতাজনিত সমস্যা গুলো কি হারে মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করছে। আর কত সহজেই একটা সঠিক শিক্ষা মানুষকে এই কষ্ট গুলো থেকে রক্ষা করতে পারে।
কিছু ঘটনা ঃ

১। এই ২০১০ সালেও এসে শুনতে হয় মঘা , ইউনানী, কবিরাজি, মান্ডার তেল আর শিয়ালের বাম এর বেচাবিক্রির শোর গোল।
২। এই যুগেও মানুষ জানে না কোনটা স্বাভাবিক যৌণতা আর কোনটা অস্বাভাবিক।
৩। অতি আধুনিক দম্পতিকেও বিয়ের পরে পর্ণ দেখে শিক্ষা নিতে হয় কেমনে কি করে। যারা এই সব দেখা পাপ বলে বিশ্বাস করেন, তাদের অবস্থা আরো করুণ।
৪। পতিতার কাছ থেকে "অভিজ্ঞতা" ও "জ্ঞান " আহোরণ করতে গিয়ে যৌণ রোগ বাধিয়ে আসে।
৫। জানে না কিভাবে বাচ্চা হয়।
৬। বিয়ের আট মাসেও না জানা কি ভাবে সঙ্গম করতে হয়।
৭। জানে না কি ভাবে গর্ভ ধারণ আটকানো যায়।
৮। অবৈধ গর্ভপাত এখনো বাংলাদেশের অন্যতম বড় ব্যবসা।
৯। এখনো সন্তান ছেলে কিংবা মেয়ে হওয়া নিয়ে স্ত্রীকেই দায়ী করা হয়।
১০। এখনো যে কোন সমস্যা হলে মানুষ পরিচিত ডাক্তারদের কাছে ছোটে । বেশির ভাগই লজ্জায় চেপে রাখে।
১১। এই যুগে মানুষ মান্ডার তেল, শিয়ালের বাম, শিকড় বাকড় , তাবিজ আর ভিটামিন- স্যালাইনের পিছনে টাকা নষ্ট করে।

এখন সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনার কথা বলি । স্রেফ " কি ভাবে আদর করতে হয় জানে না বলে" স্ত্রীকে বছরের পর বছর ধরে যা করা হয়েছে তাকে শুধু তুলনা করা চলে "ধর্ষণ" হিসেবে । স্ত্রী স্বামীকে ভালোবাসেন কিন্তু তার যন্ত্রনা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো যে অত্যন্ত ধর্ম ভীরু সেই দম্পতি যৌণতা এক প্রকার বাদ দেন। এক পর্যায়ে স্ত্রী স্বামীকে অনুরোধ করেন, " তোমার দরকার হলে তুমি বাইরে থেকে করে এসো । আমি মানা করবো না।"

এখন প্রশ্ন হইলো , আল্লাহ মানুষের ভিতর যৌণ সঙ্গম নামক একটা প্রক্রিয়া দিয়েছেন যার মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা প্রকাশিত হওয়ার কথা। যার মাধ্যমে নতুন শিশু জন্ম হওয়ার কথা । সেই প্রক্রিয়াটা একজন স্ত্রীর জন্য এত কষ্টের কেন হবে? কেন একজন স্ত্রীর মনে হবে তাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে ? আর স্বামীই বা কেন বুঝবে না কোনটা ভালোবাসা আর কোনটা ধর্ষণ ? এই মারাত্মক অবস্থাটা কিন্তু আমি দেখেছি আমার পরিচিত গন্ডিতে ! ঘটনার কেউ মূর্খ , অশিক্ষিত নয়। বরং উচ্চ শিক্ষিত । এরা কেউ পাশবিক নয় বরং সঙ্গী- সঙ্গীনীর প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল। এরা কেউ ধর্মহীন নয় - এদের কেউ কেউ প্রচন্ড ধার্মিক ( ১ম তরুণ বাদে) ।

বাংলাদেশের সমাজের যেই অংশটি অশিক্ষিত , তাদের অবস্থা আরো ভয়াবহ।

আমাদের বুঝতে হবে , যৌণ শিক্ষা শুধুমাত্র বায়োলজির বিষয় নয়। এর সাথে জড়িত আছে স্বাস্থ্য। এর সাথে জড়িত আছে যৌণতার সামাজিক, ধর্মীয়/নৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অবশ্যই অর্থনৈতিক ইস্যু । যৌণতার সাথে জড়িত আছে ভীষণ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মানসিক ও আবেগ এর বিকাশ। এখনো বাংলাদেশে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার ভয়াবহ। আমরা এখনো এই সব স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করতে পারছি না বলে অন্য কোন দিকে উন্নতির কথা ভাবতেই পারছি না । প্রতিনিয়ত পিছিয়ে যাচ্ছি দুনিয়া থেকে। আমরা কি একটা স্বাস্থ্য, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক,পারিবারিক (বাচ্চা হওয়া থেকে শুরু করে একটা বাচ্চাকে সঠিক ভাবে লালন পালন করতে কি কি করা লাগে, কেমন খরচ হয়) ও নৈতিক শিক্ষাসহ একটা পরিপূর্ণ ও ব্যালেন্সড যৌণ শিক্ষার সিলেবাস তৈরী করতে পারি না?

দেশে নতুন শিক্ষানীতি চালু হতে যাচ্ছে । সরকার কি যৌণ শিক্ষার এই দিকে কিছু সিস্টেমিক ও সাহসী পদক্ষেপ নেবেন?

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): যৌণসমস্যাশিক্ষাকুসংস্কারপুরুষ ;

http://www.somewhereinblog.net/blog/valobashablog/29149977

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কিছু প্রামাণ্য দলিল

ইউ টিউবে ২৮শে অক্টোবর ২০১০ সালের কিছু ভিডিও খুঁজতে ও দেখতে গিয়ে এসব পেলাম। হয়ত আগেই দেখেছেন কেউ কেউ। তবু নিজের এবং অপরের জন্য প্রামাণ্য দলিল হিসেবে ব্লগীয় আর্কাইভ করে রাখলাম।

প্রথমে সামু ব্লগের ব্লগার ত্রিশোংকুর প্রত্যক্ষ শ্রোতা হিসেবে ঐ সময়ের বর্ণণা।

"বাবা আর সুলতান চাচা একটা কাগজ দেখছেন। কাগজটার রং হলদেটে। অনেকদিন রেখে দিলে কাগজের যে রং হয়।... বাবার হাতের কাগজটির ওপর আমি ঝুঁকে পরলাম। ইংরেজীতে লেখা দু'টি প্যারাগ্রাফ। আজ কিছুই মনে নেই কি লেখা ছিল সে কাগজে তবে একটি বাক্যাংশ স্মৃতিতে এখনো জ্বলজ্বল করে: "Bengalees are fighting the enemy with great courage for an independent Bangladesh". কাগজটার প্রথম বাক্যের বাংলা ছিল সম্ভবত: "আজ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র"।...

চাচার সাথে একাধিকবার জহুর আহমদ চৌধুরী (স্বাধীন বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রক তাঁর অধীনে ছিল...), এম আর সিদ্দিকী (আংগুলে গোনা বাংগালী শিল্পপতিদের একজন, বিশিষ্ট শিল্পপতি এ কে খানের মেয়ের জামাই, রেনেঁস ব্যান্ডের বোগীর বাবা) ও হান্নান-মান্নানের কথা হয়েছে। এম আর সিদিকী তাঁকে যেতে অনুরোধ করেছেন। হলদেটে কাগজটা নিয়ে তিনি চলে গেলেন। ঐ কাগজটাই ছিল ইপিআরের মাধ্যমে পাঠানো বংগবন্ধুর ওঅরলেস মেসেজ। তখন বলতাম-টেলিগ্রাম।...

তক্ষুনি ডাঃ আনোয়ার আলী (বার্মায় নিযুক্ত পাকিস্তানের এক কালীন রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আকবর আলীর বড় ছেলে ) আর তাঁর স্ত্রী ডাঃ মন্জুলা আনোয়ার(সরকার)...

বেতারে স্বাধীনতার ঘোষনা (যাদের ইচ্ছে "ঘোষনার" জায়গায় "পাঠ" পড়ার জন্যে সবিনয়ে অনুরোধ করছি)

আশিকুল ভাই (ওয়াপদার ইনজিনিয়ার, ২৬ শে মার্চই তাকে শেষ দেখি) এর সাথে আমার দেখা হয়েছিল আমার স্নাইপটাকে খাবার দেবার পর পরই। উনি যাচ্ছিলেন কালুর ঘাট। ওঁর সাথে ডাঃ আনোয়ার আর ডাঃ মন্জুলা আনোয়ার(সরকারক) আর রেখা আপা (কাজী হোসনে আরা, রেডিও পাকিস্তান চট্টগ্রামের ঘোষিকা)কেও দেখেছি।

২৬ তারিখ দুপুর থেকেই রেডিও পাকিস্তান চট্টগ্রাম খুলে রাখা হয়েছিল বাসার রেডিওগ্রামে ফুল ভল্যুমে। সারাদিন কিছু শুনেছি বলে মনে পড়ছেনা। সন্ধ্যার পর শুনতে পাই "স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র...."। কিছুক্ষন পর একটা ভারী গমগমে গলা সকালে দেখা আমার ইংরেজী টেলিগ্রামটির বাংলা অনুবাদ পড়ে শোনায়। কে পড়েছিল মনে নেই। পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কখনো মিহি সুরে, কখনো কাঁপা কাঁপা গলায় আবার কখনো বা "ভাইয়েরা আমার স্টাইলে" স্বাধীনতা ঘোষনার বাংলা অনুবাদ শুনে যেতে থাকি। ২৭ তারিখ সন্ধ্যার পর প্রথম শুনি " I, Major Ziaur Rahman, on behalf of Bangabondhu Sheikh Mujibur Rahman..............." সবাই সেটা শুনেছেন, আগে আর পরে। আমার কাছে, ২৪ ঘন্টার মধ্যে শোনা ৮/১০টি স্বাধীনতা ঘোষনার মধ্যে সেটাই সবচে' ইমপ্রেসিভ লেগেছিল। মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষনা শেষ হবার কিছুক্ষন পর এশার আজান শুনেছিলাম বলে স্পষ্ট মনে পড়ে।"

এইবার কিছু ভিডিও

স্বাধীনতার বেতার ঘোষণা নিয়ে বেলাল মোহাম্মদের সাক্ষাৎকার যেখানে ঐ সময়ের ঘটনা বর্নণা আছে।

১ম পর্ব --- এই পর্বের বিবরণে ত্রিশোংকুর বলা ঘটনা গুলো পাওয়া যাত। ডাঃ আনোয়ার আলীর কথা, চিরকুট ইত্যাদি।



২য় পর্ব



৩য় পর্ব



জিয়ার কন্ঠে ধারণকৃত , মুজিবের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণাসহ ভাষণ এবং বিদেশী পত্রিকায় খবর।



জিয়ার সাক্ষাৎকারে ২৭শে মার্চ সন্ধ্যায় তার নিজের বেতার ঘোষণা পাঠের বিবরণ

http://www.somewhereinblog.net/blog/valobashablog/29262817

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): বাংলাদেশস্বাধীনতাঘোষণাবেতারপাঠবেলালমোহাম্মদ ;

কবিতার কাছে ফেরা হয় না

কবিতার  কাছে  ফেরা  হয়  না   এখন 
পরস্পর কাঠ বন্দী হয়ে জানালায় হয় না ফেরা 
এখন রাত্রি জুড়ে বিষন্ন প্রাপ্ত মনস্কতা 
ঘরে ফিরেছি বলে কবিতার কাছে ফেরা হয় না. 

যখন  জীবন ছিল না
তখনও জীবনের কবিতায় লিখেছি 
কথা ছিল , তিরিশের পরে ঘুমিয়ে যাব 
আশৈশব কষ্টের খেরোখাতা বন্ধ করে 
কথা ছিল, বিশ্রাম পাব 
রোগ, ধর্ষণ , দূষণ ও দায়ের উপরে 
অথবা সাড়ে ছয় হাত নিচে একটা ঘর হবে

আমি আগে থেকেই পর 
আমার নিজের বলে তো কিছু ছিল না কখনো 
তাই মাটির ঘরের স্বপ্ন বিভোর এক দিগ্ভ্রান্ত বালিকা 
তিরিশের পরে সমাপ্তির ছক একে রেখেছিল 
বর্ণমালা যেমন বিসর্গের পরেই চন্দ্রবিন্দু !
ঘরের দরজায় এক ফোটা ঘুম , সে ঘরে যাওয়া হলো না. 

যখন নিশ্চিত ছিলাম , মরে যাচ্ছি, 
তখন দিন রাত বেচে থাকার গল্প লিখেছি .
এখন জীবনের কাছেই দায়বদ্ধ 
ইট কাঠ , সাবান, মসলা , হিসাব , পেশা
আমার গান এখন পয়সায় বিকোয়
আমার কবিতা পড়া হয় পয়লা বৈশাখে. 

ওগুলো বেচে ওঠার আগের কবিতা
বেচে না উঠলে কি জানতে পেতাম?
আমি কতটা মরতে পারি !

একজন ফাসির আসামির কাছে জীবন বড্ড মধুর
আমরা যারা বাচব বলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি,
 তাদের সে বিলাসিতা কই?